ইতিহাসের সাক্ষী
১৯৭৯ সালের চৌঠা এপ্রিল পাকিস্তানের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় রাওয়ালপিন্ডির কারাগারে।
তার এক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার ষড়যন্ত্র করার দায়ে দেশটির সেনা প্রশাসন তার প্রাণদণ্ডাদেশ দেয়।
সেসময় রাওয়ালপিণ্ডি কারাগারের প্রধান ছিলেন ব্রিগেডিয়ার রাহাত লতিফ।
ইতিহাসের সাক্ষী অনুষ্ঠানে শুনুন জেলপ্রধানের মুখে মিঃ ভুট্টোর জীবনের শেষ দিনগুলোর কথা।
মিঃ ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝোলানোর সেই রাতের কথা বলতে গিয়ে ব্রিগেডিয়ার রাহাত লতিফ বলছেন, কারারক্ষীরা যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাবার জন্য আসে তখন তিনি সম্ভবত কড়া ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন।
তাকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ফাঁসিকাঠের কাছাকাছি। কারারক্ষীদের সাহায্য নিয়ে তিনি উঠে দাঁড়ানোর পর বেঁধে দেওয়া হয়েছিল তার হাত।
ব্রিগেডিয়ার লতিফ বলছেন - "উনি বলেছিলেন ‘আমাকে ছেড়ে দাও - ব্যথা লাগছে- তাড়াতাড়ি সব শেষ করে ফেলো’। ওটাই ছিল মিঃ ভুট্টোর শেষ কথা।"
জুলফিকার আলি ভুট্টো ছিলেন পাকিস্তানের অন্যতম সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিক।
কিন্তু সামরিক বাহিনি ১৯৭৭ সালে তাঁকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে এবং তাকে বিচারের কাঠগড়ায় তোলে।
তার বিরুদ্ধে আরেকজন রাজনীতিকের হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার যে অভিযোগ আনা হয়, সেই অভিযোগ তিনি আগাগোড়া অস্বীকার করেছেন। কিন্তু বিচারে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
রাওয়ালপিন্ডি জেলে বসেই তিনি তার সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেন।
মিঃ লতিফ বিবিসিকে বলেছেন মিঃ ভুট্টো কারাগারে খুব পড়াশোনা করতেন। তাকে খাবার পাঠাত তার পরিবার।
তবে চিকিৎসকরা প্রথমে তা পরীক্ষা করে তবে তাকে খেতে দিতেন।
মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে তিনি যে আপিল করেছিলেন তা পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্ট খারিজ করে দেবার পর এসব সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ব্রিগেডিয়ার রাহাত লতিফ বলছেন তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত মিঃ ভুট্টো মনে হয়েছে নিশ্চিত ছিলেন যে তাকে ফাঁসির দড়িতে সত্যি সত্যি ঝোলানোর সাহস কারো হবে না।
তার মৃত্যুদণ্ড যেদিন কার্যকর হয় সেদিন কারাগারে তার সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের পর তার স্ত্রী নুসরাত ও কন্যা বেনজির তার প্রাণভিক্ষার আবেদন জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের কাছে।
তবে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং ওইদিনই দিবাগত রাত দুটোয় জুলফিকার আলি ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।