মিয়ানমারের শতাধিক ভান্তে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে
Related imageমিয়ানমারের শতাধিক ভান্তে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে
সবুজে ঘেরা পার্বত্য এলাকায় নতুন দাবানলের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এখানে মিয়ানমারের উগ্রপন্থী একটি গ্রুপ তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। সরকারের খাস জমি দখল করে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তুলছে ‘ভাবনা কেন্দ্র’ বা কিয়াং। ভাবনা কেন্দ্রে বসেই মিয়ানমারের উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ৯৬৯ উপজাতিদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
৩৫ জনের বেশি মিয়ানমারের নাগরিক এ কাজে জড়িত রয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে। তারা ধর্ম যাজক বা ভান্তে সেজে পাহাড়ীদের মধ্যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে। গত কয়েক মাসে তারা পার্বত্য এলাকায় ২৫ হাজারের বেশি অনুসারী তৈরি করেছে।
মিয়ানমারের এই ভান্তেরা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত বান্দরবানের স্বর্ণমন্দির ও রাঙ্গামাটির বনবিহারে ও রাজবন বিহারে কাউকে ঢুকতে না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তাদের পরামর্শে এই তিনটি প্যাগোডা এখন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে। বিহারগুলোতে গত কয়েক মাস ধরে সর্বসাধরণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেখানে এখন জুডো ক্যারাতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা বনে ঢুকে পড়ছে। বনে গিয়ে আবার তারা উচ্চতর প্রশিক্ষণও নিচ্ছে। পরে তারা জম্ম ল্যান্ড গড়ার আন্দোলন-সংগ্রাম ও সশস্ত্র বিপ্লবের দিকে যাচ্ছে।
সরেজমিনে পার্বত্য এলাকার রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় ঘুরে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি মিয়ানমারের এক নাগরিক ভান্তে সেজে এমন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিল। যৌথবাহিনী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে মিয়ানমারের মুদ্রাসহ (এক লাখ ৫৫ হাজার কিয়াত) গ্রেফতার করে। মিয়ানমারের মুদ্রার নাম ‘কিয়াত’। গ্রেফতারের পর যৌথবাহিনী তার কাছ থেকে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। সে বলেছে, পাহাড়ে তার মতো প্রায় শতাধিক ভান্তে রয়েছে। তার তথ্যে বলা হয় পাহাড়ের উপজাতিরা যাতে বাঙালীদের ওপর বিষিয়ে উঠে সে জন্য তারা কাজ করছে।
অন্যমিডিয়া
গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, এ রকম কয়েক শ’ ভান্তে পার্বত্য এলাকায় কাজ করে যাচ্ছে। যাদের চেনার কোন উপায় নেই। কারণ পার্বত্য এলাকার উপজাতি গোষ্ঠীর মানুষের মতোই তাদের চেহারা বা রেস। মিয়ানমারের ভান্তেদের বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় আগে জাতি সত্তা নিয়ে লড়াই সংগ্রাম চলেছে। এই সংগ্রামে পাহাড়ীদের খুব একটা লাভ হয়নি। তাই বাংলাদেশের সমতলে যেমন ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী রয়েছে তাদের মতো পাহাড়ের একটি ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠী তৈরি করতে হবে। এতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাহাড়ীরা লাভবান হবে।
পুরুষ ভান্তেদের মতো মিয়ানমার থেকে আসা বেশ কয়েকজন নারী সদস্যরাও এখানে কাজ করে যাচ্ছে। সমতলে জামায়াতের মহিলা কর্মীরা যেভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের তালিম দেয়, ঠিক একই রকমভাবে তারাও পাহাড়ীদের ঘরে ঘরে গিয়ে উগ্র মতবাদ প্রচার করছে। গোয়েন্দারা এমন ২৫ জন নারীর সন্ধান পেয়েছে। যারা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে কাজ করছে। তাদের আটকের জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
মিয়ানমারের উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ৯৬৯ রোহিঙ্গা ও রাখাইন প্রদেশেও একই রকমভাবে কাজ করছে। মিয়ানমারের উগ্রপন্থী আরও কয়েকটি গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে ‘আরাকান আর্মী (এ এ)’, ‘আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি)’, ‘রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশন (আরওএস),’ আল ইয়াকিন’সহ বেশ কয়েকটি গ্রুপ পাহাড়ে সক্রিয়। তারা নানাভাবে পাহাড়ী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। অস্ত্র অর্থেও যোগনদাতারা পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় ঘটি গেড়ে বসেছে।
ইউপিডিএফ, জেএসএস ও জেএসএস সংস্কারপন্থী অস্ত্রধারীদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছে তারা। তাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখানো জম্মু ল্যান্ড গঠনের। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জম্মু ল্যান্ড গঠন করার জন্য বিভিন্ন রূপরেখাও তৈরি করা হয়েছে। কি ধরনের সরকার হবে পাহাড়ে তারও একটি ছক সাজানো হয়েছে।
পাহাড়কে এমন একটি অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে যে, বাংলাদেশ সরকার থেকে পাহাড়কে বিচ্ছিন্ন করে নিজেরাই সরকার গঠন করে স্বাধীন জম্মু ল্যান্ড গঠন করবে। এ ধরনের কর্মকা- সরকার প্রশ্রয় না দেয়ায় পার্বত্য জেলাগুলোতে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো কোন না কোন কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছে।
সরকারী বেসরকারী চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। পরিবহন থেকে প্রতিদিন তাদের হাজার হাজার টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। এ সবের কারণে পার্বত্য এলাকার মানুষ এখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মানুষজনের স্বাভাবিক কাজকর্ম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি চায়।
গত দু’দিনে রাঙ্গামাটিতে ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাহাড়ী উগ্রপন্থীদের উৎপাত না থাকলে এই এলাকার মানুষ শান্তিতেই বসবাস করতে পারত। সাধারণ উপজাতিরা বাঙালীদের সঙ্গে মিলে মিশেই চলতে চায়। কিন্তু ইউপিডিএফ, জেএসএস ও জেএসএস সংস্কারপন্থী গ্রুপের কারণে তারা ভাই বন্ধু ও প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করতে হিমশিম খাচ্ছে।
পাহাড়ে শান্তির জন্য শান্তিচুক্তি হয় ১৯৯৭ সালে হয়েছে। চুক্তির পর গত ২০ বছরেও এখানে শান্তির বাতাস বইছে না। দিন যত যাচ্ছে অশান্তির আগুন ততই বাড়ছে। সবুজে ঘেরা পাহাড়ে বইছে সেই আগুনের লু হাওয়া। সম্প্রতি যৌথবাহিনী ইউপিডিএফ’র একজন সশস্ত্র সদস্যকে ভারি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলা বারুদসহ আটক করেছে। এই সদস্য মিজুরাম সীমান্ত এলাকার কমান্ডার রিভেল চাকমা গ্রুপের সদস্য। মিজুরামে ‘চাকমা অটোনোমাস ডিস্ট্রিক কাউন্সিল (সিএডিসি)’ নামের একটি উগ্র গোষ্ঠী তাদের সহযোগিতা করে আসছে।
গভীর অরণ্য পার হয়ে পাহাড়ের উগ্র গোষ্ঠীর সদস্যরা ওই সংগঠনের কাছে গিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নেয়। দেশের ভেতরে আর একটি দেশ গঠনের জন্য পাহাড়ী উগ্র গোষ্ঠীগুলোর এমন তৎপরতা ঠেকাতে যৌথবাহিনী পাহাড়ে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে।
যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মিয়ানমারের ৯৬৯ নামের গ্রুপটি নতুন একটি আলামত। আগে এই গ্রুপের কোন কর্মকাণ্ড পাহাড়ে ছিল না। সম্প্রতি এই গ্রুপটি পাহাড়ের সর্বত্র কাজ করে যাচ্ছে। ধর্ম প্রচারের নামে এমন কর্মকাণ্ড করবে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কখনও কল্পনা করেনি। একজন উগ্রবাদী ভান্তেকে আটকের পর বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।
এ ধরনের আলামত একেবারেই নতুন। তাই এদের নিয়ে কাজ করাও বেশ কঠিন। কে আসল ভান্তে আর কে নকল ভান্তে এটা চিহিৃত করতে সময় লেগে যাচ্ছে। তবে গ্রেফতারকৃত ভান্তের দেয়া তথ্যমতে, বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
উইকিপিডিয়ায় ৯৬৯ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এই সংগঠনটি মুসলিম বিদ্বেষী সংগঠন যা বৌদ্ধ সন্নাসীরা গঠন করেছে। যা দ্বারা গৌতম বুদ্ধ এর গুণ, বৌদ্ধদের কর্ম ও বুদ্ধদের সমাজকে বুঝিয়েছে। ৯ দ্বারা তাদের দেবতা সন্ত্রাসী গৌতম বুদ্ধের গুণ, ৬ দ্বারা সন্ত্রাসী গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা, ৯ দ্বারা বুদ্ধিষ্ট সংঘ এর গুণ বুঝিয়েছে । ইহা নাকি বুদ্ধের ত্রিরত্ন। ইহা বুদ্ধ ধর্মের চাকার থিম ও বটে। মূলত এই ৯৬৯ উগ্র মুসলিম বিদ্বেষী সংগঠন যা মুসলিম ভীতি ছড়াতে কাজ করে। সন্ত্রাসী সন্ন্যাসী আসিন উইরাথু এই সংগঠন বর্তমানে পরিচালিত করে।
২০১২ সালের দাংগাসহ সকল দাংগায় সে মুসলমানদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন করেছে সঙ্গে পুলিশকে বাধা দিয়েছে প্রতিরোধ করার জন্য। টাইম ম্যাগাজিনের শিরোনাম ‘বৌদ্ধ সন্ত্রাস মুখে’ আসিন উইরাথু ওপর একটি গল্প স্থাপিত হয়, তার ছবি ম্যাগাজিনের জুন ২০১৩ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
সে তখন বলেছিল, আপনি দয়াবান হতে পারেন, অন্তরে প্রেম থাকতে পারে কিন্তু আপনি পাগলা কুকুরের সঙ্গে ঘুমাতে পারেন না। পাগলা কুকুর বলতে সে মুসলমানদের বুঝিয়েছে। আমরা যদি দুর্বল হই, মুসলমান আমাদের ভূমি নিয়ে নেবে। এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় সরকার সন্ত্রাসী উইরাথুকে সার্বিক সহযোগিতা করে।
উইরাথুর এই বক্তব্যের পর পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ভান্তেরাও ৯৬৯ গঠন করেছে। ২০১৪ সালের ২৪ জুন লিখিত এক প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে যে এই সংগঠনের সঙ্গে মিল রেখে পার্বত্য চটগ্রামসহ বাংলাদেশের বসবাসরত বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা মিয়ানমারের চরমপন্থী বৌদ্ধ সংগঠন, ৯৬৯ অনুরূপ চরমপন্থী বৌদ্ধ দল গঠন করেছে।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমারের ৯৬৯ এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছে তারা। ৯৬৯ এর সদস্যরা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামেও এসেছিল। গত কয়েক বছরে, ৯৬৯ ব্যাপকভাবে মিয়ানমারের সন্ন্যাসীদের দ্বারা সংগঠিত একটি চরমপন্থী আন্দোলন হিসেবে পরিচিত হয়েছে। ৯৬৯ সংগঠনকে মিয়ানমার সরকার পৃষ্ঠপোষোকতা দেয়।
৯৬৯ এর সদস্যরা শুধু মিয়ানমার নয়, বাংলাদেশসহ সকল বৌদ্ধ অধ্যুষিত অঞ্চলে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে যার মূল টার্গেট হলো মুসলমান। প্রতি মাসে থানচি ও মিজোরামের অরক্ষিত বর্ডার দিয়ে ১৫-২০ বৌদ্ধ সন্ন্যাসী মিয়ানমারে প্রশিক্ষণ নিতে যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি বৌদ্ধ সন্ত্রাসী যুবকরা বর্ডার ক্রস করে মিয়ানমারে যায় এবং ৯৬৯ এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ভান্তেরা উগ্র সন্ত্রাসী আসিন ওয়ারাথু এর সঙ্গে সাক্ষাত করেছে। চরমপন্থী বাংলাদেশী সন্ন্যাসী প্রায় এক বছর আগে মিয়ানমারে আশ্রয় নেন এবং ৯৬৯ সদস্যদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা প্রশিক্ষণ নেয়।


ভয়াবহ বিষয় হলো তাদের প্রশিক্ষণের মূল টার্গেট মুসলমানরা। মিয়ানমারের মুসলমানদের হামলায় এসকল ভান্তে উস্কে দেয় এবং অংশগ্রহণও করে। এ সকল ভান্তের হাত রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত। মিয়ানমারে আশ্রয় নেয়া উপজাতীয় যুবকরা মিয়ানমারে ৯৬৯ এর ব্যানারে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে স্থানীয় রোহিঙ্গা স্থাপনা ও পাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তথ্য: গোপন পথে আসছে অস্ত্র ফের অশান্ত হচ্ছে পাহাড়
Related imageগোয়েন্দা প্রতিবেদনে তথ্য: গোপন পথে আসছে অস্ত্র ফের অশান্ত হচ্ছে পাহাড়
বাংলাদেশের পূর্ব-দক্ষিণের পাহাড়ি অঞ্চলের ৩টি জেলায় আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ তিনটি জেলা হচ্ছে-বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি। ১৯৯৭ সালে জনসংহতি সমিতির সঙ্গে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার শান্তি চুক্তি করে এ জনপদে শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু শান্তি চুক্তির বিভিন্ন শর্ত বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ তুলে গত কয়েকবছর ধরে পাহাড়ে ক্রমেই বেড়ে চলেছিল উত্তাপ। সম্প্রতি তা আবার সশস্ত্র পথে হাটতে শুরু করেছে বলে নানান সূত্র জানা গেছে। তাছাড়া, জন সংহতি সমিতির পক্ষ থেকেও বারংবার সরকারকে হুঁশিয়ারী দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, শান্তিচুক্তি অবিলম্বে বাস্তবায়ন না হলে যে কোনও সময় পরিস্থিতি অবনতি ঘটতে পারে।
অভিযোগ রয়েছে, ভারত ও মিয়ানমারের কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছ থেকে বাংলাদেশের পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা নতুন করে অস্ত্র সংগ্রহ করার। একই সঙ্গে এ সব অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে শান্ত পাহাড়ের জনপদকে ফের উত্তপ্ত করার কাজে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে এ চক্রের সঙ্গে ইউপিডিএফ (ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) ও জনসংহতি সমিতির মত আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নেতারা জড়িত। তাদের পাশে নাম উঠে এসেছে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিরও।
অন্যমিডিয়া
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এ সব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হত্যা-অপহরণের মত জঘন্য কাজে এ সব অস্ত্র ব্যবহার করেছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। এছাড়া রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যেন কোনও জঙ্গি সন্ত্রাসী তাদের অপকর্ম ও দেশ বিরোধী কার্যক্রম চালাতে না পারে তার জন্যেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ সম্পর্কে বলেন, এই পাহাড়ি অঞ্চলের সীমান্ত ব্যাপক বিস্তৃত এবং দুর্গম। এখানে দূর্গম-দুর্ভেদ্য পাহাড়ি সীমান্ত যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বনাঞ্চলবেষ্টিত বিস্তৃত সীমান্তও। তার ফাঁক-ফোকর গলিয়ে দু-একটি অস্ত্র-শস্ত্র আসা অস্বাভাবিক নয়। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ সব দমনে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেন তিনি।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে তৎপর বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সাম্প্রতিকালে আবারও নানা ধরনের অরাজকতায় মেতে উঠেছে। কয়েকটি ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে ওই প্রতিবেদনে সন্ত্রাসী দলগুলির অস্ত্র সংগ্রহের কৌশল সম্পর্কে জানিয়েছে, তারা (সন্ত্রাসী) বাংলাদেশের সীমান্তে লাগোয়া দু’টি দেশের (ভারত ও মায়ানমার) বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠির কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করছে।
গত বছরের আগস্ট ২৫ টি রাইফেল ও গুলির চালান এইসব সন্ত্রাসী দলের হাতে চলে এসেছে। তার বাইওে গোপনে আনা ১৬টি একে ৪৭ রাইফেলের একটি চালান সেনাবাহিনীর একটি দল আটকে দিয়েছে। এ সব অস্ত্র পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করতে আনা হচ্ছিল গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মিয়ানমারের আরাকান লিবারেশন পার্টি, আরাকান আর্মি, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন, ভারতের মিজোরামের মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট ও আসামের উলফার মত সশস্ত্র দলগুলির কাছ থেকে অস্ত্র আনার জন্য ইতিমধ্যে টাকার লেনদেনও সম্পন্ন করেছে পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বান্দরবানের থানচি উপজেলার জেএসএস (জন সংহতি সমিতি) এর সভাপতি এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান চ সা থোয়াই মারমা ওরফে পক্স, তার ছোট ভাই মাং ব্রা এবং রুমা উপজেলার জেএসএস এর সভাপতি লু প্রুর তত্ত্বাবধানে ভারতের মিজোরাম থেকে অস্ত্র আনা হয়। আর এ সব অস্ত্র আনা নেওয়ার কাজ করে ভারত-বাংলাদেশ ট্রাইবংশন এলাকার কমান্ডার বো থো উইন ম্রো’র নেতৃত্বে একটি দল।
এ দলে অন্তত আট জন পাহাড়ি সন্ত্রাসী রয়েছে বলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও ‘বড় মদক’ এলাকায় নৌকা চালাক হ্লা মং এই চক্রের অন্যতম একজন নেতা। তবে এ সবই অপপ্রচার বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত হিসেবে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নাম আসা উল্লেখিত ব্যক্তিরা।
থানচি উপজেলার জেএসএস সভাপতি এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান চ সা থোয়াই মারমা ওরফে পক্স দাবি করেন, এ ধরনের ষড়যন্ত্র তার বিরুদ্ধে অতীতেও করা হয়েছিল, বর্তমানেও করা হচ্ছে। তবে, তিনি এ সব কাজে জড়িত নন। চ সা থোয়াই মারমার কথায়- এখানে আর্মি, বিজিবি, পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে, তাদের চোখ আড়াল করে এ সব কিভাবে সম্ভব ?
তার আরও দাবি হচ্ছে, এ সব তার বিরুদ্ধবাদীদের ষড়যন্ত্র মাত্র। রুমা উপজেলার জেএসএস এর সভাপতি লু প্রু দাবি করেছেন, তাকে হয়রানি করার জন্যই প্রশাসনের কাছে এমন অভিযোগ জমা করা হয়েছে। লু প্রু জানান, তিনি কেমন লোক তা স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ভাল করেই জানেন।
এদিকে, নানা উপায়ে বেশ কিছু অস্ত্রের চালান দেশে প্রবেশ করলেও ভবিষ্যতে আর যেন এভাবে অস্ত্র-শস্ত্র না আসতে পারে তা ঠেকাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরেও তৎপর হওয়ার জন্য বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। যেহেতু প্রতিবেশি দেশ দু’টি থেকে অস্ত্র আসছে, তাই তা ঠেকাতে ওই দেশগুলির সাথে যোগাযোগ করে এই বিষয়ে তাদের অবহিত করার সুপারিশও রয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।



