লাখেরাজ সম্পত্তি বলা হয় নিষ্কর ভূমিকে। মুসলিম শাসকগণ কর্তৃক এ অঞ্চলের মুসলিম ছূফী-দরবেশ ও আলিম-উলামাগণকে প্রশাসনের তরফ থেকে লাখেরাজ সম্পত্তি দেয়া হতো।
এই লাখেরাজ সম্পত্তি ব্যয় করা হতো মুসলমানদের শিক্ষার কাজে। মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক এমআর আখতার মুকুল রচিত ‘কলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী’ গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে-
“সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে এদেশে লাখেরাজ বা নিষ্কর জমির ব্যাপারে এক বিরাট পূর্ব ইতিহাস রয়েছে। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ড. আজিজুর রহমান মল্লিক (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য) চমৎকারভাবে এর বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, বহুদিন থেকে ভারতবর্ষের মুসলিম শাসনকর্তাগণ সাধারণ মানুষের বিদ্যাশিক্ষার জন্য লাখেরাজ জমি মঞ্জুর করতেন। শাসনকর্তাগণ অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী থাকতেন। মুসলমান শাসনের দায়িত্বপূর্ণ অফিসারদেরকে তাদের চাকরির ভাতা ছাড়াও প্রত্যেকের জ্ঞানবুদ্ধি, সততা, অন্যান্য গুণের ভিত্তিতে জায়গীর, আলতামা, আইমা ও মদদ-ই-মাশ দেয়া হতো। জায়গীর এবং আলতামা সাধারণতঃ সিভিল এবং সামরিক অফিসারদেরকে দেয়া হতো, আর আইমা এবং মদদ-ই-মাশ দেয়া হতো আলিম-উলামাগণকে। শুধু মুসলমানদের জন্যই এসময় পনের প্রকার আয়কর মঞ্জুরী ছিলো, তিন প্রকার ছিল হিন্দুদের। (ব্রিটিশ নীতি ও বাংলার মুসলমান, বাংলা একাডেমী)
১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস সর্বপ্রথম হিসাব করে বের করে যে, বাংলাদেশের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ একেবারে নিষ্কর অর্থাৎ লাখেরাজ হয়ে রয়েছে। এরপর থেকেই ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী নানা বাহানায় এইসব জমি খাজনাযুক্ত করার জন্য (অর্থাৎ হিন্দুদেরকে দিয়ে লাভবান হওয়ার জন্য) এক ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ অব্যাহত রাখে।” (সূত্র: কলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী, এমআর আখতার মুকুল, প্রকাশকাল ১৯৮৭, পৃষ্ঠা ৭৭-৭৮)
মুসলমানদের শিক্ষার কাজে ব্যবহৃত জমি-সম্পত্তির উপর ব্রিটিশ আর হিন্দুদের শকুনি দৃষ্টি পতিত হয়েছিল। এর ফলশ্রুতিতেই ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৯৩ সালে ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ চালু করে। এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অধীনে ছূফী-দরবেশ, আলিম-উলামা উনাদের নিকট থেকে এসব লাখেরাজ জমি কেড়ে নিয়ে তা ব্রিটিশদের অনুগত হিন্দুদেরকে দেয়া হয়।
তৎকালীন ভারত সরকারেরই একজন ইংরেজ সদস্য চার্লস মেটকাফ ব্রিটিশদের এই ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ সম্পর্কে ১৮২০ সালে মন্তব্য করেছিল যে, “এ নীতি হচ্ছে অন্যায় অবিচারের চূড়ান্ত; কোনো দেশেই এরকম নীতির নজির নেই যেখানে সমস্ত জমিজমা যাদের প্রাপ্য তাদেরকে না দিয়ে অন্য এক গোষ্ঠীর হিন্দু বাবুদের হাতে তুলে দেয়া হলো যারা নানা দুর্নীতি ও উৎকোচের আশ্রয় নিয়ে দেশের ধনসম্পত্তি চুষে খেতে চায়।” (সূত্র: কলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী, পৃষ্ঠা ৭৯)
অর্থাৎ আজ হিন্দুরা যেসকল ভুমি নিজেদের দাবী করছে তা মুলত মুসলমানের সম্পত্তি।দেবোত্তর কিংবা হিন্দু সম্পত্তি বলে কোন সম্পত্তি হিন্দুদের কোনকালেই ছিলনা।যেসকল সম্পত্তি দেবোত্তর কিংবা হিন্দুদের নামে ওয়াকফ করা তা মুসলমানদের ফিরিয়ে দিতে হবে।