৩১ মে, ভূষণছড়া গণহত্যা দিবস।
Image result for পার্বত্যচট্টগ্রাম৩১ মে, ভূষণছড়া গণহত্যা দিবস।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ এবং ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডটি হচ্ছে ভূষণছড়া গণহত্যা। ১৯৮৪ সালের এই দিনে রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার
ভূষণছড়া ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার বাঙ্গালীরা এই নির্মম গণহত্যার শিকার হন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) -এর অঙ্গ সংগঠন শান্তিবাহিনীর হাতে অসংখ্যবার পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিরা গণহত্যার শিকার হয়েছে। শান্তিবাহিনীর হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে রাজনগর গণহত্যা, পাকুয়াখালী ট্রাজেডি, মাটিরাঙ্গা গণহত্যা, ভূষণছড়া গণহত্যা উল্লেখযোগ্য। আর পার্বত্য চট্টগ্রামের কয়েক শত বছরের ইতিহাস ঘাটলেও ভূষণছড়া গণহত্যার মতো এত বড় ধ্বংসযজ্ঞের আর কোন নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না।

এমনকি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী পাষণ্ডরাও এখানে এমন জঘন্যতম ঘটনার জন্ম দেয়নি। যে ঘটনার মাধ্যমে মাত্র কয়েক ঘন্টা সময়ে হত্যা করা হয়েছে চার শতাধিক নিরস্ত্র নিরীহ মানুষ । এবং আহত করা হয়েছে আরও সহস্রাধিক মানুষ। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে একটি জনপদ।

১৯৮৪ সালের ৩০ মে দিবাগত রাত আনুমানিক ৪টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা ৩০মিনিট পর্যন্ত সময়ে অর্থাৎ ৩১ মে সংঘটিত পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় ভূষণছড়া গণহত্যা। এর সাথে সম্পর্কযুক্ত কয়েকটি রিপোর্টের পর্যালোচনা সচেতন দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে চাই । এই পর্যালোচনার জন্য যে সব রির্পোটগুলোর সাহায্য নেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো: BANGLADESH TODAY, 16-30 JUNE 1984-এ প্রকাশিত Moinuddin Nasser-এর ‘Massacre at Bhushanchara’ শীর্ষক নিবন্ধ, BANGLADESH ECONOMIST, 1 July 1984: Vol-2 -এ প্রকাশিত জনাব Ali Murtaza -এর ‘Massacre at dawn’ শীর্ষক নিবন্ধ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক ১০টি বইয়ের প্রণেতা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে অভিজ্ঞ এবং গবেষক জনাব আতিকুর রহমান এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন “বিলম্বিত পার্বত্য ঘটনা: ভূষণছড়া গণহত্যা – ১ ও ২”।



সেদিন আসলে কি ঘটেছিল আমরা তার আভাস পেতে পারি জনাব Ali Murtaza এর রিপোর্টের ভূমিকা থেকেই। তিনি শুরুতেই একটি দৃশ্য বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে-

The beheaded body of a young woman Rizia Khatun was found lying at proabari para of Bhushanchara settlement with her dead body in the position of suckling her bosom. Both hands of yet another baby were found severed. Yet another infant was see cut by half. A seven day old boy was bayoneted to death in front of his parents.

এবার ভূষণছড়া গণহত্যা সম্পর্কে একটা সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা যাক জনাব, Moinuddin Nasser এর লেখা থেকে-

A group of about 150 members of the shanti Bahinin headed by one Major Moni Shawpan Dewan , Launched the attack on the BDR camp and Bangali Settlers at the Bhusnanchara union of Barkal upojela in the early hours of May 31.

The insurgents, including their female cadres, in two groups launched the armed attack at 4 a. m. which continued till 8.30 a. m. They abruptly opened fire and killed the youth, women, children, elderly people and even the livestock. From three rehabilitation zones at Bhusnachra union under Barkal uppojela about 186 dead bodies of men, women, youths and babies were recovered till the writing of this report. It is learnt that a large number of corpses which could not be recovered were getting decomposed in the area. It is recorded that a total of about 500 people including BDR personnel, were injured in the raid, According to a reliable source, several BDR personnel were also killed.

আতিকুর রহমান সাহেবের লেখায় ফুটে উঠেছে ঘটনার ভয়ঙ্কররূপ। তিনি লিখেছেন-
‘‘কলা বন্যা, গোরস্থান, ভূষণছড়া, হরিণা হয়ে ঠেকামুখ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত এই বিরাট এলাকা জুড়ে সন্ধ্যা থেকে আপতিত হয় ভয়াল নিস্তদ্ধতা। কুকুর শিয়ালেরও সাড়া শব্দ নেই। আর্মি, বিডিআর, ভিডিপি সদস্যরাও ক্যাম্পে বন্দি। অতর্কিত পূর্ব দিক থেকে প্রথম ধ্বনিত হয়ে উঠল একটি গুলির শব্দ। তৎপরই ঘটনাবলীর শুরু। চুতর্দিকে ঘর-বাড়ীতে আগুন লেলিহান হয়ে উঠতে লাগল। উত্থিত হতে লাগল আহত নিহত অনেক লোকের ভয়াল চিৎকার এবং তৎসঙ্গে গুলির আওয়াজ , জ্বলন্ত গৃহের বাঁশ ফোটার শব্দ, আর আক্রমণকারীদের উল্লাস মূখর হ্রেসা ধ্বনি। এভাবে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, আর্তচিৎকার ও উল্লাসের ভিতর এক দীর্ঘ গজবি রাতের আগমন ও যাপনের শুরু। চিৎকার, আহাজারী ও মাতমের ভিতর সুর্যোদয়ে জেগে উঠলো পর্য্যুদস্তজনপদ। হতভাগা জীবিতরা আর্তনাদে ভরিয়ে তুললো গোটা পরিবেশ। অসংখ্য আহত ঘরে ও বাহিরে লাশে লাশে ভরে আছে পোড়া ভিটা। এতো লাশ, এতো রক্ত আর এতো ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এক অর্ধরাতের ভিতর এলাকাটি বিরান। অদৃষ্ট পূর্ব নৃশংসতা। অভাবিত নিষ্ঠুরতা। ওয়ারলেসের মাধ্যমে এই ধবংসাত্মাক দুর্ঘটনার কথা স্থানীয় বিডিআর ও আর্মি কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বমহলে অবহিত করে। শুরু হয় কর্তৃপক্ষীয় দৌড় ঝাপ আগমন ও পরিদর্শন । চললো লাশ কবরস্থ করার পালা ও ঘটনা লুকানোর প্রক্রিয়া। ঘটনাটি যে কত ভয়াবহ, মর্মন্তুদ আর অমানবিক এবং শান্তিবাহিনী যে কত হিংস্র পাশবিক চরিত্র সম্পন্ন মানবতা বিরোধী সাপ্রদায়িক সংগঠন তা প্রচারের সুযোগটাও পরিহার করা হলো। খবর প্রচারের উপর জারি করা হলো নিষেধাজ্ঞা। ভাবা হলো: জাতীয়ভাবে ঘটনাটি বিক্ষোভ ও উৎপাতের সূচনা ঘটাবে। দেশ জুড়ে উপজাতীয়রা হবে বিপন্ন।

ঘটনার ভয়াবহতা আর সরকারী নিস্ক্রিয়তায় ভীত সস্ত্রস্ত অনেকই স্থান ত্যাগ করে পালালো। পলাতকদের ঠেকাতে পথে ঘাটে, লঞ্চে, গাড়িতে, নৌকা ও সাম্পানে চললো তল্লাশী ও আটকের প্রক্রিয়া। তবু নিহত আর পলাতকরা মিলে সংখ্যার প্রায় অর্ধেকই হলো ঐ জনপদ থেকে লাপাত্তা। শুরু হলো জীবিতদের মাধ্যমে লাশ টানা ও কবরস্থ করার তোড়জোড়। খাবার নেই, মাথা গোঁজার ঠাই নেই্ চারিদিকে কেবল পঁচা লাশের দুর্গন্ধ, পালাবারও পথ নেই। নিরূপায় জীবিতরা, লাশ গোজানো ছাড়া আর কোন কাজ নেই । দয়া পরবশ কর্তৃপক্ষ, কিছু আর্থিক সহযোগীতায় এগিয়ে এলেন । এটাকে দয়া বলা ছাড়া উপায় কি?”

বরকল ভূষণছড়া এবং প্রিতিছড়ায় সেদিন কোন মানুষকেই জীবিত পাওয়া যায়নি। জীবিত পাওয়া যায়নি কোন পোষা প্রাণীকেও। Nasser সাহেবের রিপোর্টের সাথে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায় অগ্নিদগ্ধ বিরান ভূমিতে দাঁড়িয়ে আছে একটি মাত্র কুকুর। আর ছবির ক্যাপশন এ লেখা আছে-Bhushanchara: Only the Dog was left Alive.

শান্তিবাহিনীর পাশবিক আক্রমণে সেদিন, নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা আজো পাওয়া যায়নি। নিখোঁজদের সংখ্যা এবং তাদের পরবর্তী অবস্থা জানা যায়নি। তা ছাড়া ঘটনার ভয়াবহতায় যে সব বাঙ্গালী পার্বত্য এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে তাদের কি পরিমাণ আত্মীয় স্বজন নিহত হয়েছে তারও সঠিক হিসাব পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবু প্রতিবেদকদের প্রতিবেদন থেকে নিহতদের সংখ্যার একটা ধারণা পাওয়া যায়। যা আৎকে উঠার মতোই বিরাট এক সংখ্যা।

Nasser সাহের তার রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৮৬ জনের লাশ পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। আবার তিনি আশঙ্কা করেন যে মৃতের সংখ্যা কোনভাবেই ৪ শতকের কম হবে না। কেননা বরকলের ১৬০০ পরিবারের মধ্যে তিন শতাধিক পরিবার সেদিন আক্রান্ত হয়েছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে ১০০টি পরিবার সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

এই পরিসংখ্যানের সত্যতার সমর্থন মিলে আতিক সাহেবের লেখা থেকেও। তিনি দীর্ঘ সময় অনুসন্ধান শেষে নিহতদের নাম ঠিকানা সম্বলিত যে তালিকা প্রস্তুত করেছেন তাতে ৩৭০ জনের পরিচিতি তুলে ধরেছেন। Murtaza সাহেবও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা বিভিন্ন স্থানে পাওয়া লাশের সংখ্যার চাইতে অনেক বেশি। তাঁর এই আশঙ্কার কারণ হিসাবে তিনি লিখেছেন-
During my visit prittisara river even after five days of the incident, I found five bodies on the bank. The settlers told me that several other bodies still in the forest around that area.

ভূষণছড়া গণহত্যার কুখ্যাত নায়কের পরিচিত তুলে ধরতে গিয়ে Moinuddin Nasser সাহেব লিখেছেন-
Major Moni Shawpan Dewan of the Priti group who was supposed to be the leader of the insurgents in this attack was student of Rangamati Govt. High school After liberation he went to continue his studies at Luthiana University of India/ Securing a Scholarship from the India Government, but he joined the Shanti Bahini without completing studies.

দুঃখজনক হলেও নির্মম সত্য এই যে, ভূষণছড়া গণহত্যা সহ অসংখ্য বর্বরোচিত ঘটনার শিকার হয়েছে পার্বত্য অঞ্চলে বাঙ্গালীরা। কিন্তু বাঙ্গালীদের উপর সন্ত্রাসী কর্তৃক সংঘটিত এসব নির্যাতনের চিত্র আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমতো দূরের কথা দেশীয় প্রচার মাধ্যমেও স্থান পায়নি। দেশে তখন সামরিক শাসন ও সংবাদ প্রচারের উপর সেন্সরর ব্যবস্থা আরোপিত থাকায় এবং পাহাড়ের অভ্যন্তরে যাতায়াত ও অবস্থান নিরাপদ না হওয়ায় অধিকাংশ গণহত্যা ও নিপীড়ন খবর হয়ে পত্র পত্রিকায় স্থান পায়নি।

আর এই সুযোগে নির্যাতনকারী উপজাতীয়রা নিজেদের নৃশংসতার স্বরূপকে ঢেকে তিলকে তাল করে নিজেদের পক্ষে প্রচার চালিয়েছে বিশ্বব্যাপী। এতে দুনিয়াব্যাপী ধারণা জন্মেছে যে, পার্বত্যাঞ্চলের উপজাতীয়রাই নির্যাতনের শিকার। যার ফলে দেশ এবং সরকারের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জনকারী সেনাবাহিনীর চরিত্রেও কলঙ্ক আরোপিত হয়েছে।

পার্বত্য অঞ্চলের বাঙ্গালীরা একদিকে নির্মম হত্যাকন্ডের শিকার হবে অন্যদিকে উপজাতীয়দের অপপ্রচারে নির্যাতনকারী হিসেবে পরিচিত হবে আর সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে এমন ব্যবস্থা চিরদিন চলতে পারে না ।

তাছাড়া ১৯৯৭ সালে তথাকথিত শান্তিুচুক্তি করে জেএসএস তথা শান্তিবাহিনীর সদস্যদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলেও আজও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি আসেনি। বন্ধ হয়নি হত্যাকাণ্ডও। কাগজে-কলমে শান্তিবাহিনী না থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর দৌড়াত্ম্য কমেনি, বরং তাদের হাতে বাঙালিরা যেমন হত্যার শিকার হচ্ছে, তেমনি নিহত হচ্ছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোর মানুষজনও।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে জাতিসংঘের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থাও। আমেরিকার মত প্রবল শক্তিধর সেনাবাহিনীও যখন ইরাকে বন্দী নির্যাতন করে পার পায়নি। আমাদের দেশেও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা বিরোধীদের মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের বিচার চলছে। তা হলে, স্বাধীন দেশে পার্বত্য অঞ্চলে যারা হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে তাদের কেন বিচার হবে না? ভূষণছড়া গণহত্যা কি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ নয়?

