পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী আদিবাসী হবার পূর্বশর্তসমুহ পূরণ করে না

Related imageপার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী আদিবাসী হবার পূর্বশর্তসমুহ পূরণ করে না

নিজ মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা, দেশের স্বার্থে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকাই দেশপ্রেম । পুঁথিগতভাবে দেশপ্রেমের সংজ্ঞায় ভিন্নতা থাকলেও মৌলিক কয়েকটি বিষয় অনেকটাই সমার্থক । দেশপ্রেমের সাথে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের প্রতি ভালোবাসা জড়িত, এই ভালোবাসা শর্তহীন ভালবাসা । দেশপ্রেমিক মানুষ নিজস্ব ভূখণ্ড রক্ষার সংগ্রাম, ভূ-খণ্ডের রক্ষণাবেক্ষণ অথবা পুনরুদ্ধারে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকে ।
একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বিভিন্ন শ্রেণীর জাতি, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের অধিবাসীরা বসবাস করতেই পারে, থাকতে পারে এদের ধর্মের ভিন্নতা, কিন্তু নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসকারী একটি দেশের ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করবে এবং প্রয়োজনে যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক ।
একটি দেশের অধিবাসীদের মধ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায়, ধর্ম ও গোষ্ঠীর বসবাস থাকলেও প্রায় প্রতিটি সম্প্রদায়ের মধ্যেই ব্যক্তিগত অথবা দলীয় অথবা ধর্মীয় মতাদর্শ ভিত্তিক ভিন্নতা থাকতে পারে । মতাদর্শগত এই ভিন্নতা সামগ্রিকভাবে দেশের মঙ্গলের জন্য পরিপূরক হওয়াই বাঞ্ছনীয় । কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুতে দেশ স্বার্থ বিষয়ে স্ববিরোধীতা দৃশ্যমান ।
এ দেশের কিছু কিছু স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিবর্গ দেশের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিগত মতাদর্শকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন । তবে যেকোন মতাদর্শের মধ্যে যদিও একটি আদর্শিক বিষয় জড়িত তথাপি মতাদর্শের এই ভিন্নতা দেশের স্বার্থবিরোধী হলে তা ধরে রাখা একেবারেই কাম্য নয় । সমস্যাটি তখনই প্রকটাকারে দেখা দেয় যখন ভিন্ন মতাদর্শিক এই স্বার্থান্বেষী মহল অন্য দেশের স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে ব্যক্তিগত তথাকথিত মতাদর্শের পক্ষে তাদের ভাষায় ইতিবাচক ব্যাখ্যা দাড় করিয়ে ফেলেন ।
আগামী ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস । বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই । তবে সাম্প্রদায়িক রীতিনীতির ভিন্নতার কারণে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী থাকায় সরকার ঐ জনগোষ্ঠী গুলোকে ‚ক্ষুদ্র ও নৃ গোষ্ঠী” হিসাবে পরিগণিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । সরকার এই সিদ্ধান্ত দেশের ঐতিহাসিক পটভূমি বিবেচনায় এবং বাংলাদেশে বসবাসরত ঐ ছোট ছোট জনগোষ্ঠী সমূহের উৎস ও প্রাথমিক আগমনের বিষয় আমলে নিয়ে ঐ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।
কিন্তু বাংলাদেশের কিছু স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিজীবী তাদের মনগড়া মতাদর্শ সরকারের সিদ্ধান্তের উপর চাপিয়ে দিতে চান । তাদের এই দাবির পিছনে ঐতিহাসিক কোন ভিত্তি নেই । যেহেতু তারা বুদ্ধিজীবী, তাই আশা করা যায়, তারা বিষয়টি বোঝেন, কিন্তু নিজেদের অহংকারপ্রসুত অথবা অন্য কোন স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে ব্যক্তিগত লাভের আশায় তারা তাদের ভ্রান্ত মতাদর্শ দেশের উপর চাপিয়ে দিতে চান । তাদের এই দাবি এবং কার্যক্রম চরমভাবে দেশ স্বার্থ বিরোধী হতে পারে এ বিষয়টি তারা ইচ্ছাকৃতভাবে একেবারেই বুঝতে চান না।
বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বসবাসরত ‚ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীর” অধিবাসীগণ এবং তাদের সমর্থনপুষ্ট স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিজীবীদের ‚আদিবাসী” সংক্রান্ত দাবী একেবারেই নতুন । ইতিপূর্বে ‚ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীর” অধিবাসীগণ নিজেদের ‚উপজাতী” হিসেবে পরিচয় দিতে সম্মানিত বোধ করতো । এমনকি ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তিতেও ক্ষুদ্র ও নৃ গোষ্ঠীর এই অধিবাসীদের ‚উপজাতী” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ।
২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ অধিবেশনে The Nation Declaration on the Rights of Indigenous Peoples (UNDRIP) বিল পাশ হয় । ১৪৪ টি দেশ ঐ বিলের স্বপক্ষে, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশসমুহ ঐ বিলের বিপক্ষে এবং বাংলাদেশসহ আরও ১১টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে । পরবর্তীতে ২০১৬ সালের মে মাসে কানাডা UNDRIP থেকে তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করে নেয়। বাংলাদেশ UNDRIP তে ভোটদানে বিরত থাকলেও জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক শর্তানুযায়ী বাংলাদেশে ‚আদিবাসীদের” উপস্থিতি সম্পর্কে যথেষ্ট গবেষণা করে সরকার ছোট ছোট জনগোষ্ঠীর এই সম্প্রদায় সমুহকে ‚ক্ষুদ্র ও নৃ গোষ্ঠী” নামে অভিহিত করে আইন পাশ করেছে ।
তবে একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তটি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পালন করতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই । ২০০৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে UNDRIP তে আদিবাসীদের কয়েকটি নির্দিষ্ট অধিকারের বিষয়ে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে । আদিবাসীদের ভূমি অধিকার, জীবন ও নিরাপত্তা অধিকার, ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় স্বীকৃতি, শিক্ষা ও তথ্যের অধিকার এবং চাকুরী, দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার, আদিবাসী অধ্যুষিত ভূমিতে খনিজ সম্পদসহ অন্যান্য সম্পদের অধিকার, জ্ঞানের অধিকার, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রশাসন পরিচালনা করার অধিকার ইত্যাদি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে ।
অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে কোন নিদিষ্ট জনগোষ্ঠীকে ‚আদিবাসী” হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে ঐ ভূখণ্ডের উপর স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সরকারের কর্তৃত্ব খর্ব হবে । এমনকি ঐ ভূখণ্ডে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে হলে ‚আদিবাসী” ঐ জনগোষ্ঠীর সাথে সরকারকে পরামর্শ করতে হবে । ঐতিহাসিকভাবে সত্য না হলেও সুযোগের সদ্ব্যবহার এবং বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে চাকমা সার্কেল প্রধান ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়সহ উপজাতিদের সমমনা বুদ্ধিজীবীগণ বাংলাদেশে বসবাসরত ছোট ছোট জনগোষ্ঠীর জাতিসত্ত্বাসমূহকে ‚আদিবাসী” হিসেবে পরিগণিত করার দাবী তুলেছেন ।
এখানে মনে রাখতে হবে, একটি দেশের বসবাসরত অধিবাসীদের মধ্যে ‚Minorities” এবং ‚আদিবাসী” বিষয়টি এক নয়। তবে কিছু কিছু দেশে স্বীকৃত আদিবাসীগণ ‚Minorities” নয়। যেমন, গুয়েতেমালা, বলিভিয়া ইত্যাদি । বাংলাদেশে বসবাসরত ছোট ছোট জাতি জাতিসত্ত্বার আদিবাসীগণকে ‚Minorities” হিসেবে পরিগণিত করা অধিক যুক্তিযুক্ত ।
জাতিসংঘ কমিশনের স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার হোসে মার্টিনেজ কোবে যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, কোন ভূখণ্ডের আদিবাসী সম্প্রদায়, জাতিগোষ্ঠী বা জাতি বলতে তাদের বোঝায়, যাদের ঐ ভূখণ্ডে প্রাক-আগ্রাসন এবং প্রাক-উপনিবেশকাল থেকে বিকশিত সামাজিক ধারাসহ ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা রয়েছে, যারা নিজেদেরকে ঐ ভূখণ্ডে বা ভূখণ্ডের কিয়দাংশে বিদ্যমান অন্যান্য সামাজিক জনগোষ্ঠী থেকে নিজেদের স্বতন্ত্র মনে করে । সেই সাথে তারা নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও আইন ব্যবস্থার ভিত্তিতে পূর্বপুরুষের ভূখণ্ড ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ভবিষ্যৎ বংশধরদের হাতে তুলে দেয়ার ইচ্ছাপোষণ করে ।
জাতিসংঘ এখানে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে । যারা কোন উপনিবেশ স্থাপনের আগে থেকেই ওই ভূখণ্ডে বাস করছিল, যারা ভূখণ্ডের নিজস্ব জাতিসত্ত্বার সংস্কৃতি ধরে রেখেছে ও তা ভবিষ্যৎ বংশধরদের হাতে তুলে দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করে, এবং যারা নিজেদের স্বতন্ত্র মনে করে ।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতিদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী ‚আদিবাসী” হবার জন্য পূর্বশর্তসমুহ পূরণ করে না । তারা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে চট্টগ্রাম তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ১৭শ খ্রিস্টাব্দ ও ১৮শ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ের দিকে অবস্থান নিয়েছিল ।
আদিবাসীদেরকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়, যেমন: অষ্ট্রেলিয়াতে ‚Aboriginal Peoples”, ফ্রান্সে ‚Autochthonous Peoples”, কানাডাতে ‚First Nations”, যুক্তরাষ্ট্রে ‚Indians” ইত্যাদি নামে ডাকা হয় । ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আদিবাসীগণ প্রকৃতির উপর নির্ভর করতে গিয়ে চরম দারিদ্রতার মধ্যে দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করেছে । তারা সাধারণত সভ্য সমাজের অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে নিজেদের মত করে চলতে পছন্দ করে ।
আদিবাসীদের অধিকারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিগোচরে আনার জন্য ১৯৬৫ সালে জাতিসংঘে ‚International Convention To Eliminate All Forms Of Racial Discrimination” (ICERD) বিষয়ে সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয় । ২০০৭ সালে জাতিসংঘের অধিবেশনে পাশকৃত UNDRIP তে আদিবাসীদের জন্য কয়েকটি মৌলিক অধিকারের বিষয়ে সমুন্নত রাখা হয়েছে ।
তার মধ্যে Convention ১৬৯ অনুযায়ী আদিবাসীগণ যে দেশের ভূখণ্ডে অবস্থান করছে সেই দেশের সরকার বিভিন্ন আইনগত বিষয়ে যা আদিবাসীদের সরাসরিভাবে প্রভাবিত করবে সে বিষয়ে তাদের সাথে আলোচনা করতে বাধ্য থাকবে। উদাহরণ স্বরূপ : আদিবাসীদের বসবাসরত ভূখণ্ডে সরকার কোন বাঁধ (Dam) তৈরীর প্রয়োজনবোধ করলে অথবা কোন খনিজ সম্পদ আহরণ করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ডে অবস্থানরত আদিবাসীদের সাথে সরকারকে আলোচনা করে নিতে হবে ।
Convention ১৬৯ এ আরো উল্লেখ আছে সরকার আদিবাসীদের সাথে আলোচনার সময় সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে আলোচনা করবে । ২০০৭ সালের জাতিসংঘ অধিবেশনে আদিবাসী বিষয়ে পাশকৃত ইস্যুটিতে তিনটি মৌলিক বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, প্রথমত তাদের ভূখণ্ডে সম্পদের অধিকার, দ্বিতীয়ত নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষার অধিকার এবং তৃতীয়ত রাজনৈতিক অধিকার অর্থাৎ নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ও পদ্ধতিতে প্রশাসন ব্যবস্থাপনা ।
বাংলাদেশ সরকার জনগনের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর । ২০০৭ সালের জাতিসংঘের অধিবেশনে পাশকৃত UNDRIP তে আদিবাসীদের যেসকল অধিকার দেওয়া হয়েছে তা অনেকটা ঐ নির্দিষ্ট ভূখন্ডে স্বায়ত্বশাসন এরই নামান্তর । তথাপি বাংলাদেশ সরকার এদেশে বসবাসরত ছোট ছোট জাতি স্বত্ত্বার জনগোষ্ঠী যদি আসলেই ‚আদিবাসী” হবার পূর্বশর্তসমুহ পূরণ করতো তাহলে তাদের দাবী অনুযায়ী সরকার নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে দৃঢ়ভাবে বিবেচনা করতো ।
