সাতচল্লিশে আসাম কীভাবে ভারত পেলো ?
Image result for আসামসাতচল্লিশে আসাম কীভাবে ভারত পেলো ?
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ করে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও প্রশ্ন ওঠে আসামের অংশ সিলেটের ভাগ্যে কী হবে।

মুসলমান আর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারতকে ভাগ করার যে দায়িত্ব পড়েছিল লর্ড মাউন্টব্যাটেনের ওপর।

১৯৪৭র ৩রা জুন এক ঘোষণায় তিনি সিলেটের ভবিষ্যৎ নির্ধারনের দায়িত্ব দেন স্থানীয় জনসাধারণের কাঁধে। সিদ্ধান্ত হলো গণভোট অনুষ্ঠানের।

এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ই জুলাই সিলেটে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে মোট ভোটার ছিল ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮১৫ জন। ভোট দিয়েছিল ৭৭ শতাংশ মানুষ।

২৩৯ টি ভোটকেন্দ্রে বড় কোনো ঝামেলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছিল বলেই জানা যায়। ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের ধারা ৩ অনুযায়ী সিলেটে গণভোট সংক্রান্ত কার্যক্রমের বৈধতা দেয়া হয়েছে।

দেশভাগের সময় ৫ম শ্রেণীর ছাত্র জকিগঞ্জের মোহাম্মদ নুরউদ্দীনের মনে রয়েছে সেই ভোটের কথা। মোহাম্মদ নূরউদ্দীন তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছিলেন করিমগঞ্জের প্রাথমিক স্কুলে।


ভোটে করিমগঞ্জের মানুষও আসাম ছাড়ার রায় দিলেও করিমগঞ্জের কিছু অংশ র্যাডক্লিফ লাইনে ভারতের আসামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

"আমরা বাইরাইয়া মিছিল দিছি করিমগঞ্জে। মসজিদ যেখানে ছিল সেখানে স্লোগান নাই। এইভাবে করছি। ভোটে আমরা করিমগঞ্জকেও পাইছি। এই যে সাড়ে তিন থানা গেল সবটা পাইছি। কিন্তু আমাদের নেতাদের অভাবেই কংগ্রেস বড়লাটের লগে মিল করিয়া নিয়া গেছে।"

কুশিয়ারা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে নূরউদ্দীন বলেন, তার নানা বাড়ী, ভগ্নীপতিসহ অনেক আত্মীয়ের বাড়ী পড়ে যায় করিমগঞ্জে আর তারা থাকেন পূর্ব বাংলায় বর্তমান জকিগঞ্জ এলাকায়।

"আত্মীয়স্বজন সবাই থাইকা গেছে। ইন্ডিয়ায় থাকছে। এখনো আছে। আমরার যাওয়া আসা নাই। তারাও আসে না।"


সিলেটের গণভোট দেখেছেন মাহতাবউদ্দীন আহমেদও। মনে করে বলেন সেই কিশোর বয়সে বড়দের সঙ্গে পাকিস্তানের পক্ষে কী স্লোগান দিতেন তারা।

"মুসলীম লীগের মার্কা কী- কুড়াল ছাড়া কী, পাকিস্তান জিন্দাবাদ-লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান, কায়দে আজম জিন্দাবাদ এইগুলা স্লোগান ছিল।"

মাহতাবউদ্দীন জানান ভোটের প্রচারে সিলেটে মুসলিম লীগের বড় নেতারা এসেছেন। তার মনে আছে সিলেটের শাহী ইদগায়ে মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহও এসেছিলেন।

দাবি করলেন গণভোটের প্রচারে এসে করিমগঞ্জে তাদের বাড়ীতে একবেলা খেয়েছিলেন তৎকালীন তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১২জন কর্মী।

"কংগ্রেসের মার্কা ছিল ঘর আর মুসলীম লীগের ছিল কুড়াল। হিন্দুদের মধ্যে নমোশূদ্ররা ছিল মুসলীম লীগের পক্ষে। আলেমদের একদল ছিল কংগ্রেসি। হুসেইন আহমেদ মাদানী উনি আর ওনার একটা গ্রুপ ছিল কংগ্রেসি।"


দেশভাগের ইতিহাসে সিলেটের গণভোট এক বিরল ঘটনা। এই ভোটে জয়ী হতে মুসলীম লীগের ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালায়। সিলেটের জনগণকে পাকিস্তানের পক্ষে ভোটদিতে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিল মুসলীম লীগ।

পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেয়া ফরজ ঘোষণা করে ফতোয়াও জারি করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইয়ে উল্লেখ রয়েছে গণভোটের জন্য শেখ মুজিবুর রহমান পাঁচশো কর্মী নিয়ে কলকাতা থেকে সিলেট এসেছিলেন।

শেখ মুজিব লিখেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুরোধে হিন্দু রায়বাহাদুর আরপি সাহা একাধিক লঞ্চ সিলেটে পাঠিয়েছিলেন মুসলীম লীগের পক্ষে। লিখেছেন সিলেটে গণভোটে জয়লাভ করে তারা আবার কলকাতা ফিরে যান।

শিক্ষাবিদ ও সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলীম সাহিত্য সংসদের সভাপতি অধ্যাপক মো. আব্দুল আজিজ তখন ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র।

তিনি বলেন, "মুসলমানদের জন্য গণভোট পরিচালনার জন্য একটা রেফারেন্ডাম বোর্ড হয়। সেই বোর্ডের সভাপতি হলেন আব্দুল মতিন চৌধুরী নামে একজন প্রবীণ নেতা। যিনি এককালে জিন্নাহ সাহেবের খুব ঘনিষ্টজন ছিলেন। আর সেক্রেটারি হয়েছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল হাফিজ যিনি বর্তমান অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেবের বাবা।"