শান্তিবাহিনীর পাপ ! (মেজর অবঃ ফারুকের লেখা থেকে),
Related imageশান্তিবাহিনীর পাপ ! (মেজর অবঃ ফারুকের লেখা থেকে),
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর সশস্ত্রশাখা তথাকথিত শান্তিবাহিনীর আক্রমনে এযাবত প্রায় ৩৫০০০ মানুষ মারা যায়। মূলতঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্চিন্নতাবাদ এবং পার্বত্য বাংগালীদের বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যেই স্বাধীন বাংলাদেশে এ মানবতা বিরোধী গনহত্যা পরিচালনা করা হয়। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ- মাকে কুপিয়ে এবং শিশুকে পুড়িয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসী শান্তিবাহিনী। চুক্তি অনুযায়ী জেএসএস কিছু সেকালে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পনের নাটক মঞ্চায়ন করলেও চুক্তির পর এযাবত ৭০০-এরও বেশী মানুষকে হত্যা এবং ১৩০০- এরও বেশী মানুষকে অস্ত্রের মুখে অপহরন করা হয়।...পার্বত্য বাঙ্গালীদের লাশ এবং অঙ্গার হওয়া দেহাবশেষ শান্তিবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত কতিপয় গণহত্যা পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংগালী অধ্যুষিত অসংখ্য পাড়াতেই শান্তিবাহিনী গণহত্যা চালায়।

তবে জেএসএস-এর মূল উদ্দেশ্য ছিলঃ (ক) পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্ব-শাসন প্রতিষ্ঠা করা, (খ) পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম না হলেও সেখানে বাংলাদেশ সরকারের সার্বভৌম ক্ষমতা বিলোপ করা, (গ) পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাংলা ভাষা-ভাষী নাগরিকদের কে অস্ত্রের মুখে উৎখাত করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে একমাত্র উপজাতিদের আবাস ‘উপজাতীয় এলাকা’ বা ‘জুম্মল্যান্ড’ হিসেবে পরিণত করা। এসব বাংলাদেশ বিরোধী উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে জেএসএস পরিচালনা করে বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্বরতম জাতিগত নির্মূল অভিযান।

জেএসএস কর্তৃক সংঘটিত সন্ত্রাসের ধরনঃ জেএসএস ভারত থেকে প্রাপ্ত প্রশিক্ষন, অস্ত্র, গোলাবারূদ ও আশ্রয় ব্যবহার করে গোটা পার্বত্য ৩ জেলায় বাংগালী নিধন শুরু করে। নিরস্ত্র ও নিরীহ বাংগালীদের বিভিন্ন পাড়ায় আক্রমন করে গ্রামের সব বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়, নির্বিচারে হত্যা করে গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাকে, গর্ভবতী মায়েদের পেটে বেয়োনেট দিয়ে আঘাত করে সন্তানসহ মাকে হত্যা করা হয়,ধর্ষনের শিকার হয় অসংখ্য পার্বত্য বাঙ্গালী নারী, গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে প্রায় ৩৫০০০ (পয়ত্রিশহাজার)-এরও বেশি মানুষ, আহত করে কয়েক হাজার। অস্ত্রের মুখে শত-শত বাংগালী কৃষক,কাঠুরিয়া, জেলে ও ব্যবসায়ীকে কিডন্যাপ করে মুক্তিপণ আদায় করে, এসব ভিকটিমদের অনেককেই নির্যাতন করে ওকুপিয়ে হত্যা করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় সকল দোকান মালিক,কৃষক, জেলে, অফিস-আদালতের কর্মচারী এবং ঠিকাদারদের কাছ থেকে আদায় করে চাঁদা ও মুক্তিপণ হিসেবে শত-সহস্র কোটি টাকা।সন্ত্রাস-বিরোধী কয়েকশত উপজাতি নাগরিক ও জেএসএস কর্তৃক হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়। অস্ত্রের মুখে ত্রাস সৃষ্টি করে তারা লক্ষাধিক পার্বত্য বাংগালীকে ভিটা-মাটি ছেড়ে গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে, লক্ষাধিক বাঙ্গালী পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেড়ে সমতলে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এছাড়া প্রায় বিশ হাজার উপজাতিকে বাধ্য করে ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে।

নিরাপত্তা বাহিনীর টহল দলের উপর এ্যাম্বুশ করে কয়েকশত সেনা সদস্যকে হতাহত করে, বিডিআর-পুলিশ-আনসার ও ভিডিপি (গ্রামপ্রতিরক্ষা দল) ইত্যাদি দূর্বল লক্ষ্যবস্তুর উপর পরিচালনা করে অতর্কিতে হামলা বা এ্যাম্বুশ– যাতে বহু সদস্য হতাহত হয়। এভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে প্রশিক্ষিত শান্তিবাহিনী নামধারী সন্ত্রাসীরা তাদের প্রশিক্ষনের পুরো দক্ষতা প্রয়োগ করে বাংলাদেশের হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হত্যায়। স্বাধীন বাংলাদেশে সশস্ত্র উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশের কয়েক হাজার নাগরিককে নিজভূমি থেকে উৎখাত করার ঘৃন্য উদ্দেশ্যে পাড়া ঘেড়াও করে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে, বেধরক কুপিয়ে এবং খড়ের ঘরগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে জলন্ত ঘরের মধ্যে শত-শত মা ও শিশুকে জ্যান্ত পুড়িয়ে অংগার করে মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ করেছে- তার নজির ১৯৭১ সালেও দেখা যায়নি।

(ক) শান্তিবাহিনীর এরিয়া কমান্ডার তথাকথিত মেজর রাজেশ এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয় ভূষনছড়া হত্যাকান্ড যেখানে এক রাতেই ৪৫০ জনের অধিক বাংগালীকে হত্যা করা হয়েছে।তার আসল নাম-মনিস্বপন দেওয়ান,যাকে আওয়ামী লীগ চুক্তির পরে রাংগামাটির এমপি ও প্রতিমন্ত্রী বানিয়ে গণহত্যা পরিচালিনার জন্য পুরস্কৃত করেছিল, বর্তমানে সে গৌতম দেওয়ানের সভাপতিত্বে সিএইচটি নাগরিক কমিটি গঠন করেছে।

(খ)রাংগামাটি জেলার লংগদু থানার পাকুয়াখালীতে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে শান্তিবাহিনী ৩৫জন বাংগালী কাঠুরিয়াকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

(গ)রাংগামাটি জেলার জুরাছড়ি থানার পাহাড়ি এলাকায় শান্তিবাহিনীর এরিয়া কমান্ডার তথাকথিত মেজর পেলে (আসল নাম-তাতিন্দ্র লালচাকমা) একটি সেনা টহলের উপর এ্যাম্বুশ করে মেজর মহসীন সহ ৩০ জন সেনা সদস্যকে হত্যা করে। সন্ত্রাসীরা দা দিয়ে কুপিয়ে নিহতদের পা কেটে পায়ের বুটগুলো আলাদা করে নিয়েছিল। বর্তমানে সে জেএসএস (এম এন লারমা) গ্রুপের সাধারন সম্পাদক। অনুরূপ, কাশখালী, কাউখালী, নানিয়ারচর (এখানে একরাতেই ৩০০ জনের অধিক পার্বত্য বাংগালীকে হত্যা করা হয়েছে) ইত্যাদি অগনিত হত্যাকান্ড পরিচালনা করে এই শান্তিবাহিনী- যাদের প্রায় ৮৫০ জনকে চুক্তির পর পুলিশ বাহিনীতে চাকুরী দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে- অথচ, এদেশে দেশ স্বাধীনকারী মুক্তিযোদ্ধারা এখনো রিক্সা চালায়।

সুত্রঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে করনীয়- মেজর ফারুক (অবঃ) ০৩ , ২০১৪।

বিষয়: আন্তর্জাতিক



আগুন দেওয়ার ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন কোন ঘটনা নয়। এগুলো রাজনৈতিক আগুন, উদ্দেশ্য প্রনোদিত। -সাবেক মেজর তোফাজ্জল
Image result for অ্যামাজন বনআগুন দেওয়ার ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন কোন ঘটনা নয়। এগুলো রাজনৈতিক আগুন, উদ্দেশ্য প্রনোদিত। -সাবেক মেজর তোফাজ্জল

আগুন দেওয়ার ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন কোন ঘটনা নয়। এগুলো রাজনৈতিক আগুন, উদ্দেশ্য প্রনোদিত।তিনি আরো বলেন আমি যখন দায়িত্বরত ছিলাম তখন ১৯৮৫ সালে পানছড়ি উপজেলার দুদুকছরি, কালাচাঁন কারবারী পাড়া এলাকায় শান্তিবাহিনী রাতের আঁধারে সব মানুষকে ভারতের ত্রিপুরা নিয়ে যায়। যাবার সময় ভোর রাতে পাড়াতে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন দেখে সেনাবাহিনী লোগাং ক্যাম্প হতে ঘটনা স্থলে হাজির হয়,ততক্ষনে সব ছনের ঘর শেষ। কোন হতাহত নেই,কোন মানুষ নেই, গবাদি পশু নেই, হাসমুরগীও নেই। কে বা কারা আগুন দিল সেটা বলার কোন মানুষও নেই।

কিন্তু দুইদিন পর সংবাদ হল- সেনাবাহিনী নির্বিচারে সেখানে গনহত্যা চালিয়েছে, যুবতী ধর্ষণ করেছে আর আগুনে সব পুড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক ভাবে সরকারের কাছে ঘটনা জানতে চাওয়া হল। বিদেশী দূতাবাস ঘটনার নিন্দা জানালো, ত্রিপুরা শরনারথী শিবিরে শরনারথীরা শিখিয়ে দেওয়া বক্তব্য দিল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তথা সরকারের বিরুদ্ধে।তখন এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হল,তদন্তে সত্য উদঘাটন হল যে, শান্তিবাহিনী পরকল্পিত ভাবে এই আগুন লাগিয়েছে।
লংগদুর ঘটনা নিয়ে বাংগালীরা বলছে, ঘটনাস্থল হতে বাংগালির অবস্থান অনেক দূরে। জনসংহতি সমিতির শক্ত ঘাঁটি ওটা। মূলত: নয়ন হত্যাকাণ্ড হতে দৃষ্টি অন্যত্র ফেরানোই হচ্ছে অগ্নিকান্ড ঘটানোর লক্ষ্য।
অন্যদিকে জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমক্রটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সহ এবং কিছু মিডিয়া দাবী করছে এটা বাংগালীদের কাজ।
তাই আমি মনে করি এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার। এভাবে বাড়ি- ঘর পোড়ানো,মানুষ খুন করা সহ সন্ত্রাসী কাজে যারা জড়িত তাদের বিচার হওয়া দরকার। তবে দৃষ্টি বা আংগুল নির্দেশ একদিকে হবে কেন ? কেন তদন্তের আগে ধরে নিচ্ছেন বাংগালীরা কাজটি করেছে ? এগুলো সুগভীর চক্রান্তের ফল। লাভ কার- সেটাই বিবেচ্য।নিরীহ মানুষের জান- মাল নিয়ে যারা সন্ত্রাস করে তারা যেই হোক ধিক্কার পাওয়ার যোগ্য। আমি লংগদু ঘটনায় মর্মাহত। ঠিক তেমনি মর্মাহত নুরুল ইসলাম নয়নের হত্যা কাণ্ডে।

আমি চাই ১৯৮৫ সালের মত ঠিক একইভাবে এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক। মিথ্যা অনুমান নির্ভর গ্রেফতারে লাভ হবেনা।এতে এ ঘটনা আবারও ঘটবে।ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে তারা সাম্প্রদায়ীক সংঘর্ষ সৃষ্টির লক্ষ্যে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। কারা করেছে তা সুষ্ট তদন্ত হলে বের হবে।এবং যারা ঘটনার সাথে জরিত তাদের কঠোর শাস্তি প্রদান করে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে কোন মূল্যে জান- মালের হেফাজত করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি ধরে রাখতে হবে।
সিএইচটি লাইভ২৪.কম কে দেওয়া বক্তব্য, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর তোফাজ্জল হোসেন।
http://www.dailypurbatara.com/উপজাতিদের-পূর্বের-ইতিহাস/
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উপজাতি সন্ত্রাসীদের চক্ষুশুল কেন?
Image result for অ্যামাজন বনবাংলাদেশ সেনাবাহিনী উপজাতি সন্ত্রাসীদের চক্ষুশুল কেন?
=======
প্রতিবেশী দেশ ভারত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে দুর্বল করে সুবিধা আদায়ের সব পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এরই ফলশ্রুতিতে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ( পিসিজেএসএস ) এবং শান্তিবাহিনী।
স্বাধীনতার পুর্বে পাকিস্তান ভারতের সাত বোন খ্যাত রাজ্যসমুহের অশান্ত গেরিলা যোদ্ধাদের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীন জংগলে সামরিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প খুলে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে এবং অন্যান্য সহায়তাও অব্যাহত রাখে। ফলে প্রতিবেশী দেশের পক্ষে সাত রাজ্যের গেরিলাদের দমন করা অসম্ভব হয় পড়ে।
বাংলাদেশ স্বাধীনের পরে প্রতিবেশী দেশ রাজা ত্রিদিব রায়ের সংক্ষুব্ধ অনুসারীদের দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলে তিনটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেঃ
১। পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করে প্রতিবেশী দেশের গেরিলা যোদ্ধাদের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিপদসঙ্কুল করে তোলা।
২। প্রতিবেশী দেশ পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনীর সৃষ্টি করে তাদের এক্সটেন্ডেড সিকিউরিটি হ্যান্ড হিসাবে যাতে শান্তিবাহিনীর সাহায্যে প্রতিবেশী দেশের সাত রাজ্যের গেরিলাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় এবং জংগল থেকে তাদের ঝেটিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়। এতে প্রতিবেশী দেশ কৃতকার্য হয় এবং সাত রাজ্যের গেরিলাদের দমনে সক্ষম হয়।
৩। পার্বত্য চট্টগ্রামে পিসিজেএসএস এবং শান্তিবাহিনী সৃষ্টি করে বাংলাদেশের বুক চিরে রক্তক্ষরণ নিশ্চিত করা যাতে বাংলাদেশে অশান্তির আগুন প্রজ্বলিত রেখে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করে রাখা সম্ভব হয় ।
কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। পার্বত্য চট্টগ্রামের লাইফ ব্যাটেল গ্রাউন্ডে প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতায় সিক্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু যে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছে তানয় জাতিসংঘের হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত এখন বাংলাদেশের গর্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
আশির দশকে যখন পার্বত্য চট্টগ্রামে সবখানে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ছিলো তখন পাহাড়ের প্রাকৃতিক সম্পদের উপরে সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছিলো। পাহাড়ী বাংগালী নির্বিশেষে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত ছিলো। ’৯৭ তে শান্তি চুক্তির পরে অস্হায়ী সেনা ক্যাম্প উঠে যাবার পরে উজাড় হচ্ছে যেমন পাহাড়ী বন তেমনি পাহাড়ময় ছড়িয়ে পড়ছে সন্ত্রাস। এখন কারো নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়। এটাই পাহাড়ে সন্ত্রাস যারা চায় তাদের মুল লক্ষ্য।
পাহাড়ী এবং কিছু বাংগালী বুদ্ধিজীবী তারস্বরে চিৎকার করে সেনা শাসনের অবসানের কথা বলে। তারা চায় বাংগালীরা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সমতলে চলে আসুক। কিন্তু তারা নিজেরা জানে না, সেনা শাসন বলতে কি বুঝায়? পার্বত্য চট্টগ্রামে সিভিল প্রশাসন আছে তারা তা পরিচালিত করে। পাহাড়ে সেনাবাহিনীর কাজ হলোঃ
১। সন্ত্রাস দমন করা।
২। পাহাড়ী-বাংগালী নির্বিশেষে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৩। শান্তকরণ ( পেসিফিকেশন ) কার্যক্রম পরিচালিত করা।
এখানে সেনা শাসনের প্রশ্ন কি করে আসে? পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, স্থিতিশীলতা, প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ, জীববৈচিত্র রক্ষা করতে হলে প্রত্যেকটি অস্হায়ী সেনা ক্যাম্প পুনর্জীবিত করে সত্ত্বর সেখানে সেনাবাহিনী প্রেরণের ব্যবস্থা অনতিবিলম্বে সরকারকে গ্রহণ করার জন্য আমরা অনুরোধ করছি। যদি তা করা না হয় তবে পরিস্থিতির চরম অবনতি হলে পাহাড়ে নতুন করে সন্ত্রাসের উম্মেষ ঘটার সম্ভাবনা প্রকট হবে যা যা পাহাড়ী, বাংগালী কারুর জন্য কাম্য হবে না।
সুত্রঃ মেজর জেনারেল আ. ল. ম. ফজলুর রহমান
ধর্ষণ করলে শূকর জরিমানা!
ধর্ষণ করলে শূকর জরিমানা!
Related image
এটিই হচ্ছে ধর্ষণের শাস্তি। নাহ্, অন্য কোথাও নয়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের পরম্পরাগত নিয়ম। রোকেয়া লিটার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘ডুমুরের ফুল’-এ এমনই কিছু অসামঞ্জস্য বিচারব্যবস্থার বর্ণনা পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, কখনও কখনও বিচারের নামে ধর্ষকের সাথেই ধর্ষিতাকে বিয়ে দেওয়া এবং রক্ষক যে ভক্ষক হয়ে যায়, সেই ধরনের ঘটনারও উল্লেখ রয়েছে বইটিতে। দীর্ঘ আট মাস পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে, কখনও বা সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোতে গিয়ে, পাহাড়িদের সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছেন লেখক।

এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে উপন্যাস লেখা প্রসঙ্গে রোকেয়া লিটা বলেন, ”আমরা যারা ঢাকায় থাকি, প্রায়ই পাহাড়ে ধর্ষণের খবর পাই। এসব খবর পড়লে মনে হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব ধর্ষণ হয়, তার সবই ঘটান বাঙালিরা। বিষয়টি আসলে তেমন নয়। কেবল বাঙালি কর্তৃক ধর্ষণের অভিযোগই আসে খবরে। পাহাড়ি পুরুষদের বিরুদ্ধেও ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে অনেক। কিন্তু সেসব বিষয় প্রকাশ্যে আনেন না সেখানকার পাহাড়ি নেতারা। তাই, ঢাকায় বসে বা ২/৩ দিনের জন্য পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে আসলে পাহাড়ের প্রকৃত অবস্থা বোঝা সম্ভব নয়।”

শুধু ধর্ষণ বা প্রথাগত বিচার নয়, বইটিতে উঠে এসেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনের অনেক অজানা তথ্য। আর এ জন্যই বইটির নাম রাখা হয়েছে ‘ডুমুরের ফুল।’ লেখক জানান, উপন্যাসটির চরিত্রগুলো বাস্তব, তবে তাদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে।



পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী আদিবাসী হবার পূর্বশর্তসমুহ পূরণ করে না
Related imageপার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী আদিবাসী হবার পূর্বশর্তসমুহ পূরণ করে না

নিজ মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা, দেশের স্বার্থে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকাই দেশপ্রেম । পুঁথিগতভাবে দেশপ্রেমের সংজ্ঞায় ভিন্নতা থাকলেও মৌলিক কয়েকটি বিষয় অনেকটাই সমার্থক । দেশপ্রেমের সাথে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের প্রতি ভালোবাসা জড়িত, এই ভালোবাসা শর্তহীন ভালবাসা । দেশপ্রেমিক মানুষ নিজস্ব ভূখণ্ড রক্ষার সংগ্রাম, ভূ-খণ্ডের রক্ষণাবেক্ষণ অথবা পুনরুদ্ধারে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকে ।
একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বিভিন্ন শ্রেণীর জাতি, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের অধিবাসীরা বসবাস করতেই পারে, থাকতে পারে এদের ধর্মের ভিন্নতা, কিন্তু নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসকারী একটি দেশের ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করবে এবং প্রয়োজনে যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক ।
একটি দেশের অধিবাসীদের মধ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায়, ধর্ম ও গোষ্ঠীর বসবাস থাকলেও প্রায় প্রতিটি সম্প্রদায়ের মধ্যেই ব্যক্তিগত অথবা দলীয় অথবা ধর্মীয় মতাদর্শ ভিত্তিক ভিন্নতা থাকতে পারে । মতাদর্শগত এই ভিন্নতা সামগ্রিকভাবে দেশের মঙ্গলের জন্য পরিপূরক হওয়াই বাঞ্ছনীয় । কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুতে দেশ স্বার্থ বিষয়ে স্ববিরোধীতা দৃশ্যমান ।
এ দেশের কিছু কিছু স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিবর্গ দেশের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিগত মতাদর্শকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন । তবে যেকোন মতাদর্শের মধ্যে যদিও একটি আদর্শিক বিষয় জড়িত তথাপি মতাদর্শের এই ভিন্নতা দেশের স্বার্থবিরোধী হলে তা ধরে রাখা একেবারেই কাম্য নয় । সমস্যাটি তখনই প্রকটাকারে দেখা দেয় যখন ভিন্ন মতাদর্শিক এই স্বার্থান্বেষী মহল অন্য দেশের স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে ব্যক্তিগত তথাকথিত মতাদর্শের পক্ষে তাদের ভাষায় ইতিবাচক ব্যাখ্যা দাড় করিয়ে ফেলেন ।
আগামী ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস । বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই । তবে সাম্প্রদায়িক রীতিনীতির ভিন্নতার কারণে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী থাকায় সরকার ঐ জনগোষ্ঠী গুলোকে ‚ক্ষুদ্র ও নৃ গোষ্ঠী” হিসাবে পরিগণিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । সরকার এই সিদ্ধান্ত দেশের ঐতিহাসিক পটভূমি বিবেচনায় এবং বাংলাদেশে বসবাসরত ঐ ছোট ছোট জনগোষ্ঠী সমূহের উৎস ও প্রাথমিক আগমনের বিষয় আমলে নিয়ে ঐ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।
কিন্তু বাংলাদেশের কিছু স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিজীবী তাদের মনগড়া মতাদর্শ সরকারের সিদ্ধান্তের উপর চাপিয়ে দিতে চান । তাদের এই দাবির পিছনে ঐতিহাসিক কোন ভিত্তি নেই । যেহেতু তারা বুদ্ধিজীবী, তাই আশা করা যায়, তারা বিষয়টি বোঝেন, কিন্তু নিজেদের অহংকারপ্রসুত অথবা অন্য কোন স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে ব্যক্তিগত লাভের আশায় তারা তাদের ভ্রান্ত মতাদর্শ দেশের উপর চাপিয়ে দিতে চান । তাদের এই দাবি এবং কার্যক্রম চরমভাবে দেশ স্বার্থ বিরোধী হতে পারে এ বিষয়টি তারা ইচ্ছাকৃতভাবে একেবারেই বুঝতে চান না।
বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বসবাসরত ‚ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীর” অধিবাসীগণ এবং তাদের সমর্থনপুষ্ট স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিজীবীদের ‚আদিবাসী” সংক্রান্ত দাবী একেবারেই নতুন । ইতিপূর্বে ‚ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীর” অধিবাসীগণ নিজেদের ‚উপজাতী” হিসেবে পরিচয় দিতে সম্মানিত বোধ করতো । এমনকি ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তিতেও ক্ষুদ্র ও নৃ গোষ্ঠীর এই অধিবাসীদের ‚উপজাতী” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ।
২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ অধিবেশনে The Nation Declaration on the Rights of Indigenous Peoples (UNDRIP) বিল পাশ হয় । ১৪৪ টি দেশ ঐ বিলের স্বপক্ষে, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশসমুহ ঐ বিলের বিপক্ষে এবং বাংলাদেশসহ আরও ১১টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে । পরবর্তীতে ২০১৬ সালের মে মাসে কানাডা UNDRIP থেকে তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করে নেয়। বাংলাদেশ UNDRIP তে ভোটদানে বিরত থাকলেও জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক শর্তানুযায়ী বাংলাদেশে ‚আদিবাসীদের” উপস্থিতি সম্পর্কে যথেষ্ট গবেষণা করে সরকার ছোট ছোট জনগোষ্ঠীর এই সম্প্রদায় সমুহকে ‚ক্ষুদ্র ও নৃ গোষ্ঠী” নামে অভিহিত করে আইন পাশ করেছে ।
তবে একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তটি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পালন করতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই । ২০০৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে UNDRIP তে আদিবাসীদের কয়েকটি নির্দিষ্ট অধিকারের বিষয়ে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে । আদিবাসীদের ভূমি অধিকার, জীবন ও নিরাপত্তা অধিকার, ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় স্বীকৃতি, শিক্ষা ও তথ্যের অধিকার এবং চাকুরী, দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার, আদিবাসী অধ্যুষিত ভূমিতে খনিজ সম্পদসহ অন্যান্য সম্পদের অধিকার, জ্ঞানের অধিকার, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রশাসন পরিচালনা করার অধিকার ইত্যাদি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে ।
অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে কোন নিদিষ্ট জনগোষ্ঠীকে ‚আদিবাসী” হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে ঐ ভূখণ্ডের উপর স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সরকারের কর্তৃত্ব খর্ব হবে । এমনকি ঐ ভূখণ্ডে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে হলে ‚আদিবাসী” ঐ জনগোষ্ঠীর সাথে সরকারকে পরামর্শ করতে হবে । ঐতিহাসিকভাবে সত্য না হলেও সুযোগের সদ্ব্যবহার এবং বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে চাকমা সার্কেল প্রধান ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়সহ উপজাতিদের সমমনা বুদ্ধিজীবীগণ বাংলাদেশে বসবাসরত ছোট ছোট জনগোষ্ঠীর জাতিসত্ত্বাসমূহকে ‚আদিবাসী” হিসেবে পরিগণিত করার দাবী তুলেছেন ।
এখানে মনে রাখতে হবে, একটি দেশের বসবাসরত অধিবাসীদের মধ্যে ‚Minorities” এবং ‚আদিবাসী” বিষয়টি এক নয়। তবে কিছু কিছু দেশে স্বীকৃত আদিবাসীগণ ‚Minorities” নয়। যেমন, গুয়েতেমালা, বলিভিয়া ইত্যাদি । বাংলাদেশে বসবাসরত ছোট ছোট জাতি জাতিসত্ত্বার আদিবাসীগণকে ‚Minorities” হিসেবে পরিগণিত করা অধিক যুক্তিযুক্ত ।
জাতিসংঘ কমিশনের স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার হোসে মার্টিনেজ কোবে যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, কোন ভূখণ্ডের আদিবাসী সম্প্রদায়, জাতিগোষ্ঠী বা জাতি বলতে তাদের বোঝায়, যাদের ঐ ভূখণ্ডে প্রাক-আগ্রাসন এবং প্রাক-উপনিবেশকাল থেকে বিকশিত সামাজিক ধারাসহ ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা রয়েছে, যারা নিজেদেরকে ঐ ভূখণ্ডে বা ভূখণ্ডের কিয়দাংশে বিদ্যমান অন্যান্য সামাজিক জনগোষ্ঠী থেকে নিজেদের স্বতন্ত্র মনে করে । সেই সাথে তারা নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও আইন ব্যবস্থার ভিত্তিতে পূর্বপুরুষের ভূখণ্ড ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ভবিষ্যৎ বংশধরদের হাতে তুলে দেয়ার ইচ্ছাপোষণ করে ।
জাতিসংঘ এখানে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে । যারা কোন উপনিবেশ স্থাপনের আগে থেকেই ওই ভূখণ্ডে বাস করছিল, যারা ভূখণ্ডের নিজস্ব জাতিসত্ত্বার সংস্কৃতি ধরে রেখেছে ও তা ভবিষ্যৎ বংশধরদের হাতে তুলে দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করে, এবং যারা নিজেদের স্বতন্ত্র মনে করে ।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতিদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী ‚আদিবাসী” হবার জন্য পূর্বশর্তসমুহ পূরণ করে না । তারা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে চট্টগ্রাম তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ১৭শ খ্রিস্টাব্দ ও ১৮শ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ের দিকে অবস্থান নিয়েছিল ।
আদিবাসীদেরকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়, যেমন: অষ্ট্রেলিয়াতে ‚Aboriginal Peoples”, ফ্রান্সে ‚Autochthonous Peoples”, কানাডাতে ‚First Nations”, যুক্তরাষ্ট্রে ‚Indians” ইত্যাদি নামে ডাকা হয় । ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আদিবাসীগণ প্রকৃতির উপর নির্ভর করতে গিয়ে চরম দারিদ্রতার মধ্যে দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করেছে । তারা সাধারণত সভ্য সমাজের অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে নিজেদের মত করে চলতে পছন্দ করে ।
আদিবাসীদের অধিকারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিগোচরে আনার জন্য ১৯৬৫ সালে জাতিসংঘে ‚International Convention To Eliminate All Forms Of Racial Discrimination” (ICERD) বিষয়ে সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয় । ২০০৭ সালে জাতিসংঘের অধিবেশনে পাশকৃত UNDRIP তে আদিবাসীদের জন্য কয়েকটি মৌলিক অধিকারের বিষয়ে সমুন্নত রাখা হয়েছে ।
তার মধ্যে Convention ১৬৯ অনুযায়ী আদিবাসীগণ যে দেশের ভূখণ্ডে অবস্থান করছে সেই দেশের সরকার বিভিন্ন আইনগত বিষয়ে যা আদিবাসীদের সরাসরিভাবে প্রভাবিত করবে সে বিষয়ে তাদের সাথে আলোচনা করতে বাধ্য থাকবে। উদাহরণ স্বরূপ : আদিবাসীদের বসবাসরত ভূখণ্ডে সরকার কোন বাঁধ (Dam) তৈরীর প্রয়োজনবোধ করলে অথবা কোন খনিজ সম্পদ আহরণ করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ডে অবস্থানরত আদিবাসীদের সাথে সরকারকে আলোচনা করে নিতে হবে ।
Convention ১৬৯ এ আরো উল্লেখ আছে সরকার আদিবাসীদের সাথে আলোচনার সময় সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে আলোচনা করবে । ২০০৭ সালের জাতিসংঘ অধিবেশনে আদিবাসী বিষয়ে পাশকৃত ইস্যুটিতে তিনটি মৌলিক বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, প্রথমত তাদের ভূখণ্ডে সম্পদের অধিকার, দ্বিতীয়ত নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষার অধিকার এবং তৃতীয়ত রাজনৈতিক অধিকার অর্থাৎ নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ও পদ্ধতিতে প্রশাসন ব্যবস্থাপনা ।
বাংলাদেশ সরকার জনগনের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর । ২০০৭ সালের জাতিসংঘের অধিবেশনে পাশকৃত UNDRIP তে আদিবাসীদের যেসকল অধিকার দেওয়া হয়েছে তা অনেকটা ঐ নির্দিষ্ট ভূখন্ডে স্বায়ত্বশাসন এরই নামান্তর । তথাপি বাংলাদেশ সরকার এদেশে বসবাসরত ছোট ছোট জাতি স্বত্ত্বার জনগোষ্ঠী যদি আসলেই ‚আদিবাসী” হবার পূর্বশর্তসমুহ পূরণ করতো তাহলে তাদের দাবী অনুযায়ী সরকার নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে দৃঢ়ভাবে বিবেচনা করতো ।
কিন্তু বাংলাদেশের স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিজীবীগণ এবং ক্ষুদ্র ও নৃ গোষ্ঠীর সুযোগ সন্ধানী কিছু নেতৃবৃন্দ তাদের সুদূরপ্রসারী দেশ বিরোধী স্বার্থের কারণে ২০০৭ সালের পর থেকে হঠাৎ করেই ‚আদিবাসী” বিষয় দাবী তুলেছেন । ভ্রান্ত এই দাবীটি দেশের স্বার্থ বিরোধী এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । তথাপি দেশের কতিপয় স্বার্থান্বেষী নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, পাহাড়ে বসবাসরত শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ, এমনকি সাংবাদিকরাও ইদানিং ছোট ছোট ক্ষুদ্র বিভিন্ন সম্প্রদায়গুলোকে সরকার নির্দেশিত ‚ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠী” না বলে ‚আদিবাসী” হিসেবে অভিহিত করছেন । সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কতা সত্ত্বেও ‚আদিবাসী” শব্দের ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো, জাতীয় ঐতিহাসিক স্থানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করা হচ্ছে ।
উপজাতীদের ‚আদিবাসী” হিসেবে উল্লেখ না করার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও স্বার্থান্বেষী মহল খুব সচেতনভাবেই তা অমান্য করছেন । ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৩ অধিশাখা থেকে ‚বাংলাদেশে আদিবাসী নামক অসাংবিধানিক দাবি বাস্তবায়নের অপকৌশল রোধে রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো জাতীয় ঐতিহাসিক স্থান ব্যবহারের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন” সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় ।
দেশের প্রত্যেক মানুষেরই আলাদা আলাদা মতাদর্শ থাকতে পারে । এই মতাদর্শ যেন দেশপ্রেমের সাথে সাংঘর্ষিক না হয় সে বিষয়টি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে । ব্যক্তিগত মতাদর্শের বিষয়টি দুই ধরণের হতে পারে- প্রথমত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মনেপ্রাণে ঐ মতাদর্শকে বিশ্বাস ও ধারণ করেন আবার দ্বিতীয়ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্দিষ্ট একটি মতাদর্শ মনে প্রাণে ধারণ না করলেও স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় দেশের স্বার্থ বিরোধী হলেও উক্ত বিতর্কিত মতাদর্শে স্থির থাকেন ।
সরকারের সুনিদিষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও যেহেতু বাংলাদেশের স্বার্থানেষী কিছু বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশের উপজাতীদের ‚আদিবাসী” হিসেবে সম্বোধন করছেন সেহেতু তারাও সুদূর প্রসারী কোন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে করছেন, তা অনুমান করা যায় । তারা তাদের ব্যক্তিগত মতাদর্শের আবরণে উপজাতীদের ‚আদিবাসী” আন্দোলনকে আরও উৎসাহিত করছেন । তবে যদি আদিবাসী দাবীটির পিছনে সত্যতা থাকতো তাহলে বিষয়টি নিয়ে হয়তো বিতর্কের সুযোগ ছিলো।
কিন্তু একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিষয়ে কিছু কিছু স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিজীবী কেন ক্রমাগত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তা’ তারা নিজেরাই ভালো বলতে পারবেন । দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা, অখণ্ডতা রক্ষা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মত মৌলিক বিষয়ে কোন বিতর্ক সৃষ্টি কাঙ্ক্ষিত নয় । মৌলিক বিষয়সমূহে আমাদের মতাদর্শগত ভিন্নতা দেশপ্রেমের গভীরতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ।
অপ্রয়োজনীয় এবং অগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করে মেধাবী জনগোষ্ঠীর যেমন সময় নষ্ট হয় তেমনি দেশের স্বার্থের প্রয়োজনে ঐ মেধাসমুহ ঐ সময়গুলোতে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না । দেশের মৌলিক বিষয় সমুহে ব্যক্তিগত মতাদর্শগত ভিন্নতা যেনো অহেতুক অহংকারে বা কোন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর স্বার্থের কারণে প্রভাবিত না হয় সেবিষয়ে দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক ।



