বখতিয়ার খলজি নালন্দা ধ্বংস করেননি, অভিযানের প্রায় ১০০ বছর পরও নালন্দা সচল ছিল
Image result for নালন্দাবখতিয়ার খলজি নালন্দা ধ্বংস করেননি, অভিযানের প্রায় ১০০ বছর পরও নালন্দা সচল ছিল

নালন্দাকে নিয়ে আলোচনা চালানোর মূল লক্ষ্য হচ্ছে ভারতে মুসলিম শাসন কতটা ‘বর্বর’ ছিল সেটা প্রমাণ করা।বলা হয়ে থাকে-ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি কতটা অসভ্য হলে বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের মত এমন একটি কাজ করতে পারে, বই পুড়িয়ে দিতে পারে।একই সাথে এই বক্তব্য আরো প্রসারিত হয়ে বলার চেষ্টা করে যে-মুসলিম শাসনের অত্যাচার, নির্যাতন ও নিষ্পেষণের কারণে ভারতবর্ষ থেকে বৌদ্ধ ধর্মের আপাত বিলুপ্তি ঘটে।অথচ এই বক্তব্য কতটা মিথ্যা ও প্রতরনাপুর্ন সেটা যেকোন ক্রিটিকাল ইতিহাস পাঠকের কাছে ধরা পরতে বাধ্য।শত শত বছরের ব্রাহ্মণ্যবাদী অত্যাচারে অতিষ্ট বৌদ্ধদের তাদের উৎপত্তিস্থল থেকে হারিয়ে যাওয়ার ইতিহাস ঢাকতে এই মিথ্যাচার।
মুক্তমনার রাজেশ তালুকদার তার এক প্রবন্ধে লিখে; শত শত বছর ধরে অবদান রেখে আসা একটি সভ্য, উন্নত জাতি তৈরী ও জ্ঞান উৎপাদনকারী নিরীহ এই প্রতিষ্ঠানটি ১১৯৩ খ্রষ্টাব্দে তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী আক্রমন করে ধ্বংস করে ফেলেন। তার আক্রমনের বর্বরতা এত ভয়াবহ আকারে ছিল এ সম্পর্কে পারস্য ইতিহাসবিদ মিনহাজ তাঁর “তাবাকাতে নাসিরি” গ্রন্থে লিখেছেন “হাজার হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষুকে আগুনে পুড়িয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে সেখানে ইসলাম প্রচারের চেষ্টা করেন খিলজী” এরপর আগুন লাগিয়ে দেন লাইব্রেরীর ভবন গুলোতে। লাইব্রেরীতে বইয়ের পরিমান এত বেশী ছিল যে কয়েক মাস সময় লেগেছিল সেই মহা মূল্যবান বই গুলো পুড়ে ছাই ভষ্ম হতে(জনশ্রুতি আছে ছয় মাস) [রাজেশ তালুকদার, নালন্দার ধ্বংস বনাম ধর্মীয় বিজয়,মুক্তমনা ব্লগ,April ১৯, ২০১১, https://blog.mukto-mona.com/2011/04/19/15819/ ]

অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এমন একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে ‘মুক্তমনা’ রাজেশ লিখলেন অথচ তাঁর তথ্য সুত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন ইন্টারনেট! এই বিষয়ে কোন গবেষণা পড়ার বা জানার চেষ্টাই নেই?এভাবে প্রচলিত ধারণা দিয়ে কি মুক্তবুদ্ধি চর্চা করা যায়?
আসল ঘটনা
রাজা শশাঙ্ক (সম্ভাব্য রাজত্ব ৫৯০-৬২৫ খ্রি.) এবং হর্ষবর্ধনের (৫৯০–৬৫৭) মধ্যকার দন্ধ এতটাই তিক্ত হয়ে উঠে যে, ব্রাহ্মণরা তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আসলে তাদের মধ্যকার ঐ দন্ধ নির্দেশ করে ঐ সময়কাঁর বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণদের মধ্যে রাজনৈতিক ও ক্ষমতার লড়াই এবং এর ফলাফল হচ্ছে উত্তর ভারত থেকে বৌদ্ধদের গন বিতারন ও গনহত্যা।যাই হোক, হর্ষবর্ধন একবার এই হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গেলেও পরবর্তিতে এক ব্রাহ্মণ গুপ্ত ঘাতকের হাতে তার মৃত্যু হয়।এরপর তীরহুতের রাজা অর্জুন (চীনা সোর্সে তাকে A-lo-na-shun নামেও দেখা যায়)সিংহাসান দখল করে যে কিনা হর্ষবর্ধনের সাথে নিরাপত্তা চুক্তিতে ছিল বা বলা হয়ে থাকে সে তার প্রতিরক্ষার দায়িত্বে ছিল।হেন্স বাকের তাকে চিত্রিত করেছে হর্ষবর্ধনে অধিনস্ত হিসেবে(Hans Bakker, The World of the Skandapurāṇa, BRILL, 2014, P,128)।

অর্জুন সিংহাসনে আরোহন করার পর একদল ব্রাহ্মণ দুর্বিত্তের নেতৃত্বে নালন্দায় আক্রমণ হয় এবং সেটা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়।(D.D. Kosambi, The Culture and Civilisation of Ancient India in Historical Outline, Lahore 1991:180)। এটা হচ্ছে নালন্দা ধ্বংসের মূল ঘটনা।তবে এটি সে সময় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়নি।

অর্জুন কর্তৃক চীনা প্রতিনিধি ওয়াং হিউয়েন টিসি (Wang Hiuen Tsee)কে আক্রমণ করা হলে সে নেপালে পালিয়ে যায় (S.N. Sen, Ancient Indian History and Civilization, New Age International, 1999:261)।এরপর নেপালের রাজা অর্জুনকে আক্রমণ করে গ্রেফতার করে চীনে পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তিতে নেপালের রাজার সহযোগিতায় নালন্দা মেরামত করা হয় এবং প্রায় ১৩০০ সাল পর্যন্ত চালু থাকে।

তাহলে ১৩০০ সালের পর কিভাবে চালু থাকা নালন্দা ধ্বংস হয়ে গেল? এর কনক্রিট উত্তর দিয়েছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর DN JHA। লিখে যে; ব্রাহ্মন্যবাদ ও বৌদ্ধদের মধ্যকার চলতে থাকা আঘাত-প্রতিঘাতে নালন্দা ধ্বংস হয়।এই ক্ষেত্রে প্রফেসর অনেকগুলো তিব্বতি রেফারেন্সও দিয়েছে। (http://archive.is/txqSk )

স্বাভাবিকভাবে এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে বখতিয়ার খলজি যে অভিযান চালান সেটা কোথায় এবং এর ফলাফল কি? ১১৯৯ সালে বখতিয়ার খলজি দক্ষিন বিহার অভিযান চালান এবং রাজা গোবিন্দপাল দেব কে পরাজিত করেন।(M. Habib in I. Habib, Medieval India 1, Delhi, 1992)।
একই সময়ে বখতিয়ার খলজি উদন্তপুরে অভিযান চালান যেটি ছিল একটি বৌদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইরানি ঐতিহাসিক মিনহাজ আদ দিন সিরাজী ঐ ঘটনার প্রায় ৪১ বছর পর বিহারে গিয়ে লোক মুখে শুনে সেই ঘটনা বর্নণা করেন তাঁর বিখ্যাত বই ‘তাবাকত-ই-নাসিরি’ তে।তার বর্ননা মতে বুঝা যায় যে,বখতিয়ার খলজি সেই অপারেশনে ভুল করে উদন্তপুরের ঐ প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করেন (কেননা বিহারটি বাহির থেকে দেখতে সামরিক দুর্গের মত দেখাচ্ছিল।পরে তিনি বুঝতে পারেন আসলে এটি ছিল একটি কলেজ] এবং প্রতিষ্ঠানের অধিবাসী সবাই (সবাই ছিল মাথা কামানো ব্রাহ্মণ) সেসময় নিহত হয়।[Tabaqat-i-Nasiri in Elliot and Dowson 1861 ii:306 ]।

তাবাকাত এ নাসিরির লিখক বলছেন মারা গেছে ব্রাহ্মণ আর নাস্তিকেরা বলছে বৌদ্ধ হত্যা করা হয়েছে?
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, প্রফেসর DN JHA মিনহাজের পুরো বক্তব্যটি তুলে ধরেছে;

“He [ Bakhtiyar Khalji] used to carry his depredations into those parts and that country until he organized an attack upon the fortified city of Bihar. Trustworthy persons have related on this wise, that he advanced to the gateway of the fortress of Bihar with two hundred horsemen in defensive armour, and suddenly attacked the place. There were two brothers of Farghanah, men of learning, one Nizamu-ud-Din, the other Samsam-ud-Din (by name) in the service of Muhammad-i-Bakht-yar ; and the author of this book [ Minhaj] met with at Lakhnawati in the year 641 H., and this account is from him.

These two wise brothers were soldiers among that band of holy warriors when they reached the gateway of the fortress and began the attack, at which time Muhammad-i-Bakhtiyar, by the force of his intrepidity, threw himself into the postern of the gateway of the place, and they captured the fortress and acquired great booty. The greater number of inhabitants of that place were Brahmans, and the whole of those Brahmans had their heads shaven; and they were all slain. There were a great number of books there; and, when all these books came under the observation of the Musalmans, they summoned a number of Hindus that they might give them information respecting the import of those books; but the whole of the Hindus were killed. On becoming acquainted (with the contents of the books), it was found that the whole of that fortress and city was a college, and in the Hindui tongue, they call a college Bihar” (Tabaqat-i-Nasiri, English tr. H G Raverty, pp.551-52) [How History Was Unmade At Nalanda, D N Jha, JULY 9, 2014, kafila.org ]। প্রফেসর DN JHA এরপর মন্তব্য করে;

The above account mentions the fortress of Bihar as the target of Bakhtiyar’s attack. The fortified monastery which Bakhtiyar captured was, “known as Audand-Bihar or Odandapura-vihara” (Odantapuri in Biharsharif then known simply as Bihar). This is the view of many historians but, most importantly, of Jadunath Sarkar, the high priest of communal historiography in India (History of Begal, vol. 2, pp.3-4). Minhaj does not refer to Nalanda at all: he merely speaks of the ransacking of the “fortress of Bihar” (hisar-i-Bihar).


বস্তুত বখতিয়ার নালন্দাতে জাননি।তিনি অভিযান চালিয়েছেন উদন্তপুরে,কেননা এটাই ছিল সেসময়ের রাজধানী।নালন্দার পরিচিতি ছিল কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের কারনে,এরকম মহাবিহার (বিশ্ববিদ্যালয়) তখন আরো ছিল।
বখতিয়ার খলজি সহ মুসলিম শাসকদেরকে যে ঢালাওভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংসের অপবাদ দেয়া হয় তাঁর কারণ উপরে উল্লেখ করেছি। সেগুলো যে ঢাহা মিথ্যা তাঁর আরো কয়েকটি প্রমাণ দিচ্ছি। তিব্বতি স্কলার-মঙক ধর্মস্বামী ১২৩৪ থেকে ১২৩৬ সালে বিক্রমশীলা মহাবিহার (ভারতে ‘বিহার’ মানে ‘কলেজ’)এর প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করে,যেটি কিনা বখতিয়ার খলজি তাঁর উদন্তপুর অভিযানের সময় ধ্বংস করার কথা (যেমনটা ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগন অভিযোগ করে)।অথচ ধর্মস্বামী ব্যক্তিগতভাবে সে সময়কার অবস্থান থেকে দেখতে পায় যে প্রায় ৮০ টি বৌদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তখনো যথাযথভাবে নালন্দা ও তার আশেপাশে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে [G. Roerick, Biography of Dharmasvamin (Chag lo-tsa-ba Chos-rje-dpal) a Tibetan Monk Pilgrim, Patna, 1959:64-65]।

সাম্প্রতিক গবেষণায় এমনই চিত্র তুলে ধরেছে Altshuler University এর রিলিজিয়াস স্টাডিসের প্রফেসর Johan Elverskog তার Buddhism and Islam on the Silk Road বইয়ে বৌদ্ধদের সাথে মুসলমানদের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে বলে; “not only did local Buddhist rulers make deals with the new Muslim overlords and thus stay in power, but Nalanda also continued as a functioning institution of buddhist education well into the thirteenth century. One Indian master, for example, was trained and ordained at Nalanda before he travelled to the court of Khubilai Khan. We also know that Chinease monks continued to travel to India and obtain Buddhist texts in the late fourteenth century” (Johan Elverskog, Buddhism and Islam on the Silk Road, Philadelphia: University of Pennsylvania Press, 2010. pp. 1-3). তাঁর মানে হচ্ছে, বখতিয়ার খলজির অভিজানের প্রায় ১০০ বছর পরও নালন্দা সচল ছিল।

এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়, বখতিয়ার খলজি কেন ভুলে উদন্তপুর বিহার আক্রমণ করলেন।তিব্বতি এক সন্ন্যাসী (ভিক্ষু) পণ্ডিত কুলাচার্য জ্ঞানানশ্রী (Kulacharya Yanansri) তার ‘ভাদ্র কল্পদ্রুম’ (Bhadra Kalpadrum) –এ বলেন যে সে সময় বৌদ্ধদের নিজেদের মধ্যেও ভিন্ন মত, ধারা বিরাজ করছিল। ‘সেদিন বৌদ্ধভিক্ষু ও পণ্ডিতগণের মধ্যে কলহ ও বিবাদ এতই উত্তেজনার শিখরে ওঠে যে তাদের এক পক্ষ [ব্রাহ্মণ রাজা লক্ষণ সেনের রাজত্বকালে] তুর্কীর মুসলিম আক্রমণকারীদেরকে তাদের ওখানে আক্রমণ চালাতে প্রতিনিধি পাঠায়। লক্ষণ সেনের রাজত্ব কালে এই প্রেরিত প্রতিনিধিত্ব লক্ষণ সেনের ইচ্ছার প্রকাশ ঘটায়। তিনি চেয়েছিলেন, বুদ্ধদের ক্ষমতা সেখানে ভেঙ্গে পড়ুক। এই উদ্দেশ্যে তিনি ভিক্ষুদের মধ্যে বিবাদের সূত্র লালন করেন ও দুই বিবাদীর এক পক্ষকে বিদেশিদের সাহায্য নিতে উৎসাহ দান করেন। এতে তিনি তাঁদের দুর্বল করে ফায়দা নিতে চেয়েছিলেন ।ফলাফল যেটা হল, বখতিয়ার খলজিকে যেভাবে গাইড করা হয়েছে সম্ভবত সেভাবেই তিনি অভিযান পরিচালনা করেন। বিহার আক্রমণ প্রতিহত করতে যারাই বাঁধা দিয়েছে সৈন্যরা তাদেরকে হত্যা করেছে। মিনহাজের বিবরণে স্পষ্ট হয় বখতিয়ার জানতেন না যে উদন্তপুর ছিল বুদ্ধদের একটি শিক্ষাপীঠ। কিন্তু সেখানে সারিবদ্ধ পুস্তক দেখে অনুসন্ধান করে জানেন যে সেটি কোন সৈন্যদূর্গ ছিলনা (Journal of Varendra Research Society, 1940 cited in A. Mu’min Chowdhury, The Rise and Fall of Buddhism in South Asia, London: London Institute of South Asia, 2008)।এই বক্তব্য প্রায় সবগুলো সোর্সই নিশ্চিত করছে।


তাহলে কি মুসলিম সৈন্যবাহিনীকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল পথে চালিয়ে সেখানে নেয়া হয়? এটা ব্রাহ্মণ্যবাদের অতিপুরাতন ও বহুল ব্যবহৃত কুটনীতি ও কৌশল যে,তারা স্থানীয় শক্তির মধ্যকার আভ্যন্তরীন বিরোধকে কাজে লাগিয়ে শত্রু’র শত্রুকে দিয়ে নিজের শত্রুকে শায়েস্তা করে। এ দৃষ্টিতে কুলাচার্য জ্ঞানানশ্রীর বর্ণনাকে অগ্রাহ্য করা যায় না।এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায় ডক্টর Mu’min Chowdhury এর লেখা The Rise and Fall of Buddhism in South Asia,London: London Institute of South Asia, 2008 বই থেকে।

কোথা থেকে শুরু এই প্রপাগান্ডার ?

প্রফেসর Johan Elverskog তাঁর Buddhism and Islam on the Silk Road বইয়ে ভারতে বৌদ্ধ মুসলিম সম্পর্ক নিয়ে প্রচলিত ধারাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন।বৌদ্ধদের উপর মুসলিম সেনাপতি ও শাসকগন অত্যাচার করেছেন এই ধারণাকে নাকচ করে দেয়।বলে; “He argues that the stereotypical image of Muslims as hostile towards Buddhists has been constructed in the West, and “reaffirmed” with the Taliban’s destruction of the giant Buddha statues in Bamiyan in 2001” (pp. 1–4). অর্থাৎ, বৌদ্ধদের সাথে মুসলমানদের শত্রুতার প্রচলিত ধারণা পশ্চিমে তৈরি হয় এবং এটা আরো প্রতিষ্ঠিত হয় তালেবান কর্তৃক ২০০১ সালে (আফগানিস্তানের বামিয়ানে) বিশাল বৌদ্ধমুর্তি ধ্বংসের মাধ্যমে।

কিন্তু পশ্চিম কোথা থেকে পেল এই ধারণা? তারা সাধারণত রেফারেন্স ছাড়া কিছু বলেনা তবে রেফারেন্স তারাও টুইস্ট করে,যেমনটা করেছে ওরিয়েন্টালিস্ট (প্রাচ্যবিদ)স্কলাররা কুরআন, হাদীস ও সিরাত অধ্যয়নের ক্ষেত্রে।

ভারতের ইতিহাসে মুসলিমদের ভিলেন হিসেবে চিত্রিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয় উপনিবেশ আমলে ওরিয়েন্টালিস্ট স্কলারদের হাতে । বৃটিশ স্যার জন হুবার্ট মার্শাল (১৮৭৬-১৯৫৮)ছিল ভারতীয় আর্কিওলজিকাল সার্ভের প্রধান।১৯০২-৩১ সময়ে তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় মহাদেশে বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান হয়। ডক্টর ডি বি স্পুনার (D.B. Spooner) নালন্দা সংশ্লিষ্ট বিহার, টিলা,কলেজ ইত্যাদি খোঁড়াখুঁড়ি করেন। মিনহাজের বর্ণনা অনুসারে বখতিয়ার খলজি কর্তৃক ১১৯৯-১২০০ সালে উদন্তিপুর বিহার আক্রমন ও হত্যাকান্ডের ঘটনা তখন প্রায় সবার জানা।তাঁদের ঐ প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান নতুন কিছু আর খুঁজে না পেয়ে এবং সেখানে আগুনে পোড়ার চিহ্ন দেখে কোন ধরণের কার্বণ টেস্ট ছাড়াই উপসংহারে পৌঁছে যান যে নালন্দা ধ্বংসের ঘটনা তাহলে মুসলিম শাসক বখতিয়ার খলজির হাতেই ঘটেছে ১১৯৩ সালে।

তাঁদের ধারণা যেহেতু নালন্দা উদন্তপুর থেকে বেশী দূরে নয়,সেহেতু এটা মুসলিম অভিযানের সময়ই ঘটে থাকবে।অথচ তাঁদের কাছে তিব্বতি স্কলার-মঙক ধর্মস্বামী’র বর্ণনা জানা ছিলনা কেননা সেটা আরো অনেক পরে আলোচনায় আসে। একই উপসংহারে পৌঁছেন মার্শাল সারনাথে, অশোকের ধর্মরাজিকা টিলা এবং ধ্বংস হওয়া দেয়াল এর ক্ষেত্রেও। এই উপসংহারের ভিত্তিতে ভারতে কাজ করা একজন ইংরেজ আমলা ভিনসেন স্মিথ তাঁর Oxford History of India গ্রন্থে ১৯২০ সালে লিখে; মুসলিম আক্রমনের কারণেই বৌদ্ধ ধর্ম একটি সংগঠিত ধর্ম হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশে অস্তিত্বের সংকটে পরে [C.Allen, 2001:284-86 cited in A. Mu’min Chowdhury, The Rise and Fall of Buddhism in South Asia, London: London Institute of South Asia, 2008: 274 ]। এই ন্যারেশানই ভারতের অফিসিয়াল ন্যারেশান এবং সেটা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলকে উল্লেখ করা আছে এখনো।

পরিশেষে, একথা আশাকরি পরিষ্কার হয়েছে যে, বখতিয়ার খলজি বিহার এবং পরবর্তিতে বাংলায় অভিযান চালিয়েছেন সত্য এবং সেটা তিনি করেছেন বৌদ্ধদের আহবানে।সেটা করতে গিয়ে তাঁর বাহিনীর হাতে কিছু মানুষও মারা যায়।কিন্তু তিনি ঐতিহাসিক নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের সাথে কোনভাবেই জড়িত ছিলেন না।বরং তাঁর সময় ও পরবর্তী মুসলিম শাসনে অনেক বৌদ্ধ বিহারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জ্ঞান চর্চা চলেছে।নালন্দা ধ্বংস হয় তীরহুতের রাজা অর্জুনের সময়ে একদল ব্রাহ্মণ দুর্বৃত্ত্বের হাতে।তবে সেটা ১৩০০ সাল পর্যন্ত চলেছে বলে ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণ নিশ্চিত করে।
“মুসলমান শাসকরা জোর করে ধর্মান্তর করালে এ দেশে এক জনও হিন্দু থাকত না”,
Image result for মুসলিম শাসক“মুসলমান শাসকরা জোর করে ধর্মান্তর করালে এ দেশে এক জনও হিন্দু থাকত না”,
বলা হয়ে থাকে মুসলিম সেনা ও শাসকরা হিন্দুদের মন্দির ভেঙ্গেছেন, জোড় করে ধর্মান্তরিত করেছেন?

ভারতের মন্দির ধ্বংসের বিষয়ে প্রচলিত মিথ হচ্ছে মুসলমান শাসকেরা এই মন্দিরসমুহ ভেঙ্গেছেন। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ রিচার্ড এম ইটন জানাচ্ছে; ১২ শতক থেকে ১৮ শতক পর্যন্ত, পুরো মুসলিম শাসনে দক্ষিন এশিয়ায় মুসলমান শাসকদের হাতে মোট ৮০ টি মন্দির ভাঙা হয়েছিল। রিচার্ড ইটন কেন ভাঙা হয়েছিল সেটার কারণ ও অনুসন্ধান করেছে। জানাচ্ছে, যেই সমস্ত রাজা শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল এবং সেই বিদ্রোহে যদি কোন মন্দির বিদ্রোহী রাজার সাথে পলিটিক্যালি যুক্ত থাকতো সেই মন্দির মুসলমান শাসকেরা ধ্বংস করেছে। কারণটা পুরোপুরি রাজনৈতিক; ধর্মীয় বিদ্বেষ নয়। [Eaton, Richard M. The Rise of Islam and the Bengal Frontier, 1204-1760. Berkeley: University of California Press, 1993]

সম্রাট আওরঙ্গজেব সম্পর্কেও মন্দির ধংসের অপবাদ শোনা যায়। এখানেও বিস্ময়কর ভাবে কারণটা রাজনৈতিক। আওরঙ্গজেব রাজপুতদের মন্দির ভেঙ্গেছিলেন, যেই রাজপুত মোঘলদের অনুগত ছিল কিন্তু আওরঙ্গজেবের আনুগত্য মানতে অস্বীকার করে বিদ্রোহ করে। সেই বিদ্রোহ দমনের পরে মন্দির গুলো ভাঙা হয়।

সবচেয়ে কৌতূহল উদ্দীপক তথ্য দিচ্ছেন ইটন বাংলা সম্পর্কে। জানাচ্ছে বাঙলায় সম্রাট আওরঙ্গজেব যে কোন মোঘল শাসকদের চেয়ে বেশী মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছিলেন।

আর জোর করে ধর্মান্তরকরন প্রশ্নে,‘ইহুদি ব্রাহ্মণ’ বলে নিজেকে পরিচয় দেয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশিয়া চর্চার অধ্যাপক শেলডন পোলকের একটি মন্তব্যই যথেষ্ঠ এই তত্ত্বের মিথ্যা প্রমাণে। আনন্দবাজার পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাতকারে তাকে প্রশ্ন করা হয় “অনেকে বলে, ইসলামি আক্রমণের পর সংস্কৃতের পতন হল, শাসকের দাপটে সবাই উর্দু, ফার্সি শিখতে ছুটল”? এর জবাবে বলে;

“বাজে কথা। তোমাদের বাংলার নবদ্বীপ বা মিথিলা সংস্কৃত ন্যায়চর্চার কেন্দ্র হয়েছিল সুলতানি আমলে। দারাশিকো বেদান্ত পড়ছে বারাণসীর পণ্ডিতদের কাছে। মুসলমান শাসকরা এ দেশে প্রায় বারোশো বছর রাজত্ব করেছিলেন। ওঁরা জোর করে ধর্মান্তর করালে এ দেশে এক জনও হিন্দু থাকত না। ওঁদের উত্‌সাহ না থাকলে সংস্কৃতও টিকে থাকত না। ধর্মের সঙ্গে ভাষার উত্থানপতন গুলিয়ে তাই লাভ নেই”(আনন্দবাজার পত্রিকা, “মুসলমান শাসকরা জোর করে ধর্মান্তর করালে এ দেশে এক জনও হিন্দু থাকত না”, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫)



লাখেরাজ সম্পত্তি
Image result for লাখেরাজ সম্পত্তিলাখেরাজ সম্পত্তি
লাখেরাজ সম্পত্তি বলা হয় নিষ্কর ভূমিকে। মুসলিম শাসকগণ কর্তৃক এ অঞ্চলের মুসলিম ছূফী-দরবেশ ও আলিম-উলামাগণকে প্রশাসনের তরফ থেকে লাখেরাজ সম্পত্তি দেয়া হতো।
এই লাখেরাজ সম্পত্তি ব্যয় করা হতো মুসলমানদের শিক্ষার কাজে। মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক এমআর আখতার মুকুল রচিত ‘কলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী’ গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে-
“সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে এদেশে লাখেরাজ বা নিষ্কর জমির ব্যাপারে এক বিরাট পূর্ব ইতিহাস রয়েছে। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ড. আজিজুর রহমান মল্লিক (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য) চমৎকারভাবে এর বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, বহুদিন থেকে ভারতবর্ষের মুসলিম শাসনকর্তাগণ সাধারণ মানুষের বিদ্যাশিক্ষার জন্য লাখেরাজ জমি মঞ্জুর করতেন। শাসনকর্তাগণ অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী থাকতেন। মুসলমান শাসনের দায়িত্বপূর্ণ অফিসারদেরকে তাদের চাকরির ভাতা ছাড়াও প্রত্যেকের জ্ঞানবুদ্ধি, সততা, অন্যান্য গুণের ভিত্তিতে জায়গীর, আলতামা, আইমা ও মদদ-ই-মাশ দেয়া হতো। জায়গীর এবং আলতামা সাধারণতঃ সিভিল এবং সামরিক অফিসারদেরকে দেয়া হতো, আর আইমা এবং মদদ-ই-মাশ দেয়া হতো আলিম-উলামাগণকে। শুধু মুসলমানদের জন্যই এসময় পনের প্রকার আয়কর মঞ্জুরী ছিলো, তিন প্রকার ছিল হিন্দুদের। (ব্রিটিশ নীতি ও বাংলার মুসলমান, বাংলা একাডেমী)
১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস সর্বপ্রথম হিসাব করে বের করে যে, বাংলাদেশের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ একেবারে নিষ্কর অর্থাৎ লাখেরাজ হয়ে রয়েছে। এরপর থেকেই ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী নানা বাহানায় এইসব জমি খাজনাযুক্ত করার জন্য (অর্থাৎ হিন্দুদেরকে দিয়ে লাভবান হওয়ার জন্য) এক ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ অব্যাহত রাখে।” (সূত্র: কলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী, এমআর আখতার মুকুল, প্রকাশকাল ১৯৮৭, পৃষ্ঠা ৭৭-৭৮)
মুসলমানদের শিক্ষার কাজে ব্যবহৃত জমি-সম্পত্তির উপর ব্রিটিশ আর হিন্দুদের শকুনি দৃষ্টি পতিত হয়েছিল। এর ফলশ্রুতিতেই ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৯৩ সালে ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ চালু করে। এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অধীনে ছূফী-দরবেশ, আলিম-উলামা উনাদের নিকট থেকে এসব লাখেরাজ জমি কেড়ে নিয়ে তা ব্রিটিশদের অনুগত হিন্দুদেরকে দেয়া হয়।
তৎকালীন ভারত সরকারেরই একজন ইংরেজ সদস্য চার্লস মেটকাফ ব্রিটিশদের এই ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ সম্পর্কে ১৮২০ সালে মন্তব্য করেছিল যে, “এ নীতি হচ্ছে অন্যায় অবিচারের চূড়ান্ত; কোনো দেশেই এরকম নীতির নজির নেই যেখানে সমস্ত জমিজমা যাদের প্রাপ্য তাদেরকে না দিয়ে অন্য এক গোষ্ঠীর হিন্দু বাবুদের হাতে তুলে দেয়া হলো যারা নানা দুর্নীতি ও উৎকোচের আশ্রয় নিয়ে দেশের ধনসম্পত্তি চুষে খেতে চায়।” (সূত্র: কলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী, পৃষ্ঠা ৭৯)
অর্থাৎ আজ হিন্দুরা যেসকল ভুমি নিজেদের দাবী করছে তা মুলত মুসলমানের সম্পত্তি।দেবোত্তর কিংবা হিন্দু সম্পত্তি বলে কোন সম্পত্তি হিন্দুদের কোনকালেই ছিলনা।যেসকল সম্পত্তি দেবোত্তর কিংবা হিন্দুদের নামে ওয়াকফ করা তা মুসলমানদের ফিরিয়ে দিতে হবে।
ইসলামবিদ্বেষ ও ইসলামবিরোধীতার অপর নাম : কামাল
Image result for কামাল পাশাইসলামবিদ্বেষ ও ইসলামবিরোধীতার অপর নাম : কামাল
পশ্চিমা বিশ্বে মোস্তফা কামাল পাশাকে তুরস্কের জাতীয় নেতা বলে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস কী বলে? তা বোঝার জন্য সে কিভাবে ইসলামবিদ্বেষী ও ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডসমুহ বাস্তবায়ন করেছিল তার বিবরণ দেয়া হল-
১.১৯২৪ সালে কামাল ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ইমাম, মুযাজ্জিন ও আলেমদের অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত করে ।
২. ১৯২৫ সালে বিদ্যালয় হতে কুরআন ও ধর্মশিক্ষা দেওয়া বন্ধ করে দেয় । ফলে ছেলেমেয়েদের ইসলাম শেখানোর ভার অভিভাবকদের উপর পড়ল। অভিভাবকরা কতটুকু আর ইসলামী জ্ঞান ছেলেমেয়েদের দিতে পারে –বলাই বাহুল্য ।
৩. কামালের মতে, প্রত্যেক আলেম ও দরবেশই নতুন শাসনতন্ত্রের শত্রু। আলেম ও দরবেশদের কর্মক্ষেত্র ষড়যন্ত্র ও কুসংস্কারের বিকাশ ক্ষেত্র ।এজন্য সে ১৯২৪ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর সব তেক্কা (মাজার ও কবর) ও তুর্বা (খানকা) বন্ধ এবং দরবেশ প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে ।
শায়েখ, দরবেশ প্রভৃতি উপাধি ও তাদের রীতিনীতি গ্রহণ, এমনকি তাদের বিশেষ পোশাক পরিধানও দন্ডনীয় বলে ঘোষনা করেন । এখনও তুরস্কের মসজিদে হুজুররা প্রচলিত সুন্নতি লেবাস পড়ে নামাজ পড়ান না । তারা কোর্ট প্যান্ট পড়ে নামাজ পড়ান ।
৪.হিজরী ক্যালেন্ডার তার কাছে অগ্রহণযোগ্য ছিল । এজন্য তিনি ১৯২৫ সালের ২৬শে ডিসেম্বর তারা হিজরী সনের পরিবর্তে ইংরেজদের তৈরী করা ক্যালেন্ডার (গেগ্রিয়ান ক্যালেন্ডার) চালু করেন । এর ফলে মুসলিম জগতের সাথে তুরস্কের দৃঢ়বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেল।
৫.ইসলামে মূর্তি অগ্রহণযোগ্য । তারপরও ১৯২৬ সালের ৩রা অক্টোবর ইস্তাম্বুলে কামালের মর্মর পাথরের তৈরী মূর্তি স্হাপন করা হলো। তুরস্কে এ দৃশ্য সর্বপ্রথম।
১৯২৬সালের ৪ঠা নভেম্বর আঙ্কারার যাদুঘরের সম্মুখে আরও একটি মূর্তি স্থাপিত হলো। এভাবে তুরস্কের সর্বত্র তার মুর্তি স্হাপন করা হলো ।
এখন তুরস্কে প্রায় স্কুলে তার মুর্তি ও ছবি সাভাবিক ব্যাপার । ছাত্র-ছাত্রীদের তার ছবি আঁকা বা মুর্তি বানানো পাঠ্যসুচীর অংশ ।(বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মুর্তিকে ভাস্কর্য বলা হয় )
৬.পারিবারিক আইনই ছিল ইসলামী আইনের সর্বশেষ ধ্বংসাবশেষ। নতুন দেওয়ানী আইন প্রবর্তিত হওয়ায় তাও বাতিল হয়ে গেল।(বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নারী নীতিমালা)
৭.রার্ষ্ট্রকে সম্পূর্ণভাবে ধর্মহীন করার পথে আর দুটি বাধা ছিল। ১৯২৮ সাল পর্যন্ত ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম বলে স্বীকৃত ছিল এবং একটি আলাদা ধর্মীয় বিভাগের অস্তিত্ব ছিল। ( বাংলাদেশের ইসলামী ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠান )
১৯২৮ সালের ১০ এপ্রিল সংবিধান হতে ধর্ম সংক্রান্ত সব কথাই বাদ দেয়া হলো। এর ফলে ইসলাম আর তুরস্কের রাষ্ট্রধর্ম রইল না। (যেমন : বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্হা ও বিশ্বাস, মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক জোড়দার করার অনুচ্ছে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং বিসমিল্লাহ )
পূর্বে সংসদ সদস্যরা আল্লাহর নামে শপথ নিতো । এখন হতে নিতে আরম্ভ করলেন আত্মসম্মানের নামে।
৮.প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নারী- পুরুষ ইচ্ছানুযায়ী ধর্ম পরিবর্তন করার অধিকার ও বিয়ে করার সুযোগ পেল। (যেমন : বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আন্তধর্ম বিয়ে)
৮. ১৯২৮ সালের ৩রা অক্টোবর আরবীর অক্ষরের বদলে ল্যাটিন বর্ণমালায় (ইংরেজী বর্ণমালা ল্যাটিন বর্ণমালায় লেখায় হয়) তুর্কি ভাষা লেখার চালু করা হলো । অনেক আগের থেকেই তুর্কি ভাষা আরবী অক্ষর ব্যবহার করে লেখা হতো ।
এই নিয়ম গৃহীত হওয়ায় মুসলিম বিশ্বের সাথে তুরস্কের আর একটি প্রধান বন্ধন মুছে গেল।
৯.১৯৩৪ সালের ২৬শে নভেম্বর একটি আইনের মাধ্যমে সব তুর্কি নাগরিককে আহমদ, মুস্তফা প্রভৃতি আরবী নাম রাখা নিষিদ্ধ হলো ও যাদের এধরনের নাম ছিল তা বাদ দিয়ে প্রাচীন তুর্ক নাম গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হলো এবং বে, আগা, পাশা, হানুম, এফেন্দি প্রভৃতি আরবী-ফারসী পদবি ও উপাধি বাতিল করা হলো।
এই আইন অনুযায়ী প্রত্যেক তুর্কি পুরুষের পদবি হলো এখন হতে রায় ও বিবাহিতা-অবিবাহিতা নির্বিশেষে প্রত্যেক মহিলার বায়ান ।
কামাল নিজেও মুস্তফা নাম ও গাজী উপাধি ত্যাগ করে আতাতুর্ক (তুর্কদের জনক) ও ইসমত ইনোন (ইনোনুর যুদ্ধ জয়ী) উপাধি গ্রহণ করলো। ২৪শে নভেম্বর মহাসভার এক অধিবেশনে কামাল এই নতুন উপাধিতে ভূষিত হলেন । ( বাংলাদেশে ১৯৯৮ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নামের আগে মোহাম্মদ এবং তাদের বাবার নামের আগে মোহাম্মদ লেখার প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিলো এবং তা বাস্তবে রূপ লাভও করেছিল )
১০.১৯২৫ সালের ২৫শে নভেম্বর ফেজ ও পাগড়িকে জাতীয় পোশাক হিসেবে বাতিল করা হয় এবং হ্যাটসহ ইউরোপীয় পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে গ্রহণ করা হয়।
ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী সালাম দেওয়াও নিষিদ্ধ করা হয় । এর পরিবর্তে সুপ্রভাত (Good Morning) বিদায় (Good Bye) ও হ্যান্ডশেক রেওয়াজ প্রবর্তিত হলো।
১৯৩৫ সালে মসজিদের বাইরে ইমাম-মুফতীদের পাগড়ি ও জুব্বা পরা নিষিদ্ধ হয়ে গেল। শুধু ইমামতি করার সময়ই ধর্মীয় পোশাক পরার অনুমতি মিলল। কামাল বলল, “পায়ে জুতা, উপরে প্যান্ট, ওয়েস্ট কোট, শার্ট, টাই, কোট এবং সর্বোপরি এদের সাথে মিলিয়ে রৌদ্র প্রতিরোধক হ্যাট তা হবে আমাদের জাতীয় পোশাক।
আরবীর পরিবর্তে তুর্কী ভাষায় নামায পড়তে বাধ্য করা হলো এবং তুর্কি ভাষায় আযান দিতে মুয়াজ্জিনদের বাধ্য করা হলো । তুর্কি ভাষায় আযান দেওয়ার সময় প্রথমে বলা হতো : তানরি উলমুদ তানরি উলমুদ (এর বাংলা হলো সৃষ্টিকর্তা মহান সৃষ্টিকর্তা মহান । মূলত তা আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার এর বদলে তা বলা হতো)।
১১.১৯৩৫ সালে লুকিয়ে থাকা মক্তব-মাদ্রাসা সরকারের আদেশে বন্ধ করে দেওয়া হয় ও ধর্ম শিক্ষা দান বন্ধ হওয়ায় কাঙ্খিত ধর্মনিরোপেক্ষ শিক্ষা বিপ্লব সম্পূর্ণ হলো। ইস্তাম্বুল শহরেই ৬০০ মসজিদ ভিত্তিক বিদ্যালয় তথা মক্তব ছিল; আজ তার একটিরও অস্তিত্ব নেই।
ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য মুসলমান মুক্তিযুদ্ধ করেনি , করেছে হক্ব না হক্ব পার্থক্য করে মুসলমান হিসেবে বেচে থাকার জন্য।যারা অসাম্প্রদায়িকতার দোহাই দিয়ে দেশে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রবেশ করাতে চায় তারা-ইসলামের শত্রু, দেশের শত্রু , জনগনের শত্রু, মুসলমানের শত্রু , মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শত্রু ---এদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া উচিত।
#Pinaki Bhattacharya এর ইতিহাস বিকৃতি!!!
Image result for পিনাকী ভট্টাচার্য#Pinaki Bhattacharya এর ইতিহাস বিকৃতি!!!
===========================
সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহির সময়ে এমন কিছু লোক ছিল যারা অনেক বড় বড় জ্ঞানী ছিল। যারা মুসলমানদের পক্ষ নিয়ে কথা বলে সূক্ষ্মভাবে বিভিন্ন বিভ্রান্তি ছড়াত কিন্তু তারা ছিল খৃষ্ঠান কিংবা ইহুদি। যাদের তিনি কঠোর হাতে দমন করেন।
বর্তমানেও অনেক বিধর্মী মুসলমানের পক্ষে বলে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে। যার কারণেই মুসলমান বলে সব হিন্দু তো খারাপ না! কিন্তু এরা যে কত ভয়ংকর তা মুসলমান বুঝেনা। এই কপটেরা মুসলমান দরদী সেজে মুসলমানের গোঁড়া কাটার ফন্দি ফিকির করে।
যার অন্যতম উদাহরণ #পিনাকী। যে এতদিন পর তার হিন্দুত্ববাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে।
দুর্গাপুজাকে কেন্দ্র করে সে প্রকৃত সত্যকে লুকিয়ে অসত্য প্রচার করছে।
সে বলেছে "দুর্গাপুজার প্রচলনের সাথে নবাব সিরাজের পরাজয় উদযাপনের কোন সম্পর্ক নেই। ---- লর্ড ক্লাইভের সাথে মিলিয়ে কলকাতার দুর্গা পূজার যে ইতিহাস অনেকে বলার চেষ্টা করেন সেটা ভুল এবং মতলবি"।https://goo.gl/sxENgU
অথচ প্রকৃত সত্য এবং ইতিহাস হলো নবাব সিরাজদ্দৌলাকে পরাজিত করার খুশিতেই এই দুর্গাপুজার শুরু হয়েছিল। যার প্রমান #পিনাকী অস্বীকার করলেও ইতিহাস স্বীকার করে নেয়।
১."১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে পলাশির যুদ্ধ থামল। ইংরেজরা চাইল এই যুদ্ধের বিজয়োৎসব পালন করতে। এই বিজয়োৎসবের ভার পড়ল লর্ড ক্লাইভের বিশ্বস্ত মুন্সি রাজা নবকৃষ্ণ দেবের ওপর। কিছুদিন বাদেই দুর্গাপুজো। শোভাবাজার রাজবাড়িতে নিমেষে গড়ে উঠল ঠাকুরদালান। আয়োজন হল মা দুর্গার আবাহনের। শোভাবাজার রাজবাড়িতে শুরু হল এক জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গাপুজো। অনেকে বলে, রাজা নবকৃষ্ণ দেবের দুর্গাপুজো ছিল পলাশির যুদ্ধের বিজয়োৎসব। পুজোর সময় অনেক গণ্যমান্য লোকেরা এলেন। এলেন লর্ড ক্লাইভও। নাচগানের সঙ্গে থাকল সাহেব ও গণ্যমান্য অতিথিদের জন্য পানভোজনের অঢেল আয়োজন।" http://archive.is/OuNuI
২. " বর্তমানের দূর্গাপূজার জনপ্রিয়তার শুরু বাবু নবকৃষ্ণের পুজো (১৭৬৫) দিয়ে যা সেকালে পরিচিত ছিল কোম্পানীর পূজো বা আজ শোভাবাজার রাজবাড়ির পূজো বলে টিকে আছে। পলাশীর যুদ্ধের পর, যারা ক্লাইভের সহযোগী ছিলেন, তাদের জন্যে ক্লাইভ পার্টি দিতে চাইলেন কোলকাতায়। এদিকে কোলকাতায় কোন বড় গীর্জা ছিল না সেকালে। নবকৃষ্ণ ক্লাইভের সেই সংকট জানতে পেরে, উনাকে জানালেন, দূর্গাপূজার মাধ্যমে ক্লাইভ একদিন না চারদিনের পার্টি দিতে পারবেন। " http://archive.is/wT16y
৩. যার আরো প্রমান http://archive.is/KsDfz#selection-43.42-48.1,
অর্থাৎ প্রমাণিত সত্য যে দুর্গা পূজা মুসলমানের পরাজয় এর উৎসব।
আর মুসলমান #পিনাকীর মতো মুখোশধারীদের ফান্দে পড়ে নিজেকে অসাম্প্রদায়িক প্রমান করতে পুজো পালন করে?
মনে রাখবেন #পিনাকীর মতো লোকেরা হলো সে স্লো পয়জন যা মানুষকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়।যার একফোঁটা দেখে নিন কিভাবে সে তার হিন্দুত্ববাদ সূক্ষ্মভাবে প্রকাশ করছে ।
যুক্তি দিতে পারেনি কিন্তু বিদ্বেষীতা প্রকাশ ঠিকই করেছে।
https://archive.is/VH0bZ,http://archive.is/oXWPk