পার্বত্যাঞ্চলের এসব অপরাধীর বিচারের ব্যাপারে কোন প্রকার বাধা থাকতে পারে না। আর থাকলেও তাকে ন্যায় সঙ্গত বাধা হিসাবে আখ্যায়িত করার কোন সুযোগ নেই। সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা উন্নয়ন করতে হলে যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখে প্রশ্রয় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কেননা সন্ত্রাসীরা ক্ষমার দৃষ্টিকে কখনই সরকারের উদার দৃষ্টি ভঙ্গি হিসাবে দেখে না। তারা একে সরকারে দুর্বলতা হিসাবেই গ্রহণ করে থাকে। এবং সঠিক পথে ফিরে আসার পরিবর্তে তারা বরং আরো বেশি করে অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার উৎসাহ বোধ করে। সব শেষে আতিক সাহেবের ভাষাতেই বলতে চাই-


‘‘এই নৃশংসতা বিনা বিচারে পার পেয়ে গেলে, এটি অপরাধ ও দন্ডনীয় কুকর্ম বলে নজির স্থাপিত হবে না। এটা হবে আরেক নিন্দনীয় ইতিহাস।’’
ভয়াল ২৯শে এপ্রিল , তাইন্দং, পানছড়ির অগ্নিকান্ড ও গণহত্যার শোকাবহ দিবস।
Related imageভয়াল ২৯শে এপ্রিল , তাইন্দং, পানছড়ির অগ্নিকান্ড ও গণহত্যার শোকাবহ দিবস।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন। ১৯৮৬ সালের এই দিনে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গার তাইন্দং, দিঘীনালা এবং পানছড়িতে বসবাসরত বাঙালির জীবনে নেমে আসে নৃশংস, বীভৎস, ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় এক কালরাত্রি।

সেই ভয়াল ২৯শে এপ্রিল রাত ৯টা ১৫ মিনিটে সকল উপজেলায় একই সময়ে বর্বর শান্তি বাহিনী নিরস্ত্র নিরিহ শান্তিপ্রিয় বাঙালিদের উপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেদিন পার্বত্যবাসী প্রত্যক্ষ করেছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের এক নৃশংস ববর্বরতার ঘটনা।

ঐ দিন রাত ১টা পর্যন্ত মোট ৪ঘন্টা ব্যাপী খাগড়াছড়ি জেলার সীমান্তবর্তী মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং,তবলছড়ি ইউপি, পানছড়ি উপজেলা’র ১নং লোগাং ইউনিয়ন,৩নং পানছড়ি সদর ইউনিয়ন ও ৪নং লতিবান ইউনিয়ন (বর্তমানে ৫নং উল্টাছড়ি ইউপি)‘র বাঙ্গালি গ্রামে অগ্নি সংযোগসহ নির্বাচারে গণহত্যা চালায়। শিশু, কিশোর, নারী, পুরুষ, আবাল, বৃদ্ধা, বনিতা যাকে যেখানে পেয়েছে তাকে সেখানেই হত্যা করেছে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্রগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস)‘র অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা।তৎ সময়ে বে-সরকারি হিসাবে মাত্র ৪ঘন্টা সময়ে নিরস্ত্র ও নিরীহ ৮ শত ৫৩ জন বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে, আহত করা হয়েছে প্রায় ৫শত জনকে, অপহরণ ও গুম করা হয়েছে আরো কয়েক হাজার বাঙালিকে। ৬হাজার ২শত ৪০টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার।

সেই হামলায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন শান্তি বাহিনী’র সন্ত্রাসীরা এত গুলো মানুষকে হত্যা করতে একটি বুলেটও ব্যবহার করেনি।হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, দা দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে, জবাই করে, আগুনে পুড়িয়ে, শিশুদেরকে পায়ে ধরে গাছের সাথে বাড়ি দিয়ে, বেনেট ও অন্যান্য দেশি অস্ত্র দিয়ে খোঁচিয়ে খোঁচিয়ে হত্যা করেছিল। প্রতিটি লাশকেই বিকৃত করে সে দিন চরম অমানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল তথাকথিত শান্তি বাহিনীর সন্ত্রাসীরা।

চারদিকে ক্ষত বিক্ষত.ছিন্নভিন সারি সারি লাশের স্তুপ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল হতভাগ্য মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কিংবা পোড়া হাড়গোড়,সেদিন হতবাক করেছিল পার্বত্য চট্রগ্রামের সাধারণ মানুষকে।