কিন্তু বাংলাদেশের স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিজীবীগণ এবং ক্ষুদ্র ও নৃ গোষ্ঠীর সুযোগ সন্ধানী কিছু নেতৃবৃন্দ তাদের সুদূরপ্রসারী দেশ বিরোধী স্বার্থের কারণে ২০০৭ সালের পর থেকে হঠাৎ করেই ‚আদিবাসী” বিষয় দাবী তুলেছেন । ভ্রান্ত এই দাবীটি দেশের স্বার্থ বিরোধী এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । তথাপি দেশের কতিপয় স্বার্থান্বেষী নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, পাহাড়ে বসবাসরত শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ, এমনকি সাংবাদিকরাও ইদানিং ছোট ছোট ক্ষুদ্র বিভিন্ন সম্প্রদায়গুলোকে সরকার নির্দেশিত ‚ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠী” না বলে ‚আদিবাসী” হিসেবে অভিহিত করছেন । সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কতা সত্ত্বেও ‚আদিবাসী” শব্দের ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো, জাতীয় ঐতিহাসিক স্থানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করা হচ্ছে ।
উপজাতীদের ‚আদিবাসী” হিসেবে উল্লেখ না করার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও স্বার্থান্বেষী মহল খুব সচেতনভাবেই তা অমান্য করছেন । ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৩ অধিশাখা থেকে ‚বাংলাদেশে আদিবাসী নামক অসাংবিধানিক দাবি বাস্তবায়নের অপকৌশল রোধে রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো জাতীয় ঐতিহাসিক স্থান ব্যবহারের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন” সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় ।
দেশের প্রত্যেক মানুষেরই আলাদা আলাদা মতাদর্শ থাকতে পারে । এই মতাদর্শ যেন দেশপ্রেমের সাথে সাংঘর্ষিক না হয় সে বিষয়টি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে । ব্যক্তিগত মতাদর্শের বিষয়টি দুই ধরণের হতে পারে- প্রথমত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মনেপ্রাণে ঐ মতাদর্শকে বিশ্বাস ও ধারণ করেন আবার দ্বিতীয়ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্দিষ্ট একটি মতাদর্শ মনে প্রাণে ধারণ না করলেও স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় দেশের স্বার্থ বিরোধী হলেও উক্ত বিতর্কিত মতাদর্শে স্থির থাকেন ।
সরকারের সুনিদিষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও যেহেতু বাংলাদেশের স্বার্থানেষী কিছু বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশের উপজাতীদের ‚আদিবাসী” হিসেবে সম্বোধন করছেন সেহেতু তারাও সুদূর প্রসারী কোন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে করছেন, তা অনুমান করা যায় । তারা তাদের ব্যক্তিগত মতাদর্শের আবরণে উপজাতীদের ‚আদিবাসী” আন্দোলনকে আরও উৎসাহিত করছেন । তবে যদি আদিবাসী দাবীটির পিছনে সত্যতা থাকতো তাহলে বিষয়টি নিয়ে হয়তো বিতর্কের সুযোগ ছিলো।
কিন্তু একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিষয়ে কিছু কিছু স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিজীবী কেন ক্রমাগত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তা’ তারা নিজেরাই ভালো বলতে পারবেন । দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা, অখণ্ডতা রক্ষা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মত মৌলিক বিষয়ে কোন বিতর্ক সৃষ্টি কাঙ্ক্ষিত নয় । মৌলিক বিষয়সমূহে আমাদের মতাদর্শগত ভিন্নতা দেশপ্রেমের গভীরতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ।
অপ্রয়োজনীয় এবং অগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করে মেধাবী জনগোষ্ঠীর যেমন সময় নষ্ট হয় তেমনি দেশের স্বার্থের প্রয়োজনে ঐ মেধাসমুহ ঐ সময়গুলোতে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না । দেশের মৌলিক বিষয় সমুহে ব্যক্তিগত মতাদর্শগত ভিন্নতা যেনো অহেতুক অহংকারে বা কোন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর স্বার্থের কারণে প্রভাবিত না হয় সেবিষয়ে দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক ।