গান্ধীর যৌনময় শেষ জীবন

Related imageকেমন ছিল মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর জীবনের শেষ দিনগুলো

বিরলা হাউসছবির কপিরাইটFARHANA PARVIN
Image captionবিরলা হাউজ
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন ভারতের অন্যতম প্রধান একজন রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন, এবং স্বাধীনতার পর ভারত তাঁকে জাতির জনকের মর্যাদা দেয়।
সময় ১৯৪৮ সাল। ৩০শে জানুয়ারি। ভারত ভাগের প্রায় দেড় বছর পরেই দিল্লির বিরলা হাউজে হত্যা করা হয় মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে, বেশীরভাগ মানুষ যাকে চেনেন মহাত্মা গান্ধী নামে।
আজ মঙ্গলবার গান্ধী হত্যার ৭০ বছর পূর্তি হচ্ছে।
সারা ভারত ঘুরে বেড়ানো মোহনদাস গান্ধী কেন শেষ সময়ে দিল্লির বিরলা হাউসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং কেমন ছিল তাঁর সেই শেষ দিনগুলো তা অনেকের কাছেই অজানা।
কয়েকদিন আগে আমি গিয়েছিলাম দিল্লির বিরলা হাউজে, মি. গান্ধী কীভাবে তাঁর জীবনের শেষ সময়টা কাটিয়েছিলেন সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেতে।
বিরলা হাউজ
বিরলা হাউজ দিল্লির সুপরিচিত ব্যবসায়ী ঘনশ্যাম দাস বিরলার একটি বড় বাড়ী বা ম্যানশন। তিনি নিজেও গান্ধীর অনুসারী ছিলেন।
গান্ধীর শোবার স্থানছবির কপিরাইটFARHANA PARVIN
Image captionমোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর শোবার স্থান
১৯৪৭ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর শেষবারের মত মি. গান্ধী দিল্লিতে আসেন।
এর আগে যখনই তিনি দিল্লি এসেছেন, প্রত্যেকবার তিনি 'ভাঙ্গি কলোনি' নামের এক জায়গায় থাকতেন।
কিন্তু শেষবার যখন তিনি দিল্লি আসেন, তখন শহরের বিভিন্ন জায়গায় শরণার্থীরা অবস্থান করছিল। তাই তিনি অবস্থান নেন বিরলা হাউজে।
ধ্যান করতেন এখানেছবির কপিরাইটFARHANA PARVIN
Image captionমি. গান্ধী ধ্যান করতেন এখানে
কেন দিল্লিতে থাকার সিদ্ধান্ত?
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী দিল্লি আসেন কোলকাতা থেকে। সে সময় হিন্দু আর মুসলমানদের মধ্যে অশান্তি চলছিল - সেটা থামিয়ে তিনি দিল্লিতে আসেন।
কিন্তু দিল্লিতে এসে দেখলেন এখানে মুসলমানদের উপর হামলা হচ্ছে। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন দিল্লিতে তিনি থেকে যাবেন।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক অপূর্বানন্দ বলছিলেন "কোলকাতায় তিনি যেটা করেছিলেন অর্থাৎ হিন্দু আর মুসলমানের মধ্যে মিল করেছিলেন, সেটা দিল্লিতেও করতে চেয়েছিলেন। এছাড়া শিখ এবং হিন্দুদের তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন মুসলমানদের উপর যেন হামলা না করে"।
সরকারের তরফ থেকেও বিরলা হাউজে থাকার কথা বলা হয় তাঁকে।
এখানেই সব রাজনৈতিক বৈঠক হতছবির কপিরাইটFARHANA PARVIN
Image captionএখানেই সব রাজনৈতিক বৈঠক হত
সেখানে তাঁর অফিস ছিল, রাজনৈতিক সমস্ত বৈঠকও সেখানে অনুষ্ঠিত হত। রাজনীতিবিদরা ছাড়াও অনেক সাধারণ মানুষ আসতেন তাঁর সাথে দেখা করতে, বিভিন্ন অভিযোগ-অনুযোগ নিয়ে।
স্বাধীনতার পরপরেই ছিল সময়টা। তাই মি. গান্ধী মনে করেছিলেন বিরলা হাউজ থেকে সরকারের সাথে যোগাযোগ করাটা যেমন সহজ হবে, তেমনি প্রয়োজনে যে কেউ তাঁর কাছে সহজে আসতে পারবেন।
অধ্যাপক অপূর্বানন্দ বলছিলেন, "বিরলা হাউস থেকে বলা চলে তিনি সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সচিব এবং গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে প্রতিদিন বৈঠক করতেন। যেখানে ত্রাণ পাঠানো দরকার সেটা তিনি তাদের বলতেন। কোন স্থান থেকে বেশি অভিযোগ আসছে - সেটা কীভাবে সামলানো যায় - সেটা নিয়ে আলোচনা করতেন"।
মৃত্যুর আগে সরদার প্যাটেলের সাথে গান্ধীর শেষ বৈঠকছবির কপিরাইটFARHANA PARVIN
Image captionমৃত্যুর আগে সরদার প্যাটেলের সাথে মি. গান্ধীর শেষ বৈঠক
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান এবং ভারত নামে দুটি দেশ সৃষ্টির পর অনেক রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক ইস্যু অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছিল।
উত্তেজনা বিরাজ করছিল ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে। জওহারলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মৃদুলা মুখার্জী আমাকে বলছিলেন, বিরলা হাউজে থাকার সময়টা মোটেও শান্তিপূর্ণ ছিল না মি. গান্ধীর জন্য।
"চারদিক থেকে দাঙ্গার খবর গান্ধীজি নিজেও পাচ্ছিলেন," বলছিলেন মৃদুলা মুখার্জী। "কিন্তু তাঁর উপর হামলা হতে পারে এই আশঙ্কা করে কখনো তিনি কোন নিরাপত্তা রক্ষী রাখতেন না।"
অনশন
বিরলা হাউজে মি. গান্ধীকে পরিচর্যার দায়িত্বে ছিলেন ব্রিজ কৃষ্ণা চান্দিওয়ালা, মানু এবং আভা নামে তাঁর কয়েকজন আত্মীয়।
তিনি নিজে দিল্লির বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ক্যাম্পে সশরীরে যেতেন পরিস্থিতি দেখতে।
ব্যবহার করা কিছু জিনিসছবির কপিরাইটFARHANA PARVIN
Image captionব্যবহার করা কিছু জিনিস
মূলত ভারত সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে তিনি এ সময় সাহায্য করেছেন।
তবে মুসলমানদের উপর হামলা যখন একেবারেই থামছিল না, তখন তিনি জানুয়ারির ১৩ তারিখে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অনশন করার ঘোষণা দেন।
১৮ই জানুয়ারি বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বিরলা হাউজে এসে তাকে আশ্বস্ত করেন যে মুসলমানদের উপর আর হামলা হবে না।
তাদের কথা বিশ্বাস করে তিনি ১৯ তারিখে অনশন ভঙ্গ করেন। কিন্তু এর দুই দিন পরেই বিরলা হাউজে এক বোমা হামলা হয়।
হত্যা
তবে তখন মোহনদাস গান্ধীর কোন ক্ষতি হয়নি। এর আগেও কয়েকবার তাঁর ওপর হামলা করা হয়েছিল।
কিন্তু মি. গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের ৩০শে জানুয়ারির লক্ষ্য ছিল নির্ভুল।
এই পথ দিয়ে তিনি প্রার্থণা স্থলে যেতেনছবির কপিরাইটFARHANA PARVIN
Image captionএই পথ দিয়ে তিনি প্রার্থণা স্থলে যেতেন
সকাল ও সন্ধ্যায় প্রার্থনা সভা করতেন তিনি। সেখানে সব ধর্মের কথা বলা হতো, প্রতিদিন অংশ নিতেন কয়েকশ' মানুষ।
সেদিন সন্ধ্যার প্রার্থনা সভার জন্য মি. গান্ধী প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক সেই মূহুর্তেই নাথুরাম গডসে খুব কাছ থেকে পিস্তলের তিনটি গুলি ছোড়েন তাঁর বুক লক্ষ্য করে।
ইতিহাসবিদ সোহেল হাশমী বলছিলেন, গুলি ছোড়ার আগে গডসে মি. গান্ধীর দিকে ঝুঁকে প্রণাম করেন।
ঠিক এখানেই গুলি করা হয়ছবির কপিরাইটFARHANA PARVIN
Image captionঠিক এখানেই গুলি করা হয়
স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ১৭ মিনিটে মৃত্যু হয় মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর। মি. হাশমী বলছিলেন, গুলির পরে তাঁকে ঘরে নিয়ে আসা হলেও ধারণা করা হয় ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।
গান্ধী হত্যার দায়ে মি. গডসেকে ১৯৪৯ সালের ১৫ই নভেম্বর ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল।
১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি নাথুরাম গডসে মহাত্মা গান্ধীকে গুলি করেন।ছবির কপিরাইটKEYSTONE / GETTY IMAGES
Image caption১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি নাথুরাম গডসে মহাত্মা গান্ধীকে গুলি করেন।
দিল্লির লালকেল্লায় গান্ধী হত্যা মামলার বিচার চলার সময়ে নাথুরাম গডসে নিজেও স্বীকার করেছিলেন যে তিনি দেশভাগের জন্য মি. গান্ধীকেই দায়ী বলে মনে করতেন।
"গান্ধীজী দেশের জন্য যা করেছেন, আমি তাকে সম্মান করি। গুলি চালানোর আগে তাই আমি মাথা নীচু করে তাঁকে প্রণামও করেছিলাম," আদালতে বলেছিলেন নাথুরাম গডসে।
তার এক সহযোগী নারায়ন আপ্তেরও ফাঁসি হয়েছিল একই সঙ্গে।
ইতিহাসবিদ সোহেল হাসমির সাথে বিরলা হাউসে সংবাদদাতা ফারহানা পারভীনছবির কপিরাইটFARHANA PARVIN
Image captionইতিহাসবিদ সোহেল হাশমীর সাথে বিরলা হাউজে সংবাদদাতা ফারহানা পারভীন
মহাত্মা গান্ধীছবির কপিরাইটCENTRAL PRESS
Image captionমোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী