কল্পিত চরিত্রে নির্মিত পদ্মবত’ মুভি মুসলিম শাসককে কালিমালিপ্ত করার অপপ্রয়াস

কল্পিত চরিত্রে নির্মিত পদ্মবত’ মুভি মুসলিম শাসককে কালিমালিপ্ত করার অপপ্রয়াস

পদ্মবতীর পেছনের ইতিহাসঃ

পদ্মাবতী সিনেমাটি বানানো হয়েছে মধ্যযুগের কবি মালিক মোহাম্মদ জায়সীর মহাকাব্য ‘পদ্মাবত’ এর গল্প অবলম্বনে। যে সময়টাতে ভারতজুড়ে চলছিল ভক্তি আন্দোলনের জোয়ার। যে আন্দোলনের ফসল ছিল তুলসীদাস, সুরদাস এবং কবিরের মতো আরো শতশত সাধু-সন্তুদের আবির্ভাব।

জায়সী তার কাব্য রচনা করে ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে। প্রায় ১০০ বছর পর আরাকানের বৌদ্ধ রাজার অমাত্য মাগন ঠাকুরের নির্দেশে আলাওল ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে পদ্মাবতী রচনা করেন। কবি তখন মাগন ঠাকুরের সভাসদ এবং আশ্রিত।

পদ্মাবত-এ এমন একটি গল্প বলা হয়েছে যাকে ঐতিহাসিকরা খুব একটা মূল্য দেন না এই বলে যে সেটি পুরোপুরি বানোয়াট এবং কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে যার কোনো মিল নেই। রাজপুতানার চিতোর রাজ্যের রানী পদ্মাবতীকে নিয়ে এই গল্প ফাঁদেন জায়সী। যার প্রেমে নাকি পড়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজী। যিনি ভারতজুড়ে তার ব্যাপকভাবে সামরিক বিজয় অভিযান এবং রাজধানী দিল্লিতে বাজার দর নিয়ন্ত্রণের জন্য বিখ্যাত।


আলাউদ্দিন খিলজি চিতোর দুর্গে আক্রমণ করেন ১৩০৬ সালে। আর তার মৃ্ত্যু হয় ১৩১৬ সালে। জায়সী তার পদ্মাবত মহাকাব্য রচনা করেছিল ১৫৪০ সালে। প্রায় ২২৪ বছর পরে গিয়ে দিল্লি থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দূরে আমেথিতে বসে।

আলাউদ্দিনের সঙ্গে কখনোই দেখা হয়নি পদ্মাবতীরঃ

ঘটনার ২৪০ বছর পরে ১৫৪০ সালে সর্বপ্রথম মালিক মোহাম্মদ জয়সী তার পদ্মাভাত কবিতায় এই ঘটনা তুলে ধরে। বেশীরভাগ ঐতিহাসিক একে তার কল্পনাপ্রসূত বলেই ধরে নেয়। কারণ এই ঘটনার স্বপক্ষে কোন শক্তিশালী প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আর প্রধান চরিত্রকে রতন সেন নামেই জয়সী অভিহিত করলেও তার আসল নাম ছিল রতন রাওয়াল সিং।

চিতোর অবরোধের কথা ১৩০৩ সালে রচিত আমির খসরুর ‘খাজাইন উল ফাতাহ’ তে পাওয়া যায়। আমির খসরু সেই সময় আলাউদ্দিনের সাথে ছিলেন। আমির খসরু তার বইয়ে কোন পদ্মিনীর কথা উল্লেখ করেননি। তিনি লিখেছেন চিতোরের রাজা আলাউদ্দিনের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তারা তার পরিবারকে ক্ষমা করে দিলেও বাকিদেরকে হত্যা করে। তার ছেলে খিজির খানকে এই অঞ্চলের দায়িত্ব দেন এবং নামকরণ করেন খিজিরাবাদ।

এর পরবর্তী একটি বইয়েও পদ্মিনী নামের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়না।মেওয়ার ইতিহাসেও পদ্মিনী নামের কারো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সিংহলিজ ইতিহাসেও পদ্মাবতীর বাবা রাজা গান্ধর্ব সেনের নাম পাওয়া যায়নি।

দিল্লী থেকে আয়না বহন করে আনাও বিশ্বাস্য মনে হয় না। কেউ কেউ দাবী করেন যে সে সময় ভারতবর্ষে আদৌ আয়নারই ব্যবহার শুরু হয়নি। স্থানীয়রা এখনো আয়নার কাহিনীকে বিশ্বাস করেনা।
দেবপালকে হত্যা করে নিজেও যুদ্ধে নিহত হন রতন সিং। এটা শোনার পর রানী পদ্মিনী জওহরের পথ বেছে নেন। এই কাহিনীতে বিশ্বাসযোগ্য না খুব একটা। রাজপুতদের দিল্লী হানা দিয়ে রতন সিংকে উদ্ধার করার ঘটনা সত্য হবার সম্ভাবনাও খুব কম। রাজপুতদের সেই ক্ষমতা ছিল না। সেই কথিত যুদ্ধে দেবপালের নিহত হবার পরেও শুধু স্বামী শোকে দলবল সমেত পদ্মিনীর জওহর বেছে নেওয়াও তেমন যুক্তিসম্মত মনে হয় না।

এই ইতিহাস নিয়ে ঐতিহাসিকদের সন্দিহান থাকলে ভারতবর্ষের অনেক হিন্দুর কাছে রাণী পদ্মিনী সতী নারীর মূর্তি হিসাবে পূজিত হয়।

ইতিহাসে আলাউদ্দীন খিলজির চিতর আক্রমণের কাহিনী থাকলেও রানী পদ্মাবতীর কোন উল্লেখ নেই। সেইসময়কার ইতিহাস রচয়িতাদের কোন গ্রন্থে পদ্মাবতীর বা তার জহরব্রতর কোন কথা লেখা নেই। খিলজির আক্রমণের কথা থাকলেও তা নেই কেন? কি কারণে আক্রমণ হয়েছিল স্পষ্ট ভাবে বলা নেই।
তথ্যসুত্রঃ http://archive.is/bQLyA, http://archive.is/6kJqL , http://archive.is/rNpNl

অর্থাৎ ঐতিহাসিকভাবে প্রমানিত সত্য যে মুসলিম শাসক আলাউদ্দিন খিলজীর সাথে কল্পিত রানী পদ্মাবতীর কোণ সম্পর্ক নাই। যেমন সম্পর্ক নাই বাল্মীকির রচিত কল্পিত রামায়নের সাথে বাবরি মসজিদের সম্পর্ক।

মুলত হিন্দুরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের স্বগোত্রীয়দের উস্কানি দিতে নানান ভ্রান্ত গল্প বানায়। এসব ভ্রান্ত গল্পকে পূজি করে তারা যুগে যুগে মুসলমানদের বিরুদ্ধচারণ করেছে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে দাঙ্গাকে বৈধতা দিয়েছে। যেমন “বাবরী মসজিদের স্থানটি হচ্ছে রামের জন্মস্থান, তাই সেটা ভাঙ্গতে হবে।” কিংবা “তাজমহল হিন্দু মন্দির ছিলো তাই তা ভাঙ্গতে হবে”, “আরবের কাবা ঘর মূলত শিব মন্দির”। এ ধরনের বহু আজগুবি গল্প বা হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা তারা যুগে যুগে বানিয়ে হিন্দুদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে উস্কাতো। বাংলাদেশে ভুয়া সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা সাজানোও একই বিষয়। বাস্তবে যার কোন অস্তিত্ব নেই ।



হিন্দুরা বানোয়াট চরিত্র ‘পদ্মবতী’র জন্য মাঠে নামলো, কিন্তু মুভিটিতে যে মুসলমানদের সুলতান আলাউদ্দিন খিলজীকে মিথ্যা ইতিহাস দিয়ে বিকৃত করে (পশুর মত) উপস্থাপন করা হলো তার প্রতিবাদ কোন মুসলমান করলো না! বর্তমানে মুসলমানদের কঠিন অবস্থার জন্য মুসলমানদের বোবা থাকা কি একটি কারণ নয় ?