এ হত্যাকান্ডকে অনেকেই ৭১ সালের পাকিস্তানি বর্ববরতার সাথে মূল্যায়ন করে বলেছেন, সন্তু লারমার সেই হত্যাকান্ড মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি বর্ববরতাকেও হার মানিয়েছে। বাঙালির রক্তে লালে লাল হয়েছিল সেই দিন চেঙ্গী,মাইনি এবং ফেনী নদীর পানি। স্বজন হারানোর কান্না পার্বত্যাঞ্চলের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। এসব গণহত্যার ঘটনা যারা স্ব-চোখে দেখেছে বা বেঁচে যাওয়া সাক্ষী এদিনের ঘটনার কথা মনে করলে আজও শিউরে উঠেন। এসব হত্যাকান্ড, লুটতরাজ এবং অগ্নীসংযোগের মাধ্যদিয়ে কি যে,নারকীয় তান্ডব সৃষ্টি করেছিল শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চট্রগ্রামে।

এ গণহত্যা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিবিন্ন অঞ্চলে তথাকথিত শান্তি বাহিনীর সন্ত্রাসীরা গণহত্যা সংঘটিত করে।

এসব গণহত্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গণহত্যা গুলো হচ্চে,ভূষণছড়ার ১৯৮৪ সালের গণহত্যা, লংগদু, পাকোয়া খালী ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বার গণহত্যা, ১৯৭৯ কাউখালি গণহত্যা, বেতছড়ি গণহত্যা, বানরাইবারী, বেলতলী, বেলছড়ি গণহত্যা, তাইন্দং, আচালং, গৌরাঙ্গ পাড়া,দেওয়ান বাজার, তবলছড়ি, বর্ণাল,রামছিরা,গোমতি গণহত্যা ,গোলকপতিমা ছড়া, মাইচ্যেছড়া, তারাবনছড়ি গণহত্যা, ভূষণছড়া গণহত্যা, পানছড়ি গণহত্যা,দিঘীনালা গণহত্যা, ২৯ এপ্রিল১৯৮৬, মাটিরাংগা গণহত্যা, কুমিল্লাটিলা, শুকনাছড়ি, দেওয়ান বাজার, সিংহপাড়া, তাইন্দং গণহত্যা, দিঘীনালা গণহত্যা, ২ জুলাই ১৯৮৬, ভাইবোন ছাড়া গণহত্যা,হিরাচর, শ্রাবটতলী, খাগড়াছড়ি,পাবলাখালী গণহত্যা,লংগদু গনহত্যা১৯৮৯, নাইক্ষ্যাছড়ি গণহত্যা,মাল্যে গনহত্যা, লোগাং গণহত্যা, নানিয়ারচর গনহত্যা,জুরাইছড়ি গণহত্যা এবং গুইমারাসহ প্রত্যেকটি বাঙ্গালি গ্রামে অগ্নিসংযোগ সহ লুটতরাজ, হত্যা, বাঙ্গালি নারীদের গণধর্ষণ ও পরে হত্যা করে নারকীয়তা সৃষ্টি করেছিলো সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এর সশস্ত্র সন্ত্রাসী শান্তিবাহিনী। শান্তিবাহিনীর বর্বর হত্যাকান্ড থেকে রেহায় পায়নি পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও। এছাড়া আরো অনেক ঘটনা রয়েগেছে অজনা।

পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠন ‘শান্তিবাহিনী’ কর্তৃক উল্লেখিত বর্বরোচিত, নারকীয় ও পৈশাচিক হত্যাকান্ড ছাড়াও আরো অসংখ্য বর্বরোচিত ঘটনা শিকার হয়েছে পার্বত্য অঞ্চলের বাঙালিরা। সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ‘এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও ববর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার নির্যাতিত, নিপিড়িত, অধিকার বঞ্চিত, অসহায়, নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙ্গালীরা আজও ভুলেনি খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি, দিঘীনালা ও মাটিরাঙ্গা উপজেলার সকল বাঙ্গালী গ্রামগুলোতে ২৯ এপ্রিলের সেই অগ্নিকান্ড ও গণহত্যার শোকাবহ দিনের কথা। কিন্তু কোন এক অলৌকিক কারণে বাঙালিদের উপর সন্ত্রাসীদের চালানো এসব নির্যাতনের চিত্র প্রচার মাধ্যমে তেমন স্থান পায়নি।

