৪৭ আর ৭১ এর রাজাকার উপজাতিরা
৪৭ আর ৭১ এর রাজাকার উপজাতিরা
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর রাঙ্গামাটিতে চাকমাদের অন্য একজন রাজনৈতিক নেতা স্নেহ কুমার চাকমার নেতৃত্বে ধর্মের ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারিত হচ্ছে এই হিসেবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতের সাথে যুক্ত হবে এই আশায় ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিশেষ আলোচিত অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। যদিও তৎকালীন ইংরেজ জেলা প্রশাসক কর্নেল জি. এল. হাইড নিজেও উক্ত পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পতাকায় স্যালুট করেন তথাপি বাউন্ডারি কমিশনের প্রধান স্যার সিরিল রেডক্লিফ এর নেতৃত্বাধীন পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন অর্থনৈতিক এবং অবস্থানগত কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের সাথে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে মুসলিমরা সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও এলাকাটি পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্তটি অনেককে অবাক করলেও, তৎকালীন চাকমা রাজা নালিনাক্ষ রায় খুশিই হয়েছিল। কারণ সে জানত, ভারতের কংগ্রেস নীতি অনুযায়ী তারা স্বাধীন ভারতে কোন ধরনের স্থানীয় রাজা-রাজ কুমার বা রাজকীয় ক্ষুদ্র রাজ্য মেনে নেবে না। চাকমা রাজার পক্ষে ভারতে যোগ দিয়ে রাজত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হতো।


রাজা নলিনাক্ষের মৃত্যুর পর তার পুত্র ত্রিদিব রায় যখন ১৯৫১ সালে রাজা হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করে, সে পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করা শুরু করে। সে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য অর্থাৎ এমপি। কাপ্তাই হাইড্রো প্রজেক্টের ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারের সাথে প্রথম দিকে মতবিরোধ থাকলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রলোভনে সে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করা শুরু করে। রাজা ত্রিদিব রায় মনে করেছিল, পাকিস্তানের সামরিক শাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের স্বায়ত্বশাসন নিশ্চিত করবে।

তাই পাকিস্তান আমলের শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক এবং বেসামরিক আমলাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। লন্ডনভিত্তিক ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রিয়জিত দেব সরকার রচিত তার বই ‘দ্য লাস্ট রাজা অর ওয়েষ্ট পাকিস্তান’ বইটির তথ্য অনুযায়ী, ত্রিদিব রায়ের সিদ্ধান্ত ছিল আত্মস্বার্থ কেন্দ্রিক। নিজের রাজত্ব টিকিয়ে রাখতেই ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের সাথে হাত মিলিয়েছে। চাইছিল তার রাজত্ব এবং রাজ পরিবারের শাসন যেন বজায় থাকে।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া না দিয়ে ত্রিদিব রায় পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে না দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করে। চাকমা রাজা হিসেবে তার প্রভাবাধীন হেডম্যান-কারবারীদের ব্যবহার করে চাকমা যুবকদের দলে দলে রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি করে। তাদের ট্রেনিং এবং অস্ত্র দিয়ে লেলিয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে পাকিস্তানের পরাজয় অনুধাবন করতে পেরে ত্রিদিব রায় ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানি সৈন্যদের সহায়তায় মিয়ানমার হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়।

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বের হওয়া হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র’ (সশস্ত্র সংগ্রাম-১) নবম খণ্ডের (জুন, ২০০৯) ৯৩ পৃষ্ঠায় মে.জে. মীর শওকত আলী (বীর উত্তম) লিখেছেন, ‘চাকমা উপজাতিদের হয়ত আমরা সাহায্য পেতাম। কিন্তু রাজা ত্রিদিব রায়ের বিরোধিতার জন্য তারা আমাদের বিপক্ষে চলে যায়।’
অন্যদিকে ১৯৭১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা) এইচটি ইমাম তার বই ‘বাংলাদেশ সরকার-১৯৭১’-এর (মার্চ, ২০০৪) ২৬০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় প্রথম থেকেই নির্লিপ্ত এবং গোপনে পাকিস্তানীদের সাথে যোগাযোগ রাখছে।’
চাকমাদের কারনেই অন্যান্য জাতি উন্নয়নের সুবিধা পায়না
চাকমাদের কারনেই অন্যান্য জাতি উন্নয়নের সুবিধা পায়না চাকমাদের কারনেই অন্যান্য জাতি উন্নয়নের সুবিধা পায়না

