নামকরা জল্লাদ ছিলেন আলবার্ট পিয়েরপেয়ন্ট

Image result for নামকরা জল্লাদ ছিলেন আলবার্ট পিয়েরপেয়ন্টইতিহাসের সাক্ষী


উনিশ শ' পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত ব্রিটেনে ফাঁসি কার্যকরের জন্য সবচেয়ে নামকরা জল্লাদ ছিলেন আলবার্ট পিয়েরপেয়ন্ট।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির দু'শতাধিক নামকরা যুদ্ধাপরাধী এবং ব্রিটেনের অনেক কুখ্যাত খুনিসহ চারশরও বেশি লোককে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়েছিলেন এই আলবার্ট পিয়েরপয়েন্ট।
তবে তিনি বলতেন, তাদের অপরাধ যাই হোক - দন্ড কার্যকরের সময় তাদের সাথে সবসময়ই সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করেছেন তিনি।
১৯৪০ এবং ৫০-এর দশকে আলবার্ট পিয়েরপয়েন্ট ছিলেন ব্রিটেনের প্রধান জল্লাদ। সেই সময়টায় ব্রিটেনে হত্যার শাস্তি ছিল মৃত্যুদন্ড। এলবার্টের কাছে এই ফাঁসি দেবার কাজটা ছিল একটা পারিবারিক পেশার মতোই - কারণ তার বাবা ও কাকাও ছিলেন সরকারের তালিকাভুক্ত জল্লাদ।
আলবার্ট পিয়েরপয়েন্টের জন্ম ১৯০৫ সালে ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারে। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছে ছিল - বাপ-চাচার পথ অনৃসরণ করে একজন জল্লাদ হবার, এবং সে কথা তিনি একবার স্কুলে 'আমি কি হতে চাই' শীর্ষক এক রচনায় লিখেওছিলেন ।
আলবার্ট পিয়েরপয়েন্ট তার ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ করার সুযোগ পেলেন ১৯৩২ সালে।
তার একটা ইন্টারভিউ নেয়া হলো , আর একটা সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ কোর্স হলো । তার পর তিনি একজন সহকারী হিসেবে জল্লাদের সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেন।
বলা বাহুল্য জল্লাদদের প্রতিদিন কাজ করতে হতো না, সুতরাং আলবার্ট টাকা পেতেন কাজের ভিত্তিতে । এর বাইরে বেশির ভাগ সময়ই আলবার্ট কাজ করতেন একজন দোকানদার হিসেবে ।
পরে তিনি একটা পাব চালানোর চাকরিতে ঢুকলেন। তবে তার দ্বিতীয় পেশা যে জল্লাদের কাজ করা - সে ব্যাপারে আলবার্টকে কড়া গোপনীয়তার রক্ষা করতে হতো। তিনি এমনকি তার স্ত্রীকেও বলেন নি। তবে তার স্ত্রী নিজেই পরে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলেন।
আলবার্ট পিয়েরপয়েন্ট প্রধান জল্লাদ হিসেবে প্রথম কাউকে ফাঁসি দেন ১৯৪১ সালে। এবং এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে আলবার্ট তার কাজে ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ।
gallows albert pierrepontছবির কপিরাইটBBC
Image captionব্রিটেনের একটি কারাগারের ফাঁসিমঞ্চ
ফাঁসি দেবার সময় তিনি অত্যন্ত শান্ত থাকতেন, তার আচরণ ছিল নম্র, এবং ব্যাপারটা সেরে ফেলতে পারতেন অত্যন্ত দ্রুতগতিতে।
"আমাদের কারাগারে যেতে হতো বিকেল চারটার দিকে। সেখানে আমাদের গভর্নরের সাথে দেখা হতো, তার সাথে কথাবার্তা সেরে নিতে হতো। এর পর ফাঁসির নানা আয়োজন সম্পন্ন করা, ফাঁসির মঞ্চটি প্রস্তুত করা, এ সব করতে হতো।"
"ফাঁসি দেবার আসল জিনিসটা হচ্ছে যেটাকে বলে 'ড্রপ' - অর্থাৎ দন্ডিতের পায়ের নিচে যে পাটাতনটা থাকে সেটা সরে গেলে কতখানি নিচে পড়ার পর তার গলায় বাঁধা দড়িতে টান পড়বে। কার 'ড্রপ' কতটা হবে - তা দন্ডিত ব্যক্তির বয়েস কতো, তার উচ্চতা এবং ওজন কতো - এর ওপর নির্ভর করে । একটা ফাঁসি ভালোভাবে এবং পরিচ্ছন্নভাবে কার্যকর করতে হলে এই 'ড্রপ' হিসেব করতে হয় - লোকটার বয়েস, উচ্চতা এবং ওজনের ওপর ভিত্তি করে।"
পিয়েরপয়েন্টকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে তিনি যখন একজন দন্ডিত ব্যক্তিকে তার কারাকক্ষে দেখতে যান - তার পর তার দন্ড কার্যকর হতে কত সময় লাগে?
এটা নির্ভর করে কোন কারাগারে ফাসিটা হচ্ছে। কোনো কারাগারে কনডেমড সেল থেকে ফাঁসিমঞ্চ খুবই কাছে, কোনোটাতে হয়তো তা জেলের আরেক প্রান্তে। এমনও হয় যে ফাঁসির ব্যাপারটা মাত্র ১৬ সেকেন্ডে শেষ হয়ে যায়।
ব্রিটেনের এক নম্বর জল্লাদ হিসেবে আলবার্ট পিয়েরপয়েন্ট ব্রিটেনের সবচাইতে কুখ্যাত খুনিদের ফাঁসি দিয়েছেন।
পিয়েরপয়েন্ট তার এই পেশার কথা সযত্নে গোপন রাখতেন। তিনি এ জন্য গর্ববোধও করতেন।
কিন্তু তার পরও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সরকার যখন ঘোষণা করলো যে প্রায় ২শ দন্ডিত নাৎসী যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য তাকে জার্মানি নিয়ে যাওয়া হবে - তখন ব্রিটেনেও তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল।
পিয়েরপয়েন্ট সবসময় জোর দিয়ে বলতেন , তিনি মৃত্যুদন্ড কার্যকরের সময় কোনরকম আবেগ প্রকাশ করতেন না।
তবে একবার একজন লোকের ফাঁসি তিনি কার্যকর করেছিলেন - যিনি তারই পাবে ক্রেতা হিসেবে আসতেন। মাঝে মাঝে তারা একসাথে গানও গেয়েছেন। কিন্তু লোকটির নাম তার জানা ছিল না । তাই পিয়েরপয়েন্ট তাকে দেখার আগে বুঝতেই পারেন নি যে আজ তাকে পরিচিত একজনের ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।
"আমি যখন সকালে তার সাথে দেখা করতে গেলাম, লোকটি প্রথমেই আমাকে বললো, হ্যালো টশ। আমি তো স্তম্ভিত । বললাম, 'হ্যালো টশ তুমি কেমন আছো?" সে বললো "আমি ঠিক আছি'। সবকিছুর পরও আমরা তো সবাই মানুষ। আমি খুবই বিস্মিত হয়েছিলাম, একেবারে তাজ্জব যাকে বলে। তবে আমি চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব নির্বিকার থাকার।
১৯৫৬ সালে আলবার্টের সাথে পারিশ্রমিকের পরিমাণ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবাদ হলো, তিনি পদত্যাগ করলেন।তার কখনো তিনি ওই চাকরিতে ফেরেন নি।
আলবার্ট পিয়েরপয়েন্ট তার পেশাদার জল্লাদের জীবনে চার শতাধিক লোককে ফাসি দিয়েছিলেন। তার মধ্যে নারী ,পুরুষ, তরুণ, বৃদ্ধ - সব রকমই ছিল।
"আমি কখনোই সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবি না যে আজ আমি কি করতে যাচ্ছি। আমি আজও ভাবি না। যখন জল্লাদ ছিলাম তখনো ভাবি নি। এটা আমার মনের ওপর কোন প্রতিক্রিয়া ফেলে না। কারণ আমি মনে করি আমি শুধু আমার কর্তব্য পালন করছি। বরং - আমি আজ কাজটা ভালোভাবে করেছি - এ কথা ভাবলেই আমার মনটা পরিষ্কার হয়ে যায়।"
জল্লাদের কাজ থেকে অবসর নেবার পর পিয়েরপয়েন্ট তার পাব-এর ব্যবসা চালিয়ে গিয়েছিলেন।
১৯৬৫ সালের নভেম্বর মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট হত্যার অপরাধে মৃত্যুদন্ডের বিধান স্থগিত করে আইন পাস করে। আর মৃত্যুদন্ড পুরোপুরি উচ্ছেদ করা হয় ১৯৬৯ সালে। আলবার্ট পিয়েরপয়েন্ট প্রথমে এটা সমর্থনই করেছিলেন। কিন্তু পরে তার মনোভাবে পরিবর্তন এসেছিল।
আলবার্ট পিয়েরপয়েন্ট মারা যান ১৯৯২ সালে।
 কাবা শরিফ অবরোধের অপচেষ্টা

Image result for কাবাইতিহাসের সাক্ষী: সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা যেভাবে অবরোধ করেছিল কাবা শরিফ


১৯৭৯ সালের ২০শে নভেম্বর: মক্কায় জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ের সময় তোলা ছবিছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image caption১৯৭৯ সালের ২০শে নভেম্বর: মক্কায় জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ের সময় তোলা ছবি
সৌদি আরবের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে নাটকীয় একটি ঘটনা হচ্ছে ১৯৭৯ সালে পবিত্র মক্কা নগরীতে কট্টরপন্থী সুন্নীদের অবরোধ। ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবা এবং একে ঘিরে তৈরি মসজিদ আল হারাম বা হারাম শরিফ অবরোধ করেছিল একটি সালাফিপন্থী গোষ্ঠী। তাদের দখল থেকে মক্কাকে মুক্ত করতে যে তীব্র লড়াই চলে, তাতে নিহত হয় শত শত মানুষ। সেই ঘটনা নিয়ে ইতিহাসের সাক্ষীর এবারের পর্ব:
১৯৭৯ সালের ২০শে নভেম্বর। ইসলামী বর্ষপঞ্জীতে এই দিনটির একটা প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে।
একটা নতুন শতাব্দীর শুরু সেদিন, হিজরী ১৪০০ সালের প্রথম দিন। পবিত্র মক্কা নগরীর মসজিদ আল হারাম, বা হারাম শরিফ সেদিন হাজার হাজার মানুষে পরিপূর্ণ।
সারা পৃথিবীতে থেকে আসা মুসলিমরা সেদিনের ফজরের নামাজে যোগ দেয়ার অপেক্ষায়। মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে চতুস্কোণ কাবা-কে ঘিরে। এটি হচ্ছে ইসলামের পবিত্রতম স্থান।
ফজরের নামাজ মাত্র শেষ হতে চলেছে। হঠাৎ সাদা কাপড় পরা প্রায় শ'দুয়েক লোকজন অস্ত্র হাতে বেরিয়ে এলো নামাজীদের মধ্য থেকে। এই অস্ত্র তারা আগেই সেখানে পাচার করে নিয়ে এসেছিল।
কয়েকজন অস্ত্রধারী গিয়ে অবস্থান নিল ইমামের চারপাশে। ইমাম যখন তার নামাজ শেষ করলেন, অস্ত্রধারীরা মাইক্রোফোনের নিয়ন্ত্রণ নিল। তারপর তারা মাইকে এমন এক ঘোষণা দিল, যা শুনে হতবাক হয়ে গেল সবাই।
অস্ত্রধারীদের একজন মাইকে বলছিল, "আমরা আজ ইমাম মাহদীর আবির্ভাব ঘোষণা করছি। তিনি বিশ্বে ন্যায় বিচার এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। যে বিশ্ব এখন অন্যায়-অত্যাচার এবং অশান্তিতে ভরে গেছে।"
দুই সপ্তাহ ধরে জঙ্গিরা দখল করে রেখেছিল মক্কাছবির কপিরাইটKARIM SAHIB
Image captionদুই সপ্তাহ ধরে জঙ্গিরা দখল করে রেখেছিল মক্কা
ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, ইমাম মাহদী বিশ্বে আবির্ভূত হবেন ইসলামকে পুনরুদ্ধার করতে। কেয়ামতে আগে দাজ্জালের শাসনকে উৎখাত করে ইমাম মাহদী বিশ্বে ইসলামকে পুনপ্রতিষ্ঠা করবেন। কেয়ামতের পূর্বে বিশ্ব ধ্বংস হওয়ার আগে ঘটবে এই ঘটনা।
সেদিন মক্কায় এই ঘোষণা যারা শুনছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন এক মাদ্রাসা ছাত্র, যিনি মাত্রই তার হজ্জ্ব শেষ করেছেন।
"আমরা খুব অবাক হয়েছিলাম যখন নামাজের পর পরই কিছু লোক হারাম শরিফে মানুষের উদ্দেশে কথা বলার জন্য মাইক্রোফোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল। তারা বলছিলে, মাহদী পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই মানুষ খুশি হয়েছিল যে, যিনি পৃথিবীকে বাঁচাবেন, সেই ত্রাতা, তিনি আত্মপ্রকাশ করেছেন।"
"মানুষ ছিল খুবই উৎফুল্ল। তারা জোরে 'আল্লাহু আকবর' ধ্বনি দিচ্ছিল।"
যে সশস্ত্র গ্রুপটি সেদিন কাবা এবং হারাম শরিফের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল, তারা ছিল সালাফিপন্থী একটি কট্টর সুন্নী গোষ্ঠী। তাদের নেতা ছিলেন এক বেদুইন, জোহাইমান আল ওতাইবি।
মসজিদের মাইকে জোহাইমান আল ওতাইবি ঘোষণা দিলেন, ইমাম মাহদি সেখানে তাদের মাঝেই আছেন।
তার এই ঘোষণার পর সশস্ত্র গ্রুপটির মধ্য থেকে একজন সামনে এগিয়ে এলেন। তিনি জোহাইমানের সম্পর্কিত ভাই। তাঁর নাম মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আল কাহতানি। জোহাইমান দাবি করলেন, এই মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আল কাহতানিই হচ্ছেন ইমাম মাহদী। যিনি আসবেন বলে ইসলামে আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।
তারপর যোহাইমান সামনে এগিয়ে আসলো এবং ইমাম মাহদীর প্রতি তাঁর আনুগত্য ঘোষণা করলো। সে লোকজনকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হলো যে, ইনিই হচ্ছেন মাহদী। তখন সবাই মাহদীর সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের আনুগত্য প্রকাশ করতে শুরু করলো।
সেদিন ঘটনার সময় মসজিদের ঠিক বাইরে ছিলেন আরেক মাদ্রাসা ছাত্র আবদুল মোনায়েম সুলতান। কী ঘটছে তা জানতে তিনি মসজিদের ভেতরে ঢুকলেন।
"হারাম শরিফের ভেতর সশস্ত্র লোকজন দেখে লোকজন খুব অবাক হয়ে গেল। সেখানে এরকম দৃশ্য দেখতে তারা অভ্যস্ত নয়। কোন সন্দেহ নেই যে, এই দৃশ্য দেখে সবাই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। এটা ছিল খুবই আপত্তিকর একটি ঘটনা।"
লড়াই শেষে ধরা পড়া জঙ্গিদের কয়েকজন। এদের অনেককেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionলড়াই শেষে ধরা পড়া 

সন্ত্রাসী 

 কয়েকজন। এদের অনেককেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
বিদ্রোহীদের নেতা জোহাইমান পবিত্র কাবাকে ঘিরে একটি অবরোধ তৈরির নির্দেশ দিলেন। মসজিদের মিনারগুলিতে জোহাইমান বন্দুকধারীদের অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দিলেন, যাতে কেউ হামলা করলে তাদের প্রতিরোধ করা যায়।
সৌদি পুলিশ বাহিনীর একটি দল প্রথম এগিয়ে এলো কী ঘটছে দেখতে। বন্দুকধারীদের দৃষ্টিতে সৌদি শাসকগোষ্ঠী হচ্ছে দুর্নীতিগ্রস্থ, নৈতিকভাবে দেউলিয়া এবং পাশ্চাত্য দ্বারা কলুষিত। কাজেই সৌদি পুলিশকে দেখা মাত্র তারা গুলি চালাতে শুরু করলো। অনেকেই নিহত হলো। শুরু হলো কাবা এবং হারাম শরিফকে ঘিরে অবরোধ।
মার্ক হেমলি তখন সৌদি আরবের মার্কিন দূতাবাসে একজন 'পলিটিক্যাল অফিসার' হিসেবে কাজ করেন। তার দফতর ছিল জেদ্দায়। ঘটনার পরই সৌদি সরকার এই খবর প্রচারের উপর পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। খুব কম লোকই জানতো কারা কী কারণে মসজিদ দখল করেছে। একজন মার্কিন হেলিকপ্টার পাইলটের কাছ থেকে ঘটনার প্রতি মূহুর্তের বিবরণ পাচ্ছিলেন হেমলি। হেলিকপ্টারটি মক্কার আকাশে চক্কর দিচ্ছিল। এতে ছিল সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা।
"যে বন্দুকধারীরা গুলি করছিল, তাদের হাতে খুবই ভালো অস্ত্র ছিল। বেশ ভালো ক্যালিবারের বন্দুক। তারা বেশ কিছু লোককে গুলি করে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়।"
"বন্দুকধারীদের মোকাবেলায় প্রথম চেষ্টাটা ছিল খুবই কাঁচা। অল্প সংখ্যাক ন্যাশনাল গার্ড এবং সামরিক বাহিনীর সদস্য প্রথম সেখানে গিয়েছিল। তারা বেশ সাহসী প্রচেষ্টা চালায়, কিন্তু তাদের সাথে সাথেই গুলি করে মেরে ফেলা হয়।"
সৌদি সরকার এরপর সেখানে হাজার হাজার সৈন্য এবং কমান্ডো পাঠায় মসজিদ পুনর্দখলের জন্য। পাঠানো হয় সাঁজোয়া যান। মক্কার আকাশে উড়তে থাকে যুদ্ধ বিমান।
কাবা এবং হারাম শরিফের ভেতরে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য সৌদি রাজপরিবার দেশটির ধর্মীয় নেতাদের কাছে অনুমতি চাইলেন। পরবর্তী কয়েকদিনে সেখানে তীব্র লড়াই শুরু হলো। সৌদি সরকারি বাহিনী একের পর এক হামলা চালাতে লাগলো। মসজিদের একটি অংশ বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হলো।
আবদুল মোনায়েম সুলতান বর্ণনা দিচ্ছিলেন সেই লড়াইয়ের।
"সারা রাত ধরেই গোলাগুলি আর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরদিন ভোর পর্যন্ত এভাবে গোলাগুলি চললো। হারাম শরিফের মিনার লক্ষ্য করে গোলা ছোঁড়ার দৃশ্যও আমি দেখেছি। মক্কার আকাশে সার্বক্ষণিকভাবে হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখেছি।"
মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আল কাহতানি এই লড়াইয়ের পুরোভাগে ছিলেন। নিজের চোখে তা দেখেছেন আবদুল মোনায়েম সুলতান।
কাবাকে ঘিরে মক্কা নগরী : ইসলামের পবিত্রতম স্থানছবির কপিরাইটKARIM SAHIB
Image captionকাবাকে ঘিরে মক্কা নগরী : ইসলামের পবিত্রতম স্থান
"আমি মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আল কাহতানিকে দৌড়াদৌড়ি করে নিহত সেনাদের অস্ত্র কুড়িয়ে নিতে দেখেছি। এসব অস্ত্র তিনি তাদের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন, যারা তাদের অস্ত্র হারিয়েছে। বা যাদের গুলি ফুরিয়ে গেছে।"
"দ্বিতীয় দিন আমি তার চোখের নীচে দুটি ছোট আঘাতে চিহ্ন দেখলাম। তার পরনের জোব্বায় গুলি লেগে যেন ছিদ্র হয়ে গিয়েছিল। তার বিশ্বাস ছিল, তিনি নিজেকে যে কোন বিপদের সামনে দাঁড় করাতে পারেন, কারণ তিনি নাকি অমর। কারণ তিনি হচ্ছেন মাহদী।"
আবদুল মান্নান সুলতান সেই লড়াইয়ের মধ্যে বিদ্রোহীদের নেতা জোহাইমেনকেও কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান:
"আত্মরক্ষার জন্য আমরা কাবা'র পেছনে গিয়ে আশ্রয় নিলাম। কারণ ঐ জায়গাটা অনেক বেশি নিরাপদ ছিল। তিনি সেখানে বড়জোর আধঘন্টা বা ৪৫ মিনিটের মতো ঘুমালেন। তার মাথা ছিল আমার পায়ের ওপর। তাঁর স্ত্রী পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর স্ত্রী সারাক্ষণই পাশে ছিলেন, এক মূহুর্তের জন্যও তাকে ছেড়ে যাননি। কিন্তু লড়াই যখন তীব্র হয়ে উঠছিল, তখন গোলাগুলির প্রচন্ড শব্দে তিনি জেগে উঠেন। তাকে ডাকছিল তার সহযোদ্ধারা। তিনি অস্ত্র নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেলেন।"
সৌদিরা এর মধ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল মসজিদ পুনর্দখলের। বলছিলেন মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা মার্ক হেমলি।
"সৌদি বাহিনীর কিছু এপিসি মূল মসজিদ চত্ত্বরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছিল। তারা ঢুকতেও পেরেছিল। কিন্তু জোহাইমানের লোকজন বেশ ভালো কৌশল নিয়েছিল। তাদের কাছে মলোটভ ককটেল ছিল। তারা মলোটভ ককটেল ছুঁড়ে পারে এই এপিসির ওপর।"
শেষ পর্যন্ত সৌদি বাহিনীর সাঁজোয়া গাড়ি মসজিদ চত্বরে ঢুকলো। তারা মসজিদের দ্বিতীয় তলার গ্যালারিগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিল। বেশিরভাগ বন্দুকধারী জঙ্গী তখন মসজিদের ভুগর্ভের করিডোরে গিয়ে আশ্রয় নিল। সেই অন্ধকার জায়গা থেকেই তারা পরবর্তী কয়েকদিন ধরে লড়াই করে গেল।
লড়াই আরও তীব্র হয়ে উঠলো। সৌদি সরকারি বাহিনী তীব্র গোলা বর্ষণ শুরু করলো। এই প্রচন্ড গুলির মুখে সবাই ভূগর্ভস্থ কামরায় গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হলো।
কিন্তু তারপরই খবর আসলো, এই কথিত ইমাম মাহদী নিজেই গুলিবিদ্ধ এবং মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। অথচ তিনি যদি সত্যিই মাহদী হন, এমনটি হওয়া অসম্ভব!
সেই সময়ের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন আবদুল মোনায়েম সুলতান।
"মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ তখন দ্বিতীয় তলায়। যখন তার গায়ে গুলি লাগে, তখন লোকজন চিৎকার করে বলতে থাকে, ইমাম মাহদী আহত হয়েছেন! ইমাম মাহদী আহত হয়েছেন! কেউ কেউ তাঁর দিকে দৌড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তাঁকে উদ্ধারের জন্য। কিন্তু প্রচন্ড গোলাগুলির জন্য কেউ আগাতে পারছিল না। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের পিছু হটতে হয়। কিছু লোক নিচে যায় জোহেইমানকে দেখতে। আমি তাকে জানালাম, ইমাম মাহদী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু জোহেইমান সবাইকে বললেন, লোকের কথা বিশ্বাস করো না। ওরা আসলে দলত্যাগী বিশ্বাসঘাতক!"
মক্কাকে ঘিরে এই অবরোধের অবসানের জন্য সৌদিরা তখন ফরাসী সামরিক অধিনায়কদের সঙ্গে শলাপরামর্শ শুরু করলো। ফরাসী বিশেষ বাহিনীর এই অধিনায়কদের গোপনে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। তারা পরামর্শ এবং অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছিল। এরা মসজিদের ভুগর্ভে যেখানে জঙ্গীরা লুকিয়ে আছে, সেখানে বিপুল পরিমাণ সিএস গ্যাস ছাড়ার পরামর্শ দিল।
আবদুল মোনায়েম সুলতান নিজেও তখন সেই গ্যাস হামলার শিকার হন।
"সেখানে বাতাসে তীব্র কটু গন্ধ পাচ্ছিলাম আমরা, সেখানে থাকাটা খুবই কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। হয়তো পোড়া টায়ারের গন্ধ, কিংবা যারা মারা গেছে, তাদের দেহের পচা গন্ধ ভাসছিল সেখানে। সেই সঙ্গে সেখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমরা বুঝতে পারছিলাম, আমরা মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছেছি। গ্যাসে আমাদের শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছিল। আমি জানিনা, কিভাবে আমি সেখান থেকে বেঁচে গেলাম।"
শেষ পর্যন্ত যে জঙ্গীরা বেঁচে ছিল, তারা আত্মসমর্পণ করলো। এই অবরোধ চলেছিল দুই সপ্তাহ ধরে।
পরে জঙ্গীদের নেতা জোহেইমান সহ ৬৩ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। অন্যদের জেল হয়।
সৌদি কর্তৃপক্ষ নিহত তথাকথিত ইমাম মাহদী লাশের একটি ছবি প্রকাশ করে। শত শত মানুষ ঐ যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। আহত হয়েছিল প্রায় এক হাজার। হারাম শরিফের বড় একটি অংশই এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে পবিত্রতম অংশ, কাবা অক্ষত ছিল।
"লড়াইয়ের পর মসজিদের অবস্থা দেখে আমার মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমার মনে হচ্ছিল, যেন আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ইসলামের এই পবিত্রতম মসজিদে কেমন করে এটা ঘটতে পারলো। এরকম একটা মসজিদকে কিভাবে তারা যুদ্ধক্ষেত্র পরিণত করতে পারলো। আর সবচেয়ে বেশি যেটা খারাপ লাগছিল, যে মসজিদে এত লোক আসতো, সেটা এখন একেবারে ফাঁকা!"
এই ঘটনার পর সৌদি রাজপরিবার অতিমাত্রায় কট্টর রক্ষণশীল ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তারা সব ধরণে সংস্কার বন্ধ করে দেয়। জিহাদে উৎসাহ যোগাতে শুরু করে।
মক্কার ওপর এই দুঃসাহসিক হামলা পরবর্তী বছরগুলোতে ওয়াহাবী 

সন্ত্রাসীদের

 নতুন প্রজন্মকে আরও অনেক নতুন হামলায় অনুপ্রাণিত করেছিল।
জুলফিকার আলি ভুট্টো পাকিস্তানের রাজনিতীক

Image result for জুলফিকার আলি ভুট্টোইতিহাসের সাক্ষী

১৯৭৯ সালের চৌঠা এপ্রিল পাকিস্তানের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় রাওয়ালপিন্ডির কারাগারে।
তার এক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার ষড়যন্ত্র করার দায়ে দেশটির সেনা প্রশাসন তার প্রাণদণ্ডাদেশ দেয়।
সেসময় রাওয়ালপিণ্ডি কারাগারের প্রধান ছিলেন ব্রিগেডিয়ার রাহাত লতিফ।
ইতিহাসের সাক্ষী অনুষ্ঠানে শুনুন জেলপ্রধানের মুখে মিঃ ভুট্টোর জীবনের শেষ দিনগুলোর কথা।
zulfikar_ali_bhuttoছবির কপিরাইটBBC
Image captionএক জনসভায় ভাষণদানরত জুলফিকার আলি ভুট্টো
মিঃ ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝোলানোর সেই রাতের কথা বলতে গিয়ে ব্রিগেডিয়ার রাহাত লতিফ বলছেন, কারারক্ষীরা যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাবার জন্য আসে তখন তিনি সম্ভবত কড়া ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন।
তাকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ফাঁসিকাঠের কাছাকাছি। কারারক্ষীদের সাহায্য নিয়ে তিনি উঠে দাঁড়ানোর পর বেঁধে দেওয়া হয়েছিল তার হাত।
ব্রিগেডিয়ার লতিফ বলছেন - "উনি বলেছিলেন ‘আমাকে ছেড়ে দাও - ব্যথা লাগছে- তাড়াতাড়ি সব শেষ করে ফেলো’। ওটাই ছিল মিঃ ভুট্টোর শেষ কথা।"
zulfikar_ali_bhuttoছবির কপিরাইটAP
Image captionমি. ভুট্টো ছিলেন পাকিস্তানের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনীতিক
জুলফিকার আলি ভুট্টো ছিলেন পাকিস্তানের অন্যতম সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিক।
কিন্তু সামরিক বাহিনি ১৯৭৭ সালে তাঁকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে এবং তাকে বিচারের কাঠগড়ায় তোলে।
তার বিরুদ্ধে আরেকজন রাজনীতিকের হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার যে অভিযোগ আনা হয়, সেই অভিযোগ তিনি আগাগোড়া অস্বীকার করেছেন। কিন্তু বিচারে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
রাওয়ালপিন্ডি জেলে বসেই তিনি তার সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেন।
zulfikar_ali_bhuttoছবির কপিরাইটAFP
Image captionজুলফিকার আলি ভুট্টোর কবর
মিঃ লতিফ বিবিসিকে বলেছেন মিঃ ভুট্টো কারাগারে খুব পড়াশোনা করতেন। তাকে খাবার পাঠাত তার পরিবার।
তবে চিকিৎসকরা প্রথমে তা পরীক্ষা করে তবে তাকে খেতে দিতেন।
মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে তিনি যে আপিল করেছিলেন তা পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্ট খারিজ করে দেবার পর এসব সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ব্রিগেডিয়ার রাহাত লতিফ বলছেন তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত মিঃ ভুট্টো মনে হয়েছে নিশ্চিত ছিলেন যে তাকে ফাঁসির দড়িতে সত্যি সত্যি ঝোলানোর সাহস কারো হবে না।
bhutto_familyছবির কপিরাইটAP
Image captionস্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সাথে জুলফিকার আলি ভুট্টো
তার মৃত্যুদণ্ড যেদিন কার্যকর হয় সেদিন কারাগারে তার সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের পর তার স্ত্রী নুসরাত ও কন্যা বেনজির তার প্রাণভিক্ষার আবেদন জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের কাছে।
তবে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং ওইদিনই দিবাগত রাত দুটোয় জুলফিকার আলি ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
গাদ্দাফির শাসনকালে কেমন ছিল লিবিয়ার জীবন?

Related imageগাদ্দাফির শাসনকালে কেমন ছিল লিবিয়ার জীবন?