সে দিন ছিল না ফেসবুক, দুর্গম অর‌্যানের বাঙালিদের কাছে ছিলো না ক্যামেরা ও চিত্রধারনের কোনো মাধ্যম। যার কারণে এসব হত্যা যজ্ঞের বীভৎস, ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় চিত্র অনেকটা বিলীন হয়েগেছে।আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নির্যাতনকারী উপজাতিরা নিজেদের নৃশংসতার স্বরূপকে ঢেকে তিলকে তাল বানিয়ে দেশে-বিদেশে নিজেদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছে যাচ্ছে যে পার্বত্য চট্টগ্রামে তারা অত্যাচারিত।

অপরদিকে পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি,পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার থেকে বঞ্চিত বাঙালি জনগোষ্ঠী সরকার কর্তৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের এই গণহত্যা ও বাঙ্গালী সম্প্রদায়কে চরমভাবে নিধনের ণির্মম ইতিহাস আজও কোন বই ছাপা হয়নি। তাইতো ঢাকা পড়ে আছে সুবিধাভোগীদের কাছে। ভয়াল ২৯ এপ্রিল স্মৃতির পাতায় অনেকটা বিবর্ণ হয়ে গেছে। যারা আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে মানবাধিকারের দোকান খুলে ব্যবসা করছেন,তাদের এসব ইতিহাস জানা জরুরি। নয়ত, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না কোন দিন।
৩২ বছর পরেও এই হত্যাকান্ডের বিচার হবে কিনা তা জানেনা স্বজন হারানো সেই মানুষগুলো। তবে তাদের স্বজনদের খুনী সন্তু লারমা যখন দেশের পতাকাবাহী গাড়িতে ঘুরে দেশ ও সরকার বিরোধী বক্তব্য প্রদান করেন তখন সেইসব স্বজন হারানো মানুষগুলোর বিস্মিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই যেন করার থাকে না।

এই হত্যাকান্ডের মধ্যে দিয়ে নারকীয়তা সৃষ্টি করেছিলো ৩৮হাজার বাঙালির হত্যাকারী খুনি জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর সশস্ত্র সংগঠন শান্তি বাহিনীর গেরিলা যোদ্ধারা ও উপজাতি সন্ত্রাসী হায়নারা। যদিও কোন শহীদ পরিবার এখনও পুর্নবাসিত হয়নি। দেয়া হয়নি যথাযথ ক্ষতিপূরণ। উল্টো হত্যাকারীদের দেয়া হয়েছে সরকারি চাকরি, টাকা পয়সা,ঘড়বাড়ি এবং সারাজীবন ঘরে বসে বসে খাওয়ার রেশন। মন্ত্রীর মর্যাদায় জাতীয় পতাকা বহন করা গাড়ি ও বাড়ি।



এ যেন শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানী। তিনটি উপজেলায় এক সাথে গণহত্যা পরিচালনা করে সন্তুরারমা পেলো পুরস্কার, আর লাল সবুজের পতাকার ইজ্জত রক্ষাকারী শহীদদের করা হল তিরস্কার! এটা মেনে নেয়া যায়? সন্তু লারমাকে দেয়া সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করে খুনি সশস্ত্র উপজাতি সন্ত্রাসীদের শাস্তির লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠন করে এখনই সন্ত্রাসীদের বিচার নিশ্চিত করা উচিৎ। এসব গণহত্যার মূল কারণ হলো একটি জাতি গোষ্ঠী বা একটি সম্প্রদায়কে নির্মূল করণ প্রক্রিয়া। সেহেতু উপজাতি এসব সন্ত্রাসী বাঙালি নির্মূল করার লক্ষে এসব সাধারণ বাঙালি হত্যা করেছিল। সেক্ষেত্রে এটি পার্বত্য বাঙালি গণহত্যা দিবসের জাতীয় স্বীকৃতির দাবি রাখে।
শান্তিচুক্তিমতে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাক্যাম্প সরাতে পারেনা
Image result for পার্বত্যচট্টগ্রামশান্তিচুক্তিমতে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাক্যাম্প সরাতে পারেনা
চট্টগ্রাম চুক্তির আলোকে ৫৫২টি ক্যাম্পের মধ্যে ৩৩৪টি ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে ২১৮টি ক্যাম্প রয়েছে। বেশিরভাগ ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নেয়ায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নেয়ার পর থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন, অপহরন, দখল ও চাঁদাবাজি ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৬টি স্থায়ী সেনানিবাস রাখার কথা বলা হয়। শান্তিচুক্তির ঘ ১৭(ক) ধারায় বলা হয়েছে, “সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি সই ও সম্পাদনের পর এবং জনসংহতি সমিতির সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসার সাথে সাথে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিডিআর) ও স্থায়ী সেনানিবাস (তিন জেলা সদরে তিনটি এবং আলীকদম, রুমা ও দীঘিনালা) ব্যতীত সামরিক বাহিনী, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সকল অস্থায়ী ক্যাম্প পার্বত্য চট্টগ্রাম হইতে পর্যায়ক্রমে স্থায়ী নিবাসে ফেরত নেওয়া হইবে এবং এই লক্ষ্যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হইবে।

আইন-শৃঙ্খলা অবনতির ক্ষেত্রে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে এবং এই জাতীয় অন্যান্য কাজে দেশের সকল এলাকার ন্যায় প্রয়োজনীয় যথাযথ আইন ও বিধি অনুসরণে বেসামরিক প্রশাসনের কর্তৃত্বাধীনে সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করা যাইবে। এই ক্ষেত্রে প্রয়োজন বা সময় অনুযায়ী সহায়তা লাভের উদ্দেশ্যে আঞ্চলিক পরিষদ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করিতে পারিবেন”।

একই ধারায় আরো গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি বলা হয়েছে তাহলো সেনাবাহিনী ফিরিয়ে আনার শর্ত বাস্তবায়িত হতে হবে ‘জনসংহতি সমিতির সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসার সাথে সাথে’..। অর্থাৎ চুক্তিতে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার ও সেনাবাহিনী ফিরিয়ে আনার বিষয়টি শর্তহীন নয়। বরং এর সাথে ‘জনসংহতি সমিতির সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসার’ শর্ত যুক্ত রয়েছে। এ নিয়ে সন্দেহের কোনো কারণ নেই যে, জেএসএসের সকল সদস্য অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি। জেএসএস ও তার সকল সদস্যকে অস্ত্র সমর্পণ করিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পারেনি।

চুক্তি অনুয়ায়ী ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জেএসএসের অস্ত্র সমর্পণের সময় চুক্তির বিরোধিতা করে অস্ত্র সমর্পণ না করে তাদেরই একটি অংশ জেএসএস থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইউপিডিএফ নামে নতুন সংগঠন গড়ে তোলে।যা পুনরায় ভেঙ্গে হয় ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক। এরপর স্বার্থগত দ্বন্দ্বে জেএসএসও ভেঙে জেএসএস (এমএন লারমা) নামে নতুন আরো একটি সংগঠন তৈরি হয়। এদিকে জেএসএসের মূলের সামরিক শাখাও সম্পূর্ণরূপে অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি।


তবে এই ৪ সংগঠনের সামরিক শাখার দৌরাত্ম্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বর্তমানে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। চাঁদা ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে সাধারণ নাগরিক তো দূরে থাক, সরকারী কর্মকর্তাদেরও বসবাস অসম্ভব। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনটি পাহাড়ী সংগঠনের নির্ধারিত চাঁদা দিতে না পারলে সেখানে বসবাস যে কারো জন্যই অসম্ভব।
পার্বত্য চট্রগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে যে কাজগুলো সরকারের করা উচিত
Image result for অস্ত্রপার্বত্য চট্রগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে যে কাজগুলো সরকারের করা উচিত

সরকার যদি আসলেই চায় পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরে আসুক তাহলে সরকারকে অবশ্যই নিন্মোক্ত পদক্ষেপ নিতেই হবে -
১) শান্তি চুক্তি বাতিল করা
২) পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন বাতিল করা
৩) অবৈধ সি এইচ টি কমিশন বাতিল ঘোষণা করা
৪) জে এস এস , ইউপিডিএফ নামক সকল সন্ত্রাসী সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষনা করা
৫) ইউএনডিপি কার্য্যক্রম বন্ধ করা
৬) খৃষ্টান, বৌদ্ধ, বিদেশী কতৃক পরিচালিত সকল এনজিও নিষিদ্ধ করা
৭) মিশনারি চার্চের কার্য্যক্রম বন্ধ করা
৮) সেনানিবাস এবং সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি করা
৯) পুরো সীমান্ত সীলগালা করে কঠোর নজরদারীতে রাখা
১০) সংবিধানবিরোধী আদিবাসী শব্দ যারা ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা
১১) গণতান্ত্রিক দেশে অবৈধ রাজা উপাধি ব্যবহার বাতিল করা
১২) উপজাতি কোটা বাতিল করা
১৩) আঞ্চলিক চেয়ারম্যান,সার্কেল প্রধান প্রথা বাতিল করা
১৪) উপজাতি রাজাকারদের বিচার করা
১৫ ) বাইরের দেশের সকল হস্তক্ষেপ বরদাস্ত না করা
১৬) চিরুনি অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের নির্মুল করা
১৭) উপজাতি নয় , বাঙ্গালী পরিচয়ে বাস করা
১৮ ) বাকী ৬১ জেলায় যে আইন সে একই আইন ৩ পার্বত্য জেলায় জারী করা
১৯ ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কল কারখানা চালু করা
২০ ) ৩ পার্বত্য জেলায় সরকারী জায়গা জমি ব্যতীত অন্যান্য জায়গা জমি সবার জন্য ক্রয়- বিক্রয় উন্মুক্ত করা
২১ ) দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের কঠোর হস্তে দমন করা
২২ ) সন্ত্রাসী সন্তু লার্মাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা
এরপরেও যদি তারা সন্ত্রাসীপনা না ত্যাগ করে তাহলে সরকারকে অবশ্যই “ সকল উপজাতিদের পার্বত্য চট্রগ্রাম থেকে বের করে দিয়ে তাদের আদিনিবাস মায়ানমারে পাঠিয়ে দিতে হবে”।
দেশের সব অঞ্চলেই ধর্ষণ সহ নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে, সেখানে পার্বত্য এলাকার আলাদা কেন?
Image result for চাকমাদেশের সব অঞ্চলেই ধর্ষণ সহ নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে, সেখানে পার্বত্য এলাকার আলাদা কেন?

বাংলাদেশে তিনটি পার্বত্য জেলায় পাহাড়িদের সংগঠনগুলো অভিযোগ করছে, ঐ এলাকায় ধর্ষণসহ পাহাড়ি নারীদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী একটি সংগঠনের গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত সাত মাসে পাহাড়ে কন্যা শিশুকে ধর্ষণসহ নারীদের উপর যৌন নির্যাতনের ১৯টি ঘটনা ঘটেছে।

কিন্তু ঢাকায় নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের অনেকে মনে করেন, দেশটির সব অঞ্চলেই ধর্ষণ সহ নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে, সেখানে পার্বত্য এলাকার ভিন্ন বা আলাদা কোনো চিত্র নেই।

পাহাড়িদের মানবাধিকার নিয়ে আন্দোলনকারি একটি সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশন নারী নির্যাতনের বিষয় নিয়েই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

সংগঠনটির প্রধান পল্লব চাকমা বলছিল, গত দশদিনেই পাহাড়ি শিশু কন্যাসহ চারজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে, সেকারণে তারা মনে করছেন,ঘটনাগুলো উদ্বেগজনকহারে বেড়েছে।

নারী অধিকার কর্মীরা কী বলছেন?
তবে বিশেষভাবে পার্বত্য এলাকাতেই পাহাড়ী নারীদের নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে, এমনটা মনে করেন না ঢাকায় নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের অনেকে।

তারা বলেছেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও নারীদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে এবং পার্বত্য এলাকার চিত্রও একই রকম।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রে নির্যাতনের শিকার নারীদের আইনী সহায়তা দেয়ার জন্য একটি সেল রয়েছে।

এই সেল এর প্রধান নীনা গোস্বামী বলছিল, "সারাদেশে ২০১৭ সালে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল ৮১৮টি, আর ২০১৮ সালে জুন পর্যন্তই ৫০৮টি ঘটনা ঘটেছে। তারমানে গত বছরের তুলনায় এটা অনেক বেশি।"

"তাই সমতলের সাথে মিলিয়ে দেখলে, পাহাড়ে যেএমন ঘটনা অনেক বেশি তা বলা যায় না। দেশের অন্যান্য এলাকার মতই একই চিত্র সেখানে। সারাদেশেই পরিস্থিতিটা উদ্বেগজনক।"

অভিযোগ কি শুধুই বাঙালীদের বিরুদ্ধে?
পার্বত্য তিন জেলায় ধর্ষণসহ পাহাড়ি নারীদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলোর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেখানে বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।

তবে সেখানকার বাঙ্গালীদের সংগঠনগুলো বলছে, সেখানে যৌন নির্যাতনের অনেক ঘটনায় পাহাড়িরাও জড়িত থাকছে, সে ব্যাপারে সেভাবে কথা বলা হয় না।

কাপেং ফাউন্ডেশনের পল্লব চাকমা অবশ্য বলছেন, দু'একটি ঘটনায় পাহাড়িরাও জড়িত থাকছে, এমন তথ্যও তারা এখন পাচ্ছে।


আরো বলে, "তবে আমরা একসময় গর্ব করে বলতাম,পাহাড়ে আমাদের চাকমা বা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় ধর্ষণ বলে কোনো শব্দ নেই। বর্তমানে আমরা লক্ষ্য করছি এবং একটা দুইটা ঘটনাও পাচ্ছি, যেখানে আমাদের সমাজের লোকজন এধরণের কাজে লিপ্ত হচ্ছে।"
http://archive.is/TTeGA