মিয়ানমারে যা হচ্ছে, তা জাতিগত বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িক হামলা। এর নেপথ্যে এক ব্যক্তির নাম বারবার উঠে আসছে। তার নাম আশিন উইরাথু। সে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু। ১৯৬৮ সালে জন্ম গ্রহণ করে সে ১৪ বছর বয়সে স্কুল ত্যাগ করে পাদরিয়ানা জীবন গ্রহণ করে। ২০০১ সালে জাতীয়তাবাদী ও মুসলিমবিদ্বেষী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়। ২০০৩ সালে তার ২৫ বছরের সাজা হয়। কিন্তু ২০১০ সালে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তাকেও ছেড়ে দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ১ জুলাই সংখ্যায় টাইম ম্যাগাজিন তাকে নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন ছেপেছে। তার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে বৌদ্ধ সন্ত্রাসী বাহিনী। সে নিজেকে মিয়ানমারের ‘বিন লাদেন’ আখ্যায়িত করে থাকে। নির্ভরযোগ্য তথ্যমতে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে তার সন্ত্রাসী বাহিনী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চেয়ে কয়েক শ গুণ বেশি বর্বরতায় লিপ্ত। (সূত্র : বিবিসি হিন্দি)
তাদের মূলমন্ত্র ‘৯৬৯’। এই তিন সংখ্যা বৌদ্ধ ধর্মের প্রতীক। বৌদ্ধ ধর্মে বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘ—এ তিন রত্নের নাম হলো ত্রিরত্ন। অর্থাৎ বুদ্ধরত্ন, ধর্মরত্ন ও সংঘরত্ন। বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘ বলতে এখানে গুণাবলির গুণকীর্তন করা হয়েছে। ত্রিপিটকে বুদ্ধের প্রধান ৯টি গুণ, ধর্মের ছয় গুণ ও সংঘের ৯ গুণের কথা বলা হয়েছে। এমন বিশ্বাস থেকে এসেছে ‘৯৬৯’।‘৯৬৯ সংগঠন’ বৌদ্ধ ধর্মের কথিত শান্তির বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও ইহা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ইসলাম বিদ্বেষী একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।
‘তিন পার্বত্য জেলার নতুন আতঙ্ক ৯৬৯। বাংলাদেশ সংলগ্ন মিয়ানমার সীমান্তের দুর্গম পাহাড়ে তাদের ঘাঁটি। সম্প্রতি সংগঠনটি তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলোতে। ধর্মীয় উগ্রপন্থি হিসেবে ৯৬৯ পরিচিত হলেও তাদের রয়েছে সশস্ত্র গ্রুপ। সংগঠনটির ভাণ্ডারে রয়েছে হালকা থেকে ভারী অস্ত্রের বিশাল মজুত।
এদিকে তাদের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে পাহাড়ের দুর্গম অঞ্চলে থাকা জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র গ্রুপের। বাংলাদেশে তৎপর ওই দুই সশস্ত্র গ্রুপকে নতুন করে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে জুম্মু ল্যান্ড গঠনের। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জুম্ম ল্যান্ড গঠন করার জন্য বিভিন্ন রূপ রেখাও তৈরি করা হয়েছে। কি ধরনের সরকার হবে পাহাড়ে তারও একটি ছক সাজানো হয়েছে। পাহাড়কে এমন একটি অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে যে, বাংলাদেশ সরকার থেকে পাহাড়কে বিচ্ছিন্ন করে নিজেরাই সরকার গঠন করে স্বাধীন জুম্ম ল্যান্ড গঠন করবে। এ ধরণের কর্মকাণ্ড সরকার প্রশ্রয় না দেয়ায় পার্বত্য জেলাগুলোতে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো কোনো না কোনো কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। এদিকে সরকারের শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে ধর্মীয় উগ্রপন্থির লেবাসে থাকা সশস্ত্র ওই সংগঠনকে পার্বত্য জেলাগুলোর জন্য বড় ধরনের হুমকি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমারের ৯৬৯ নামের গ্রুপটি নতুন আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে। আগে এই গ্রুপের কোন কর্মকাণ্ড পাহাড়ে ছিল না। সম্প্রতি এই গ্রুপটি পাহাড়ের সর্বত্র কাজ করে যাচ্ছে। ধর্ম প্রচারের নামে এমন কর্মকাণ্ড করবে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কখনও কল্পনা করেনি।
পাহাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সরকারের খাস জমি দখল করে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তুলছে ‘ভাবনা কেন্দ্র’ বা কিয়াং। ভাবনা কেন্দ্রে বসেই উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ৯৬৯ উপজাতিদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ৩৫ জনের বেশি মিয়ানমারের নাগরিক এ কাজে জড়িত রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তারা ধর্মযাজক বা ভান্তে সেজে পাহাড়িদের মধ্যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে। গত কয়েক মাসে তারা পার্বত্য এলাকায় ২৫ হাজারের বেশি অনুসারী তৈরি করেছে।
সম্প্রতি মিয়ানমারের এক নাগরিক ভান্তে সেজে এমন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিল। যৌথবাহিনী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে মিয়ানমারের মুদ্রা এক লাখ ৫৫ হাজার কিয়াতসহ গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর যৌথবাহিনী তার কাছ থেকে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। সে বলেছে, পাহাড়ে তার মতো প্রায় শতাধিক ভান্তে রয়েছে। তার তথ্যে বলা হয় পাহাড়ের উপজাতিরা যাতে বাঙালিদের উপর বিষিয়ে উঠে সে জন্য তারা কাজ করছে। এতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাহাড়িরা লাভবান হবে। পুরুষ ভান্তেদের মতো মিয়ানমার থেকে আসা বেশ কয়েকজন নারী সদস্যও এখানে কাজ করে যাচ্ছে। গোয়েন্দারা এমন ২৫ জন নারীর সন্ধান পেয়েছে। যারা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে কাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ৯৬৯ তাদের সূদুরপ্রসারী তৎপরতার সঙ্গে যোগ করেছে অস্ত্র ব্যবসা।এছাড়া প্রতিমাসে থানচি ও মিজোরাম এর অরক্ষিত বর্ডার দিয়ে ১৫ থেকে ২০ জন মিয়ানমারে ৯৬৯ এর কাছ থেকে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেয়।http://archive.is/pRi7X