লিবিয়ার সাবেক নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফিছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionলিবিয়ার সাবেক নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি
এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে ১৯৬৯ সালের সেপ্টেম্বরে লিবিয়ার ক্ষমতা দখল করেছিলেন ক্যাপ্টেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি এবং আরো কিছু তরুণ সামরিক কর্মকর্তা। রাজাকে উৎখাত করে দেশটিকে একটি প্রজাতন্ত্র বলে ঘোষণা করেছিলেন তারা।
পরবর্তী ৪২ বছরে এই গাদ্দাফিই কঠোর হাতে তার বিরোধীদের দমন করে হয়ে উঠেছিলেন লিবিয়ার একচ্ছত্র স্বৈরশাসক।
গাদ্দাফি-বিরোধীদের একজন ছিলেন জাবালা মাতার - দেশ ছেড়ে পালালেও তাকে শেষ পর্যন্ত গাদ্দাফি বিরোধিতার জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছিল তাকে। তার পুত্র হিশাম মাতার এখন একজন খ্যাতনামা লেখক । তারই সাথে কথা বলেছেন বিবিসির লুইস হিদালগো, শুনতে চেয়েছেন গাদ্দাফির শাসনাধীন লিবিয়ায় তার বেড়ে ওঠার গল্প।
"লিবিয়ায় বিপ্লব হবার পর প্রথম দিনগুলোতে এ ব্যাপারে মানুষের প্রতিক্রিয়া ছিল ইতিবাচক" - বলছিলেন হিশাম মাতার।
"আমার বাবা তখন ছিলেন তরুণ এবং রাজতন্ত্রবিরোধী, তাই তিনি রাজাকে সম্মান এবং পছন্দ করলেও লিবিয়া যে একটি প্রজাতন্ত্র হতে যাচ্ছে, এতে তিনি উল্লসিত ছিলেন। অবশ্যই প্রজাতন্ত্র বলতে তিনি বুঝতেন আধুনিকতা, পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র, এবং আইনের শাসন।"
হিশামের বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন কর্ণেল।
১৯৬৯ সালে বিপ্লবের সময় গাদ্দাফি ও তার সহযোগীরাছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image caption১৯৬৯ সালে বিপ্লবের সময় গাদ্দাফি ও তার সহযোগীরা
যখন অভ্যুত্থানের খবর বেরোয়, তিনি তখন লন্ডনে লিবিয়ার দূতাবাসে কাজ করতেন। তিনি দেশে ফিরে আসার পর তাকে এবং আরো অনেক সিনিয়র অফিসারকে গ্রেফতার করলো নতুন শাসকরা।
"তবে আমার বাবা বুঝতে পেরেছিলেন কেন এটা করা হচ্ছে। কারণ অভ্যুত্থানের পর এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। ছয় মাস পর তাদের মুক্তি দেয়া হলো।"
"এর পরের দু-তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৭২ সাল নাগাদ এটা আমার বাবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে নতুন শাসকদের মানুষের অধিকার এবং বিচার বিভাগের প্রতি কোন সম্মানবোধ নেই। বিশেষ করে যারা তাদের সমালোচক তাদের প্রতি তো নয়ই।"
লিবিয়ায় মুয়াম্মার গাদ্দাফির স্বৈরশাসনের সেই ছিল সূচনা।
"তারা মনে করতো এ মুহুর্তটা অন্য যে কোন ঐতিহাসিক মুহুর্তের মতোই - যাতে অতীতের লক্ষণগুলো সব দৃশ্যমান থাকে।"
স্ত্রীর সাথে গাদ্দাফিছবির কপিরাইটMICHELE LAURENT
Image captionস্ত্রীর সাথে গাদ্দাফি
"লিবিয়ায় ঔপনিবেশিক শাসনের যে অভিজ্ঞতা তা ছিল ভয়াবহ। যেখানে অসংখ্য লোককে হত্যা করা হয়েছে, অনেকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে প্রকাশ্যে। "
"গাদ্দাফির সময়ও - আগের চেয়ে কম সংখ্যায় হলেও - ঠিক একইভাবে প্রকাশ্যে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হতো।"
জেল থেকে মুক্তি পাবার পর হিশামের বাবাকে জাতিসংঘে চাকরি দিয়ে পাঠানো হলো। এর পরের বছর হিশামের জন্ম হয় নিউইয়র্কেই। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তারা সেখানেই ছিলেন। এর পর মি. মাতার পদত্যাগ করেন এবং স্ত্রী ও দুই পুত্রসহ লিবিয়ায় ফিরে আসেন।
কেন তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন?
"আমার মনে আমার বাবা বুঝেছিলেন যে নতুন এই শাসকগোষ্ঠী এতই খারাপ যে এদের পক্ষ নিয়ে কাজ করা যায় না। কিন্তু তারা তখনও এতটা খারাপ ছিল না যে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে দেশে ফিরে এসে বসবাস করা যাবে না।"
গাদ্দাফির সাথে সিরিয়ার হাফেজ আল আসাদ এবং ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionগাদ্দাফির সাথে সিরিয়ার হাফেজ আল আসাদ এবং ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত
"আমার বাবা লিবিয়ার জীবন ভালোবাসতেন। তার অনেক কারণও ছিল। আমাদের ছিল একটা বড় যৌথ পরিবার। প্রাকৃতিক দৃশ্য ছিল খুবই সুন্দর। আমাদের বাড়ি ছিল সমুদ্রের ধারে।"
"দেশে ফিরে আমার বাবা একেবারেই অন্য ধরণের কাজে যোগ দিলেন। তিনি নিজে একটা ব্যবসা শুরু করলেন। লিবিয়ায় বাস করলেও তার সাথে সরকারের কোন সংশ্রব ছিল না।"
কিন্তু পরের ১০ বছরে দেশের অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হতে লাগলো। ১৯৭০ দশকের শেষ দিকে প্রকাশ্যে লোকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা শুরু হলো।
মিশরের প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেল নাসেরের সাথে মুয়াম্মার গাদ্দাফিছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionমিশরের প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেল নাসেরের সাথে মুয়াম্মার গাদ্দাফি
হিশামের তখন বয়েস অনেক কম - কিন্তু লিবিয়ার সেই সময়টার অনেক কিছুই তার মনে আছে।
"যা যা আমার মনে আছে সেগুলোই হলো এই একনায়কতন্ত্রের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য - যা আমি পরে উপলব্ধি করতে পেরেছি।"
"সব একনায়কতন্ত্রই চায় আপনার ব্যক্তিগত জীবনের ভেতরে প্রভাব বিস্তার করতে। গাদ্দাফির প্রশাসনের এ ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগ এবং নৈপুণ্য ছিল। কাজেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম কিভাবে সবকিছুই একেবারে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে।"
"সিনেমা বন্ধ, থিয়েটার বন্ধ । ফুটবল খেলাও বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন । কাজেই সাথারণ লোকের জন্য কোন কিছুকে উপলক্ষ্য করে একসাথে হওয়া ছিল এক বিরাট সমস্যা।"
লিবিয়ার বিপ্লবের প্রথম দিকে ভাষণ দানরত গাদ্দাফিছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionলিবিয়ার বিপ্লবের প্রথম দিকে ভাষণ দানরত গাদ্দাফি
"আমার মনে আছে যখন তারা বাদ্যযন্ত্র নিষিদ্ধ করলো, তখন ট্রাক ভর্তি করে সেনাবাহিনী পাঠিয়ে দেয়া হলো। কারণ গাদ্দাফি হঠাৎ করেই ঘোষণা করলেন, বাদ্যযন্ত্র হচ্ছে লিবিয়ার বিশুদ্ধ সংস্কৃতির ওপর বিদেশী প্রভাব বিস্তারের একটা উপায়।"
"তখনকার দিনে যেসব বাদ্যযন্ত্র লোকে বাজাতো তার বেশিরভাগই ছিল ইউরোপিয়ান। সেগুলো সব শহরের এক খোলা জায়গায় জড়ো করা হলো, এবং আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হলো। আমার সেই দৃশ্য খুব স্পষ্টভাবে মনে আছে।"
"আমার আরো মনে আছে একবার একই ভাবে ট্রাক পাঠানো হলো সব বইয়ের দোকান থেকে বই তুলে নিয়ে যাবার জন্য।"
"এরকম যে কোন কিছুরই - যা স্বৈরশাসক ব্যক্তিগতভাবে অনুমোদন করতেন না - তার এ পরিণতি হতো।"
সৌদি বাদশা ফয়সল, মিশরের প্রেসিডেন্ট নাসের এবং ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদুল রহমান ইরিয়ানির সাথে গাদ্দাফিছবির কপিরাইটKEYSTONE
Image captionসৌদি বাদশা ফয়সল, মিশরের প্রেসিডেন্ট নাসের এবং ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদুল রহমান ইরিয়ানির সাথে গাদ্দাফি
হিশামের একজন চাচা - যিনি একজন ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ছিলেন -তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার জিজ্ঞাসাবাদ টিভিতে প্রচার করা হয়েছিল।
মৃত্যুদন্ড কার্যকর করাও দেখানো হতো টিভিতে। অবশ্য হিশামকে তা দেখতে দেয়া হতো না।
"কিন্তু আমার খুব ভালোভাবেই মনে আছে যে আমার আশপাশের সবাই এটা দেখেছে। এবং এগুলো নিয়ে বড়দের মধ্যে সাংকেতিক ভাষায় কথা হতো। "
"এটা ছিল এমন - যেন পুরো জাতিই একটা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছে।"
হিশাম বলেন, তার মা-ই প্রথম সিদ্ধান্ত নেন যে তাদের দেশ ছাড়তে হবে। এটা ছিল ১৯৭৯ সালের কথা।
জর্ডনের বাদশা হোসেন ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের সাথে গাদ্দাফিছবির কপিরাইটBETTMANN
Image captionজর্ডনের বাদশা হোসেন ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের সাথে গাদ্দাফি
হিশামের বাবা তখন একজন সফল ব্যবসায়ী, এবং তিনি তার মতামত প্রকাশ করতে ভয় পেতেন না। তার ওপর নজর রাখা হচ্ছিল। কিন্তু তার মায়ের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা ছিল তার দুই সন্তানকে নিয়ে - হিশাম এবং তার ভাই।
"হ্যাঁ, কারণ এটা ছিল সেই সময়টা যখন স্কুলগুলোকে সামরিকায়ন করা হচ্ছিল। যেমন - এক সপ্তাহের মধ্যে আমার ভাইয়ের স্কুলে যাবার পোশাক পাল্টে গেল। আগের সপ্তাহে তার ছিল স্বাভাবিক স্কুল ইউনিফর্ম - পরের সপ্তাহে সেটা হয়ে গেল সামরিক ইউনিফর্ম। মাত্র ১৩-১৪ বছর বয়েসে তার সামরিক ট্রেনিং শুরু হয়ে গেল।"
"সে সময় চাদের সাথে লিবিয়ার যুদ্ধ চলছে এবং ১৬-১৭ বছরের ছেলেদের যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছিল। এসব ঘটনা দেখে মা দেশ ছাড়ার জন্য মনস্থির করে ফেললেন।"
কয়েকবার চেষ্টার পর অবশেষে হিশাম এবং তার ভাইকে নিয়ে দেশ ছাড়লেন তাদের মা। তার স্বামীর জন্য অবশ্য দেশ ছাড়তে আরো অনেকটা সময় লাগলো।
"বাবার দেশ থেকে বেরুতে প্রায় এক বছর লেগেছিল। তিনি চাদ সীমান্ত দিয়ে লিবিয়া ছেড়ে পালিয়েছিলেন। প্রায় পুরোটা পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয়েছিল।"
মুয়াম্মার গাদ্দাফিছবির কপিরাইটDANIEL SIMON
Image captionমুয়াম্মার গাদ্দাফি
সেখান থেকে মিশরে গিয়ে স্ত্রী-পুত্রের সাথে মিলিত হলেন জাবালা মাতার। কিন্তু ওই এক বছরে তার চেহারায় অনেক পরিবর্তন হয়েছিল, তার চুল প্রায় সব পেকে সাদা হয়ে গিয়েছিল।
হিশামের পরিবার কায়রোতে বাস করা শুরু করলেন। দেশের জন্য মন খারাপ করলেও, হিশামের এখনো মনে আছে প্রথমবারের মত বাড়ির বাইরে ফুটবল খেলতে পারার আনন্দ।
অন্যদিকে এসময়টাতেই হিশামের বাবা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠলেন। তার জমানো অর্থ-সম্পদ তিনি কাজে লাগালেন গাদ্দাফির কর্মকান্ডের বিরোধিতা করার জন্য।
"এটা ধীরে ধীরে হয়েছিল। আমার মনে হয়, তিনি লিবিয়াকে দেখতেন একটা মানুষের মতন - যে সমস্যায় পড়েছে এবং যেন তাকে তার উদ্ধার করতে হবে।"
"এটা একটি জটিল ব্যাপার। একজন পিতা যখন একটা আদর্শের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হন, তখন তার পরিবারের জন্য ভালোবাসা যতই থাকুক, আপনি বুঝবেন যে তার একটা অন্য জীবন আছে। সেখানে অন্য ভিন্নমতাবলম্বীরা সব সময় বাড়িতে আসা-যাওয়া করছে। প্রতিদিনই অন্তত চারজন বা তারও বেশি লোক আমাদের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করছেন। কোন দিন যদি এমন হতো যে শুধু পরিবারের আমরা কয়েকজনই মাত্র একসাথে খেতে বসেছি - সেটা যেন একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল।"
গাদ্দাফি এটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে দেশের বাইরে বসেও যদি কেউ তার বিরোধিতা করে তাহলে তিনি তাকে খুঁজে বের করবেন। হিশাম বলছিলেন কিভাবে তারা প্রথম এই বিপদটা টের পেলেন।
ইয়াসির আরাফাত , জর্জ হাবাশ ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি নেতাদের সাথে গাদ্দাফিছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionইয়াসির আরাফাত , জর্জ হাবাশ ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি নেতাদের সাথে গাদ্দাফি
"আসলে বিপদের কথাটা মাথায় ছিল না এমন সময়ের কথা আমি মনে করতে পারি না। লিবিয়া ছেড়ে আসার আগের কিছুদিনও সেটা বোঝা যাচ্ছিল। আমাদের ফোন ট্যাপ করা হতো। আমাদের স্কুল থেকে ফিরে আসার সময় আমাদের অনুসরণ করা হতো।"
"আর মিশরে আসার পর বাবা হয়ে উঠলেন গাদ্দফির অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ। ১৯৮০র দশকে বিদেশে অবস্থানরত সবচেয়ে প্রভাবশালী গাদ্দাফিবিরোধীদের মধ্যে আমার বাবা ছিলেন অন্যতম।"
এর জন্য একটা মূল্যও দিতে হয়েছিল। হিশামের ভাই একবার সুইৎজারল্যান্ডে অপহরণের শিকার হতে হতে কোন মতে রক্ষা পেয়েছিলেন। তার বাবা জাবালা মাতার সাথে বন্দুক রাখতেন, কখনো কখনো গাড়ির নিচে পরীক্ষা করে দেখতেন বোমা রাখা হয়েছে কিনা।
"হ্যাঁ, ইউরোপে থাকার সময় এটা করতে হয়েছিল। কারণ এরকম ঘটনা ঘটেছিল। ইতালিতে, ইংল্যান্ডেও গাড়ি বোমা দিয়ে হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল। কাজেই বাবা অত্যন্ত সাবধানে চলাফেরা করতেন, একাধিক ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।"
"এটাই হলো নিয়তির পরিহাস যে আসলে মিশরে থাকার সময়ই বাবা নিরাপদ বোধ করতেন। কিন্তু ১৯৯০ সালে সেই দেশটিই প্রতারণা করে তাকে গাদ্দাফির সরকারের হাতে তুলে দেয়।"
১৯৯০ সালের মার্চ মাসে কায়রোতে তাদের এ্যাপার্টমেন্টে মিশরের গোপন পুলিশ হানা দেয়, এবং জাবালা মাতারকে নিয়ে যায়। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ। হিশামের বয়েস তখন ২০ এবং তিনি তখন লন্ডনে পড়াশোনা করছিলেন।
"তাকে বিমানে করে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়, এবং তার পর তার আর কোন হদিশ পাওয়া যায় নি। মিশর ও লিবিয়া উভয়েই বলতো, আমরা জানি না তিনি কোথায় আছেন। সেই থেকে আমরা এভাবেই আছি।"
গাদ্দাফি ও মিশরের প্রেসিডেন্ট নাসেরছবির কপিরাইটKEYSTONE-FRANCE
Image captionগাদ্দাফি ও মিশরের প্রেসিডেন্ট নাসের
এর পর মি. মাতারের পরিবার দুটি ছবি পান। তাতে বলা হয় জাবালা মাতারকে ত্রিপোলির কুখ্যাত আবু সালিম কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার পর আর কিছুই জানা যায় নি।
"কারাগার থেকে মি. মাতার যে সব চিঠি লিখেছিলেন, তা বেশ অস্বাভাবিক। তিনি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন কি ঘটেছিল, গ্রেফতারের পর কিভাবে তাকে নিয়ে আসা হলো। তিনি লিখেঝেন যে তার ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। লিখেছেন যে অনেক সময় এক বছর পর্যন্ত তিনি সূর্যের আলো দেখতে পান না।"
"তিনি তার কারাকক্ষের বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি যে এসব বর্ণনা করা উপভোগ করতেন তা নয়, কিন্তু এগুলোর থেকে আমাদের রেহাইও দিতেন না। আবার এগুলো পড়ে আমাদের যে কষ্ট হচ্ছে - সেটা বুঝে তার জন্য তিনি দু:খও প্রকাশ করতেন।"
"তিনি আমাদের বলতেন, এগুলোর জন্য কষ্ট না পেতে। বলতেন - আমাদের উচিত তার এই দুর্ভোগকে একটা শোকাবহ ঘটনা হিসেবে না দেখা। আমাদের মনে রাখা উচিত যে তিনি একদিক থেকে ভাগ্যবান - কারণ তার মধ্যে এগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো তেজ ছিল।"
হিশাম মাতার এবং তার পরিবারের এখনো জানা নেই যে ওই চিঠিগুলো লেখার পর তার বাবার কি ভাগ্যে কি ঘটেছে।
তাকে খুঁজে পাবার চেষ্টায় হিশাম গাদ্দাফির ছেলে সাইদের সাথে সাথেও দেখা করেছেন।
গাদ্দাফির পতন হয় ২০১১ সালে। তার পর হিশাম লিবিয়া গিয়েছিলেন, তার পিতাকে খুঁজে বের করতে।
তাকে তিনি খুঁজে পান নি, কিন্তু তার অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি 'দি রিটার্ন' নামে একটি বই লিখেছেন - সে বই পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে।