বলা হয়ে থাকে মুসলিম সেনা ও শাসকরা হিন্দুদের মন্দির ভেঙ্গেছেন, জোড় করে ধর্মান্তরিত করেছেন?
ভারতের মন্দির ধ্বংসের বিষয়ে প্রচলিত মিথ হচ্ছে মুসলমান শাসকেরা এই মন্দিরসমুহ ভেঙ্গেছেন। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ রিচার্ড এম ইটন জানাচ্ছে; ১২ শতক থেকে ১৮ শতক পর্যন্ত, পুরো মুসলিম শাসনে দক্ষিন এশিয়ায় মুসলমান শাসকদের হাতে মোট ৮০ টি মন্দির ভাঙা হয়েছিল। রিচার্ড ইটন কেন ভাঙা হয়েছিল সেটার কারণ ও অনুসন্ধান করেছে। জানাচ্ছে, যেই সমস্ত রাজা শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল এবং সেই বিদ্রোহে যদি কোন মন্দির বিদ্রোহী রাজার সাথে পলিটিক্যালি যুক্ত থাকতো সেই মন্দির মুসলমান শাসকেরা ধ্বংস করেছে। কারণটা পুরোপুরি রাজনৈতিক; ধর্মীয় বিদ্বেষ নয়। [Eaton, Richard M. The Rise of Islam and the Bengal Frontier, 1204-1760. Berkeley: University of California Press, 1993]
সম্রাট আওরঙ্গজেব সম্পর্কেও মন্দির ধংসের অপবাদ শোনা যায়। এখানেও বিস্ময়কর ভাবে কারণটা রাজনৈতিক। আওরঙ্গজেব রাজপুতদের মন্দির ভেঙ্গেছিলেন, যেই রাজপুত মোঘলদের অনুগত ছিল কিন্তু আওরঙ্গজেবের আনুগত্য মানতে অস্বীকার করে বিদ্রোহ করে। সেই বিদ্রোহ দমনের পরে মন্দির গুলো ভাঙা হয়।
সবচেয়ে কৌতূহল উদ্দীপক তথ্য দিচ্ছেন ইটন বাংলা সম্পর্কে। জানাচ্ছে বাঙলায় সম্রাট আওরঙ্গজেব যে কোন মোঘল শাসকদের চেয়ে বেশী মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছিলেন।
আর জোর করে ধর্মান্তরকরন প্রশ্নে,‘ইহুদি ব্রাহ্মণ’ বলে নিজেকে পরিচয় দেয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশিয়া চর্চার অধ্যাপক শেলডন পোলকের একটি মন্তব্যই যথেষ্ঠ এই তত্ত্বের মিথ্যা প্রমাণে। আনন্দবাজার পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাতকারে তাকে প্রশ্ন করা হয় “অনেকে বলে, ইসলামি আক্রমণের পর সংস্কৃতের পতন হল, শাসকের দাপটে সবাই উর্দু, ফার্সি শিখতে ছুটল”? এর জবাবে বলে;
“বাজে কথা। তোমাদের বাংলার নবদ্বীপ বা মিথিলা সংস্কৃত ন্যায়চর্চার কেন্দ্র হয়েছিল সুলতানি আমলে। দারাশিকো বেদান্ত পড়ছে বারাণসীর পণ্ডিতদের কাছে। মুসলমান শাসকরা এ দেশে প্রায় বারোশো বছর রাজত্ব করেছিলেন। ওঁরা জোর করে ধর্মান্তর করালে এ দেশে এক জনও হিন্দু থাকত না। ওঁদের উত্সাহ না থাকলে সংস্কৃতও টিকে থাকত না। ধর্মের সঙ্গে ভাষার উত্থানপতন গুলিয়ে তাই লাভ নেই”(আনন্দবাজার পত্রিকা, “মুসলমান শাসকরা জোর করে ধর্মান্তর করালে এ দেশে এক জনও হিন্দু থাকত না”, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫)