জেএসএস-সন্তু গ্রুপের পররাষ্ট্র মন্ত্রী, নয়া দিল্লিতে বসবাসরত করুনালংকার ভিক্ষু সিএইচটি নিউজ ডটকমে (ফোন: +৯১-১১-২৫৩৯৮৩৮৩ এবং +৯১-৭৮২৭৮১৩৩৩৬) তার বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়েও নিজের উদ্যোগে জেএসএস-সন্তু গ্রুপের বাইরে থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং জেএসএস-সন্তু গ্রুপের সামরিক শাখা, জুম্ম লিবারেশন আর্মি (জে.এল.এ.) “Military School of JLA”/ জে.এল.এ. সামরিক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয় খুলেছেন। তিনি নিজে সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে এবং রাজনৈতিক শিক্ষা দিতে যান। (জে.এল.এ.) “সামরিক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়” মিজোরামের ভাংমন থানার সালমুর গ্রামে হরি মোহন চাকমা মালিকানাধীন জমির উপর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং ক্যাপ্টেন পিবির প্রধান শিক্ষাদাতা। জে.এল.এ.-র সদর দপ্তর মিজোরামের তেলাবুং থানার সিলকুর গ্রামে (ত্রিপুরা ঘাট এবং সিলকুরের মধ্যে সিলকুরের দিকে) অবস্থিত। জে.এল.এ.-র প্রধান ফিল্ড কমান্ডার লক্ষী প্রাসাদ চাকমা ওরফে দেবাশীষ ওরফে রাজা, উপ-ফিল্ড কমান্ডার জার্নাল, পারিবারিক এবং অর্থ বিভগের প্রধান সজন বাবু, যোগাযোগের প্রধান খীসা বাবু এবং অন্যান্যরা সিলকুরে থাকেন। অস্ত্র কালেক্টর উদয়ন চাকমা ওরফে জীত চাকমা ওরফে জনি যিনি কেতু উস্তাদের নেতৃত্বে আইজ্বলে থাকেন।
এটাই হচ্ছে জেএসএস-সন্তু গ্রুপের একজন সিনিয়র নেতার জে.এল.এ বিষয়ে সাক্ষাৎকার। সন্তু লারমা কি আবার জুম্ম জাতিকে যুদ্ধের পথে নিয়ে যাচ্ছে?
তিনি কি করে সামরিক অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন, করুনালংকার ভিক্ষু বলেন, “যেহেতু তাদের সাথে আমার কাজ করতে হবে, আমাকে সেই বিদ্যার প্রয়োজন হবে সেজন্য আমি নিজে অনেক জায়গায় সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছি. আমাকে স্ট্রাটেজি ব্যাপারে, সামরিক স্ট্রাটেজি ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছিল। আমি বিদেশীদুতযুক্ত প্রশাসন এবং সাধারণ প্রশাসন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমি লম্বা কোর্স করিনি, এক মাস বা দুই মাসের সর্ট কোর্স করেছি। সবকিছু প্রয়োজন।”
ভান্তেদের সাধারণত এসব প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়না এবং তাকে কেন দেওয়া হলো, সে প্রসঙ্গে করুনালংকার ভিক্ষু বলেছেন, “ভান্তেকে কেন নেওয়া হবে না। তাছাড়া আমি পার্টিতে (জেএসএস-সন্তু গ্রুপে) প্রশিক্ষণ নিইনি। আমি নিজের উদ্যোগে অন্য জায়গায় প্রশিক্ষণ নিয়েছি কারণ সেগুলো আমার প্রয়োজন। পার্টি আমাকে মাত্র এখানে (ভারতে) থাকার এবং পররাষ্ট্র বিষয় দেখার দায়িত্ব দিয়েছে।”
প্রশ্ন হচ্ছে করুনালংকার ভিক্ষু কোথায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এই সাক্ষাৎকারে তিনি অনেক দেশে ভ্রমনের (ভারতের বাইরে) কথা বলেছেন এবং ইসরাইলের MOSSAD ওকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। (পরে প্রকাশিত হবে)
উনি প্রশিক্ষণ দিতে কি অনুভব করেন সে প্রশ্নে করুনালংকার ভিক্ষু বলেন “আমি নিজে অনেক আনন্দ অনুভব করি। আমি প্রায় সময় সেখানে ভিতরে যাই। আমি ওদেরকে দেখায়। আমি এখনো এক মাসের প্রশিক্ষণ দিতে যাই। আমাদের দুই-তিন জনের পরে আমরা আট- দশ জনকে ভালো প্রশিক্ষক হিসাবে তুলতে পেরেছি এবং এখন আমাদের আর যেতে হয় না।
তিনি ওদেরকে নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন কিনা সেই প্রশ্নে করুনালংকার ভিক্ষু, একটা বড় “হু” বলেছে।
কে সবচেয়ে ভালো প্রশিক্ষক, তার উত্তরে করুনালংকার ভিক্ষু বলেন, “সবচেয়ে ভালো আশীষ বাবু, তারপর ঝুবুর বাবু, কেতু উস্তাদ। ওরা এখন বুড়ো হয়ে গেছে এবং অনেক অল্পবয়স্ক প্রশিক্ষক, ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সের ছেলে আছে। আমাদের কোন অসুবিধা নাই। ওদের পারফরমেন্স অনেক ভালো। আমাদের মিলিটারি ভিশন (vision) আছে যেটাতে আমরা কি করব সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিই এবং প্রত্যক তিন বছরে আমরা সেটা পরিবর্তন করি। আমাদের মিলিটারি ভিশন ২০০৯ থেকে ২০১২ ছিল এবং এখন ২০১২ থেকে ২০১৫ চলছে। কিন্তু আমরা ভিশন অনুসারে তেমন কিছু দিতে পারছি না। এই ভিশন পেপার আমরা গঠন প্রণালী, কোন পদবি পর্যন্ত অফিসার আমাদের থাকবে – লেফটেনান্ট কর্নেল, কর্নেল, মেজর, ক্যাপ্টেন ইত্যাদি– সে সিদ্ধান্ত আছে। এখন আমাদের মেজর পর্যন্ত আছে। আমাদের কয়েকজন মেজর আছে, কয়েকজন ক্যাপ্টেন রয়েছে। আমরা জানি একটা ব্যাটেলিয়নে কতজন সৈন্য, কতগুলি হাতিয়ার প্রয়োজন হয়।
জুম্ম লিবারেশন আর্মি (জে.এল.এ.) কিভাবে সিদ্ধান্ত নেয় তার উত্তরে করুনালংকার ভিক্ষু বলেন, “সেটা সামরিক গঠন প্রণালীর (formation) – প্রমোশন এবং পদবি – উপর নির্ভর করে – সাধারনত ব্রিগেডিয়ার থাকলে ব্রিগেড formation থাকতে হবে, মেজর হলে মেজর formation থাকতে হবে, লেফটেনান্ট কর্নেল সে formation থাকতে হবে, মানে ততগুলো সৈন্যর প্রয়োজন হবে। পৃথিবীতে তিনটা মেজর formation রয়েছে: আমেরিকা, ব্রিটিশ এবং চীন। ব্রিটিশ গঠন প্রণালীতে ১৮ জন নিয়ে একটা সেকশন হয়; আমেরিকায় সেটা ১২ জন দিয়ে হয় এবং চিনে সেটা গরিলা যোদ্ধার কারণে সাত যান নিয়ে একটা সেকশন হয়। কয়টা সেকশন নিয়ে একটা প্লাটুন হবে, কয়টা প্লাটুন নিয়ে একটা কোম্পানি হবে, কয়টা কোম্পানি নিয়ে একটা ব্যাটেলিয়ন হবে, কয়টা ব্যাটেলিয়ন নিয়ে একটা ব্রিগেড হবে এবং সে হিসাবে পদবি দেওয়া হয়।”
আগের শান্তি বাহিনী সময়ের মত করে বড় ধরনের প্রশিক্ষণ সম্ভব কিনা সে বিষয়ে করুনালংকার ভিক্ষু বলেন, “প্রত্যক বছর আমরা দুইটা ট্রেনিং কোর্স করি – একটা সাধারণ কোর্স এবং আরেকটা কমিশন কোর্স। এসব কোর্স ২০০৯ সাল থেকে চলছে। প্রশিক্ষণার্থীদের সংখ্য কখনো ৮০ থেকে কম নয় এবং এবছর আমরা ১৪৩ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি । প্রশিক্ষণার্থীদের পারফরমেন্স খুব ভালো। গত প্রশিক্ষণে (১৪৩) আমাদের মাত্র দুইজন ইন্টারমিডিয়েট পাশ ছিল, কিছু মেট্রিক পাশ ছিল এবং বাকিদের বয়স এত কচি যে তাদের ট্রেনিং দেওয়া মুশকিল। সাধারণ কোর্সের সময় ৩০ থেকে ৪৫ দিন। কমিশন কোর্সের সময় ১৭ থেকে ২০ দিন যেখানে প্রসাশনিক কাজ শেখানো হয়। কমিশন অফিসারদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে মেট্রিক পাশ এবং তাদেরকে জনগনের সাথে কি করে ব্যবহার করতে হয় সে ব্যাপারে শেখানো হয়। কি করবো শিক্ষিত লোক পাওয়া যায় না। উদাহরণ স্বরূপ সুদীপ বাবু (ওরফে বাবুককে) মাত্র মেট্রিক পাশ, কিন্তু সে খুব অভিজ্ঞ। আমাদের এসব কিছু চিন্তা করতে হয়।”
করুনালংকার ভিক্ষু আরো বলেন, প্রশিক্ষণের সময় স্বাভাবিক কষ্ট হয়।
করুনালংকার ভিক্ষু একেবারে ভীতিহীন ভাব দেখালেন। হুমকির প্রশ্নে তিনি বলেন, “কি হুমকি? একদিন সবাইকে মরতে হবে। শত্রুর চেয়ে কিভাবে ছদ্ম-আবরণ করতে হয় সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শত্রু চারিদিকে রয়েছে।”
করুনালংকার সাধারণত অন্যদের প্রশংসা করেন না বলে জানা গেছে এবং তিনি যেভাবে আশীষ বাবু, ঝুবুর বাবু, কেতু উস্তাদ সুদীপ বাবুর নাম নিলেন তাতে মনে হচ্ছে ওরা তার পক্ষাবলম্বী। ভীতিহীনতা এবং ছদ্ম-আবরণ করার প্রয়োজনের মাধ্যমে তিনি সন্তু লারমাকে হুমকি দিলেন বলে মনে হচ্ছে। ব্যাপারটা হচ্ছে সন্তু লারমা বা জে এস এস-সন্তু গ্রুপের গোপনীয়তা ব্যাপারে তিনি কতটুকু জানেন?
https://goo.gl/nVko5B, http://archive.is/IfFoP