বাংলাদেশে আদিবাসী দিবস কেন?
বাংলাদেশে আদিবাসী দিবস কেন?
Related imageবাংলাদেশে ৯ আগস্ট ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’ জাতীয়ভাবে পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রতিবছর ‘আদিবাসী ফোরাম’ নামক সংগঠনের ব্যানারে সন্তু লারমা এবং ঢাকার কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি সেই দাবি জানিয়ে থাকেন। প্রতিনিয়ত সংবাদ সম্মেলন করে পার্বত্য ইস্যুতে অনেক কথা বলা হচ্ছে। নিজেদের অধিকার আদায়ে দেশে একটি গণমুখী সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আদিবাসীদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) চেয়ারম্যান সন্তু লারমা। তিনি সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির পাশাপাশি সংসদের উত্থাপিত তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ বিল-২০১৪ প্রত্যাহার এবং পাস হওয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন ২০১৪ বিলুপ্তির দাবি জানিয়েছিলেন। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে পার্বত্য এলাকায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের বিরোধিতা করেন তিনি। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে রাজধানীর এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, ‘পার্বত্যবাসী এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য এখনও প্রস্তুত নয়। এগুলো বহিরাগত অনুপ্রবেশের দ্বারে পরিণত হবে। তাই চুক্তি বাস্তবায়ন পর্যন্ত এসব প্রকল্প স্থগিত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’ উপরন্তু দেশের অন্য স্থানে অবস্থিত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাহাড়ী ছাত্রছাত্রীদের অধিকসংখ্যক কোটা সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছিলেন সন্তু লারমা। তাঁর কথার সূত্র ধরে বলা দরকার, পার্বত্য এলাকার অধিকাংশ উপজাতি জনগোষ্ঠী কোটা সুবিধা গ্রহণ করে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয় অনেক সরকারী অফিসে উচ্চপদে আসীন এ কারণে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সমতলের বাঙালীদের দ্বারা এই কোটা সুবিধা বাতিলের কিংবা কমানোর দাবিটাও যৌক্তিক। আশ্চর্য হলো পাহাড়ী জনজীবনে প্রভূত উন্নতি সত্ত্বেও বর্তমান সরকার উপজাতীয় কোটা সংরক্ষণ করছেন।
২০১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটি সফরের সময় জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে একটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের ঘোষণা দেন।
তারপর থেকেই এর পক্ষে-বিপক্ষে স্থানীয়দের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলে। অথচ পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কোন অভাব নেই। ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ‘সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, অনুন্নত সম্প্রদায় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংসদে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী পাস করে আওয়ামী লীগ ’৭২-এর সংবিধানের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি পুনর্প্রতিষ্ঠিত করেছে। সকল ধর্মের সমান অধিকার এবং দেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-জাতিগোষ্ঠী ও উপজাতিদের অধিকার ও মর্যাদার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়ার ফলে ধর্মীয় ও নৃ-জাতিসত্তাগত সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান এবং তাদের জীবন, সম্পদ, উপাসনালয়, জীবনধারা ও সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য রক্ষার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা দৃঢ়ভাবে সমুন্নত থাকবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জমি, বসতভিটা, বনাঞ্চল, জলাভূমি ও অন্য সম্পদের সুরক্ষা করা হবে। সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জমি, জলাধার ও বন এলাকায় অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ভূমি কমিশনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। অনগ্রসর ও অনুন্নত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, দলিত ও চা-বাগান শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা এবং সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির অবশিষ্ট অঙ্গীকার ও ধারাসমূহ বাস্তবায়িত করা হবে।
পার্বত্য জেলাগুলোর উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা হবে এবং তিন পার্বত্য জেলার ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রাখা, বনাঞ্চল, নদী-জলাশয়, প্রাণিসম্পদ এবং গিরিশৃঙ্গগুলোর সৌন্দর্য সংরক্ষণ করে তোলা হবে। এই তিন জেলায় পর্যটন শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্পের বিকাশে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।’ অর্থাৎ বর্তমান সরকারের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাই রয়েছে সন্তু লারমাসহ সকল উপজাতি জনগোষ্ঠীর জানমাল ও সম্পদ সুরক্ষার বিষয়ে। ওয়াদা করা হয়েছে অনগ্রসর ও অনুন্নত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, দলিত ও চা-বাগানের শ্রমিকদের জন্য কোটা ও সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখার।
আর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন ও সে অঞ্চলের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছে। গত মহাজোট সরকারের শাসনামলে তিন পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে শেখ হাসিনার সরকার ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। যে দুর্গম এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে ছিল সে স্থানসমূহ তথ্য-প্রযুক্তির আওতায় আনা হয়েছে। যেখানে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও বাজারের সঙ্কট ছিল সেসব জায়গা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বেঁচে থাকার উপায় হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এ সত্ত্বেও যদি হুমকি দেয়া হয় তাহলে আমাদের মতো সাধারণ জনতার মনে আশঙ্কা এবং প্রশ্ন জাগ্রত হওয়াটাই স্বাভাবিক যে পার্বত্য এলাকা আসলেই সন্তু লারমার পৈত্রিক ভিটা কিনা?
উপজাতীয় কোটা সম্পর্কে আগেই বলা হয়েছে। সংবিধানে স্বীকৃত রয়েছে সেই কোটা ব্যবস্থা। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩(ক) অনুচ্ছেদে বর্ণিত দেশের ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়’-এর জন্য সরকারী, আধাসরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য কোটা সুবিধার কথা রয়েছে। অথচ এসব সুবিধাভোগীরা প্রতিবছর ‘আদিবাসী ফোরাম’ নামের সংগঠন থেকে ৯ আগস্ট ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’ পালনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। পক্ষান্তরে কয়েক বছর ধরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসী শব্দটি না থাকায় বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের কাছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদযাপনে সরকারের কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত না হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়’ শব্দগুলোর পরিবর্তে আদিবাসী ফোরামের দাবি এখানে ‘আদিবাসী জাতিসমূহ’ সংযুক্ত করা হোক।
বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন এবং তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট আছেন। অথচ জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা আগের বছরগুলোর মতো এবারও নানা বক্তব্য ও মন্তব্যে অসহযোগিতার মনোভাব প্রকাশ করেছেন। সন্তু লারমা সম্ভবত আইএলও কনভেনশন-১০৭ এর অনুচ্ছেদ ১ এর উপ-অনুচ্ছেদ ১(খ) বর্ণিত ‘আদিবাসী’ সংজ্ঞাটি মনোযোগসহকারে পাঠ করেননি। সেখানে বলা হয়েছে- ‘স্বাধীন দেশসমূহের আদিবাসী এবং ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ক্ষেত্রে রাজ্য বিজয় কিংবা উপনিবেশ স্থাপনকালে এই দেশে কিংবা যে ভৌগোলিক ভূখ-ে দেশটি অবস্থিত সেখানে বসবাসকারী আদিবাসীদের উত্তরাধিকারী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ‘আদিবাসী’ বলে পরিগণিত এবং যারা, তাদের আইনসঙ্গত মর্যাদা নির্বিশেষ নিজেদের জাতীয় আচার ও কৃষ্টির পরিবর্তে ওই সময়কার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আচার ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপন করে।’
অন্যদিকে ‘উপজাতি’ সম্পর্কে আইএলও কনভেনশন-১০৭ এর অনুচ্ছেদ ১ এর উপ-অনুচ্ছেদ ১(ক) অংশে বলা হয়েছে- ‘স্বাধীন দেশসমূহের আদিবাসী এবং ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীর সদস্যদের বেলায়, যাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা জাতীয় জনসমষ্টির অন্যান্য অংশের চেয়ে কম অগ্রসর এবং যাদের মর্যাদা সম্পূর্ণ কিংবা আংশিকভাবে তাদের নিজস্ব প্রথা কিংবা রীতিনীতি অথবা বিশেষ আইন বা প্রবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।’ অর্থাৎ ‘আদিবাসী’ হলো ‘সন অব দি সয়েল।’ আর ‘উপজাতি’ হলো প্রধান জাতির অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্র জাতি।
‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র ২০০৭’ অনুসারে তাদের ৪৬টি অধিকারের কথা লিপিবদ্ধ হয়েছে। এই ঘোষণাপত্রে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়নি বা সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত হয়নি। তাছাড়া ঘোষণাপত্রের ওপর সব সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বসম্মত সমর্থন নেই। এ কারণে বাংলাদেশ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকারবিষয়ক ঘোষণাপত্রের ওপর ভোটগ্রহণের সময় তারা ভোটদানে বিরত ছিল। তবে যে কোন অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর অধিকারের প্রতি সমর্থন রয়েছে সরকারের।
সংবিধান অনুসারে সরকারপ্রধান প্রধান মানবাধিকার চুক্তির প্রতি অনুগত এবং উপজাতিদের অধিকার সমর্থন করে আসছে। উল্লেখ্য, ‘আদিবাসী’ শব্দটি সংবিধানে সংযোজিত হলে ২০০৭ সালের ‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র’ মেনে নিতে হবে; যা হবে বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী। কারণ ঘোষণাপত্রের অনুচ্ছেদ-৪-এ আছে : ‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার চর্চার বেলায়, তাদের অভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় বিষয়ের ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন এবং স্বশাসিত সরকারের অধিকার রয়েছে ও তাদের স্বশাসনের কার্যাবলীর জন্য অর্থায়নের পন্থা এবং উৎসের ক্ষেত্রেও অনুরূপ অধিকার রয়েছে।’ অর্থাৎ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করলে ও পার্বত্য অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশ সরকার খাগড়াছড়ির গ্যাস উত্তোলন করে অন্য জেলায় আনতে পারত না।
কারণ সেখানকার স্বশাসিত আদিবাসী শাসক নিজেদের অর্থায়নের উৎস হিসেবে সেই খনিজ, বনজ ও অন্যান্য সম্পদ নিজেদের বলে চিন্তা করত। আবার অনুচ্ছেদ-৩৬-এ আছে, ‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর, বিশেষত যারা আন্তর্জাতিক সীমানা দ্বারা বিভক্ত হয়েছে, তাদের অন্য প্রান্তের নিজস্ব জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক কার্যক্রমসহ যোগাযোগ সম্পর্ক ও সহযোগিতা বজায় রাখার এবং উন্নয়নের অধিকার রয়েছে।’ রাষ্ট্র এই অধিকার কার্যকর সহযোগিতা প্রদান ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। ঘোষণাপত্রের এই নির্দেশ কোন সরকারই মেনে নিতে পারবে না। কারণ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক কার্যক্রম অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে। তাছাড়া বাংলাদেশে পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গী তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে; যা ক্রমেই সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে জাতীয় উন্নয়ন ব্যাহত করবে। জাতিসংঘের এই ঘোষণাপত্রের শেষ অনুচ্ছেদ-৪৬-এ সবার মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখানোর কথা বলা হয়েছে এবং এই কাজটি গত মহাজোট সরকার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছে। এর আগে ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি’ অনুসারে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, সমতা, বৈষম্যহীনতা, সুশাসন এবং সরল বিশ্বাসের মূলনীতি অনুসরণ করা হয়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী তথা উপজাতিগুলোর উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে ১৯৭২ সালের ২২ জুন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ওখঙ) প্রণীত ‘ইন্ডিজেনাস এ্যান্ড ট্রাইবাল পপুলেশনস কনভেনশন, ১৯৫৭’ (কনভেনশন নম্বর ১০৭)-এ অনুস্বাক্ষর করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী এবং ট্রাইবাল জাতিগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়সহ তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার জন্য জাতিসংঘের এই সংস্থাটি আবার সংশোধিত ‘ইন্ডিজেনাস এ্যান্ড ট্রাইবাল পপুলেশনস কনভেনশন ১৯৮৯’ (কনভেনশন নম্বর ১৬৯) গ্রহণ করে। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইনী দলিল জাতীয় পর্যায়ে উপজাতিদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয়। এখানে ট্রাইবাল বা সেমি-ট্রাইবাল বলতে ওই গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে, যারা তাদের ট্রাইবাল বৈশিষ্ট্য হারানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে এবং এখনও জাতীয় জনসমষ্টির সঙ্গে একীভূত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত পথে অগ্রসর হয়ে বর্তমান সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ী অধিবাসীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।