ব্রিটিশ আমল থেকেই সরকারগুলো ধারাবাহিকভাবে পার্বত্যাঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে বাধার সন্মুখীন হয়ে এসেছে। প্রথম দিকে ব্রিটিশরা তাদের শাসন কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে কিছুসংখ্যক পাহাড়িকে শিক্ষিত করার উদ্যোগ নিলে চাকমা রাজপরিবার থেকে বাধা দেয়া হয়। ব্রিটিশরা ১৯৩৭-৩৮ খ্রিস্টাব্দে পাহাড়ে মাতৃভাষায় শিক্ষা দান চালু করেও এই পাহাড়ি নেতাদের আন্দোলনের কারণেই তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল।
এখানে উল্লেখ্য রাঙ্গামাটি হাই স্কুলও সাধারণ পাহাড়িদের শিক্ষিত করার ব্রত নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি, বরং বর্তমান চাকমা সার্কেল চীফের পূর্ব পুরুষ ভূবন মোহন রায়কে শিক্ষিত করার জন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ১৮৯০ সালে গড়ে তোলা হয়েছিল। পাকিস্তান আমলে, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাঙ্গামাটি কলেজ। কিন্তু এটি স্থাপনও সহজ কাজ ছিল না। কারণ তৎকালীন চাকমা সার্কেল চীফ ত্রিদিব রায় রাঙ্গামাটিতে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল। সে শুধু বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং এটি যাতে কোনভাবেই বাস্তবায়িত হতে না পারে সে চেষ্টাও করেছিল। এর জন্য সে প্রথমে ঢাকার রাজস্ব বোর্ডের সদস্য এস এম হাসানের কাছে এবং পরবর্তীতে তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার করিম ইকবালের কাছে চিঠি লিখে রাঙ্গামাটিতে কলেজ স্থাপনের প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিল। কিন্তু তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার সিদ্দিকুর রহমানের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত কলেজটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
চাকমা রাজপরিবার কর্তৃক সাধারণ পাহাড়িদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের পথে অন্তরায় সৃষ্টির আরো অনেক নির্মম ইতিহাস পাওয়া যাবে অঙ্কুর প্রকাশনী থেকে ২০০২ সালে প্রকাশিত শরদিন্দু শেখর চাকমার আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ও আমার জীবন (প্রথম খন্ড)’ এর বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক রাঙ্গামাটিতে মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে চাকমা সম্প্রদায়ের নেতৃত্বাধীন উপজাতি আঞ্চলিক দলগুলোর প্রবল বাঁধার মুখে পড়ে। পরবর্তীতে সরকার উপজাতি নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় করে উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ চালু করতে সমর্থ হয়।
চাকমা নেতৃত্বের একাংশের স্বার্থপরতা এবং একপেশে নীতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য সম্প্রদায়ের উপজাতি অধিবাসীগণ বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। চাকমা নেতৃত্ব কখনও অন্য জাতিগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের বিকাশ সহ্য করে না। চাকমা ব্যতিত অন্য জাতিগোষ্ঠির মধ্যেও যে মেধা রয়েছে তার অনেক উদাহরণ বর্তমান সমাজে রয়েছে। সামাজিকভাবে সহায়তার অভাব এবং পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষার প্রবৃদ্ধিতে বাধা সত্ত্বেও চাকমা ব্যতিত অন্যান্য সম্প্রদায়ের উপজাতিগণ নিজস্ব মেধা ও শ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে।
খাগড়াছড়ির ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের মধ্যে, গুইমারাতে মারমা সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের মধ্যে এবং বান্দরবানে চাকমা ব্যতিত অন্যান্য সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ এবং অধিবাসীগণও উল্লেখযোগ্যভাবে সমান তালে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে চাকমারা অযাচিতভাবে প্রভাব বিস্তার না করলে অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠির আরো এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো। চাকমাদের সৃষ্ট অশান্ত এই পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা স্বাভাবিক হলে অপার সম্ভাবনাময় এই অঞ্চলে ব্যাপক হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটত।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন প্রকার কল-কারখানা, পর্যটনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটত। সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিতে বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক হতো। ঐতিহাসিকভাবে চাকমা নেতৃত্বের স্বার্থপরতাজনিত এই বিতর্কিত ভূমিকা দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির স্বার্থবিরোধী হয়ে দেখা দিয়েছে।
চাকমা সম্প্রদায়ের ৪৬ ধরনের গোত্রের মধ্যে অধিকাংশ গোত্র সাধারণ উপজাতি ও বাঙালিদের সাথে মিলে মিশে এক সাথে কাজ করতে চায়। ঐতিহাসিকভাবে চাকমা সম্প্রদায়ের বিতর্কিত প্রশ্নবৃদ্ধ ভূমিকা সাধারণ পাহাড়ী, বাঙালিদের জনজীবন অতিষ্ঠ করাসহ দেশের সামগ্রীক উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বার্থান্বেষী গুটি কয়েক চাকমা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের আচরণ এবং কার্যক্রমের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরে আসছে না।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি পুনরুদ্ধারে এবং উক্ত অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য ব্যাপক শিল্পায়ন প্রয়োজন। যুগে যুগে চাকমা সম্প্রদায়ের নেতৃত্বের স্বার্থপরতার জন্য উচ্চবিত্তদের সন্তানগণ শিক্ষার আলো পেলেও, সাধারণ পাহাড়ীদের সন্তানগণ শিক্ষাসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জাতি/গোষ্ঠী নিজ নিজ সম্প্রদায়ের জনগণের আগামী প্রজম্মকে উন্নত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চাকমা সম্প্রদায়ের চিহ্নিত কিছু নেতৃবৃন্দের নিজ জাতিগোষ্ঠীর স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে সহমত প্রকাশ না করে, নিজ দেশ বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে নিজেকে আরো উন্নত গর্বিত বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে, এই প্রত্যাশা সকলের।
জন্তু লারমা দেশদ্রোহী রাজাকার হয়েও কিভাবে সে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রতিমন্ত্রীর বিশেষ সুবিধা পায়?

