উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রথাগত উত্তরাধিকার আইন এবং বিবাহ বন্ধনের ক্ষেত্রে প্রচলিত ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কিছু তথ্য
Related imageউপজাতি সম্প্রদায়ের প্রথাগত উত্তরাধিকার আইন এবং বিবাহ বন্ধনের ক্ষেত্রে প্রচলিত ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কিছু তথ্য
চাকমা
চাকমা প্রথা মতে কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর শুধুমাত্র তার পুত্র বা পুত্র সন্তানরাই একমাত্র উত্তরাধিকারী হন। কন্যা সন্তান কোন প্রকার সম্পদের উত্তরাধিকারী হতে পারে না। কন্যা সন্তান পরিবারের অমতে বিয়ে করলে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ বিচারের ব্যবস্থা করা হয়। বিচারে সাধারণত ১ অথবা ২ মুষ্ঠিতে ধরা যায় এমন শুকর সমাজের সকলকে খাওয়ানোর আদেশ দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে অপমানজনকভাবে সকলের সামনে তাদের জুতার মালা পরানো হয়। তারপর তাদের বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়। চাকমা নারীরা তাদের স্বামীর সম্পদেরও কোন অংশ পান না।
মারমা
মারমা সম্প্রদায়ের প্রচলিত প্রথা কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। মারমা সম্প্রদায়ের বার্মিজ প্রথা অনুসরণকারী উপজাতিগণ বিশেষ করে বান্দরবানে বসবাসরত মারমা সম্প্রদায়ের মেয়েরা পিতা-মাতার সম্পত্তি ছেলেদের ন্যায় সমানভাবে উত্তরাধিকারী হয়ে থাকেন। তবে যে সন্তান পিতা-মাতার ভরণ পোষণ বহন করবে তাকে একভাগ বেশি সম্পত্তি দেওয়া হয়ে থাকে। পরিবারের অমতে নারীগণ বিবাহ করলে সমাজ তাকে ত্যাজ্য ঘোষণা না করা পর্যন্ত তারা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে থাকেন।
তবে খাগড়াছড়ি জেলায় বসবাসরত মারমা সম্প্রদায়ের নারীগণ পিতা-মাতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন না। মারমা সমাজে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করলে ঐ ব্যক্তির সকল অস্থাবর সম্পত্তিসহ ঘরবাড়ী প্রথম স্ত্রীকে দিতে হয়। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্ত্রী কোন সম্পত্তি পান না, তবে তার (দ্বিতীয় স্ত্রীর) সন্তানেরা পিতার স্থাবর সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ পেয়ে থাকেন।
মারমা সমাজে আরও একটি অদ্ভুত প্রথা প্রচলিত আছে, যা নারীদের জন্য চরমভাবে অপমানজনক। কোন মারমা ছেলে কোন মারমা মেয়েকে পছন্দ হবার পর যদি জোর করে ধরে নিয়ে আসে এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিয়ে বাড়ীর মত আপ্যায়ন করে, তবে সমাজ বিষয়টি মেনে নেয়। এ ক্ষেত্রে উক্ত নারীর ব্যক্তিগত পছন্দের অথবা মতামতের কোন মূল্য দেওয়া হয় না।
ত্রিপুরা
ত্রিপুরা মাহিলারা অন্যান্য উপজাতিদের ন্যায় পিতার এবং স্বামীর সম্পদের উত্তরাধিকারী হন না। কোন বিবাহিত ত্রিপুরা মাহিলার অনৈতিক কার্মকাণ্ডের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সামাজিক আদালতে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে স্ত্রীর চরিত্রের সংশোধনের জন্যে ১৫ দিন অন্তর অন্তর তিনবার সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে। তিনবার সুযোগ দেবার পরও স্ত্রী চরিত্র সংশোধনে ব্যর্থ হলে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের অনুমতি দেওয়া হয়।
অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায়ের ন্যায় ত্রিপুরা নারীদের অভিভাবকের মতামতের ভিত্তিতে মেয়েদেরকে বিবাহ দেওয়া হয়, বিবাহের সময়ে বর পক্ষকে কণের মায়ের দুধের ঋণ শোধ বাবদ রূপার পাঁচ টাকা, দুই জোড়া নারিকেল এবং এক বোতল মদ প্রদান করতে হয়। ত্রিপুরাদের মধ্যে ‘‘নাইত”, ‘‘দেনদা” সহ বিভিন্ন গোষ্ঠী থাকায় এক গোষ্ঠীর ছেলের সাথে অন্য গোষ্ঠীর মেয়ের বিবাহ বা প্রণয় ঘটিত বিষয়গুলো সহজে মেনে নেওয়া হয় না।
তঞ্চঙ্গ্যা
তঞ্চঙ্গ্যা উপজাতিটি চাকমাদের একটি উপদল। তাদের প্রথাও অনেকটা চাকমাদের মতই, যেখানে নারীর অধিকারকে চরমভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তঞ্চঙ্গ্যা প্রথা মতে, কোন ব্যক্তি মৃত্যুর পর শুধুমাত্র তার পুত্র বা পুত্র সন্তানরাই মৃত ব্যক্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী হন। কন্যা সন্তান কোন প্রকার সম্পদের উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। কন্যা সন্তান পরিবারের অমতে বিয়ে করলে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ বিচার এর ব্যবস্থা করা হয়। বিচারে সাধারণত ১ অথবা ২ মুষ্ঠিতে ধরা যায় এমন শুকর সমাজের সকলকে খাওয়ানোর আদেশ দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে অপমানজনকভাবে সকলের সামনে তাদের জুতার মালা পরানো হয়। তারপর তাদের বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়। তঞ্চঙ্গ্যা নারীরাও তাদের স্বামীর সম্পদের কোন অংশ পান না।
চাক
চাক সম্প্রদায়ে পিতার সম্পদের উত্তরাধিকারী হিসাবে শুধুমাত্র পুত্র সন্তানগণই সম্পদ পেয়ে থাকেন। মেয়ে বা স্ত্রী কেউ কোন সম্পত্তি পান না। সন্তান শুধুমাত্র মেয়ে হলে ঐ ব্যক্তি সম্পত্তি তার ভাই অথবা ভাই এর ছেলেরা পেয়ে থাকে। এই সম্প্রদায়ের নারীরা পিতা-মাতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন না, এক্ষেত্রে এই সম্প্রদায়ের মহিলারা দেশের প্রচলিত আইনের আশ্রয় গ্রহণ করলেও সমাজ তা গ্রহণ করে না। বৈধ বিবাহ ব্যতিরেকে কোন নারী গর্ভবতী হলে সামাজিক আদালতে গর্ভবতী মহিলার প্রমাণ সাপেক্ষ্যে ভূমিষ্ঠ সন্তানের পিতৃত্ব স্বীকৃত হলেও ঐ সন্তান পিতার সম্পত্তির আইনগত উত্তরাধিকারী হয় না। পরিবারের অমতে নারীরা বিবাহ করলে তাকে পরিবার ও সমাজচ্যূত করা প্রচলন রয়েছে।
খিয়াং
এ সম্প্রদায়ে বিবাহের ক্ষেত্রে পুরুষদেরকে পণ দিয়ে নারীদের বিবাহ করতে হয়। সাধারনত রুপার দশ টাকা প্রদান করার প্রচলন রয়েছে। খিয়াং জনগোষ্ঠীর প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির পুত্র ও কন্যা সন্তানগণ সম্পদের উত্তরাধিকার হয়ে থাকেন। মৃত পিতার নামীয় সম্পত্তি থেকে পুত্রগণ তিনভাগের দুই ভাগ এবং কন্যাগণ একভাগ সম্পদের উত্তরাধিকারী সূত্রে পেয়ে থাকেন। দত্তক সন্তান চারভাগের একভাগ সম্পদ পেয়ে থাকেন। পুত্রের অবর্তমানে কন্যা সন্তানগণ পিতার সম্পূর্ণ সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে থাকেন।
ম্রো/মুরং
এ সম্প্রদায়ে বিবাহের সময়ে মাহিলাদেরকে পণ দিয়ে ঘরে তুলতে হয় বিধায়, বিবাহ বিচ্ছেদ হলে স্বামীর সম্পত্তিতে তাদের কোন অধিকার থাকে না, বরং পণের টাকা সমুদয় ফেরত দিতে হয়। এক্ষেত্রে দরিদ্র পরিবারের নারীরা পিতার পরিবারে ফেরত যেতে চাইলেও তাদের পক্ষে পণের টাকা ফেরত দেয়া সম্ভব হয় না বিধায় তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্যাতন ও কষ্টের স্বীকার হয়ে থাকেন। এই জনগোষ্ঠীর সমাজ ব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক বিধায় এখানে শুধুমাত্র পুরুষদের কর্তৃত্ব বজায় থাকে যেমন, যেকোন সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব, পূজা পার্বণ ইত্যাদি পারিবারিক যেকোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পুরুষদের একক ভূমিকা থাকে।
লুসাই
লুসাই নরীরা স্বামী কিংবা বাবার সম্পত্তি থেকে কোন অংশ গ্রহণ করতে পারেন না।
পাংখোয়া
পাংখোয়া নারীরা পিতা বা স্বামীর সম্পদের উত্তরাধিকারী হন না। এই সম্প্রদায়ের নারীগণ বিবাহের পূর্বে যে পারিবারিক পদবী বা সামাজিক মর্যাদার অধিকারী হন না কেন, বিবাহের পর তিনি স্বামীর পরিবারের পদবী ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকেন। তবে ‘‘লাল” উপাধী বা কারবারী হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিতে পারেন না।
বম
বম সম্প্রদায়ে নারীদের বিবাহের ক্ষেত্রে পুরুষদেরকে মেয়ের পরিবারকে পণ দিতে হয়। সমাজের রীতি অনুযায়ী স্বামীর কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে স্ত্রীকে অর্থ দিতে হয় যা, স্বামীর উত্তরাধিকারের ৫০ শতাংশ। আর যদি স্ত্রীর কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে তাহলে বিবাহের সময় স্বামী কর্তৃক প্রদত্ত পণ এর সমুদয় অর্থ ফেরত দিতে হয়। এ সম্প্রদায়ের নারীরা পিতার অস্থাবর সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পেয়ে থাকেন, কোন মেয়ে পালিয়ে অন্য সম্প্রদায়ের ছেলেদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাকে সমাজ চ্যূত করা হয়।
খুমী
স্বামীর মৃত্যুর পর খুমী নারীরা মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হতে পারেন না । স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা নারীর ভরণ পোষণের সকল দায়িত্ব তার ভাইদের বহন করতে হয়। খুমী নারীরা তার পিতা অথবা স্বামীর কোন প্রকার সম্পদের অংশ বিশেষও পান না।

উপজাতি নারীদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে যে অনবদ্য অবদান রয়েছে তা সাধারণত সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। নারীর প্রতি মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিবারের পাশাপাশি সমাজের সকল প্রতিষ্ঠানে জেন্ডার সংবেদনশীলতা নিশ্চিত করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এজন্য সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারী পুরুষের সম অধিকারে বিশ্বাসী ও বাস্তব জীবনে বিশ্বাসী সম্মান ও মর্যাদা প্রদানকারী ব্যক্তিদের নেতৃত্বে নিয়ে আসার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার।
সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে অস্ত্র ও তথ্য সরবরাহ করছে শান্তিবাহিনী থেকে আসা পুলিশ
Related imageসশস্ত্র সংগঠনগুলোকে অস্ত্র ও তথ্য সরবরাহ করছে শান্তিবাহিনী থেকে আসা পুলিশ

পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সাথে শান্তিবাহিনী থেকে আসা পুলিশ সদস্যদের গোপন সম্পর্কের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শান্তি চুক্তির পর শান্তিবাহিনীর আত্মসমর্পণকারী সদস্যদের চাকরি দিয়ে পুলিশে পুনর্বাসন করা হলেও তাদের অনেকেই এখনো ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। সশস্ত্র সংগঠনগুলো এদের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার আগাম তথ্য পেয়ে যাচ্ছে। এমনকি এ সব সংগঠনের অস্ত্র আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রেও ‘উপজাতি’ পুলিশের একাংশকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শেখ মো. মিজানুর রহমান বলেন, পাহাড়ি কিছু পুলিশ সদস্যের মধ্যে তাদের পুরনো ঐতিহ্য লক্ষ্য করা গেছে। তারা মদপানসহ বিভিন্ন কারণে পাহাড়িদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এর মধ্যে যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ অভ্যন্তরীণ তথ্য পাচার করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর জনসংহতি সমিতির গেরিলা সংগঠন শান্তিবাহিনীর অনেক সদস্য তাদের অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। চুক্তি বাস্তবায়ন এবং পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় সরকার। এদের একাংশকে পুলিশের বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়া হয়। শান্তিবাহিনী থেকে আসা পুলিশ সদস্যদের শুরুতে সমতলের বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাবর্ত্য অঞ্চলে বাঙালী ও পাহাড়ি পুলিশের মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১২ সালে ‘উপজাতি’ পুলিশ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন জেলা ও ইউনিট থেকে পার্বত্য অঞ্চলে বদলি করা শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ায় এ পর্যন্ত ৯০ জনকে বদলি করা হয়েছে।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শান্তিবাহিনী থেকে আসা পুলিশ সদস্যদের পার্বত্য অঞ্চলে বদলি করার পর এদের অনেকেই পুরনো যোগাযোগ ধরে নতুন করে জনসংহতি সমিতির দুই গ্রুপ এবং ইউপিডিএফের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে।

পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সংগঠনের গোপন সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে জনসংহতি সমিতির (সংস্কার গ্রুপ) সভাপতি সুধাসিন্ধু খিসা বলেন, পাহাড়ি পুলিশ পাহাড়ে থাকলে অপরাধ করবে আর সমতলে থাকলে অপরাধ করবে না এমন ভাবনা যৌক্তিক নয়। পুলিশের যারা অপরাধ করবে তারা পাহাড়ি হলেও করবে বাঙালী হলেও করবে। বাঙালী অনেক পুলিশ তার পরিবারের সদস্যদের সহায়তা দেয়।

তবে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পুলিশ কর্মকর্তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় উপজাতি পুলিশ সদস্যদের খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন থানা ও ইউনিটে মোতায়েন করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। উল্টো পার্বত্য অঞ্চলকে তারা ‘হোমগ্রাউন্ড’ হিসেবে ব্যবহার করছে। বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। আত্মসমর্পণকৃত বাংলাদেশ পুলিশবাহিনীতে পুনর্বাসিত উপজাতীয় সদস্যদের মধ্যে যারা পার্বত্য এলাকায় দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত হন, তাদের একটা বড় অংশকে কুচক্রীমহল তাদের পূর্বোক্ত সংগঠনের কার্যক্রমের সাথে গোপনে ও পরোক্ষভাবে জড়িত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে। উপজাতীয় পুলিশ সদস্যরা পার্বত্য জেলায় চাকরির সুবাদে আঞ্চলিকতা, আত্মীয়তা ইত্যাদি প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। পূর্বের সংগঠনের সঙ্গে গোপন কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে।’

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুসারে, ‘উপজাতীয় পুলিশ আঞ্চলিকতা এবং পূর্বের দলীয় নেতাদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে গোপনীয়, স্পর্শকাতর, আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত গোপন তথ্যাদি বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের কাছে পাচার করছে। এমনকি উপজাতীয় পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে প্রাপ্ত স্পর্শকাতর তথ্য ইউপিডিএফ, জেএসএস (সন্তু লারমা), জেএসএস (সংস্কার) এর মতো আঞ্চলিক সংগঠনে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব, জননিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি হুমকির মুখে পড়ছে।’

পার্বত্য অঞ্চলে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ওই অঞ্চলের বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে ঐতিহ্যগতভাবে মদ তৈরি ও সেবনের সংস্কৃতি চালু আছে। তারা নিজেরাই তামাক চাষ করে এবং তামাক ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক সেবন করে। শান্তি চুক্তিপরবর্তী সময়ে পুলিশ বিভাগে চাকরি পাওয়া উপজাতীয় পুলিশ সদস্যরা পার্বত্য অঞ্চলে বদলি হয়ে কাজে যোগদানের পর মদ ও গাঁজা সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এ কাজের জন্য তারা স্থানীয় পাহাড়িদের সাথে গোপনে মেলামেশা করছে। ফলে সশস্ত্র আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর সাথে তাদের যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচির ভিত্তিতে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশবাহিনীর নিরাপত্তা পরিকল্পনা, দিকনির্দেশনামূলক তথ্য উপজাতীয় পুলিশ সদস্যরা উপজাতীয় সংগঠনগুলোর সদস্যদের কাছে আগাম প্রকাশ করে দেয়। ফলে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা পুলিশের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও দুরূহ হয়ে পড়ে।

শান্তিবাহিনী থেকে পুলিশে যোগ দেওয়া সদস্যরা তাদের জন্য বরাদ্দ সরকারি অস্ত্র, গুলিসহ অন্যান্য মালামাল সম্পর্কেও যত্নবান নয়, উল্লেখ করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় কর্মরত উপজাতীয় পুলিশ সদস্য পুলিশ লাইন্সে অবস্থান না করে ইউপিডিএফ অধ্যুষিত এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে। ফলে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অনেকের আত্মীয়তার সুবাদে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর কাছে পৌঁছে যায়। এ সব পুলিশকে পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকা ছেড়ে পুলিশ লাইন্স এবং আশপাশের এলাকায় বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য বলা হলেও তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বাসা পরিবর্তন না করে ইচ্ছেমাফিক পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকায় বসবাস করছেন।’

প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ‘গত বছরের ২৫ অক্টোবর ভোরে রাজধানীর কাফরুলের একটি বাসা থেকে ৫শ’ রাউন্ড গুলিসহ জেনাল চাকমা ও প্রেম চাকমাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সব গুলি বিক্রির জন্য তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল।’

অন্যদিকে চলতি বছরের ৪ অক্টোবর খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার কুড়াদিয়াছড়া পূজামণ্ডপে দায়িত্বরত পুলিশের নায়েক লক্ষ্মী কুমার চাকমার কাছে থাকা এসএমজি (সাব মেশিনগান) চুরি হয়ে যায়। ঘটনার ২১ দিন পর ২৫ অক্টোবর খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের নালকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের পুকুর থেকে অস্ত্রটি বস্তাবন্দী অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নায়েক লক্ষ্মীকুমার চাকমাসহ ৭ জনকে গ্রেফতার ও আর্মড পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কিরণ চাকমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

পার্বত্য অঞ্চলে উপজাতি পুলিশ সদস্যদের তৎপরতার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সুশৃঙ্খল বাহিনী। তাদের কোনো বর্ণ, জাতি কিংবা গোষ্ঠী নেই। পুলিশে যোগদানের পর প্রতিটি সদস্য তার নিজ ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে শপথ করে পুলিশের শৃঙ্খলা ও পুলিশী গোপনীয়তা রক্ষা করবে।

আইজিপি বলেন, পাহাড়ি কিংবা বাঙালী নয়, পুলিশের মধ্যে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলেই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আবার অনেক ঘটনায় পুলিশের বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।



ইউপিডিএফের নতুন শাখার লক্ষ্য অস্ত্রবাণিজ্য
Related imageইউপিডিএফের নতুন শাখার লক্ষ্য অস্ত্রবাণিজ্য


পার্বত্য চট্টগ্রাম ঘিরে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবির সংগ্রাম চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় সংগঠনটি।

তাদের এ পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য অস্ত্র ব্যবসার মাধ্যমে সংগঠনকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করা। অস্ত্রের চালান আনা-নেওয়ার পথ সুগম করতে ইতোমধ্যে টেকনাফ ও কক্সবাজারে পৃথক দুটি শাখা গঠন করেছে ইউপিডিএফ। সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারের একটি হোটেলে এ নিয়ে বৈঠক করে গেরিলা সংগঠনটির কয়েক শীর্ষ নেতা। মিয়ানমারের একটি সশস্ত্র সংগঠনের একাধিক সদস্য ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিল বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে ১৯৯৮ সালে ২৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে অটল থেকে সশস্ত্র সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে জেএসএসের তৎকালীন গেরিলা শাখা শান্তি বাহিনীর কয়েক বিদ্রোহী নেতা ইউপিডিএফ গড়ে তোলেন। চুক্তির পর শান্তি বাহিনীর এক হাজার ৯৪৭ সদস্য বিপুলসংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। তবে অস্ত্র জমা না দিয়ে শান্তিচুক্তি মানতে অস্বীকার করেন বিদ্রোহীরা। চুক্তির এক বছর পর ইউপিডিএফ গঠন করে নতুন করে সশস্ত্র সংগ্রামে ফিরে যান তারা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুরুতে পাহাড়ি জনগণকে নিয়ে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিলেও গোপনে গড়ে তোলা হয় বিশাল গেরিলা বাহিনী। যাদের কাছে বিপুলসংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ রয়েছে।

অন্যদিকে, ইউপিডিএফের আধিপত্যে শঙ্কিত হয়ে নতুন করে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বাধ্য হন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) কর্মীরা।

রত-মিয়ানমার সীমান্ত পথ দিয়ে এ সব অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করছেন তারা। বিবদমান ওই দলগুলোর অস্ত্রের ঝনঝনানিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের প্রায় ১৩ লাখ মানুষ।

খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর এলাকায় ইউপিডিএফের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য রিপোর্টকে বলেন, অস্ত্রের মজুদ বাড়িয়ে গেরিলা বাহিনী শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। অস্ত্রের জোগানে সহায়তার জন্য মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত টেকনাফ ও কক্সবাজারে গঠন করা হয়েছে ইউপিডিএফের দুটি নতুন শাখা। চীন থেকে পাঠানো অস্ত্রের চালান থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের সিন প্রদেশ হয়ে টেকনাফ ও কক্সবাজার দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিতে নেওয়া হয়েছে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১২ সালের জুন-জুলাইয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের একটি চালান গ্রহণ করে ইউপিডিএফের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা। সে সময় বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে ছবি তোলেন তারা। অনুসন্ধানে সেই ছবির কয়েকটি দ্য রিপোর্টের হাতে আসে। এর মধ্যে একটি ছবিতে থাকা ইউপিডিএফ সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী শিখা চাকমার পরিচয় পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেও শিখা চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে এ নিয়ে কথা হয় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিনা দেওয়ানের সঙ্গে। গত জুনে বিয়ে করার কারণে তিনি সংগঠন থেকে অব্যাহতি নেন এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।

ইউপিডিএফের অস্ত্র প্রশিক্ষণ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন সংগঠনের দায়িত্বে থাকলেও অস্ত্রের চালান কিংবা প্রশিক্ষণের সঙ্গে পরিচয় হয়নি। সংগঠনে যখন ছিলাম তখন একটা দায়িত্ব নিয়েই ছিলাম। অস্ত্র প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা থাকলে আমরাও প্রশিক্ষণ পেতাম।’

অস্ত্রসহ শিখা চাকমার ছবির বিষয়ে রিনা দেওয়ান বলেন, ‘ফটোশপের মাধ্যমে একজনের ছবিতে অন্যজনের চেহারা সংযুক্ত করা এখন কোনো কঠিন কাজ নয়। ওই ছবিতেও তেমন কিছু হওয়া অসম্ভব নয়।’

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত পথে আসা বিপুলসংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্রে ছেয়ে গেছে পুরো পার্বত্য অঞ্চল। পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও গোপনে গড়ে তোলা হয়েছে অস্ত্রের মজুদ। সীমান্ত অরক্ষিত থাকায় অবাধে মিয়ানমারের নাগরিক ও অস্ত্র-গোলাবারুদ প্রবেশ করছে পার্বত্য চট্টগ্রামে।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উপজাতিরা পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে মিশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩৬৫ কিলোমিটার সীমান্তে বিজিবি ক্যাম্প না থাকায় দুর্গম এ অঞ্চলে পাহাড়ি ও আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের অবৈধ অস্ত্র চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। আর এ সব আগ্নেয়াস্ত্র বিভিন্ন উপজাতি সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতায় কয়েকটি গেরিলা বাহিনী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্যাডার, পার্বত্য শান্তিচুক্তির পক্ষ-বিপক্ষের গ্রুপগুলোর কাছে যাচ্ছে বলে একাধিক সূত্রের দাবি।

এদিকে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে ধীরগতির অভিযোগ এনে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছে জনসংহতি সমিতি। সংগঠনটির বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে চলছে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত। একদিকে ইউপিডিএফ, অন্যদিকে জেএসএসের নানা উপদল একে-অপরকে ঘায়েল করতে গড়ে তুলছে অস্ত্রের মজুদ। অস্ত্র সংগ্রহে ইউপিডিএফের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে জনসংহতি সমিতি (সংস্কার গ্রুপ)। এ সংগঠনের নেতা সুদর্শন চাকমার একটি সশস্ত্র ছবিও দ্য রিপোর্টের হাতে এসেছে। এক সময় শান্তি বাহিনীর এই গেরিলা শান্তিচুক্তির পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে প্রকাশ্য রাজনীতিতে নামেন। তিনি ২০০৯ সালে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন।

সশস্ত্র ছবি সম্পর্কে জানতে সুদর্শন চাকমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জনসংহতি সমিতির (সংস্কার গ্রুপ) সভাপতি সুধাসিন্দু খীসা বলেন, ‘বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে কিন্তু আমাদেরকেও বাঙালি বানানোর চেষ্টা করছেন কেন? এতে আপনাদের লাভ কী? আমাদেরও বাঙালি বানালে দেশ কী অনেক উন্নত হয়ে যাবে? এভাবে বেশি বেশি বাঙালি বাঙালি করে পাহাড়ের পরিস্থিতি খারাপ করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলে আমাদের অমঙ্গল হবে কিন্তু এতে সারাদেশের মঙ্গল হবে না।’

ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক নিবারণ চাকমা পাবর্ত্য অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সরকার ও সন্তু লারমাকে দায়ী করে বলেন, ‘তারা পাহাড়ি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। জনগণের স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রতি সম্মান না জানিয়ে উল্টো হত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এ পর্যন্ত আমাদের ২৬৪ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। পাহাড়ে সেনাশাসন অব্যাহত রেখে আমাদের নির্মূলের চেষ্টা করা হচ্ছে। এভাবে কখনই পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।’

সশস্ত্র অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইউপিডিএফ নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। আমরা হত্যা-সন্ত্রাসে বিশ্বাসী নই। তবে কোনো আঘাত এলে তা প্রতিহত করা হবে- এটাই স্বাভাবিক। পাহাড়ের জনগণের নিরাপত্তার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে আমরা প্রস্তুত আছি ও থাকব।’



ভারতের শান্তিবাহিনী গঠন
Related imageভারতের শান্তিবাহিনী গঠন
১৯৭২ সালে ভারতের দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনী গঠন প্রমান করে যে ভারত বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে বা স্বাধীনতার স্বার্থে ১৯৭১ সালে আমাদেরকে সাহায্য করেনি।ভারত তার স্বার্থেই পাকিস্তানকে দুই ভাগ করেছে। কিন্তু মধ্য থেকে জীবন দিতে হয়েছে আমাদের ৩০ লক্ষ্ বাংলাদেশীদেরকে।
সাধারণ মানুষ এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদেরও জানার বা বোঝার সময় হয়নি যে তারা কেন যুদ্ধ করছে? আমরা এমন এক অভাগা জাতি যে আজও আমরা জানি না যে ১৯৭১ সালের তথাকথিত যুদ্ধ এবং পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করার BENEFICIARY কে বা করা।আমাদের নেতাদেরকে বলা হয়েছে কুষ্টিয়ায় গিয়ে সরকার গঠন করো। যারা সরকার গঠন করেছিল তাদের অধিকাংশই ছিল ভারতের বেতনভুক্ত। ছাত্রনেতাদেরকে বলা হয়েছিল জাতীয় নেতাদের কথা না শুনে পতাকা উড়াতে অথচ দেশের খবর নেই। মহান নেতা শেখ মুজিবকে বেসামাল অবস্থায় ফেলা হলো যাতে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন। তার দল আওয়ামী লীগ এর সিনিয়র নেতারা তাদের আত্মা ইন্ডিয়ার কাছে বিক্রি করে বসে আছে আর ছাত্র নেতারাও আত্মা বিক্রির আগেই ভারতের প্রেমে দিশেহারা।
শেখ মুজিব ব্যর্থ হননি কিন্তু তাকে ব্যর্থ বানানো হয়েছে।পাকিস্তানের জেলে বসে তিনি জানতেও পারেননি যে তার দলীয় ভারতীয় দালালরা ভারতের স্বার্থে দেশের ৩০ লক্ষ মানুষের জীবন ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করতে সফল হয়েছে।
ভারত ভালো করেই জানতো শেখ মুজিবের ব্যক্তিত্ব। আওয়ামী লীগ এর দলীয় ভারতীয় দালালদের দিয়ে শেখ মুজিবকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। ভারতীয়দের পোষা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাও শেখ মুজিবকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। অনেক চিন্তা ভাবনার পর ভারত নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো:
১. RAW এর দালাল জুলফিকার আলী ভুট্টোকে নিয়োজিত করে রাখলো শেখ মুজিবকে যেন কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্র করা যায়।
২. আওয়ামী লীগ এর নেতাদের ভাতা বাড়িয়ে দেয়া হলো শেখ মুজিবের সকল সিদ্ধান্ত যেন ভারতকে আগেভাগে জানানো হয়।
৩. পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতী সম্প্রদায়কে স্বাধীনতার লোভ দেখিয়ে গঠন করতে বলা হলো শান্তি বাহিনী। (ঠিক একই লোভ ইস্ট পাকিস্তানীদেরকে দেখানো হয়েছিল।)
৪. শান্তিবাহিনীদেরকে ভারতের মাটিতে নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বশস্ত্র করা হলো।
৫. আওয়ামী লীগকে কাউন্টার দেয়ার লক্ষ্যে জাসদ তৈরী করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
৬. ফারাক্কা বাঁধকে অপারেশনাল করা হলো।
৭. শান্তিবাহিনীর সহায়তায় বাংলাদেশে বসবাসরত হিন্দুদেরকে নিয়ে গঠন করা হলো হিন্দু,বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ।
উপরোক্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৭২ সালেই গঠন করা হলো শান্তি বাহিনী। তাদেরকে ভারতের মাটিতেই প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বশস্ত্র করা হয়েছিল।স্বয়ং শেখ মুজিব তা জানতেন বলেই ভারতপন্থীদেরকে তার ধারে কাছেও ঘেঁষতে দিতেন না।ইতিমধ্যেই জাসদ আত্মপ্রকাশ করলো। তারা শেখ মুজিবের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুললো। তার পরের কাহিনী সকলেরই জানা। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট শেখ মুজিবকে স্বপরিবারে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া হলো।
আমি সবসময়ই বলে আসছি যে ভারত আমাদেরকে কখনই সাহায্য করেনি। বরং আমরা না বুঝে ভারতকে সাহায্য করেছি।আমাদের ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে ভারতের স্বার্থে। মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছে ভারতের পররাষ্ট্রনীতিকে সফল করার লক্ষ্যে।
ভারত শেখ মুজিবকে নিয়ে খেলেছে এবং খেলা শেষে তাকে সড়ানোও হয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে তারা শেখ মুজিবের অতি চালাক মেয়ে হাসিনা শেখকে নিয়েও খেলছে। শান্তিবাহিনী আজো আছে।ফারাক্কা বাঁধ এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদও রয়েছে।হাসিনা শেখ এর চারপাশে রয়েছে ভারতীয়দের পোষা আওয়ামী কুকুর। হাসিনা শেখকে দিয়ে বাংলাদেশের বারোটা বাজানো ইতিমধ্যেই হয়েছে। দেশের প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ কোনো কিছুর উপরেই নেই।হাসিনা শেখের নিজস্ব নিরাপত্তাটুকু পর্যন্ত তার হাতে নেই।১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ সালের পূর্বে শেখ মুজিবকে যেভাবে জনবিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল ঠিক তেমনি হাসিনা শেখকেও করা হয়েছে। এবার শুরু করেছে ভারতীয় নিম্নোক্ত নতুন খেলা :
১. বিচারপতি সিনহা কে দিয়ে দেশে কৃত্রিম সাংবিধানিক সংকট তৈরী করা।
২. ফারাক্কার বাঁধ ছেড়ে দিয়ে দেশের অর্থিনীতিকে পঙ্গু করে দেয়া।
৩. দেশবাসীকে হাসিনা শেখের বিরুদ্ধে খেপিয়ে দেয়া।
৪. মিয়ানমারকে দিয়ে রোহিঙ্গ্যা নিধন পুনুরুজ্জীবিত করে শরণার্থী সমস্যা তৈরী করা।
হাসিনা শেখের বাবা ভারতীয়দের দাবা'র চালে হেরে গিয়েছিলেন। দেখা যাক হাসিনা শেখ এবার কি করে???
পার্বত্য এলাকায় নতুন অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টায় ‘ভাবনা কেন্দ্র’
Image result for বনপার্বত্য এলাকায় নতুন অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টায় ‘ভাবনা কেন্দ্র’

মিয়ানমারের উগ্রপন্থী একটি গ্রুপ সরকারের খাস জমি দখল করে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তুলছে ‘ভাবনা কেন্দ্র’ বা কিয়াং। ভাবনা কেন্দ্রে বসেই তারা ৯৬৯ উপজাতিদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
ভান্তদের পরামর্শে বান্দরবানের স্বর্ণমন্দির ও রাঙ্গামাটির বনবিহারে ও রাজবন বিহারের গত কয়েক মাস ধরে সর্বসাধরণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেখানে এখন জুডো ক্যারাতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা বনে ঢুকে পড়ছে। বনে গিয়ে আবার তারা উচ্চতর প্রশিক্ষণও নিচ্ছে। পরে তারা জম্ম ল্যান্ড গড়ার আন্দোলন-সংগ্রাম ও সশস্ত্র বিপ্লবের দিকে যাচ্ছে।
স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জম্মু ল্যান্ড গঠন করার জন্য বিভিন্ন রূপরেখাও তৈরি করা হয়েছে। কি ধরনের সরকার হবে পাহাড়ে তারও একটি ছক সাজানো হয়েছে। পাহাড়কে এমন একটি অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে যে, বাংলাদেশ সরকার থেকে পাহাড়কে বিচ্ছিন্ন করে নিজেরাই সরকার গঠন করে স্বাধীন জম্মু ল্যান্ড গঠন করবে। এ ধরনের কর্মকা- সরকার প্রশ্রয় না দেয়ায় পার্বত্য জেলাগুলোতে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো কোন না কোন কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছে। সরকারী বেসরকারী চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। পরিবহন থেকে প্রতিদিন তাদের হাজার হাজার টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। এ সবের কারণে পার্বত্য এলাকার মানুষ এখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মানুষজনের স্বাভাবিক কাজকর্ম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি চায়।



উগ্র বৌদ্ধ সন্ত্রাসী সুচিঃ এক মানুষরুপী হিংস্র হায়েনার নাম
Related imageউগ্র বৌদ্ধ সন্ত্রাসী সুচিঃ এক মানুষরুপী হিংস্র হায়েনার নাম
২০১২ সালের ১২ জুন নরওয়ের রাজধানী অসলোতে নোবেল পুরস্কার হাতে নিয়ে অং সান সু চি বলেছিলেন, মিয়ানমারে দীর্ঘদিন অন্তরীণ থাকার সময় তিনি শক্তি অর্জন করতেন জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণার প্রস্তাবনা অনুচ্ছেদের এই কথাগুলো থেকে: ‘মানবাধিকারের প্রত্যাখ্যান ও ঘৃণার ফলে বিশ্বজুড়ে যে বর্বরতার সূত্রপাত হয়, তা থেকে মানুষের বিবেকে জেগে ওঠে প্রবল প্রতিরোধ। সেই প্রতিরোধ থেকে জন্ম নেয় মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা, যেখানে স্পষ্ট ঘোষিত হয়েছে এমন এক বিশ্বব্যবস্থার প্রতি সমর্থন, যেখানে প্রত্যেক মানুষ বাক্স্বাধীনতা ও ধর্মবিশ্বাস প্রতিপালনের অধিকার ভোগ করবে এবং ভীতি ও অভাব থেকে মুক্তির অধিকার অর্জন করবে।’
অনুমান করি, এই নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী শুধু নিজেকে নয়, পৃথিবীর যেখানেই মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়, সেখানকার অধিপতিদের মানবাধিকারের এই ঘোষণার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলেন। খুব ভালো হয় সু চি যদি এখন সে কথা নতুন করে নিজেকে মনে করিয়ে দেন। কারণ, তাঁর নিজের দেশের এক সম্প্রদায়ের মানুষের মানবাধিকার আজ চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। তিনি এখন আর কারাগারে বন্দী নন, কার্যত ওই দেশের শাসনকর্তা। সেখানকার মানবাধিকার লঙ্ঘন ঠেকানোর ক্ষমতা তাঁর রয়েছে।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর যে সংগঠিত আক্রমণ চলছে, তা গণহত্যা বা জেনোসাইড ভিন্ন অন্য কিছু নয়। দেশটির ১৩ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানকে সরকারিভাবে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। সে দেশের প্রায় ১৩৫টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মধ্যে রোহিঙ্গা অন্যতম। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তাদের বৈধ ক্ষুদ্র জাতিসত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ। এমনকি সরকারি জনসংখ্যা গণনার সময় রোহিঙ্গাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রায় সব ধরনের মৌলিক মানবাধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। সরকারি সমর্থনে সংখ্যাগুরু বৌদ্ধধর্মাবলম্বী লোকদের হাতে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচার গণহত্যা চলছে। তাদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, মসজিদ, স্কুলঘর বা দোকান—কোনো কিছুই তাদের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। জীবন বাঁচাতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশে। অনেকে ডিঙিনৌকা নিয়ে উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে মারা গেছে।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এই গণহত্যায় নেতৃত্ব দিচ্ছে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু, তাঁর নাম ভিরাথু। টাইম ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, তিনি নিজেকে মিয়ানমারের বিন লাদেন বলে ঘোষণা করেছেন। বিন লাদেন আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন, কিন্তু ভিরাথুর যুদ্ধ নিজ দেশের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে। যে সন্ত্রাসী দলটির নেতৃত্বে তিনি রয়েছেন, একসময় তার নাম ছিল ৯৬৯ আন্দোলন। এখন দেশের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে তার নতুন নাম হয়েছে মা বা থা। নাম যেটাই হোক, ভিরাথু ও তাঁর দলের একটাই লক্ষ্য, প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে হয় নির্মূল অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা। রোহিঙ্গাদের সম্বন্ধে ভিরাথু একসময় মন্তব্য করেছিলেন, এই লোকগুলো শৃগালের মতো, তারা তখনই ভদ্র ব্যবহার করে, যখন তাদের বেকায়দায় ফেলা হয়।
মিয়ানমারের অধিকাংশ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মতো রোহিঙ্গারাও বহিরাগত। আনুমানিক ৬০০ বছর আগে প্রথম রোহিঙ্গা মুসলমানরা সুলতানি বাংলা থেকে আরাকানে গিয়ে বসত গড়ে। আরাকানি রাজা নরমেখলা নিজ রাজ্য হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাংলার সুলতান জালালুদ্দিন শাহের রাজত্বে, ১৪৩০ সালে তাঁর সাহায্যে নরমেখলা তাঁর রাজ্য ফিরে পান। বাংলা থেকে ফেরার সময় আত্মরক্ষার জন্য সঙ্গে করে যাদের তিনি নিয়ে যান, পরে তারাই রোহিঙ্গা নামে পরিচিত হয়। এখানে মনে রাখা ভালো, রোহিঙ্গাদের মতো সংখ্যাগুরু বামাররাও বহিরাগত। আনুমানিক ১ হাজার ২০০ বছর আগে তারা তিব্বত ও চীনের পার্বত্যাঞ্চল থেকে ইরাবতী উপত্যকায় গিয়ে বসড় গড়ে।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বামারদের নির্মূল অভিযান আজকের নয়। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সমর্থনে এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের নির্দেশে অর্ধশতক ধরে এই পরিকল্পিত নিধনযজ্ঞ চলে আসছে। সত্তর ও আশির দশকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের অনুপ্রবেশের ফলে এই সংকট এক নতুন চরিত্র অর্জন করে। এর ফলে কোন আন্তর্জাতিক চক্র কীভাবে কতটা লাভবান হয়েছে এবং বাংলাদেশ কীভাবে সে খেলার পাশার ঘুঁটি হয়ে উঠেছে, তার হিসাব অন্য সময় করা যাবে। মোদ্দা কথা হলো, সন্ত্রাসী খেদাও অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলায় এই সম্প্রদায়ভুক্ত সাধারণ মানুষের জীবন অসহনীয় হয়ে উঠল। সেই থেকেই ক্রমবর্ধমান হারে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশে প্রবেশ শুরু।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের প্রধান পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন নেটওয়ার্কসমূহ রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম অত্যাচারের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। তিন-চার সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে যেসব ভিডিও দেখানো হয়েছে, তাতে যেকোনো সুস্থ মানুষের রক্ত হিম হয়ে যাওয়ার কথা। জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই আক্রমণকে ‘এথনিক ক্লিনজিং’ বা জাতি-সম্প্রদায়গত নির্মূল অভিযান হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মিয়ানমার প্রশ্নে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি বিজয় নাম্বিয়ার বলেছেন, শুধু মুসলিম নাগরিকদের লক্ষ্য করে বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তাদের লক্ষ্য করে সুপরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। ‘এথনিক ক্লিনজিং’ কথাটি নাম্বিয়ার ব্যবহার করেননি, সেটি করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘ উদ্বাস্তু হাইকমিশনারের প্রতিনিধি জন ম্যাককিসিক। দুর্গত অঞ্চল সফর শেষে তিনি বলেছেন, সামরিক অভিযানের ফলে হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়েছে, আগুনে জ্বলে গেছে তাদের ঘরবাড়ি। প্রাণে বাঁচতে রোহিঙ্গারা নদীতে ঝাঁপ দিচ্ছে, বিপদ জেনেও তারা এপারে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিচ্ছে। মিয়ানমারে এখন যা হচ্ছে, তা ‘এথনিক ক্লিনজিং’ ছাড়া অন্য কিছু নয়।
সবচেয়ে যা বিস্ময়কর তা হলো, সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করছে মিয়ানমারের বৌদ্ধধর্মাবলম্বী মানুষ, যাদের একসময় নিতান্তই শান্তিকামী ভাবা হতো। বৌদ্ধধর্মে শুধু মানুষ নয়, যেকোনো প্রাণী হত্যাই ভয়ানক অপরাধ। অথচ ভগবান বুদ্ধের সেই অনুসারীরাই এখন পুরো একটা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এই অভিযানকে গণহত্যা বা জেনোসাইড বলা হলে মোটেই অত্যুক্তি হবে না। ১৯৪৮ সালে গৃহীত জাতিসংঘের গণহত্যাবিরোধী কনভেনশন বা চুক্তিতে স্পষ্ট বলা আছে, কোনো জাতি বা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে অংশত বা সম্পূর্ণ ধ্বংসের জন্য গৃহীত ব্যবস্থা ‘গণহত্যা’ বা ‘জেনোসাইড’ নামে পরিচিত হবে। জাতিসংঘ এখনো মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযোগ তোলেনি, কিন্তু মিয়ানমারে যা হচ্ছে, তা গণহত্যা ছাড়া অন্য কিছু নয়। স্মরণযোগ্য যে মিয়ানমার হচ্ছে এই চুক্তির প্রথম স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। এখন তারাই সে চুক্তি নির্বিচারে লঙ্ঘন করে চলেছে।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় বলে ব্যাখ্যা করেছে। এমনকি অং সান সু চি, যিনি এই মুহূর্তে মিয়ানমারের অঘোষিত রাষ্ট্রপ্রধান, তিনিও এই নির্মূল অভিযানের একই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তিনি টোকিও গিয়েছিলেন জাপানি সাহায্য চাইতে। সেখানে তাঁকে রোহিঙ্গা অভিযানের ব্যাপারে সরাসরি প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। কারণ, তাঁর মতে, এ ব্যাপারে সরকারি তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। কী অদ্ভুত কথা! সারা বিশ্ব যেখানে দেখছে সে দেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও দাঙ্গাবাজ রাজনৈতিক দলের সদস্যদের হাতে নির্বিচারে নারী-পুরুষ ও শিশু নিহত হচ্ছে, আগুনে পুড়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম, সেখানে সু চিকে হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করতে অপেক্ষা করতে হবে সরকারি তদন্তের প্রতিবেদনের জন্য?
গত শনিবার সিঙ্গাপুরের একটি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সু চি পুরো ঘটনার জন্য উল্টা গণমাধ্যমকে দায়ী করেছেন। বলেছেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম পক্ষপাতমূলকভাবে একটানা নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে আসছে। তাঁর দাবি, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শান্ত।
সরকারি তদন্তের ফল কী হবে, তার আলামত মিলেছে এই তদন্তের সভাপতি উ আং উইনের একটি মন্তব্য থেকে। রোহিঙ্গা নারীদের ওপর নির্বিচার ধর্ষণ চলছে, সে অভিযোগের প্রমাণ তাঁর কাছে হাজির করা হলে আং উইনের উত্তর ছিল, ‘অসম্ভব, আমাদের সৈন্যরা এই কাজ করতে পারে না। কারণ, রোহিঙ্গা মেয়েরা “নোংরা”!’
এটা মোটেই বিস্ময়কর নয় যে বৌদ্ধ ভিক্ষুর নেতৃত্বে মিয়ানমারের জাতীয়বাদী শক্তিগুলো এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে, সেই ভিরাথুকে জাতীয় বীরের সম্মান দিয়েছে দেশের বিগত সামরিক সরকার। এমনকি অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির অনেক কর্তাব্যক্তিও ভিরাথুর মা বা থা আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। সাবেক সামরিক রাষ্ট্রপ্রধান থেইন সেইন এমন কথাও বলেছেন যে এই আন্দোলন আসলে ‘শান্তির এক প্রতীক’ এবং এই আন্দোলনের নেতা ভিরাথু ‘ভগবান বুদ্ধের সন্তান’। দেশের বাইরেও বর্মিরা ভিরাথুকে বীরের সম্মান দেখিয়েছে। ২০১৪ সালে লন্ডনে বর্মিদের সর্ববৃহৎ উপাসনালয় সাসানা রামসি ‘ধর্মীয় স্বাধীনতায়’ অবদানের জন্য ভিরাথুকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত করে।
ভিরাথু ও তাঁর দল যে অভিযান শুরু করেছে, তা শুধু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নয়, ইসলামের বিরুদ্ধেও। এই দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা উ পামাউখা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের সঙ্গে তঁাদের আন্দোলনের সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘যত দিন ইসলাম থাকবে, তত দিন সন্ত্রাসী থাকবে, তাই আমরা ট্রাম্পের মতোই আমাদের দেশ ও ধর্মকে ইসলামের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য লড়ছি।’
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দেখা যায়নি। চীনসহ প্রধান শক্তিগুলোর কেউই সামরিক বা অর্থনৈতিক অবরোধের কথা বিবেচনায় আনেনি। বাংলাদেশের উচিত হবে তেমন দাবি তোলা। আশু ব্যবস্থা হিসেবে সে দেশের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য সব রকম আন্তর্জাতিক ঋণ ও উন্নয়ন সাহায্য স্থগিত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের উচিত অবিলম্বে জাতিসংঘসহ সব বহুপক্ষীয় ফোরামে এই প্রশ্ন তোলা। গত মাসে সু চির টোকিও সফরের সময় জাপান সরকার তাঁর সরকারের সঙ্গে ৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের এক উন্নয়ন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আমাদের উচিত হবে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত সেই উন্নয়ন সাহায্য স্থগিত রাখার
বার্মায় মুসলমানদের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন চলছেই
Related imageবার্মায় মুসলমানদের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন চলছেই
==========================================
বার্মা স্বাধীন হবার পরেও রোহিঙ্গা-সহ অন্যান্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত গণহত্যা ও নৃশংসতা চলতেই থাকে। নৃতাত্ত্বিক বিনাশের লক্ষ্যে তথ্যমতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিদেনপক্ষে দুই ডজন অভিযান চালানো হয়, সেগুলো হচ্ছে:
১. সামরিক অভিযান (৫ম বর্মী রেজিমেন্ট) – নভেম্বর ১৯৪৮
২. বার্মা টেরিটোরিয়াল ফোর্স (BTF) এর অভিযান – ১৯৪৮-৫০
৩. সামরিক অভিযান (দ্বিতীয় জরুরী ছিন রেজিমেন্ট) – নভেম্বর ১৯৪৮
৪. মাউ অভিযান – অক্টোবর ১৯৫২-৫৩
৫. মনে-থোন অভিযান – অক্টোবর ১৯৫৪
৬. সমন্বিত অভিবাসন ও সামরিক যৌথ অভিযান – জানুয়ারী ১৯৫৫
৭. ইউনিয়ন মিলিটারি পুলিস (UMP) অভিযান – ১৯৫৫-৫৮
৮. ক্যাপ্টেন হটিন কিয়াও অভিযান – ১৯৫৯
৯. শোয়ে কি অভিযান – অক্টোবর ১৯৬৬
১০. কি গান অভিযান – অক্টোবর-ডিসেম্বর ১৯৬৬
১১. ঙ্গাজিঙ্কা অভিযান – ১৯৬৭-৬৯
১২. মিয়াট মোন অভিযান – ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯-৭১
১৩. মেজর অং থান অভিযান – ১৯৭৩
১৪. সাবি অভিযান – ফেব্রুয়ারী ১৯৭৪-৭৮
১৫. নাগা মিন (ড্রাগন রাজা) অভিযান – ফেব্রুয়ারী ১৯৭৮-৭৯ (ফলাফল: ৩ লক্ষ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অভিনিষ্ক্রমণ (exodus); মৃত্যু চল্লিশ হাজার)
১৬. সোয়ে হিন্থা অভিযান – অগাস্ট ১৯৭৮-৮০
১৭. গেলোন অভিযান – ১৯৭৯
১৮. ১৯৮৪’র তাউঙ্গকের গণহত্যা
১৯. মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা – তাউঙ্গি (পশ্চিম বার্মা)। পিয়াই ও রেঙ্গুন সহ বার্মার অনেক অঞ্চলে এই দাঙ্গা ঘটে।
২০. পি থিয়া অভিযান – জুলাই ১৯৯১-৯২ (ফলাফল: দুই লক্ষ আটষট্টি হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অভিনিষ্ক্রমণ (exodus))
২১. না-সা-কা অভিযান – ১৯৯২ থেকে আজ পর্যন্ত
২২. মুসলিম বিরোধী সাস্প্রদায়িক দাঙ্গা – মার্চ ১৯৯৭ (মান্দালয়)
২৩. সিটীওয়ে’তে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা – ফেব্রুয়ারী ২০০১
২৪. মধ্য বার্মার মুসলিম বিরোধী সর্বাঙ্গীন দাঙ্গা – মে ২০০১
২৫. মধ্য বার্মার মুসলিম বিরোধী সর্বাঙ্গীন দাঙ্গা (বিশেষত পিয়াই/প্রোম, বাগো/পেগু শহরে) – ৯/১১ এর পরবর্তী থেকে অক্টোবর ২০০১
২৬. যৌথ নির্মূলাভিযান – জুন ২০১২ থেকে এখনো চলছে
জেনারেল নে উইন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সকল মিয়ানমার সরকারই মৌলিক মানবাধিকার বন্ধ রেখে রোহিঙ্গাদের সার্বিক নৃতাত্ত্বিক বিনাশে খেলায় মত্ত। রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রবিহীন ঘোষণা করত তাদের বিরুদ্ধে করা সব ধরণের অপরাধকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের কোনো অনুচ্ছেদই মানা হচ্ছেনা।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘটা অপরাধগুলোর সংক্ষিপ্ত তালিকা দেয়া হলো:
নাগরিকত্ব অস্বীকার, সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত ভ্রমণ ও চলাচল, নিয়ন্ত্রিত ও সীমিত শিক্ষা, সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত কাজের অধিকার, জবরদস্তিমূলক শ্রমনিয়োগ, ভূমি অধিগ্রহণ, জবরদস্তিমূলক উচ্ছেদ, ঘরবাড়ী, অফিস, স্কুল, মসজিদ ইত্যাদির ধ্বংস সাধন, ধর্মীয় যন্ত্রণা দান, জাতিগত বৈষম্যমূলক আচরণ, নিয়ন্ত্রিত বিয়ে, প্রজননে বাধাপ্রদান ও জোরপূর্বক গর্ভনাশ, স্বেচ্ছাচারী কর আরোপ ও বলপ্রয়োগে কর আদায়, গবাদি পশু-সহ পরিবারের সদস্যদের জবরদস্তিমূলক জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধকরণ, স্বৈরাচারী মনোভাবসূলভ গ্রেফতার, নিবর্তন ও আইন বহির্ভূতভাবে হত্যা, রোহিঙ্গা মহিলা ও বয়ষ্কদের অবমাননা ও অমর্যাদা, যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ধর্ষণের প্রয়োগ, রোহিঙ্গা সমৃদ্ধ লোকালয়ের প্রণালীবদ্ধ উচ্ছেদ, অভিবাসন ও নাগরিকত্ব কার্ড বাজেয়াপ্তকরণ, আভ্যন্তরীণ শরনার্থী ও রাষ্ট্রহীনতা, মুসলিম পরিচিতি মুছে ফেলার লক্ষ্যে মুসলিম ঐতিহ্য সমৃদ্ধ স্থান ও প্রতীকের ধ্বংস কিংবা পরিবর্তন