“কল্পনা অপহরণঃ সাজানো নাটক” সেনাবাহিনীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার!
১১/০৩/১৯৯৬ ইং তারিখের ঘটনা। বলা হয় এদিন লেফটেনেন্ট ফেরদৌসের নেতৃত্বে একদল সৈনিক রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে গোলাগুলি চালিয়ে কল্পনা চাকমাকে ও তার ভাই কালিন্দী চাকমা ও লালবিহারী চাকমাসহ অপহরণ করে। কিন্তু কালিন্দী চাকমা এই ঘটনায় যে মামলা করে তাতে অপরিচিত লোকের কথা বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী এবং গোলাগুলির কথা উল্লেখ করা হয়নি। লেফটেনেন্ট ফেরদৌস ঘটনার দিন সকালে নির্বাচন উপলক্ষে দায়িত্ব পালনের জন্য উগলছড়ি ক্যাম্পে আসেন, যা কল্পনা চাকমার বাড়ির নিকটবর্তী ছিলো। উক্ত ক্যাম্পে একজন মেজর, একজন ক্যাপ্টেন, দুজন লেফটেনেন্ট সহ প্রায় ৯০ জন সৈনিক ছিলো। তারা এবং নির্বাচন পরিচালনা কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাসহ সকলে ঐদিন উগলছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাত যাপন করে। রাতে ওখান থেকে গিয়ে গোলাগুলির মাধ্যমে অপহরণ করলে এতগুলো লোকের কেউ জানল না, শুনলো না এটা কেমন করে হয়! ক্যাম্প থেকে বের হলে কমান্ডারের অনুমতি, গোলাগুলির হিসেব দিতে হয়। কল্পনা চাকমার ভাইদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল বলা হয়েছে কিন্তু কারও গায়ে গুলি লাগলোনা কেন? তাছাড়া দুর্গম জনবিচ্ছিন্ন পার্বত্য অঞ্চলে দিনে যে কাউকে অপহরণ /গুম করা যায়, যেখানে সামান্য পরিমাণ আচ করার সুযোগ নেই সেখানে রাতের বেলা অপহরনের মতো ঝুঁকি নেওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়?
কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করাতে কি গুরুত্ব থাকবে সেনাবাহিনীর?
“কল্পনা অপহরণঃ একটি সাজানো নাটক”
আসল রহস্য হলো …. কল্পনা চাকমা ছিলেন উইমেন ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক। সে তাদের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে ক্যাম্পেইন না করে আওমীলীগ সমর্থিত প্রার্থী দীপংকর তালুকদারের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। আর এইটাই তারজন্য কাল হয়ে দাড়ায়। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও শান্তি বাহিনীর নীতি পরিপন্থি হওয়ায় তারাই তাকে অপহরণ বা হত্যা যা ইচ্ছেমত তা করেছে। শান্তিবাহিনী নির্বাচনে তাদের ভরাডুবির কথা আঁচ করতে পেরেই উদ্দেশ্যপ্রোনোদিত ভাবে এই নাটক রচনা করেছিল। শুধু কল্পনা চাকমা নয়, সেই সময়ে তারা আরও ৩৫ জন আওয়ালীগ পন্থী উপজাতিকে অপহরণ করে চরম নির্যাতন এবং মুক্তিপন আদায় করেছিল।
“কল্পনা অপহরণঃ একটি সাজানো নাটক”
কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনা নিয়ে একটি স্বতন্ত্র তদন্ত করেছিল তৎকালীন মানবাধিকার কমিশন। এ তদন্তের বিষয়ে ১৯৯৬ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তদন্তের নানা তথ্য, উপাত্ত, ভিডিও প্রদর্শন করেন। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক ও জাতীয় সমন্বয়কারী এডভোকেট কে এম হক কায়সার বলেছেন, “পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তারই লোকজন দ্বারা কল্পনা চাকমা নিখোঁজ রয়েছে। লে. ফেরদৌস অথবা অন্য কোনো সামরিক বাহিনীর সদস্যই যে, এই ঘটনার সাথে জড়িত নয় তা কল্পনা চাকমার মা, আত্মীয় স্বজন ও স্থানীয় জনগণের বক্তব্যে প্রকাশ পায়।
“কল্পনা অপহরণঃ একটি সাজানো নাটক”
তিনি আরো বলেন, কল্পনা চাকমা বর্তমানে ত্রিপুরা রাজ্যের গণ্ডাছড়া মহকুমার শুক্রে নামক স্থানে অবস্থান করছে। ….বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রতিবেদন পাঠ করেন, সংগঠনের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক ও জাতীয় সমন্বয়কারী এডভোকেট কে এম হক কায়সার। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসোসিয়েট প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, সাইফুল ইসলাম দিলদার, মুনির উদ্দীন খান, সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেট ইতরাত আমিন, মানবাধিকার গবেষণা সহকারী সাহেলা পারভীন লুনা।
“কল্পনা অপহরণঃ একটি সাজানো নাটক”
বিভিন্ন তথ্য প্রমাণসহ লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কল্পনা চাকমা শেষ কবে মার সাথে যোগাযাগ করেছে, এই প্রশ্নের জবাবে মা বাধনী চাকমা জানান, নিখোঁজ হওয়ার পর দুই বার যোগাযোগ করেছে, এবং সর্বশেষে যোগাযোগ হয়েছে ১ আগস্ট ’৯৬। এতে প্রমাণিত হয় যে, কল্পনা চাকমা বেঁচে আছেন এবং কোথায় আছেন তা তার মা বেশ ভাল ভাবেই জানেন।”(দৈনিক মিল্লাত ৯ আগস্ট, ১৯৯৬)।
“কল্পনা অপহরণঃ একটি সাজানো নাটক”
এ প্রেস কনফারেন্সের পরদিন ৯ আগস্ট ১৯৯৬ সালে বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টের শিরোনাম দেখা যেতে পারে। ‘মায়ের স্বীকারোক্তি কল্পনা চাকমা এখন ত্রিপুরায়’- দৈনিক মিল্লাত, ‘কল্পনা চাকমা এখন ত্রিপুরায়: মা’র সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে তার’- দৈনিক দিনকাল, ‘কল্পনা চাকমা জীবিত এবং কোথায় আছেন তা তার মা ভালভাবেই জানেন’- দৈনিক ইনকিলাব, ‘কল্পনা চাকমা ত্রিপুরায় আছেন, অপহরণ সাজানো নাটকঃ মানবাধিকার কমিশনের তথ্য প্রকাশ’- দৈনিক পূর্বকোণ, ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ভাষ্য কল্পনা চাকমা ত্রিপুরায়’- দৈনিক ভোরের কাগজ, ‘কল্পনা চাকমা ভারতে আছেন’- দৈনিক সংগ্রাম, ‘সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, কল্পনা চাকমা ভারতের ত্রিপুরায়।। অপহরণ ঘটনার সাথে সামরিক বাহিনী জড়িত নয়’- দৈনিক আজাদী, ‘অবশেষে রহস্য ফাঁস কল্পনা চাকমা ভারতে’- দৈনিক দেশজনতা, ‘মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ পরিকল্পিতভাবে কল্পনা চাকমাকে নিখোঁজ রাখা হয়েছে’- দৈনিক সবুজ দেশ, ‘সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কমিশন, কল্পনা চাকমা এখনো বেঁচে আছেন’- দৈনিক লাল সবুজ, ‘কল্পনা চাকমা ত্রিপুরার গঙ্গাছড়া এলাকায় রয়েছে।। মানবাধিকার কমিশন’- দৈনিক সকালের খবর, `Kalpana Chakma Traced, living in Tripura’- The New Nation.
“কল্পনা অপহরণঃ একটি সাজানো নাটক”
সুতরাং আজও তারা কল্পনা চাকমাকে ঘিরে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার ক্রমাগত চালিয়ে আসছে। শুধু এইটুকু বলবো পাহাড়ে এতো এতো সাধারণ সুন্দরী যুবতী থাকতে কল্পনা চাকমার মতো নারী নেত্রীকে অপহরণ করার কোন প্রশ্নই থাকে না। এটা পাহাড়ের একজন মূর্খ দিনমজুরও বোঝে কিন্তু আপনারা সুশীলরা বোঝেন না। লেখক: গোমতির পোলা, যার যার সাধ্যমত তথ্য দিয়ে দেশটাকে জানতে সহযোগিতা করবো