তার কথায় সিলেটে ৬০ ভাগ মুসলিম থাকা সত্ত্বেও মুসলমানদের একটি অংশ কংগ্রেসপন্থী হওয়ায় ভোটের প্রচার প্রচারণার প্রয়োজন হয়।

"পাকিস্তানের পক্ষে পড়লো ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৯ ভোট আর ভারতে যোগদানের পক্ষে পড়লো ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪১ ভোট। মুসলীম লীগ ৫৫ হাজার ৫শ ৭৮ ভোট বেশি। এজন্য সিলেটিরা গর্ব অনুভব করতো যে আমরা বাই চয়েস পাকিস্তানে আসছি।"

১৯৪৭-এ সিলেটের ঐতিহাসিক গণভোটেই ঠিক হয় পূর্ব পাকিস্তানের একাংশের মানচিত্র।

কিন্তু গণভোটের রায় না মেনে মানচিত্রে দাগ কেটে করিমগঞ্জের কিছু অংশ ভারতকে দিয়ে দেয়ায় সিলেটের মানুষের কাছেও চির বিতর্কিত হয়ে যায় র্যাডক্লিফ লাইন।
সুলতান সালাহুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি ভবিষ্যৎবাণী এবং মুসলিম যুব সমাজ
Image result for সুলতান সালাহুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহিসুলতান সালাহুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি ভবিষ্যৎবাণী এবং মুসলিম যুব সমাজ
তিনি বলেছিলেন...
‘যে জাতির যুবকেরা সজাগ হয়ে যায়, কোন শক্তি তাদেরকে পরাজিত করতে পারে না’।
গত রাতের প্রেক্ষাপটে মনে হলো, যে জাতির সন্তানেরা জেগে ঘুমায় , তারা আদৌ কখনো সজাগ হবে কি? ভয়ে হয় সব হারিয়ে যাচ্ছে, সব কেড়ে নিচ্ছে শত্রুরা কখন ঘুম ভাঙ্গবে জাতির সন্তানেরা ?
তিনি আরো বলেছেন...
তুমি যদি একটি জাতিকে যুদ্ধ ছাড়া পরাজিত করতে চাও , তা হলে সেই জাতির যুবকদেরকে বুদ্ধিবৃত্তিক বিলাসিতায় ডুবিয়ে দাও। দেখবে, তারা এমনভাবে তোমাদের গোলামে পরিণত হবে যে, তারা আপন স্ত্রী-কণ্যা-বোনদেরকে তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে গর্ববোধ করবে । ইহুদী-খ্রিষ্টানরা আমাদেরকে এ ধারায়ই ধ্বংস করতে চাইছে’।
বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনে , ইহুদী-খ্রিষ্টানরা অাজ শতভাগ সফল, পূর্বে ইহুদী-খ্রিষ্টানরা মুসলমান আমীরদের হেরেমে মদ-নারী দিয়ে পাঠাতো অত্যন্ত সংগোপনে।যাতে কেউ আচঁ করতে না পারে, জাতির মোহাফেয আমীর তার ঈমান ও জাতির ভবিষ্যৎ বিক্রি করে গাদ্দারে পরিণত হয়েছে। ।এখন খোলা মাঠে মদ, নারী এনে জোড়সে মিউজিক ছেড়ে এলাকাবাসীদের জানান দিয়ে বেহায়াপণায় ডুবে জাতির ভবিষ্যৎ। পূর্বে হেরেমে যে সব সুন্দরী মেয়ে পাঠানো হতো, তারা সবাই হতো ইহুদী অথবা খ্রিষ্টান ।কিন্তু এখন যেসব মেয়েরা মুসলমান ছেলেদেরকে আমোদ-প্রমোদে ডুবিয়ে রাখে তারা সবাই মুসলমান । জাতির যুবকদের কাছে প্রশ্ন, এ লজ্জা কাদের?
সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেছেন...
“আমি একথা বলবো না, এই নারী আসক্তি ও মাদকাসক্তি তোমাদের আখিরাত নষ্ট করবে আর মৃত্যুর পর তোমরা জাহান্নামে যাবে। আমি বরং তোমাদের বুঝাতে চাই , এই চারিত্রিক ত্রুটিগুলো তোমাদের জন্য দুনিয়াটাকে জাহান্নামে পরিণত করবে। তোমরা যাকে জান্নাতের স্বাদ মনে করছো , তা মূলত জাহান্নামের আজাব। তোমরা সেই খ্রিষ্টানদের গোলামে পরিণত হবে, যারা তোমাদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তোমাদের পবিত্র কুরআনের পাতা অলি-গলিতে উড়বে এবং মসজিদগুলো পরিণত হবে ঘোড়ার আস্তাবলে।
ইতিহাসের এক কঠিন ক্রান্তিকালে অবস্থান করছি আমরা। প্রায় হাজার বছর পর উনার প্রতিটি কথা বাস্তবে পরিণত হয়েছে বরং উনি পরিস্থিতির যে ভয়াবহতা আশঙ্কা করে গেছেন তার চেয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি অতিক্রম করছি আমরা। নিচে সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি নসীহত দেওয়া হলো যা দিশেহারা জাতির জন্য নতুন দিশা...
“তোমরা যদি মযার্দাসম্পন্ন জাতির ন্যায় বেচেঁ থাকতে চাও, তা হলে আপন আদর্শ-ঐতিহ্য ভুলে যেও না। খ্রিষ্টানরা একদিকে তোমাদের উপর অত্যাচার করছে, অন্যদিকে ঘোড়াগাড়ির লোভ দেখাচ্ছে। মনে রেখো, তোমাদের সম্পদ হলো চরিত্র ও ঈমান। ওহে আমার জাতির যুবকগণ! তোমরা তোমাদের নীতি-আদর্শ রক্ষা করো। নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কর”।
কাজী নজরুল ইসলামের হিন্দু মহিলা বিবাহ
Image result for কাজী নজরুল ইসলামকাজী নজরুল ইসলামের হিন্দু মহিলা বিবাহ
বাঙালি মুসলমানগণ উনাদের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নক্ষত্রের নাম কাজী নজরুল ইসলাম। ব্রিটিশআমলে যখন বাঙালি মুসলিম সমাজ চরম হতাশায় নিমজ্জিত, তখন বাংলা ভাষায় হামদ-না’ত ও ইসলামী ভাবধারামণ্ডিত কবিতা লেখার সূত্রপাত করে তিনি বাংলার মুসলমান সমাজে নবজীবন দান করেন।
তবে কাজী নজরুল ইসলাম থেকে বাঙালি মুসলমান যা পেয়েছে, তা নজরুল-প্রতিভার বিচারে সিন্ধুর মাঝে বিন্দুও নয়। কারণ কাজী নজরুল ইসলাম বসবাস করতেন হিন্দুদের সমাজে এবং হিন্দু সমাজ, পরিবার এমনকি নিজগৃহে বসবাসকারী হিন্দু শাশুড়ির কটাক্ষ হজম করে তিনি তার অন্যান্য রচনার মাঝে মাঝে হামদ-না’ত রচনা করতেন। অর্থাৎ তিনি যদি হিন্দু সমাজে নিজেকে না সঁপে দিয়ে মুসলিম সমাজে থাকতেন, তাহলে তিনি তার পূর্ণ উদ্যমকে ইসলামী সাহিত্য উনার জন্য উৎসর্গ করতে পারতেন এবং সেক্ষেত্রে বাঙালি মুসলিম সাহিত্যের ইতিহাস নতুনভাবে লেখা হতে পারতো।
কাজী নজরুল ইসলাম যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তার খিদমত করেছিলেন সূফী জুলফিকার হায়দার। তার রচিত ‘নজরুল জীবনের শেষ অধ্যায়’ নজরুল গবেষকদের নিকট একটি অবশ্যপাঠ্য বই।
ফররুখ আহমদ ও গোলাম মোস্তফাদের ন্যায় সূফী জুলফিকার হায়দারও পাকিস্তান আমলের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি, কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম তার সম্পর্কে কিছুই জানে না। কারণ তিনি নিজে ছিলেন পীর সাহেবের হাতে বাইয়াত এবং সূফী, যার ফলে তাঁর কবিতাও ছিল ইসলামী ভাবধারাম-িত। ফলে আমরা বর্তমানে যেই স্বাধীন (!) বাংলাদেশ পেয়েছি, তাতে তাঁর অবদান মুছে ফেলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এদেশে ‘র’ কর্তৃক পরাধীন প্রকাশনা শিল্পের কারণে নজরুলকে নিয়ে লেখা তাঁর মূল্যবান বইটিও ছাপার অভাবে হয়ে পড়েছে দুষ্প্রাপ্য।

রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার একখানা অন্যতম সুন্নত মুবারক হচ্ছে লাইব্রেরী গঠন করা এবং কিতাবাদি ও বই সংগ্রহ করা। উনার অধীনস্থ গোলাম ও মুরীদ যাঁরা দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছেন, তাঁদেরকেও তিনি নিজ নিজ এলাকায় ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে লাইব্রেরী করা এবং দুষ্প্রাপ্য কিতাব সংগ্রহ করতে উৎসাহ মুবারক দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উৎসাহদান ও মুবারক ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ উনার বদৌলতে সূফী জুলফিকার হায়দার কর্তৃক রচিত ‘নজরুল জীবনের শেষ অধ্যায়’ বইটির একদম প্রথম সংস্করণের একটি অতীব দুষ্প্রাপ্য কপি (বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত, প্রকাশকাল ১৯৬৪ সাল) এই গোলামের সংগ্রহে এসেছে। বইটি থেকে কিছু উদ্ধৃতি তুলে ধরা হলো, যা বর্তমান প্রজন্মের পাঠকদের জানাটা খুবই দরকার-
“আমার মনে হয়, নজরুলের বিবাহ সংক্রান্ত ব্যাপারটি তাঁর জীবনের একটি বড় অভিশাপ। ‘বিদ্রোহী’র কবি কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত বা পারিবারিক জীবনে সাধারণতঃ বিদ্রোহী ছিলেন না এবং তা ছিলেন না বলেই তিনি তাঁর জীবনে হিন্দু কিংবা মুসলমান কোনো ধর্মেরই আচার অনুষ্ঠান পালন করে চলেননি। বাড়িতে তিনি ‘ভগবান’ এবং ‘জল’ বলতেন, আবার মুসলমানদের সামনে ‘আল্লাহ’ এবং ‘পানি’ বলতেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী ও শাশুড়ি একেবারে নির্ভেজাল হিন্দু আগেও ছিল এবং বরাবর আমি তাই দেখেছি। এই যে গোঁজামিলÑকবির মানসিক জীবনে এর চেয়েও বড় দুর্বলতা আর কিছু হতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না। এই পরিবেশেই তিনি একদিকে যেমন লিখেছেন শ্যামাসঙ্গীত, অপরদিকে তেমনি হৃদয় উজাড় করে রচনা করেছেন ইসলামী হামদ্, না’ত, গজল আর কবিতা। এ ব্যাপারে আমি যতটুকু জানি, ইসলামী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ লেখার জন্য তাঁকে প্রতিকুলতা সহ্য করতে হয়েছে যথেষ্ট। এমনকি তার শ্বশুরকুলের অনেকের কাছ থেকেÑবিশেষ করে শাশুড়ীর কাছ থেকে নির্মম বাক্যবাণ ও উপহাস সহ্য করতে হয়েছে। ...
এখানে দুই একটি ঘটনার উল্লেখ করছি। যে দিনের কথা বলছি তখন তিনি বাংলা সাহিত্যে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং দেশবাসী, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।
নজরুলের দুটি ছেলেÑসানি আর নিনী (কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধ) মুসলমানী বিধান অনুযায়ী আমি ওদের খতনা করাবার জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কবিকে রাজী করাতে পারিনি। তার কারণ অবশ্য সুস্পষ্ট। তাঁর শ্বাশুড়ী ও স্ত্রীর কাছে এই প্রস্তাব উত্থাপন করার শক্তিও নজরুলের ছিল না। আমি তখন তাঁকে বলেছিলাম, কাজীদা, আমিই ভাবী ও মাসীমাকে এ সম্পর্কে বলে দেখি।
এ প্রস্তাবে তিনি আমার প্রতি চটে গিয়েছিলেন। আমার প্রস্তাব কার্যকরী করা তাঁর পক্ষে সম্ভবপর ছিল না বলেই মনে হয় তিনি বিরক্তিবোধ করেছিলেন।
১৯৪০ সালের ‘ঈদুল আযহা’ উনার দিবসে কবি সানি ও নিনীকে সাথে নিয়ে আমার তদানীন্তন বাসভবন কলকাতার পার্ক সার্কাসে এসেছিলেন। তখন ওদের বয়স যথাক্রমে প্রায় দশ ও আট হবে। কিন্তু ওরা খাবার টেবিলে মুসলমানী কায়দায় খেতে অসুবিধা বোধ করছিলÑলক্ষ্য করলাম। তাছাড়া, আমি আরও লক্ষ্য করেছিÑআমার সাথে ওরা যে কয়েকবার শ্যামবাজার থেকে আমার ৮৪নং ঝাউতলা রোডের বাসভবনে এসেছে কিংবা ওয়াছেল মোল্লা বা কমলালয়ের দোকানে গিয়েছে, ততবারই কর্নওয়ালিস স্ট্রীটের ট্রামে ঠনঠনিয়া কালিবাড়ী অতিক্রম করার সময়ে আর পাঁচজন হিন্দুর মতোই এই ছেলে দুটিও চলন্ত ট্রাম থেকে দেবী কালীর উদ্দেশ্যে যুক্ত করে প্রণাম নিবেদন করেছে।
আমি ওরকম করতে তাদের বারণ করেছি। ওরা শুধু ছেলে মানুষের মতোই হেসেছে, কোনোই জবাব দেয়নি।
নজরুল ইসলামের ছেলেদের এই যে শিক্ষা আর তাঁর জীবনে এই যে গোঁজামিল, সেজন্য আমি বরাবর পীড়াবোধ করেছি।
নজরুলের বাড়িতে আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবস্থান করেছি। বাড়ির আবহাওয়া ও আচার ব্যবহার সব কিছুতে অতিমাত্রায় হিন্দুয়ানী লক্ষ্য করেছি। এমনও হয়েছেÑ আছর ও মাগরিব নামায আমাকে সেখানেই পড়তে হয়েছে। নামাযের জায়নামায বা অন্য কোনো ব্যবস্থাই সেখানে ছিল না। আলমারী থেকে টেনে এনে ধোয়া বড় তোয়ালে বিছিয়ে নামাযে দাঁড়িয়ে গেছি; এমনি সময়ে কবি-পতœীর দিদিমার (নানী) সন্ধ্যা আহ্নিকের কাঁসার-ঘণ্টা তিন তলার ছাদের চিলেকোঠায় বেঁজে উঠেছে। কবি-পতœীর দিদিমা ছিল গোঁড়া হিন্দু মহিলা। এই গোঁড়া হিন্দু বৃদ্ধা পূজা-আহ্নিক নিয়ে সারাটি দিনই মেতে থাকতো।
এ সব ঘটনা পরম্পরা কবির মনে কোনো জিজ্ঞাসা বা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে কিনা, তা তিনি মুখ ফুটে কোনো দিনই বলেননি। আমার মনে হয়, তিনি নিতান্ত নিঃসহায় নিরীহের মতোই পারিবারিক জীবনে লাগাম ছেড়ে দিয়েÑ যার যেমন খুশি, তেমনি চলোÑ এই নীতি অবলম্বন করেছিলেন।
এ ব্যাপারে বাধা তো এটুকুই ছিলো যে, নিজের নামটা শুধু বদলে দিয়ে হিন্দু হয়ে গেলেই হতো। অথবা তাঁর স্ত্রীকে মুসলিম স্বামীর মুসলিম স্ত্রী বানিয়ে নিতে পারতেন।
কিন্তু এ সবের কিছুই তিনি করলেন না। আমাদের মধ্যে এমনও কয়েকজন বিদগ্ধ সম্ভ্রান্ত প-িত ও রাজনীতিবিদ রয়েছেন, যারা হিন্দু মেয়ে বিবাহ করেছেন। কিন্তু তাদের বেলায় এহেন দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে কিনা জানি না। এ কি ভাগ্যের অদ্ভূত পরিহাস! আঁধার রাতে বাধার পথে রক্ত করি পথ পিছলÑএহের ক্ষুরধার বাণী যে কবির, তাঁর জীবনে গোঁজামিল কি করে সম্ভব হলো?
১৯৪০ সালের কথা। এ সময় একদিন নজরুল ইসলাম আমার বাড়িতে এসে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এক ওয়াক্ত নামায পড়ে ছিলেন। কিন্তু তাঁর বিবাহিত জীবনে আপন স্ত্রী, শাশুড়ী প্রভৃতি পরিবারের লোকদের সামনে কোনো সময় তিনি মহান আল্লাহ পাক ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করেছেনÑ এমন কথা বলতে পারার মতো আমি জানি, এমন কেউ নেই। কিন্তু ছেলেবেলা থেকে পল্টন জীবনের পূর্ব পর্যন্ত তাঁর পারিবারিক পরিবেশ ও ঐতিহ্যের তাগিদে তিনি যথাক্রমে মসজিদের খাদেম, মুয়াজ্জিন ও মোল্লার কাজ করেছেন এবং রীতিমতো নামায পড়েছেন।
আজ আমার কেবলি মনে হচ্ছে, নজরুল যদি তাঁর আপন ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্য অনুযায়ী পরিবেশ পেতেন, তবে হয়তো আজ তাঁর জীবনে এরূপ মর্মন্তুদ পরিণতি দেখবার দুর্ভাগ্য আমাদের হতো না।”
কবি জুলফিকার হায়দার সাহেব তার লেখায় বারবার কেবল একটি আফসোসই করেছেন, যদি কাজী নজরুল ইসলাম তার মুসলিম স্ত্রীকে ত্যাগ না করে হিন্দু স্ত্রী গ্রহণ না করতেন, তাহলে নজরুলকে তার আদর্শ ও ধর্মের সাথে সাংঘার্ষিক পরিবেশে বসবাস করতে হতো না। তাকে মস্তিষ্ক বিকৃতির কবলে পড়তে হতো না, কাজী নজরুলের এমন মর্মন্তুদ পরিণতি আমাদের দেখতে হতো না।
কিন্তু এজন্য নজরুলই কি কেবল দায়ী? কারণ নজরুল যেভাবে মুসলমান হিসেবে তার শত্রু চিনতে পারেনি, ঠিক সেভাবেই নজরুলের প্রথম স্ত্রী নার্গিসের বাড়ির লোকজনও মুসলমান হিসেবে তাদের শত্রু চিনতে পারেনি। নজরুলের প্রথম বিয়ে হয়েছিল সাইয়্যিদা নার্গিস আসার খানমের সাথে। সাইয়্যিদা নার্গিস আসার খানমের মামা আলী আকবর খান ছিলেন নজরুলের অন্তরঙ্গ বন্ধু।
আলী আকবর খান তিনি নজরুলের সাথে তার ভাগ্নীর বিয়েতে দাওয়াত দিয়েছিলেন বীরেন্দ্রনাথ সেন নামক তার এক হিন্দু ‘বন্ধু’কে। আলী আকবরের এই হিন্দু ‘বন্ধু’ ও তার মা বিরজাসুন্দরী দাওয়াত পেয়ে, বিয়ের আসরে উপস্থিত হয়ে বিয়ে ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। বিয়ের পরও তারা নানারকম উস্কানী দিয়ে নজরুলের মনকে বিষিয়ে তোলে। তারপর বাসর রাতে কুচক্রী বীরেন্দ্র সে নজরুলকে নিজের সাথে ভাগিয়ে নিয়ে যায় তাদের নিজেদের বাড়িতে। সেখানে লম্বা সফরে অসুস্থ নজরুলের ‘সেবা’য় নিয়োজিত হয় বীরেন্দ্রর ভাগ্নী আশালতা ওরফে প্রমীলা। এই প্রমীলাই পরবর্তীতে নজরুলের হিন্দু স্ত্রী হয়েছিল।
সুতরাং দোষ নজরুলের একার নয়, দোষ গোটা মুসলমান সমাজেরই। তারা কখনোই তাদের শত্রু চিনতে পারেনি, যে কারণে তারা যুগে যুগে হারিয়েছে তাদের রাজত্ব, তাদের সম্পদ, এমনকি নজরুলের মতো প্রতিভাও! নজরুলকে মুসলিম স্ত্রীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হিন্দু মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়ার ঘটনাটিকে শুধু একটি হিন্দু পরিবারের চক্রান্ত হিসেবে দেখলে হবে না, বরং এ ছিল হিন্দুদের জাতিগত চক্রান্ত। তারা চেয়েছিল, যেন নজরুলের প্রতিভা কোনো অবস্থাতেই মুসলমানদের উপকারে না আসে। এ কারণেই হিন্দুরা মুসলিম স্ত্রীর সাথে নজরুলের ঘর ভেঙে, তাকে হিন্দু মেয়ের হাতে গছিয়ে দিয়ে তাকে হিন্দু বলয়ে নিয়ে এসেছিল।
মুসলিমদের তাজা রক্তে এই ভারত মুক্তি পেয়েছে
মুসলিমদের তাজা রক্তে এই ভারত মুক্তি পেয়েছে
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নাকি মুসলিমদের কোন অবদান নেই। সেদেশের যেকোন শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক পড়লে ইহাই বোঝা যায়। আর এই মিথ্যাচারমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বহু উগ্রপন্থী হিন্দুই প্রশ্ন তোলে যে মুসলমানদের এই দেশে থাকা উচিৎ নয়, কারন তারা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহন করেনি।
সত্য ইতিহাস বলছে মুসলিমদের তাজা রক্তে এই ভারত মুক্তি পেয়েছে । জেল খাটা ১ কোটি মুসলমানের আত্ম বলি দান ও ফাঁসি হওয়া ৫ লক্ষ মুসলমানের প্রানের বিনিময়ে আজ ভারত স্বাধীন। সেই চেপে যাওয়া ইতিহাসের মুছে যাওয়া কিছু নাম আমি শেয়ার করলাম।
মাওলানা কাসেম সাহেব, উত্তর প্রদেশর দেওবন্ধ মাদ্রাসাকে ব্রিটিশ বিরোধী এক শক্তিশালী কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলেন । সেই দেওবন্ধ মাদ্রাসায় আজও কুরয়ানের তালিম দেওয়া হয়।
ভারতের ইতিহাসের পাতা ওল্টালে যাদের নাম অবশ্যই পাওয়া যায় তারা হলো– গান্ধী, সুভাষ চন্দ্র, অরবিন্দ, জোহরলাল, মতিলাল, প্রমুখ......।
কিন্তু এদের চেয়েও বেশী বা সমতুল্য নেতা আতাউল্লাহ বুখারী, মাওলানা হুসেন আহমাদ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা গোলাম হোসেন প্রমুখ..(এনারা বহু বার দীর্ঘ মেয়াদী জেল খেটেছেন) তাদের নাম ভারতের ইতিহাসে নাই।
ইংরেজ বিরোধী কর্যকলাপের জন্য যার নামে সর্বদা ওয়ারেন্ট থাকতো। সেই তাবারক হোসেনের নামও ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না।
তৎকালিন সময়ে সারা হিন্দুস্থানের কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। যার সংস্পর্শে আসলে হিন্দু-মুসলিম নব প্রান খুজে পেতেন, সেই হাকিম আজমল খাঁ কে লেখক বোধ হয় ভূলে গিয়েছেন।
মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল যার সাহায্য ছাড়া চলতে পারতেন ই না। যিনি না থাকলে গান্ধী উপাধিটুকু পেতেন না। সেই মাওলানা আজাদকে পর্যন্ত ইতিহাসের পাতা থেকে বাদ দেওয়া হল।
মাওলানা মুহম্মদ আলি ও শওকত আলি। ৫ বার দীর্ঘ মেয়াদী জেল খেটেছেন। ‘কমরেড’ ও ‘হামদর্দ’ নামক দুটি ইংরেজ বিরোধী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তাদের নাম ভারতের ইতিহাসের ছেড়া পাতায় জায়গা পায় না ।
খাজা আব্দুল মজীদ ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টার হন। জহরলালের সমসাময়িক কংগ্রেসের কর্মী ছিলেন। প্রচন্ড সংগ্রাম করার ফলে তার এবং তার স্ত্রী উভয়ের জেল হয়। ১৯৬২ সালে তার মৃত্যু হয়। ইতিহাসের পাতায়ও তাঁদের নামের মৃত্যু ঘটেছে।
ডবল A.M এবং P.H.D ডিগ্রিধারী প্রভাবশালী জেল খাটা সংগ্রামী সাইফুদ্দিন কিচলু। বিপ্লবী মীর কাশেম, টিপু সুলতান, মজনু শা, ইউসুফ… এরা ব্রিটিশদের বুলেটের আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলাও ইতিহাসের পাতা থেকে নিশ্চিহ্ন হলো কিভাবে..?
সর্ব ভারতীয় নেতা আহমাদুল্লাহ। তৎকালীন সময়ে ৫০ হাজার রুপি যার মাথার ধার্য করেছিল ব্রিটিশ রা। জমিদার জগন্নাথ বাবু প্রতারনা করে, বিষ মাখানো পান খাওয়ালেন নিজের ঘরে বসিয়ে । আর পূর্ব ঘোষিত ৫০ হাজার রুপি পুরষ্কার জিতে নিলেন।
মাওলানা রশিদ আহমদ। যাকে নির্মম ভাবে ফাঁসি দিয়ে পৃথিবী থেকে মুছে দিলো ইংরেজরা। ইতিহাসলেখক কেন তার নাম মুছে দিলেন ইতিহাস থেকে।
জেল খাটা নেতা ইউসুফ, নাসিম খাঁন, গাজি বাবা ইয়াসিন ওমর খান তাদের নাম আজ ইতিহাসে নেই কেনো…?
ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পরে, কুদরতুল্লাহ খানে মৃত্যু হল কারাগারে। ইতিহাসের পাতায় নেই তার মৃত্যু ঘটলো কিভাবে…?
সুভাষ চন্দ্র বসুর ডান হাত আর বাম হাত যারা ছিলেন..। ইতিহাসে তাদের নাম খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা হলেন আবিদ হাসান শাহনাওয়াজ খান, আজিজ আহমাদ, ডি এম খান, আব্দুল করিম গনি, লেফট্যানেন্ট কর্নেল, জেট কিলানি, কর্নেল জ্বিলানী প্রমুখ..। এদের অবদান লেখক কি করে ভুলে গেলেন…?
বিদ্রোহী গোলাম রব্বানী, সর্দ্দার ও হয়দার, মাওলানা আক্রম খাঁ, সৈয়দ গিয়াসুদ্দিন আনসার। এদের খুন আর নির্মম মৃত্যু কি ভারতের স্বাধীনতায় কাজে লাগেনি…?
বিখ্যাত নেতা জহুরুল হাসানকে হত্যা করলে মোটা অঙ্কের পুরষ্কার ঘোষনা করে ইংরেজ সরকার।
মাওলানা হজরত মুহানী এমন এক নেতা, তিনি তোলেন সর্ব প্রথম ব্রিটিশ বিহীন চাই স্বাধীনতা।
জেলে মরে পচে গেলেন মাওলানা ওবায়দুল্লাহ, তার নাম কি ইতিহাসে ওঠার মতো নয়…!?
হাফেজ নিশার আলি যিনি তিতুমীর নামে খ্যাত ব্রিটিশরা তার বাঁশেরকেল্লা সহ তাকে ধংব্বস করে দেয়…। তার সেনাপতি গোলাম মাসুমকে কেল্লার সামনে ফাঁসি দেওয়া হয়…।
কিংসফোর্ড কে হত্যা করতে ব্যার্থ ক্ষুদিরামের নাম আমরা সবাই জানি, কিংসফোর্ড হত্যাকরী সফল শের আলী বিপ্লবীকে আমরা কেউ জানিনা।
কলকাতার হিংস্র বিচার পতি জর্জ নরম্যান হত্যাকরী আব্দুল্লাহর নামও শের আলীর মতো বিলীন হয়ে আছে..।
বিখ্যাত নেতা আসফাকুল্লা। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বীর আব্দুস সুকুর ও আব্দুল্লা মীর এদের অবদান কি ঐতিহাসিকরা ভূলে গেছেন।?
এই পরিক্লপিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমি ধিক্কার জানাই…
যে সুর্যসেন -প্রীতিলতাকে সিলেবাসে বিপ্লবী হিসেবে দেখানো হচ্ছে, তারা আদতে ছিলো উগ্র হিন্দু, মুসলিমবিদ্বেষি

যে সুর্যসেন -প্রীতিলতাকে সিলেবাসে বিপ্লবী হিসেবে দেখানো হচ্ছে, তারা আদতে ছিলো উগ্র হিন্দু, মুসলিমবিদ্বেষি





৯ম-১০ম শ্রেনীর ২০১৮ এর 'বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা' বইয়ের ১০ম অধ্যায় 'ইংরেজ শাসন আমলে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন' ১৩৪-১৩৫ পৃষ্টায় সুর্যসেন-প্রীতলতাকে ইংরেজবিরোধী বিপ্লবী হিসেবে দেখানো হচ্ছে। অথচ তারা ছিলো তীব্র মুসলিমবিদ্বেষি ,উগ্র হিন্দু। 
সূর্যসেনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো উগ্র হিন্দুত্ববাদ অনুসারে এবং তার কথিত বিপ্লবী দলের মূল অংশে কখনই কোন কোন মুসলমানকে নেয়া হতো না।
এ সম্পর্কে ইতিহাস বলে-.....সূর্যসেনদের এই ‘গান্ধীরাজ’ আর পণ্ডিত মদন মোহন মালব্যদের ‘রামরাজ্য ছিল সমার্থক। সূর্যসেনের সাথীরা ছিল গান্ধীর ‘সত্যাগ্রহী সেনা’, আনন্দমঠের ‘বন্দেমাতরম’ মন্ত্রে উজ্জীবিত ও হিন্দু ভারতের স্বপ্ন-তাড়িত ‘সন্তান-সেনা’। যারা অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে অংশ নিয়েছিল, যারা জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে সূর্যসেনের সাথী ছিল, তাদের মধ্যে একজনও মুসলমান ছিল না। (সূত্র: বঙ্গভঙ্গ থেকে বাংলাদেশ, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, পৃষ্ঠা: ২৪৩-১২৪৪; পূর্ণেন্দু দস্তিদার, স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম, ১৪)
সূর্যসেনের দলের সদস্যদের উগ্রহিন্দুত্ববাদ দ্বারা আকৃষ্ট করা হতো।
....এ সম্পর্কে সূর্যসেনের দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব শ্রী পূর্ণেন্দু দস্তিদার তার “স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম” গ্রন্থে লিখেছে: “তখন ধর্মভাব বিশেষ প্রবল ছিল। স্কুল ও কলেজের ছাত্রদের মধ্যে প্রধানত হিন্দু মধ্যবিত্তশ্রেণীর ছাত্রদেরই তখন দলে আনা হত। ছাত্র ও যুবকদের নৈতিক চরিত্রের উন্নতির জন্য নিয়মিত ব্যায়াম, গীতা পাঠ, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের বই ও বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দ মঠ’ ইত্যাদি পড়ার ব্যবস্থা করা হত। (সূত্র পূর্ণেন্দু দস্তিদার, স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম, পৃ ১৮)..
সূর্যসেনের দলের সদস্যদেরকে হিন্দু দেবী কালীর মূর্তির সামনে বুকের রক্ত দিয়ে পূজা করতে হতো। ১৯৬২ সালে প্রকাশিত ‘কারাস্মৃতি’ গ্রন্থে কুন্দপ্রভা সেনগুপ্তা লিখেছে:
“কিছুদূর গিয়ে এক মন্দিরের কাছে দু’জনে পৌঁছলাম। দরজা খোলাই ছিল। মাস্টারদা ও আমি ভেতরে ঢুকলাম। তারপর সে টর্চ জ্বালাল। দেখলাম ভীষণাননা এক কালী মূর্তি। মাস্টারদা একহাত লম্বা একখানা ডেগার বার করে আমার হাতে দিয়ে বলল, মায়ের সামনে বুকের রক্ত দিয়ে পূজো কর। ওখানে বেলপাতা আছে। আমি বুকের মাঝখানের চামড়া টেনে ধরে একটুখানি কাটার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক ফোঁটা রক্ত বের হলো। তা বেলপাতায় করে মাস্টারদার কাছে নিয়ে গেলাম, সে বেশ স্পষ্ট করে বলল--মায়ের চরণে দিয়ে বল জীবনে বিশ্বাসঘাতকতা করব না। আমি অসংকোচে মায়ের চরণে রক্ত আর মাথা রেখে এ প্রতিজ্ঞা করলাম।” (সূত্র:কুন্দপ্রভা সেনগুপ্তা: কারাস্মৃতি-১৯৭৪) ..
সূর্যসেন ‘কংগ্রেস’ দলের সদস্য ছিলো। সে ছিলো চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ১৯৩০ সালে বোম্বেতে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় মুসলিম সম্মেলনে মাওলানা মুহম্মদ আলী মুসলমানদেরকে কংগ্রেস হতে দূরে থাকার আহবান জানান। তিনি কংগ্রেসের আন্দোলন সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন- “গান্ধী উগ্র সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান হিন্দু মহাসভার পক্ষে কাজ করছে। তার যাবতীয় কার্যক্রমের লক্ষ্য হলো হিন্দু রাজত্ব স্থাপন এবং মুসলমানদের পদানত করে রাখা।” (সূত্র: বঙ্গভঙ্গ থেকে বাংলাদেশ, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, পৃষ্ঠা: ২৪১) ....
উপরের দলিল দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় ঐ সময় মুসলমদের চরম বিরোধিতায় লিপ্ত ছিলো কংগ্রেস, যারা মুসলমানদের একঘরে করতে চাইছিলো। আর সেই কংগ্রেসের চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক হচ্ছে সূর্যসেন। এখন সূর্যসেন কাদের পক্ষে কাজ করবে সেটা না বুঝার কোন কারণ নেই।
------------------------------------------------------------------------------
সূর্যসেনের কথিত বিপ্লবী আন্দোলনের প্রধানটি বলতে হয় চট্টগ্রামের অস্ত্রগার লুণ্ঠন। এই অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করার জন্য বেছে নেওয়া হয় ১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল তারিখটিকে।এই ১৮ই এপ্রিল তারিখে অস্ত্রগার লুট করাই প্রমাণ করে সূর্যসেন ছিলো চরম মুসলিম বিরোধী চক্রান্তবাজ। তার কথিত বিপ্লবের মূল উদ্দেশ্যই ছিল মুসলিমমুক্ত অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করা।
কারণ ঐ দিন (১৮ই এপ্রিল, ১৯৩০) চট্টগ্রামে মুসলিম লীগ, জমিয়তুল ওলামা, মুসলিম যুব সমিতি ও মুসলিম শিক্ষা সমিতির এক যৌথ সম্মেলন শুরু হয়। সূর্যসেনের সাথে অস্ত্রগার লুট করার সময় যে ৬শ’ সন্ত্রাসী কাজ করে, যাদের প্রত্যেককে পরিধান করানো হয়, ঐ মুসলিম সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের মত পোষাক, তুর্কী টুপি। উদ্দেশ্য ছিলো অস্ত্রাগার লুটের পর সব দোষ পড়বে মুসলিমদের ঘাড়ে, এতে ব্রিটিশ বেঙ্গলে নিষিদ্ধ হবে মুসলিম রাজনীতি। উল্লেখ্য ঐ সময় কংগ্রেসের হিন্দুত্ববাদী কার্যক্রমকে প্রতিরোধ করতে বেশি সক্রিয় ছিলো পূর্ববঙ্গের মুসলিম নেতারা। মূলতঃ তাঁদেরকে ফাঁসানোর জন্যই পরিচালিত হয়েছিলো মুসলিম পোষাকে সূর্যসেনের অস্ত্রাগার লুট। (সূত্র: খন্দকার হাসনাত করিম : সন্ত্রাসবাদ-সাম্প্রদায়িকতা ও ষড়যন্ত্রের শতবর্ষপূর্তি, দৈনিক ইনকিলাব, ২৩শে মার্চ ১৯৯৪; বঙ্গভঙ্গ থেকে বাংলাদেশ, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, পৃষ্ঠা: ২৪৬-২৪৬)
মুসলমানদের ফাঁসানোর চক্রান্ত করা হলেও, শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যায় উগ্রহিন্দুরা, বেচে যায় নিরীহ মুসলমানরা।
সূর্যসেনদের ‘বিপ্লব’ আর গান্ধীর অসহযোগ, স্বরাজ, আইন অমান্য আন্দোলন প্রভৃতি সবই ছিল এই হিন্দু রাজত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। এই কারণেই শেরে বাংলা একে ফজলুল হক গান্ধী ও সূর্যসেনদের এই আন্দোলন তৎপরতাকে ‘গন্ডগোল’ বলে অভিহিত করেন। সূর্যসেনদের অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ১৭ দিন পর গান্ধী গ্রেফতার হলে এই বিষয়ের ওপর এক আলোচনায় শেরে বাংলা একে ফজলুল হক বলেন:
“ভারতের ৭ কোটি মুসলমানের ৭০ জনও কংগ্রেসের সমর্থক নয়। মি গান্ধী যে রকম গন্ডগোল সৃষ্টি করেছেন তাতে তাকে গ্রেফতার করে রাখার জন্য আমি ভারত সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। (বঙ্গভঙ্গ থেকে বাংলাদেশ, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, পৃষ্ঠা: ২৪৬; ভারত কি করে ভাগ হলো, বিমলানন্দ শাসমল, পৃষ্ঠা ১০৯)
উপরের বিশাল আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়-
১) সূর্যসেন ও তার সঙ্গীরা কখনই অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলো না, বরং মুসলিম বিরোধী উগ্রহিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলো।
২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে সূর্যসেনের সম্পর্কটা আসলে উল্টো। মানে সূর্যসেন হচ্ছে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ববঙ্গ) স্বাধীনতার সম্পূর্ণ বিরোধী।
৩) সূর্যসেনকে কমিউনিস্টরা নেতা হিসেবে মনে করে, এটা সম্পূর্ণ ভূল। কারণ সূর্যসেন কমিউনিস্ট ছিলো না, তবে তার অনুসারী উগ্রহিন্দুরা পরবর্তীতে এ অঞ্চলে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলো। তার অনুসারীই তাকে কমিউনিস্ট নেতা হিসেবে প্রচার করে, যা এখনকার কমিউনিস্টরা বুঝতে পারে না।
৪) বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক স্থাপনার নাম সূর্যসেন/প্রীতিলতা নামে হয়। এটা একটা হাস্যকর বিষয়। ১৯৭১ সালে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে তাদের নামে স্থাপনা তৈরী করলে যেমন বোকামি হবে, ঠিক তেমনি সূর্যসেন/প্রীতিলতা’র নামে স্থাপনা নির্মাণ করলেও ঠিক তেমন বোকামি ও হাস্যকর হবে। তাই সূর্যসেন/প্রীতিলতা’র নামে সকল স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা উচিত।