Image result for সন্তু লারমাজন্তু লারমা দেশদ্রোহী রাজাকার হয়েও কিভাবে সে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রতিমন্ত্রীর বিশেষ সুবিধা পায়?
লাখ লাখ বাঙালি হত্যাকারী সন্তু কিভাবে আইনের আওতামুক্ত থাকে? দেশদ্রোহী রাজাকার হয়েও কিভাবে সে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রতিমন্ত্রীর বিশেষ সুবিধা পায়?
গত ৭ এপ্রিল সন্তু বলেছে, দেশের শাসকগোষ্ঠী জুম্মদের সংস্কৃতি ধ্বংস করতে চায়। সেইসাথে সে আরো বলেছে, শাসকগোষ্ঠী শান্তিচুক্তির গলা টিপে ধরেছে। শাসকগোষ্ঠীর হাতে জুম্মরা নিরাপদ নয়।”
উল্লেখ্য এর আগেও এই সন্তু প্রকাশ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দেশ এবং দেশের সরকারবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করেছে। কিন্তু সরকার এই সন্তুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। উল্টো সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিমন্ত্রী ও বিশেষ সুবিধায় থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের উচ্ছেদ করার জন্য চরম ঔদ্ধত্যমূলক ও রাষ্ট্রদোহিতামূলত কর্মকা- প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছে। উপজাতি সন্ত্রাসীদের মুখপাত্র সন্তু এবং তার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি।
সন্তুর উদ্দেশ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালি উচ্ছেদ করে একচ্ছত্রভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি সন্ত্রাসীদের কর্তৃত্ব স্থাপন। সন্তুর এই ঘৃণ্য কাজের প্রতিবাদ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান। তিনি বলেছেন, ‘সন্তু চায় না, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিরা থাকুক। তাকে (সন্তু) এই অধিকার কে দিয়েছে? ওই ব্যক্তি কিভাবে ওখান থেকে বাঙালিদের সরে যেতে বলে? সে কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নয়। তার বাংলাদেশের আইডেন্টিটি নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকা কি ছিল তাও কেউ জানে না।
বাস্তবে স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে যারা মুখে ফেনা তুলে তারা মূলত দেশের এক দশমাংশ ভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো চিন্তাই করে না। বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী নেতা সন্তু গংদের চক্রান্ত তাদেরকে বিচলিত করে না।
অথচ বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী নেতা সন্তুর এই অপতৎপরতার প্রধান উদ্দেশ্য হলো- বাংলাদেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা একটি দেশ প্রতিষ্ঠা করা। আর এর পেছনে কাজ করছে মার্কিন সম্রাজ্যবাদী শক্তি ও ইহুদী লবিং।
সিএচটি কমিশন হলো ইহুদী সম্রাজ্যবাদীদের দোসর। ফলে পাহাড়ে তৈরি হয়েছে দেশবিরোধী কিছু উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠন। জেএসএস এবং ইউপিডিএফ যাদের মধ্যে প্রধান। এরা সশস্ত্র এবং সংগঠিত। দেশবিরোধী আর এই ষড়যন্ত্রের মূল হোতারা কিন্তু শুধু বিদেশী নয়, দেশী হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন, সোশাল ওয়ার্কার, মানবাধিকার কর্মী, এনজিও তথাকথিত সুশীল ব্যক্তি ইত্যাদি ছদ্মবেশে পাহাড়ে অবস্থান করে এরা বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি সন্ত্রাসীদের অর্থ সহায়তা দিয়ে চলেছে আর এই অর্থের ৯০ ভাগই ব্যবহার করা হচ্ছে মায়ানমার ও ভারত থেকে অস্ত্র সংগ্রহে।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নের নাম করে বিভিন্ন সংস্থা পাহাড়ে এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি সন্ত্রাসীদেরকে মদদ দিয়ে চলেছে এমনকি এরা কূটনৈতিক সহায়তাও পাচ্ছে বিদেশ থেকে।
বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সন্তু আজকে পাহাড়ে বাঙালি উচ্ছেদ করে শুধু দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রেই লিপ্ত নয়, বরং সে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী ঘৃণ্য নীলনকশা বাস্তবায়নে অনেকটাই অগ্রসর হয়েছে। উল্লেখ্য, এই সন্তুর পূর্বপুরুষরা স্বাধীনতার সময়ও পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ অবলম্বন করে ঘৃণ্য রাজাকারের ভূমিকায় ছিল এবং মুক্তিযোদ্ধা ও এদেশবাসীকে হত্যা করেছিলো।
বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সন্তু পাহাড় থেকে বাংলাদেশীদের হটানোর নেপথ্যে ‘উপজাতি’দেরকে ‘আদিবাসী’ বলে প্রচার করছে। যা বাংলাদেশের সংবিধান বিরোধী। কারণ সংবিধানে এসব নৃ-গোষ্ঠীকে ‘উপজাতি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সন্তু ও রাজাকার পুত্র ত্রিদিব অতীতে বলেছিলো- ‘আদিবাসী নয়, সবাই উপজাতি’। কিন্তু বর্তমানে হঠাৎ করে কয়েক বছর ধরে এই কুটকৌশলের অধিকারী বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সন্তু কেন আদিবাসী ইস্যু নিয়ে নাক গলাচ্ছে?
সরকারের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সন্তু কিছুদিন পর পর নানা হুমকি ও হুঁশিয়ারী দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গ্রুপকে উস্কে দিচ্ছে। যার কারণে প্রতিনিয়ত ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে পাহাড়। এর আগেও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সন্তু নানা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে হাজার হাজার বাঙালিকে শহীদ করেছিলো।

১৯৭৯ সালের ১৯শে ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ২টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত সময়ে ঘুমন্ত মানুষের উপর রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলা সদর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম কলঙ্কজনক অধ্যায় লংগদু গণহত্যা করে ৩৮ হাজার বাঙালিকে হত্যা করেছিলো বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী নেতা সন্তুর নেতৃত্বে জেএসএস।
বাঙালিদের প্রত্যেকটি গ্রামে অগ্নি সংযোগসহ লুটতরাজ, সামনে যে বাঙালিকে পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছে, বাঙালি নারীদের গণসম্ভ্রমহরণ ও পরে হত্যা, নরকীয়তা সৃষ্টি করেছিলো খুনি সন্তুর নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর সশস্ত্র সংগঠন শান্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধারা ও উপজাতি সন্ত্রাসী হায়নারা। এছাড়া কাউখালী গণহত্যা, বেতছড়ি গণহত্যাসহ প্রায় ১৫টির মতো গণহত্যার মাধ্যমে এই সন্তু সে প্রায় লাখ খানেক বাঙালিকে হত্যা করেছে।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে কোনো প্রকার স্বাধীনতা বিরোধীদের অভয়ারণ্য হতে পারে না। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয় প্রতিনিয়ত দেশবিরোধী, সরকারবিরোধী এবং সংবিধানবিরোধী বক্তব্য দেয়ার পরও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সন্তুর বিরুদ্ধে এখনো আইনের প্রয়োগ করা হয়নি। তাকে দেয়া প্রতিমন্ত্রীর সুবধিা প্রত্যাহার করা হয়নি।
অথচ যারা পাহাড়ে বাঙালি উচ্ছেদের কথা বলে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী। সংবিধানবিরোধী। তারা বাংলাদেশবিদ্বেষী। দেশবিরোধী এসব কুচক্রী ও ষড়যন্ত্রকারীদের এদেশে থাকার, চলার, সংগঠন করার, বক্তব্য দেয়ার কোনো অধিকার নেই। তারা ১৯৭১-এর শান্তিকমিটির মতো দেশে অশান্তি বিস্তার করছে, বিদ্বেষ তৈরি করছে। বৈষম্য লালন করছে। এরা ষড়যন্ত্রকারী এবং কুচক্রী। এরা এদেশে অবাঞ্ছিত। এদের উৎখাত করতে দেশবাসীকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।


সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের পরই পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে।


সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের পরই পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে।


শান্তি-সম্প্রীতি স্থাপনে দুই দশক আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হলেও এখনো পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি। বরং পাহাড়ে হত্যা, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, বেপরোয়া চাঁদাবাজিসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে।

‘অধিকার আদায় আর মুক্তির সংগ্রাম’- এই স্লোগান সামনে রেখে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠনগুলো। এসব সংগঠনগুলোর সশস্ত্র হুমকির মুখে অসহায় সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালিসহ সব পেশাজীবী।
এসব পাহাড়ি সংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তারের কারণে মাঝেমধ্যেই রক্তাক্ত হয়ে ওঠে সবুজ পাহাড়। সংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তারের ধারাবাহিকতায় খুনের বদলে খুন, অপহরণের বদলে অপহরণ নীতি চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
সম্প্রতি যে ঘটনাগুলো ঘটলো তা আরও ভয়াবহ। রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলা পরিষদ এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হয় খাগড়াছড়ি জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য, নানিয়াচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেএসএস এমএন লারমা গ্রুপের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শক্তিমান চাকমা।
তার শেষকৃত্যে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে মারা যায় বিভিন্ন পাহাড়ি সংগঠনের চার নেতা ও একজন মাইক্রোবাসচালক নিরীহ বাঙালি সজিব। এ চার নেতা হল- ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দলের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা (৫০) ওরফে বর্মা, একই দলের কেন্দ্রীয় নেতা কনক চাকমা (৩৮), সুজন চাকমা (৩০) এবং সেতু লাল চাকমা (৩৮)।
বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে চারটি। এগুলো হলো- পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), জনসংহতি সমিতি সংস্কারবাদী (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে জনসংহতি সমিতির পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করলে এর বিরোধিতা করে প্রসিত চাকমার নেতৃত্বাধীন একদল পাহাড়ি ছাত্র ও যুবক। পরে ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে তাদের নেতৃত্বে গঠিত হয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
এরপর দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালে বিভক্তি দেখা দেয় জনসংহতি সমিতির মধ্যে। ২০০৭ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি ভেঙে রূপায়ন দেওয়ান, সুধাসিন্ধু খীসা, শক্তিমান চাকমা ও তাতিন্দ্র লাল চাকমাসহ কিছু নেতাকর্মীর নেতৃত্বে গঠিত হয় জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) দল।
সর্বশেষ ইউপিডিএফ ভেঙে আত্মপ্রকাশ করে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক। এসব দলের নেতাকর্মীরা মরিয়া পাহাড়ে আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে। এ নিয়ে চলছে খুনের বদলা খুন। বলি হচ্ছে অনেকে। গত দুই দশকে প্রাণ হারিয়েছে এসব দলের প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক।নতুন সংগঠন করার ছয় মাসের মাথায় শুক্রবার খুন হলেন তিন সহকর্মীসহ ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দলের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা। জানা গেছে, তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা ছিল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) প্রভাবশালী শীর্ষনেতা। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধের জেরে দল থেকে বের করে দেয়া হয় তাকে।
এরপর মূল সংগঠন ভেঙে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর তার নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে ‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’ নামে আরেক পাল্টা সংগঠন।
সংগঠনটি আত্মপ্রকাশের মাত্র ২০ দিনের মাথায় ৫ ডিসেম্বর রাঙামাটির নানিয়াচরে সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউপিডিএফ নেতা অনাদি রঞ্জন চাকমাকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এর ১০ দিনের ব্যবধানে ১৫ ডিসেম্বর রাতে নানিয়াচরের সীমান্তে বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের ধামাইছড়া এলাকায় ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয় ইউপিডিএফের সংগঠক অনল বিকাশ চাকমা ওরফে প্লুটোকে।
এরপর ইউপিডিএফের সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন চাকমাকে খাগড়াছড়িতে হত্যাসহ তাদের আরও কয়েক সদস্য ও সমর্থককে খুন করা হয়।
এছাড়া ১৮ মার্চ রাঙ্গামাটি জেলা সদরের কুতুকছড়ি আবাসিক স্কুল এলাকার একটি বাড়িতে হানা দিয়ে অস্ত্রের মুখে মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। অপহরণের ৩৩ দিন পর ১৯ এপ্রিল রাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মধুপুর তেতুল তলার এপিবিএন স্কুলগেট এলাকায় মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে ছেড়ে দিয়ে যায় অপহরণকারীরা।
পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয় সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালিরা বলছে, মূলত চাঁদার লোভেই অধিকার আদায়ের আন্দোলনের আড়ালে সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের অনিবন্ধিত আঞ্চলিক দলগুলো।
চাঁদার রাজ্যে আধিপত্য বিস্তারের নেশায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র আঞ্চলিক সংগঠনগুলো বরাবরই বদ্ধ উন্মাদ। হিংসা-হানাহানি, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য অব্যাহত রেখেছে সব কটি সংগঠন। থেমে নেই নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত।
সন্ত্রাস দমনে পার্বত্যাঞ্চলে নিয়োজিত সেনাবাহিনী যথেষ্ট তৎপর। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলোকে বেশির ভাগ সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নেয়ায় এসব সন্ত্রাসী সংগঠন আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের পর থেকে এই অঞ্চলে খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজি ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে।

যে কারণে পাহাড়ে পাল্টাপাল্টি খুন!

যে কারণে পাহাড়ে পাল্টাপাল্টি খুন!




রাঙামাটি পাহাড়ে চলছে পাল্টাপাল্টি খুনের ঘটনা। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে খুনের শিকার হয়েছেন জেলার নানিয়াচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা এবং ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’ দলের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ ৫ পাহাড়ি।

এনিয়ে থমথমে হয়ে উঠেছে পাহাড়ের পরিস্থিতি। জনমনে ভর করেছে নানা শঙ্কাভয় ও আতঙ্ক। আঞ্চলিক রাজনীতিতে আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারে একের পর এক খুনাখুনি হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি।

শুক্রবার প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন, ‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’ দলের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমাএকই দলের কেন্দ্রীয় নেতা কনক চাকমাসুজন চাকমা ও সেতু লাল চাকমা।

নানিয়াচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতি সংস্কারবাদী (এমএন লারমা) দলের শীর্ষনেতা অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে হত্যার মাত্র ১ দিনের মাথায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছেবর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে চারটি। এগুলো হলো- পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)জনসংহতি সমিতি সংস্কারবাদী (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে জনসংহতি সমিতির পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করলে এর বিরোধিতা করে প্রসিত চাকমার নেতৃত্বাধীন একদল পাহাড়ি ছাত্র ও যুবক।

পরে ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে তাদের নেতৃত্বে গঠিত হয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এরপর দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালে বিভক্তি দেখা দেয় জনসংহতি সমিতির মধ্যে।
২০০৭ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি ভেঙে রূপায়ন দেওয়ানসুধাসিন্ধু খীসাশক্তিমান চাকমা ও তাতিন্দ্র লাল চাকমাসহ কিছু নেতাকর্মীর নেতৃত্বে গঠিত হয় জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) দল।

সর্বশেষ ইউপিডিএফ ভেঙে আত্মপ্রকাশ করে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক। এসব দলের নেতাকর্মীরা মরিয়া পাহাড়ে আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে। এ নিয়ে চলছে খুনের বদলা খুন। বলি হচ্ছে অনেকে।
গত দুই দশকে প্রাণ হারিয়েছে এসব দলের প্রায় ৫ শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক। দল প্রতিষ্ঠার ৬ মাসের মাথায় খুন হল ৩ সহকর্মীসহ ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দলের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা।

জানা যায়তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা ছিল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) প্রভাবশালী শীর্ষনেতা। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধের জেরে দল থেকে বের করে দেয়া হয় তাকে।

এরপর মূল সংগঠন ভেঙে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর তার নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকনামে আরেক সংগঠন। সংগঠনটি আত্মপ্রকাশের মাত্র ২০ দিনের মাথায় ৫ ডিসেম্বর রাঙামাটির নানিয়াচরে সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউপিডিএফ নেতা অনাদি রঞ্জন চাকমাকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এর ১০ দিনের ব্যবধানে ১৫ ডিসেম্বর রাতে নানিয়াচরের সীমান্তে বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের ধামাইছড়া এলাকায় ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয় ইউপিডিএফের সংগঠক অনল বিকাশ চাকমা ওরফে প্লুটোকে।

এরপর ইউপিডিএফের সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন চাকমাকে খাগড়াছড়িতে হত্যাসহ তাদের আরও কয়েক সদস্য ও সমর্থককে খুন করা হয়।

এছাড়া গত ১৮ মার্চ রাঙামাটি জেলা সদরের কুতুকছড়ি আবাসিক স্কুল এলাকার একটি বাড়িতে হানা দিয়ে অস্ত্রের মুখে মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

অপহরণের ৩৩ দিন পর ১৯ এপ্রিল রাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মধুপুর তেতুল তলার এপিবিএন স্কুলগেট এলাকায় মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে ছেড়ে দিয়ে যায় অপহরণকারীরা। মুক্তির জন্য বেশকিছু শর্তসহ ১০ লাখ টাকা দিতে হয়েছে বলে দাবি অপহৃতদের পরিবারের।

এসব ঘটনার জন্য তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাকে দায়ী করে আসছিল ইউপিডিএফ। এছাড়া বর্মার নেতৃত্বাধীন দলে জনসংহতি সমিতির সংস্কারবাদী (এমএন লারমা) দলও যুক্ত বলে অভিযোগ ইউপিডিএফের।

এসব ঘটনায় বিবদমান দুটি দলের সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয় খুনের বদলা খুন। সর্বশেষ শুক্রবার খুন হলেন দলের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমাসহ ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’ দলের পাঁচ নেতা।

আগের দিন বৃহস্পতিবার জেএসএস সংস্কারবাদী নেতা ও নানিয়াচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলিতে হত্যা করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এসব ঘটনার জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করা হলেও বরাবরের মতো তা অস্বীকার করে আসছে দলটি।

মন্টি ও দয়াসোনা চাকমাকে অপহরণ মামলায় মূল আসামি ছিলেন শক্তিমান চাকমা ও তপন জ্যোতি চাকমা। শেষ পর্যন্ত আদালতের কাঠগড়ায় যাওয়ার আগেই খুনের শিকার হয় এ দুই আসামি।