জাতিসংঘের আদিবাসী ঘোষনা পত্রে কি বলা আছে ?
জাতিসংঘের আদিবাসী ঘোষনা পত্রে কি বলা আছে ?Image result for আদিবাসী
বাংলাদেশের জন্য ২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬১তম অধিবেশনের United Nation Declaration on the Rights of Indigenous Peoples বা ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র’, প্রযোজ্য কিনা। ঘোষণাপত্রটির উদ্দেশ্য মহৎ হলেও এটি অনেক ক্ষেত্রে সংগতিপূর্ণ নয় এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতা বা সার্বভৌমত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ এবং এই ঘোষণাপত্রের নিম্নোক্ত ধারাগুলো বিশেষভাবে অধ্যয়ন করা প্রয়োজন :
Article 3 : Indigenous peoples have the right to self-determination. By virtue of that right they freely determine their political status and freely pursue their economic, social and cultural development. অর্থাৎ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে সেই অধিকার বলে তারা অবাধে তাদের রাজনৈতিক মর্যাদা নির্ধারণ করে এবং অবাধে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সংস্কৃতিক কর্ম প্রয়াস অব্যাহত রাখতে পারবে।
Article 4 : Indigenous peoples, in exercising their right to self-determination, have the right to autonomy or self-government in matters relating to their internal and local affairs, as well as ways and means for financing their autonomous functions. অর্থাৎ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার চর্চার বেলায় তাদের অভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় বিষয়ের ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন বা স্বশাসিত সরকারের অধিকার রয়েছে এবং তাদের স্বশাসনের কার্যাবলীর জন্য অর্থায়নের পন্থা ও উৎসের ক্ষেত্রেও অনুরূপ অধিকার থাকবে।
Article 5 : Indigenous peoples have the right to maintain and strengthen their distinct political, legal, economic, social and cultural institutions, while retaining their right to participate fully, if they so choose, in the political, economic, social and cultural life of the State. অর্থাৎ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী যদি পছন্দ করে তাহলে রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের পূর্ণ অধিকার রেখে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র রাজনৈতিক, আইনী, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অক্ষুণ্ণ রাখা ও শক্তিশালীকরণের অধিকার থাকবে।
Article 10 : Indigenous peoples shall not be forcibly removed from their lands or territories. অর্থাৎ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে তাদের ভূমি বা ভূখণ্ড থেকে জবরদস্তিমূলকভাবে উৎখাত করা যাবে না।
Article 20 : 1. Indigenous peoples have the right to maintain and develop their political, economic and social systems or institutions. অর্থাৎ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী তাদের জীবন-জীবিকা উন্নয়নের নিজস্ব ধারা নিশ্চিত করার জন্য এবং তাদের ঐতিহ্যগত ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রমে স্বাধীনভাবে নিযুক্ত থাকার জন্য তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা বা প্রতিষ্ঠান বজায় রাখা ও উন্নয়নের অধিকার থাকবে।
Article 30 : 1. Military activities shall not take place in the lands or territories of indigenous peoples, unless justified by a relevant public interest or otherwise freely agreed with or requested by the indigenous peoples concerned. অর্থাৎ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি কিংবা ভূখন্ডে সামরিক কার্যক্রম হাতে নেওয়া যাবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত উপযুক্ত জনস্বার্থের প্রয়োজনে যুক্তিগ্রাহ্য হবে, অন্যথায় যদি সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠী স্বেচ্ছায় সম্মতি স্থাপন বা অনুরোধ করে।
উপরোক্ত ধারাগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে United Nation Declaration on the Rights of Indigenous Peoples বা ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র’ অনুসারে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর তাদেরকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, স্বতন্ত্র তথা স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। এমনকি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি তারা মনে করে যে তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রে থাকবে না বা ভারতেও যোগ দেবে না; তবে তারা স্বাধীন রাষ্ট্র স্থাপন করতে পারবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রে থাকলেও তারা যে অঞ্চলে বাস করে সেই অঞ্চলের ভূমির মালিকানা বাংলাদেশের হবে না এবং সে অঞ্চলে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। তারা আত্মনিয়ন্ত্রণ, স্বায়ত্তশাসন, স্বশাসিত সরকার ও তাদের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক, সামাজিক, সংস্কৃতিক ও আইনী কার্যক্রম এবং তা পরিচালনার জন্য স্বনিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করতে পারবে। উপর্যুক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত হলে প্রকারান্তরে তা এই অঞ্চলের উপর বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ খর্ব করবে।
Indigenous and Tribal Populations Convention-1957 (No.107) ১৯৫৭ সালে পাস হলেও এ পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র ২৭টি দেশ এই কনভেনশনটি র‌্যাটিফাই করেছে। ১৯৭২ সালের ২২ জুন বাংলাদেশও কনভেনশন ১০৭ র‌্যাটিফাই করেছিল। পরে কনভেনশন ১৬৯ পাস হওয়ার পর পূর্বোক্ত কনভেনশন ১০৭ তামাদি হয়ে গেছে এবং বাংলাদেশ অদ্যাবধি কনভেনশন ১৬৯ র‌্যাটিফাই করেনি। তাই এটি আমাদের দেশের জন্য অবশ্য পালনীয় নয়। এখানে লক্ষণীয় যে এরই মধ্যে ৮টি দেশ এই কনভেনশনকে নিন্দা করে তা থেকে বেরিয়ে গেছে। অন্যদিকে Indigenous and Tribal Populations Convention-1989 (No.169), ১৯৮৯ সালে পাস হলেও এখন পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র ২২টি দেশ এই কনভেনশনটি র‌্যাটিফাই করেছে। এই উপমহাদেশের একমাত্র নেপাল ছাড়া আর কোনো দেশ এই কনভেনশনটি র‌্যাটিফাই করেনি।
অন্যদিকে, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালে জাতিসংঘের ৬১তম অধিবেশনে আদিবাসী বিষয়ক যে ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে ভোটদানের সময় ১৪৩টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে, ৪টি দেশ বিপক্ষে, ১১টি দেশ বিরত এবং ৩৪টি দেশ অনুপস্থিত থাকে। বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত থাকে। বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া দেশগুলো হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র।
বিস্ময়কর অথবা পরিহাসের ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের তথাকথিত আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় খুব সোচ্চার ও পৃষ্ঠপোষক দেশগুলোর বেশিরভাগই কিন্তু নিজ দেশের জন্য আইএলও কনভেনশন ১০৭ বা ১৬৯ ও জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণা পত্রের সিগনেটরি নয়, পক্ষে ভোট দেয়নি এবং র‌্যাটিফাইও করেনি। কাজেই তাদের কুম্ভিরাশ্রু বর্ষণের কারণ ও মতলব বুঝতে সায়েন্টিস্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। এসব সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর উপজাতি, আদিবাসী কিংবা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য এই মায়াকান্নার পেছনে মূলত ভূ-রাজনৈতিক, ভূ-অর্থনৈতিক এবং সর্বোপরি আধিপত্যবাদী স্বার্থই প্রকাশ্যে কিংবা অবচেতনে প্রবলভাবে কাজ করেছে-একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
ইতিহাস বলে বার্মায় মুসলমানেরা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিল এবং সূচির পিতার সহযোগী ছিল মুসলমান
Image result for পার্বত্য চট্রগ্রাম কি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পথে?ইতিহাস বলে বার্মায় মুসলমানেরা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিল এবং সূচির পিতার সহযোগী ছিল মুসলমান
সু চির বাবা জেনারেল অং সানের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক সহযোগী ছিলেন একজন মুসলমান আবদুল রাজ্জাক। রাজ্জাক তখন বার্মা মুসলিম লিগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছিলেন। জেনারেল অং সানের গঠিত বার্মার স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভার শিক্ষা ও পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন রাজ্জাক এবং ১৯৪৭-এর ১৯ জুলাই জেনারেল অং সানের সঙ্গে যে ছয়জন মন্ত্রী খুন হয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন তিনি। আজও বার্মা ১৯ জুলাই রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘শহীদ দিবস’ হিসেবেই পালন করে থাকে। সু চি কীভাবে শহীদ দিবসের স্মৃতিগাথা থেকে রাজ্জাকের নাম মুছবে?
কেবল আবদুল রাজ্জাকই নন, সু চির বাবা এবং বার্মার ‘জাতির পিতা’ জেনারেল অং সানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগীদের মধ্যে আরও অনেক মুসলমান ছিলেন।
এটা অনেকেরই জানা, ব্রিটিশ অধীনতার সময় বার্মার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রভূমি ছিল রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়। সে সময় রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করত অল বর্মা স্টুডেন্ট ইউনিয়ন আর রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রছাত্রী সংসদ—যাকে সংক্ষেপে বলা হতো আরইউএসইউ।
অং সান রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ১৯৩৩ সালে। আরইউএসইউ প্রতিষ্ঠার বছরই (১৯৩০) তাতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এম এ রাশিদ। ওই সময় অং সানের প্রধান রাজনৈতিক সহযোদ্ধা হয়ে ওঠেন এম এ রাশিদ ও উ নু। অং সান আরইউএসইউতে ১৯৩৬ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন আর সে বছর তাতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন এম এ রাশিদ।
রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাশিদ, অং সান এবং উ নু ছিলেন তিন প্রাণের বন্ধু। ১৯৩৬ সালের মে মাসে রেঙ্গুনের জুবলি হলে এক ছাত্র সম্মেলনের মাধ্যমে ‘অল বর্মা স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ও (এবিএসইউ) গড়ে তুলেছিলেন এরাই এবং রাশিদ ছিলেন বিএসইউর প্রথম সভাপতি। এম এ রাশিদ হলেন বার্মার ইতিহাসে একমাত্র ছাত্রনেতা, যিনি একই সময় এবিএসইউ এবং আরইউএসইউ এই উভয় সংগঠনের সভাপতি ছিলেন। এর কিছুদিন পরই জওহরলাল নেহরু বার্মা এসেছিলেন এবং তাঁকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য যে কমিটি করে ছাত্ররা, অং সানের প্রস্তাবমতো তাতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন রাশিদই।
এম এ রাশিদকে অং সান বলতেন ‘রাশিদ ভাই’। অং সানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর দিন পর্যন্ত এই তিনজনের রাজনৈতিক বন্ধুত্ব বজায় ছিল।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে বার্মার সংবিধানের অন্যতম খসড়াকারীও ছিলেন রাশিদ। পরবর্তীকালে তিনি দেশটির শ্রমমন্ত্রীও হন।
অং সান-রশিদ-উ নু-রাজ্জাক প্রমুখের বন্ধুত্ব স্বাধীনতার উষালগ্নে বার্মায় ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যে’র যে সম্ভাবনা তৈরি করেছিল, তার ভিত্তিতেই ১৯৪৭-এর ফেব্রুয়ারিতে শান স্টেইটের পাংলংয়ে ঐতিহাসিক জাতি-সম্মেলন আহূত হয়েছিল এবং সেখানে অং সান বলেছিলেন, বার্মা হবে সব জাতির একটি ‘ইউনিয়ন’, যেখানে ‘বর্মনরা এক কায়েত পেলে অন্যরাও এক কায়েত পাবে।’ আর এই ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতির ওপর দাঁড়িয়েই কাচিন-কারেন-শান-মুসলমান সবাই বর্মা ইউনিয়নে যোগ দিয়েছিল সেদিন।
অথচ আজ সেই অং সানের কন্যা বার্মাতে মুসলমান রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বই অস্বীকার করছেন। সেনাবাহিনীও বলছে, রোহিঙ্গা বলে বর্মায় কোনো বৈধ জাতিসত্তাই নেই এবং ছিলও না।
বার্মা সরকার এবং সে দেশের সেনাবাহিনী বর্তমানে বেশ জোরেশোরেই বলে থাকে, আরাকানের রোহিঙ্গারা সে দেশের নাগরিক নয়, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মানুষ।
এই দাবি যে কত স্ববিরোধী, তা বহুভাবেই প্রমাণযোগ্য। আন্তর্জাতিক পরিসর থেকে সু চি ও বার্মার সেনা কমান্ডারদের যেকেউ জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে ১৯৪৮ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত সুলতান মাহমুদ, আবুল বাশার, আবদুল গাফ্ফার, জোহরা বেগম প্রমুখ যে আরাকানের মুসলিমপ্রধান এলাকাগুলো থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে দেশটির পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন বছরের পর বছর (মন্ত্রীও হয়েছিলেন!), সেটা কীভাবে সম্ভব হলো? এই ব্যক্তিরা কীভাবে নির্বাচনে দাঁড়ালেন? আকিয়াবের এমপি সুলতান মাহমুদ যে উ নুর নেতৃত্বে গঠিত ১৯৬০-এর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, সেটা কোন জাতিসত্তা পরিচয়ে?
এমনকি ১৯৯০-এ যখন সামরিক বাহিনীর অধীনেই বার্মায় বহুদিন পর প্রথমবারের মতো বহুদলীয় নির্বাচন হলো (যে নির্বাচনে অং সান সু চির দল নির্বাচিত হয়েও সরকার গঠন করতে পারেনি), তখন খ মিং (শামসুল আনোয়ার, বুথিডং-১), মো. নুর আহমেদ (বুথিডং-২), উ চিট লুইঙ (ইব্রাহিম, মংডু-১), ফজল আহমেদ (মংডু-২) প্রমুখ রোহিঙ্গারা কীভাবে উত্তর আরাকান থেকে পার্লামেন্টে নির্বাচিত হতে পারলেন? কীভাবে তখন আরাকানের রোহিঙ্গারা (আটটি আসনে) নিজস্ব রাজনৈতিক দল (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস পার্টি) থেকেই প্রার্থী হতে অনুমতি পেয়েছিল? আইন অনুযায়ী ওই নির্বাচনে ‘বিদেশি’ ছাড়া সবাইকেই ভোট দিতে দেওয়া হয়েছিল। তাহলে বুথিডং ও মংডুর এই রোহিঙ্গারা কাদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন?

এ পর্যায়ে এ-ও উল্লেখ করতে হয়, বার্মার ১৯৯০-এর নির্বাচনে বিজয়ী ওপরের চারজন রোহিঙ্গা এমপির মধ্য থেকে শামসুল আনোয়ারকে অং সান সু চি ১৯৯৮ সালে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসেবে ‘পিপলস পার্লামেন্ট’-এ যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান এবং শুধু এই ডাকে সাড়া দেওয়ার কারণে তাঁর ৪৭ বছরের জেল হয়েছিল। এমনকি শামসুল আনোয়ারের পুত্র-কন্যাদেরও ১৭ বছর করে সাজা দেওয়া হয়। অথচ সু চি উত্তর আরাকানে রোহিঙ্গাদের কোনো রূপ উপস্থিতির কথা অস্বীকার করে যাচ্ছেন। প্রসঙ্গক্রমে এ-ও উল্লেখ করতে হয়, ১৯৯০-এর নির্বাচনে বুথিডং-১ থেকে নির্বাচিত এমপি মাস্টার শামসুল আলম রেঙ্গুনের ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিকস থেকেই তাঁর ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়েছিলেন এবং ১৯৮৫ পর্যন্ত তিনি সরকারি মাধ্যমিক একটি স্কুলের হেডমাস্টার পর্যন্ত ছিলেন। নাগরিক না হলে তাঁর পক্ষে কীভাবে দীর্ঘ শিক্ষা ও কর্মজীবন পরিচালনা করা সম্ভব হলো?
বস্তুতপক্ষে এটা বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়, বার্মার শাসকেরা শামসুল আলমের মতো নিয়মতান্ত্রিক পথে রাজনীতিতে সক্রিয় রোহিঙ্গাদের পুরো নাগরিক পরিমণ্ডল থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যাতে কেবল জঙ্গিপনার পথই কেবল খোলা থাকে। তবে মূলধারার রোহিঙ্গাদের এ জন্য ধন্যবাদ দিতে হয় যে গণহত্যার মুখোমুখি হয়েও তারা প্রাণভয়ে অন্য দেশে চলে এলেও আরকান কিংবা আরাকান-বহির্ভূত বার্মায় সন্ত্রাসে লিপ্ত হচ্ছে না। যদিও তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে প্রমাণের জন্য অং সান ও জেনারেল মিন দুজনই বৈশ্বিক পরিসরে বেশ চেষ্টা করছেন কিন্তু ইউটিউবের অস্পষ্ট কিছু ভিডিও ক্লিপ ছাড়া তাদের সাক্ষ্য-প্রমাণের ভান্ডারে কার্যত এখনো বাস্তব কিছু নেই।

বার্মার মুসলমান নেতৃত্বকে মুছে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় এ বছরের ২৯ জানুয়ারি হত্যা করা হয় ব্যারিস্টার উ কো নিকে। সু চির আজকের অবস্থানের পেছনে তাঁর অবদান অস্বীকারের উপায় নেই। যখন সন্তানদের বিদেশি নাগরিকত্ব থাকার অজুহাতে সামরিক জান্তা অং সান সু চির সাংবিধানিক পদ গ্রহণে বাধা তৈরি করে, তখন একটা উপায় বের করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ কো নি। সামরিক জান্তার সংবিধানের ভেতরই তিনি বিকল্প সরকারপ্রধান হিসেবে সু চির জন্য স্টেট কাউন্সেলর পদ সৃষ্টির পথ দেখিয়ে দেন। দীর্ঘদিন সু চির আইনি উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের পর ২০১৩ সালে সরকারি দল এনএলডিতে যোগ দেন। সামরিক বাহিনীর সমালোচনা এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া ১৯৮২ সালের আইনের সমালোচনা করাই হয়তো ছিল তাঁর অপরাধ। সাবেক এক সেনা গোয়েন্দা কর্মকর্তার নির্দেশে গুলি করে তাঁকে হত্যার মধ্যে দিয়ে বার্মার জাতীয় রাজনীতিতে মুসলমানদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ইতিহাসও আপাতত অবসিত হয়। ঘটনার এক মাস পর অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় সু চি এই হত্যাকাণ্ডকে সন্ত্রাসী কাজ বলে কো নি-কে শহীদ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। আজ সন্ত্রাসীরা তাঁর বন্ধু হয়েছে, আর বন্ধু হয়েছে শত্রু।



রোহিঙ্গা সঙ্কটকে পূঁজি করে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো

Image result for পার্বত্য চট্রগ্রাম কি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পথে?রোহিঙ্গা সঙ্কটকে পূঁজি করে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো

চলমান রোহিঙ্গা সংকটকে পূঁজি করে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের আগুন পার্বত্য চট্টগ্রামে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ভেতরে ভেতরে পাহাড়ী উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে সামাজিক গণমাধ্যমে এইসব উপজাতীয় সন্ত্রাসী ও তাদের সমর্থক আইডি/পেইজগুলোতে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরণের উষ্কানীমূলক পোস্ট করা হচ্ছে।
এসব পোস্টে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে রোহিঙ্গাদের মতো বাঙালীদের জানমাল ধংস করে তাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার হুমকি দেয়া হয়েছে। একইসাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অপসারণের জন্য হুমকি দেয়া হয়েছে এই পোস্টগুলোতে।
এ কথা সত্য যে, রোহিঙ্গারা মুসলমান। অপরদিকে তাদের উপর নির্মম নির্যাতনকারী বর্মী সেনাবাহিনী ও ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক উইরাথু ভিক্ষু ৯৬৯ বাহিনীর কর্মীরা বৌদ্ধ। তা সত্ত্বে বাংলাদেশে কোনো মুসলমান কোনো বৌদ্ধদের উপর এ কারণে দায়ী বা নির্যাতন করেনি। এমনকি খোদ আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি নিজেরাও এই লড়াইকে জিহাদ বা ধর্মীয় না বলে জাতিগত বলে আখ্যা দিয়েছে।

তা সত্ত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা শুধুমাত্র মুসলমান বলে তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে, তাদের হত্যাকরে পাহাড় ছাড়া করার ঘোষণা দিয়েছে। ভয়ঙ্কর সব অস্ত্রের ছবি দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।
রুদ্র চাকমা নামের এক পাহাড়ী সন্ত্রাসীর আইডি থেকে একে-৪৭ অস্ত্রের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে, “ এখনই সময় তিন পার্বত্য জেলা থেকে মুসলিম বাঙালীদের উৎখাত করার, আমাদের বন্ধুদেশ বার্মা যেমন আরাকান রাজ্য মুক্ত করেছে এখন, আমরাও সেভাবেই কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সহযোদ্ধারা সবাই যন্ত্রপাতি রেদি রাখ যেকোনো সময় নির্দেশনা আসতে পারে।”






স্বাধীন তঞ্চঙ্গা নামের একটি আইডি থেকে বলা হয়েছে, “মিয়ানমার যেভাবে রোহিঙ্গাদের পাছায় আগুন দিয়ে  রাখাইন থেকে তাড়াচ্ছে আমাদের আদিবাসী জুম্মদের সেইভাবে অস্ত্র হাতে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেটেলার বাঙালীদের তাড়াতে হবে। এখানে কোনো মুসলমানের থাকা চলবে না।”
আলীন চাকমা আইডি থেকে পাহাড়ী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে, “ আমরা প্রস্তুত বালের দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে রাখাইনের মতো বাঙালী মুক্ত করতে। আপনারা প্রস্তুত তো। পাহাড়ে কোনো মুসলমানের ঠাঁই হবে না আর স্বাধীন জুম্মল্যান্ড না করে আমরা ঘরে ফিরবো না।”
চাকমা রিবেং সিএইচটি জুম্মল্যান্ড গ্রুপে লিখেছে, “…..আমাদের অচিরেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। ১০ লাখ কালা হাবা সেটেলার বাঙালী মুসলমানকে মেরে আমাদের প্রিয় জুম্মল্যান্ডকে বাঙালী মুক্ত করতে হবে।জয় হোক জুম্মজাতির, জয় হোক জুম্মল্যান্ড।স্বাধীন জুম্মল্যান্ডে আন্দোলনের ঝাঁপিয়ে পড়ুক ১০ লাখ জুম্ম আদিবাসী।”

এদিকে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হেয় করে লিখেছে, “বাংলাদেশ ধংস করতে প্রস্তুত বার্মার সাবমেরিন।  বার্মা এই বালের দেশের অস্তিত্বই রাখবে না।”
দেশের প্রতি এই সন্ত্রাসীদের কোনো ভালবাসা যে নেই তার প্রমাণ এই সন্ত্রাসীদের পরিচালিত সিএইচটি জুম্মল্যান্ডের পোস্টটি। এতে লেখা হয়েছে, “ Why we JUMMA people do love other countries than Bangladesh? We are whole heartedly supporting France, USA, Europe countries. Because France, USA, and Europe countries are better than Bangladeshfor Chakmas people.These are not Muslim countries. During, insurgency period of Shanti Bahini, many innocent civilians were killed by Bangladesh Army, those survived orphanage were looked after in France, USA, Europe etc. This clearly seems that how much they love humanity better than Bangladesh. What can Bangladesh do for us? Lang grabbing, killing, rapping, kidnapping, looting and burning houses & Buddhist Temple. So, shamefull… as a part from being Bangladesh is Muslim country, she is financing Rohingya Muslim terrorists from Myanmar.”

সমতলের ও পাহাড়ের অনেক বাঙালীই মনে করছেন এই পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা এমন কিছু অন্তর্ঘাতমূলক ঘটনা ঘটাতে পারে যার দায়ভার বাঙালীদের বা বাঙালী মুসলিমদের উপর পড়বে। ফলে তারা বাঙালীদের সতর্ক  ও সচেতন করতে নানা প্রকার পোস্ট দিচ্ছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, মাহবুবে রব্বানী নামের এক ব্লগারের পোস্ট থেকে। তিনি লিখেছেন,
“সতর্কীকরণ:
ঢাকা চট্রগ্রাম সহ সমতলে অবস্হানরত সকল উপজাতিদের কে আগামী ২৬ তারিখ এর মধ্যে নিজ নিজ এলাকায় চলে আসার নির্দেশ দিলো উপজাতি সংগঠনগুলো।
ইতিমধ্যে প্রতিদিন গাড়ী রিজার্ভ করে পাহাড়ে থাকা উপজাতিরা ঢাকা..ত্যাগ করা আরম্ভ করেছে। বেশ কিছু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে খবর নিয়ে জানা যায় উপজাতি শ্রমিকদের ভিতর রিজাইন দেওয়ার হিড়িক পড়েছে।
কিন্তু কেনো? তবে কি তারা ৩ পার্বত্য জেলায় বড় রকমের কিছু ঘটাতে যাচ্ছে? যার ফলে সমতলে তাদের লোকদের পাল্টা আক্রান্তের ভয় করছে বা নিরাপদ মনে করছে না?
নাকি রোহিঙ্গা ইস্যুর সাথে পার্বত্য চট্রগ্রামকে কানেক্ট করার নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে তারা।”

একইভাবে জনপ্রিয় ব্লগার কমরেড মাহমুদ লিখেছেন,
“ সতর্কীকরণ-
রোহিঙ্গা ইস্যুর সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামকে কানেক্ট করার নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক ও সাবধান হবার অনুরোধ করছি। ইতিমধ্যে খবর পেলাম ঢাকা সহ সমতলে যেসব পাহাড়ি উপজাতি বসবাস করে তাদেরকে এলাকায় চলে যেতে বলা হয়েছে।
প্রতিদিন গাড়ি রিজার্ভ করে পাহাড়ি উপজাতিরা ঢাকা ত্যাগ করে পাহাড়ে একত্রিত হচ্ছে। কয়েকটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে খবর নিয়ে জানতে পারলে তাদের উপজাতি শ্রমিকদের ভিতর রিজাইন দেওয়ার হিরিক পরেছে।
যেভাবে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে:
১. পাহাড়ী-বাঙালী দুই পক্ষেই কিছু লাশ ফেলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি।
২. বার্মিজ আর্মির ইন্ধনে বাঙালি/ রোহিঙ্গাদের উপর জেএসএসের আক্রমণ।
৩. জেএসএসের/ আরাকান আর্মির পোশাক পরে বার্মিজ আর্মির বাংলাদেশের প্রবেশ করে পাহাড়ী/বাঙালীদের উপর আক্রমণ। ইতিপূর্বে আরাকান আর্মির সাথে বাংলাদেশ সেনাদের কয়েক দফা যুদ্ধ হয়েছে। এর দায় সরকারের উপর ফেলে দিয়ে বিশ্বের কাছে প্রমান করা বাংলাদেশেও রোহিঙ্গাদের মত উপজাতিদের উপর হামলা হচ্ছে।
৪. বর্তমান অস্থিরতার সুযোগে বড় ধরণের অস্ত্র আমদানী।
৫. জেএসএসের/ আরএসও/ রোহিঙ্গাদের পোশাক পরে বার্মিজ আর্মি/জেএসএসের বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা।
৬. এ ধরণের আরো পরিকল্পনা রয়েছে যা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে আরাকান সমস্যার সমান্তরাল করা।
কাজেই যখনই আপনার আশেপাশে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখেন সাথে সাথে নিরাপত্তা বাহিনী ও মিডিয়াকে জানান। আর এই নিউজটা শেয়ার করে সকলকে সচেতন করুন।”
কমরেড মাহমুদ যাই লিখুন না কেন। বাস্তবিক পক্ষে উচ্চ পর্যায়ের বৌদ্ধ ধর্মগুরু বরাত দিয়ে যখন একই কথা বলা হয় তখন সাধারণ বৌদ্ধদের মধ্যে তা আতঙ্ক না ছড়িয়ে পরে না।  U Pannya Siri Bhikkhu নামের এক ভিক্ষু তার ফেসবুক আইডিতে উ চহ্লা ভান্তের ছবি ব্যবহার করে গুরু ভান্তের বরাতে তিনি লিখেছেন,

“ গুরু ভান্তের পামর্শ-উপদেশ—সদাশয় সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে পরিস্থিতি শান্ত ও স্থিতিশীল থাকলেও বেশকিচু সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে লুট, ছিনতাই, নারীদের শ্লীলতাহানী ইত্যাদি করতে পারে। তাই বৌদ্ধ জাতি ভাইবোনদের খুব সাবধানে চলাফেরা করতে, বের হতে হলে অন্তত ৫/৬-৮/১০ জন একত্রে বের হওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করেছেন গুরুভান্তে। যাদের এ ধরণের সঙ্গী সাথী নাই তাদেরকে ১০/১৫ দিন কোথাও বের না হওয়ার জন্য, অথবা বাড়িতে চলে আসার জন্য বিশেষ করে পাহাড়ী মেয়েদেরকে মৈত্রীপূর্ণ পরামর্শ প্রদান করেছেন। কারোর সাথে তর্ক না করার জন্য ক্ষান্তি গুণে চুপ তাকার জন্যও পরামর্শ প্রদান করেছেন। সর্বদা ত্রিরত্নের ছায়ায় থাকুন। (যারা ঢাকা, চিটাগাং, কুমিল্লা প্রভৃতি শহরে থাকেন।)”
একই আশঙ্কা করেছেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। ১৭ সেপ্টেম্বর নিজ সার্কেলের কার্যালয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন, “চট্টগ্রাম, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে কর্মরত বা বসবাসরত পার্বত্য চট্টগ্রামের একাধিক পাহাড়ি ব্যক্তি তাঁদের জাতিগত বা ধর্মগত পরিচয়ের কারনে কটাক্ষ উক্তি, হুমকি এবং হিংসাত্মক ও অন্যান্যভাবে অনাকাংখিত আচরণের শিকার হয়েছেন মর্মে আমরা জেনেছি, এটা সংশয়ের বিষয়। এবং আমরা এ ব্যাপারে তীব্র নিন্দা জানাই”।
চাকমা সার্কেল প্রধান বলেন, “মায়ানমার সরকারের হাতে, বিশেষ করে সামরিক শাসনামলে, নিপীড়নের শিকার হয়েছে শুধু অ-বৌদ্ধ সম্প্রদায় নয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সংখ্যাগুরু বামার সম্প্রদায়, এবং শ্যান, রাখাইন, মোন, ক্যারেনসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নর-নারীও অত্যাচার ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।”
উল্লেখ্য, বর্মী শাসকদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে রোহিঙ্গাদের মতো চাকমারাও কয়েকশত বছর আগে বার্মা থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে পাহাড়ী সন্ত্রাসীগুলোর সামাজিক গণমাধ্যমে উষ্কানীমূলক পোস্ট ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের সবগুলো গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্থলা বাহিনী সজাগ রয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র পার্বত্যনিউজকে নিশ্চিত করেছে, বিষয়টি নিয়ে তারা সচেতন রয়েছেন। যেসব আইডি থেকে এ ধরণের উষ্কানী দেয়া হচ্ছে সেগুলো তারা নিয়মিত মনিটরিং করছেন।এমনকি রোহিঙ্গা ইস্যু পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর কি ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে সে বিষয়েও সরকারকে সচেতন করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
http://archive.is/cK4xv
উপজাতি সন্ত্রাসীরা নিজেরাই হত্যা, নির্যাতন করে বাঙ্গালীদের উপর চাপায়!!!
Image result for পার্বত্য চট্রগ্রাম কি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পথে?উপজাতি সন্ত্রাসীরা নিজেরাই হত্যা, নির্যাতন করে বাঙ্গালীদের উপর চাপায়!!!
প্রতিবেদনে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ২৭শে ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটি জেলা সদরে আপন ভগ্নিপতির ভাড়া বাসায় বোন ও ভগ্নিপতির অনুপস্থিতিতে গলা কেটে হত্যা করা হয় খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ইতি চাকমাকে। কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল এ হত্যাকাণ্ডকে পুঁজি করে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি বাঙালিদের দায়ী করে নানা রং চড়ানোর অপচেষ্টা চালায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে নানা অপপ্রচার চালায়। এমনকি বাংলাদেশ ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের ফেসবুকের চাকমা পেইজগুলোতেও আলোচনায় স্থান পায় ইতি চাকমা।
তারা সকলেই এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি বাঙালিদের দায়ী করে পোস্ট প্রকাশ করে। ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় তুষার চাকমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে জানায়, ৫ জন চাকমা যুবক ওই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ইতি চাকমার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো তারা একই কৌশল অবলম্বন করে বাঙালিদেরকে সরাসরি দোষারোপ করে বালাতি ত্রিপুরা নামের এক উপজাতি মহিলা খুন হওয়ার পর। ১২ই সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়িতে খুন হয় বালাতি ত্রিপুরা। এবারও আটঘাট বেঁধে মাঠে নামে বিভিন্ন উপজাতি সংগঠনগুলো।
এবার তারা সমস্ত পার্বত্য বাঙালিকে দোষারোপ না করে সুনির্দিষ্টভাবে করিম, নুরু আর মানিক নামে তিন বাঙালিকে দোষারোপ করে। ঘটনার মাত্র ছয়দিনের মাথায় বালাতি ত্রিপুরার খুনের মূল নায়ক কার্বারী সাধন ত্রিপুরা নামক এক উপজাতি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপজাতিরা শুধু বাঙালিদেরকে দোষারোপ করেই ক্ষান্ত হয় না। সুযোগ পেলে তারা হত্যা করতেও কুণ্ঠিত হয় না। ২০১৪ সালের ৬ই জুন বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে ব্র্যাক এনজিওর আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা উপ্রু মারমাকে ধর্ষণ করে হত্যা করে। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে স্থানীয় পাহাড়িরা বাঙালি কাঠুরিয়া মুসলিম উদ্দিনকে ধরে গণপিটুনি দিলে তার মৃত্যু হয়।
পরবর্তীতে তদন্তে দেখা যায় যে, এ ঘটনায় জড়িত উপজাতি রশদ তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে বিজয় তঞ্চঙ্গ্যা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাঙালিদেরকে একঘরে করে রাখতে উপজাতি সংগঠনগুলো তাদের নিজ জাতি গোষ্ঠীকে নির্যাতন করতেও পিছপা হয় না। তার জ্বলন্ত উদাহরণ রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার আয়না চাকমা নামক এক কিশোরী। ২০১৬ সালের ২৯শে মে ‘মা মোবাইল সেন্টার’ নামে এক বাঙালি ছেলের দোকানে কলেজে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে যায় আয়না চাকমা। বাঙালির দোকানে গিয়েছে শুধুমাত্র এ অপরাধে এই চাকমা কিশোরীকে সেখান থেকে ধরে এনে প্রকাশ্যে মারধর করে পাহাড়ের একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুধু এখানেই শেষ নয়। পরে এ কিশোরীকে গহিন জঙ্গলে নিয়ে যৌন নির্যাতন করে তারা এবং এ বর্বর মুহূর্তের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে। প্রতিবেদনে এ ধরনের আরো কয়েকটি ঘটনার কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সব বাঙালি এবং উপজাতি এদেশেরই গর্বিত নাগরিক।


http://archive.is/nZ3bi
গোয়েন্দা রিপোর্টে তথ্য: পাহাড়ে দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা
Image result for পার্বত্য চট্রগ্রাম কি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পথে?গোয়েন্দা রিপোর্টে তথ্য: পাহাড়ে দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা

তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে সশস্ত্র উপজাতি সংগঠনগুলো। সম্প্রতি পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে কাজ করা একটি শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিদের ওপর যেকোনো ধরনের অপরাধ হলেই তার দায়ভার বাঙালিদের ওপর চাপিয়ে একটি গোষ্ঠী ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে উঠে-পড়ে লাগে। তাদের মূল লক্ষ্য- পার্বত্য চট্টগ্রামে সামপ্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে উপজাতি-বাঙালি সমপ্রীতি ধ্বংস করা। একইসঙ্গে বাঙালিদের দায়ী করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি বিতাড়ন আন্দোলন গড়ে তোলা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিগত বিভেদ ভুলে সাধারণ বাঙালি এবং উপজাতিদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান থাকলেও কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের নানান নোংরা রাজনীতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদেরকে উৎখাত করতে বিভিন্ন ধরনের অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে তারা। এমনকি নিজেরাই কোনো একটি অপরাধ সংঘটিত করে সেটাতে নানান রং চড়িয়ে বাঙালিদেরকে সরাসরি দোষারোপ করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাশাপাশি তারা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে মিছিল, মিটিং, সমাবেশ করে মিডিয়া এবং জনগণের নজর কাড়ার চেষ্টা করে আসছে। পাশাপাশি তারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষত ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ, পেইজ বা আইডি ব্যবহার করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিদেরকে উৎখাত করার লক্ষ্যে নানান মিথ্যাচার, গুজব এবং বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিয়ে আসছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে তাদের সকলের অবদান অপরিসীম। তাই উপজাতি-বাঙালি ভেদাভেদ আর অতীতের হানাহানি ও বিবাদ ভুলে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অগ্রসর হতে হবে। তবেই পার্বত্য এলাকায় শান্তির পরিবেশ আরো সুসংহত হবে এবং সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হবে। এতে বলা হয়েছে, অপার সম্ভাবনাময় পার্বত্য অঞ্চলে মুষ্টিমেয় কিছু সন্ত্রাসী কর্তৃক সৃষ্ট অশান্তি সমূলে উৎপাটন করে সবাই মিলে শান্তি ও সমপ্রীতির সঙ্গে বসবাস করতে পারলেই উন্নয়ন এবং উন্নত জীবনযাপন নিশ্চিত হতে বাধ্য।



http://archive.is/nZ3bi
পাহাড়িরা গুম, খুন হলেই দায় আসে বাঙ্গালীদের উপর!
Image result for পার্বত্য চট্রগ্রাম কি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পথে?পাহাড়িরা গুম, খুন হলেই দায় আসে বাঙ্গালীদের উপর!
পাহাড়ে থেমে নেই খুন-অপহরণ ও ধর্ষণ। আর সেই খুন-অপহরণ ও ধর্ষণকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করছে কিছু মহল। আইন যাদের কাছে পৌঁছাতে পারেনা। যতটুকুই পৌঁছে তাতে বেরিয়ে আসে কারা তারা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কি চায় তারা। আর কারা করছে এসব ইস্যু সৃষ্টির খুন-গুম-ধর্ষণ।
কিছু ঘটনার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিদের উপর যেকোনো ধরনের অপরাধ হলেই তার দায়ভার বাঙালিদের উপর চাপিয়ে একটি গোষ্ঠী ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে উঠে পড়ে লাগে। তাদের মূল লক্ষ্য পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে উপজাতি-বাঙালি সম্প্রীতি ধ্বংস করা এবং বাঙালিদের দায়ী করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি বিতাড়ন আন্দোলন গড়ে তোলা।
জাতিগত বিভেদ ভুলে সাধারণ বাঙালি এবং উপজাতিদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান থাকলেও কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের এরুপ নানা নোংরা রাজনীতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের বিতাড়ণ করার বিভিন্ন ধরনের অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে তারা। এমনকি নিজেরাই কোনো একটি অপরাধ সংঘটিত করে সেটাতে নানা রং চড়িয়ে বাঙালিদের সরাসরি দোষারোপ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাশাপাশি তারা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে মিছিল, মিটিং, সমাবেশ করে মিডিয়া এবং জনগণের নজর কাড়ার চেষ্টা করে আসছে। পাশাপাশি তারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষত: ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ, পেইজ বা আইডি ব্যবহার করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিদেরকে উৎখাত করার লক্ষ্যে নানান মিথ্যাচার, গুজব এবং বিভ্রান্তিকর পোস্ট প্রদান করে আসছে।
সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কয়েকটি ঘটনা ও পুলিশের রহস্য উন্মোচনের চিত্র তুলে ধরছি।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে খাগড়ছড়ি জেলা সদরে আপন ভগ্নিপতির ভাড়া বাসায় বোন ও ভগ্নিপতির অনুপস্থিতিতে গলা কেটে হত্যা করা হয় খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ইতি চাকমাকে। এ হত্যাকাণ্ডকে পুঁজি করে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে সরাসরি বাঙালিদের দায়ী করে নানা রং ছড়ানোর অপচেষ্টা চালায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে নানা অপপ্রচার চালায়। এমনকি বাংলাদেশ ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের ফেসবুকের চাকমা পেইজগুলোতেও আলোচনায় স্থান পায় ইতি চাকমা। তারা সকলেই এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি বাঙালিদের দায়ী করে পোস্ট প্রকাশ করে। তারা ইতি চাকমার হত্যাকাণ্ডের পর হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ ঢাকা ও চট্টগ্রামে মিছিল, সমাবেশ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস বর্জন, কালো ব্যাজ ধারণসহ নানান কর্মসূচি পালন করে।
কিন্তু দীর্ঘদির তদন্ত শেষে সকল রহস্যের পর্দা উন্মোচন করে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকায় রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ির বাসিন্দা সুনীল চাকমার ছেলে তুষার চাকমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তুষার চাকমা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছেন। ৫ জন চাকমা যুবক এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। কারণ ইতি চাকমা তুষার চাকমার প্রেম প্রত্যাখ্যান করেছিল।
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, হত্যাকাণ্ডেরে রহস্য উদঘাটন সহযোগিতা করে চট্টগ্রাম সিআইডি ও খাগড়াছড়ির ডিবি। (সূত্র: কালের কন্ঠ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ও পরিবর্তন ডটকম ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)।
ইতি চাকমার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার দৃশ্যপটে বালাতি ত্রিপুরা নামের এক উপজাতি নারী। গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে খুন হয় বালাতি ত্রিপুরা। এবারও আটঘাট বেঁধে ওই মহলটি শুরু করে হৈ হৈ কাণ্ড। এবার তারা সমস্ত পার্বত্য বাঙালিকে ঢালাও ভাবে দোষারোপ না করে কৌশলে সুনির্দিষ্ট ভাবে করিম, নুরু আর মানিক নামে তিন বাঙালিকে দোষারোপ করে।
কিন্তু বিধি বাম। এবারও তাদের কূটকৌশল ধরা পড়ে যায়। ঘটনার মাত্র ছয়দিনের মাথায় বালাতি ত্রিপুরার খুনের মূল নায়ক কার্বারী সাধন ত্রিপুরা নামক এক উপজাতিকে গ্রেফতার করে পনছড়ি থানা পুলিশ।
পানছড়ি থানার ওসি মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বালাতি ত্রিপুরাকে সাধন কার্বারি ও তার আরো কয়েকজন সহযোগী মিলে কুপিয়ে হত্যা করেছে। হত্যা করার পর ইউপি সদস্য শিবুকে দিয়ে থানায় খবরও পাঠায় সাধন। বালাতিকে বাঙালিরা হত্যা করেছে এমনটি দাবিও করেছিল সাধান কার্বারি। এ হত্যার বিচার দাবি করে প্রতিবাদ সমাবেশও করেছে। (সূত্র: দৈনিক পূর্বকোণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭)।
গত ২৯ মে ২০১৬ ইং তারিখে মা মোবাইল সেন্টার নামক এক বাঙালি ছেলের দোকানে কলেজে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে যায় আয়না চাকমা নামে এক কিশোরী। বাঙালির দোকানে যাওয়ার অপরাধে ওই চাকমা কিশোরীকে সেখান থেকে ধরে এনে প্রকাশ্যে মারধর করে পাহাড়ি ছাত্রপরিষদ নামের একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে ওই কিশোরীকে গহীন জঙ্গলে নিয়ে যৌন নির্যাতন করে এবং তা মোবাইলে ধারণ করেন তারা। আজো নিরাপত্তার অভাবে রয়েছে ওই কিশোরীর পরিবার। এই ঘটনায় অবশ্য পুলিশ কয়েকজন পাহাড়ি ছাত্রপরিষদ নেতাকে গ্রেফতার করেছে। তারা নেতার মুক্তির দাবিতে হরতাল-অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। (সূত্র: পরিবর্তন ডটকম, ২৭ জুন ২০১৬)।
১৩ আগস্ট ২০১৪ তারিখে, রাঙ্গামাটি জেলা সদরে টেক্সটাইল শো রুমের বিক্রয়কর্মী বিশাখা চাকমা কর্মস্থল থেকে বাসায় যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় এবং ২০ আগস্ট রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পরপরই শুরু হয় বাঙালিদের দোষারোপের রাজনীতি। শুরু হয় সমাবেশ-মানববন্ধন।
কিন্তু পরবর্তীতে পুলিশের তদন্তে দেখা যায় যে, বিশাখার স্বামী লক্ষীরাম চাকমার উপস্থিতিতে বখাটে সঞ্জয় চাকমা, তার সহযোগী তত্তারাম ও বিনোদ চাকমা মিলে বিশাখা চাকমাকে ধর্ষণ ও হত্যা করে। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে। রাঙামাটি কতোয়ালি থানার ওসি মনু ইমতিয়াজ সোহেল তখন এ তথ্য নিশ্চিত করেছিলেন। (সূত্র: সিএইচটি টাইমস, ২২ নভেম্বর ২০১৪।)
গত ৬ জুন ২০১৪ তারিখে বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে ব্র্যাক এনজিওর আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা উ প্রু মারমাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তুলে স্থানীয় উপজাতীয় সংগঠনের সদস্যরা বাঙালি কাঠুরিয়া মুসলিম উদ্দিনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। কিন্তু পরবর্তীতে তদন্তে দেখা যায় ওই ধর্ষণ ও হত্যার মূল খলনায়ক উপজাতি রশদ তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে বিজয় তঞ্চঙ্গ্যা। (সূত্র: পার্বত্য নিউজ, ৮ জুন ২০১৪)।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে সবিতা চাকমার লাশ তার নিজ বাড়ির পাশের ক্ষেতে পাওয়া যায়। তার মৃত্যুর পর বিভিন্ন পাহাড়ি সংগঠনগুলো সবিতা চাকমাকে বাঙালি ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপার গণধর্ষণ করে হত্যার অভিযোগ তুলে ব্যাপক প্রচারণা ও প্রতিবাদ মিছিল বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
পরবর্তীতে সবিতা চাকমার লাশের ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্টে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ঘটনার দিন সবিতা চাকমার পিরিয়ড চলছিল এবং পিরিয়ডের অতিরিক্ত পোশাকগুলো ঠিকঠাক ছিল।
উপসংহারে বলতে চাই, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সব বাঙালি এবং উপজাতি এদেশেরই গর্বিত নাগরিক। পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে তাদের সকলের অবদান অপরিসীম। তাই উপজাতি-বাঙালি ভেদাভেদ আর অতীতের হানাহানি ও বিবাদ ভুলে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অগ্রসর হতে হবে।
কুচক্রি মহলটির সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে, হতে হবে সচেতন। তবেই পার্বত্য এলাকায় শান্তির পরিবেশ আরও সুসংহত হবে এবং সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হবে।
অপার সম্ভাবনাময় পার্বত্য অঞ্চলে মুষ্টিমেয় কিছু সন্ত্রাসীদের সৃষ্ট অশান্তি সমূলে উৎপাটন করে সবাই মিলে শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করতে পারলেই উন্নয়ন এবং উন্নত জীবনযাপন নিশ্চিত হতে বাধ্য।