মুসলমানের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেই বৃটিশ দালাল হিন্দু জমিদার গোষ্ঠির সৃষ্টি

মুসলমানের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেই বৃটিশ দালাল হিন্দু জমিদার 
গোষ্ঠির সৃষ্টি
লাখেরাজ আরবি শব্দ, অর্থ নিষ্কর। মুগল শাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল লাখেরাজ ভূমি অথবা কর বা খাজনা মওকুফকৃত জমি। মুসলিম শাসকগণ কর্তৃক এ অঞ্চলের মুসলিম ছূফী-দরবেশ ও আলিম-উলামাগণকে মুসলিম শাসকদের তরফ থেকে লাখেরাজ সম্পত্তি দেয়া হতো। যাতে উনারা উক্ত ভুমি ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে দ্বীন ইসলাম প্রচার-প্রসার করতে পারেন।
আবহমান কাল থেকে ভারতের মুসলমান শাসকগণ জনগণের শিক্ষা বিস্তারকল্পে মুসলিম মনীষীদেরকে জায়গীর, তমঘা, আয়মা, মদদে-মায়াশ প্রভৃতি নামে লাখেরাজ ভূ-সম্পত্তি দান করতেন। বুকাননের মতে “একমাত্র বিহার ও পাটনা জেলার একুশ প্রকারের লাখেরাজ ভূমি দান করা হয়েছিল বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে”।
“বহুদিন থেকে ভারতবর্ষের শাসনকর্তাগণ সাধারণ মানুষের বিদ্যাশিক্ষার জন্য লাখেরাজ জমি মঞ্জুর করতেন। মসজিদ, মাজার ও অন্যান্য পবিত্র স্থানের জন্য ভূমি মঞ্জুর করা হতো। এছাড়াও তাঁরা নানা প্রকার বৃত্তি ভোগ করতো।শুধু মুসলমান উনাদের জন্যই এসময় পনের প্রকারের আয়কর মওকুফের মঞ্জুরী ছিল, তিন প্রকারের ছিল হিন্দুরের” (ড. আজিজুর রহমান মল্লিক, ব্রিটিশ নীতি ও বাংলার মুসলমান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, উদৃতি, এম আর আখতার মুকুল, কোলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী, পৃঃ ৭৭-৭৮)
“১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস সর্বপ্রথম হিসাব করে বের করে যে, বাংলাদেশের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ একেবারে নিষ্কর অর্থাৎ লাখেরাজ হয়ে রয়েছে। এরপর থেকেই ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী নানা বাহানায় এইসব জমি খাজনাযুক্ত করার জন্য এক ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ অব্যাহত রাখে” (কলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী, এম আর আখতার মুকুল, প্রকাশকাল ১৯৮৭, পৃষ্ঠা ৭৭-৭৮)।
মুসলমান উনাদের শিক্ষার কাজে ব্যবহৃত জমি-সম্পত্তির (ওয়াকফ) উপর ব্রিটিশ আর হিন্দুদের শকুনি দৃষ্টি পতিত হয়েছিল। এর ফলশ্রুতিতেই ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৯৩ সালে ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ চালু করে। এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অধীনে ছূফী-দরবেশ, আলিম-উলামা উনাদের নিকট থেকে এসব লাখেরাজ জমি কেড়ে নিয়ে তা ব্রিটিশদের অনুগত হিন্দুদেরকে দেয়া হয়।
১৮২৯ সালে বাজেয়াফত হলো লাখোরাজ সম্পত্তি। এই সব নিষ্কর জমির আয়ে পরিচালিত মুসলমান উনাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, দাতব্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলো। ইংরেজ আমলে নানান অজুহাত এসব লাখেরাজদারকে তাদের মালিকানা থেকে উচ্ছেদ করা হয়। মুসলিম উচ্চশ্রেণী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। লাখেরাজ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়ার ফলে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হ’য়ে যায়।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইন দ্বারা মুসলমান উনাদের অধিকার থেকে যাবতীয় জমিদারী, তালুকদারী, ইজারা প্রভৃতি কেড়ে নিয়ে হিন্দুদের মধ্যে বন্টন করা হলো। ফলে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারগুলি উৎখাত হয়ে গেল।চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদার শ্রেণী হলো হিন্দু এবং জমির একচ্ছত্র মালিক। জমির মুল মালিক মুসলমান কৃষককুল হলেন হিন্দু জমিদারদের অনুগ্রহ মর্জির উপর একান্ত নির্ভরশীল।

উপরে বর্নিত ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে যে ব্রিটিশরা মুসলমান উনাদের লাখেরাজ সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে হিন্দুদের দিয়ে দিয়েছে । যার ফলে ফকিরনি হিন্দুরা হয়েছে জমিদার আর মুসলমান হয়েছে গরীব।
সারা বাংলাদেশে অর্পিত বা দেবোত্তর সম্পত্তির দোহাই দিয়ে লক্ষ লক্ষ একর মুসলমান উনাদের সম্পত্তি দখল করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে উগ্র হিন্দুরা। অথচ ইতিহাস সাক্ষী ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলমান উনাদের লাখেরাজ সম্পত্তি দখল করে রাতারাতি কথিত জমিদার বনে যায় হিন্দুরা। যে জায়গা আজও মুসলমান ফেরত পায়নি।
বাংলাদেশের মুসলমানদের ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’র ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। এই বাংলার প্রায় সব জমির মালিক এক সময় মুসলমানরাই ছিলো। এসব জমির মালিক মূলত মুসলমানরা। এসব লা-খেরাজ জমি এখনো যেসব মুসলমানদের দখলে দখলে রয়েছে; তাদের উচ্ছেদ করে দেবোত্তর সম্পত্তির নামে হিন্দুদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। এটা কিভাবে বৈধ হতে পারে? কারো সাম্প্রদায়িক নির্দেশে এসব লা-খেরাজ জমি থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ কোনো মুসলমান মেনে নিবে না। ‘দেবোত্তর সম্পত্তি আইন’ এর নামে ব্রিটিশ বেনিয়াদের মতো নতুন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা বন্ধ করতে হবে। দেবোত্তর সম্পত্তির নামে মুসলমান উনাদের লা-খেরাজ সম্পত্তি মুসলমান উনাদের ফেরত দিতে হবে।