রবীন্দ্র-সাহিত্যের মধ্যে যে হিন্দু
সাম্প্রদায়িকতা ও হিন্দু মানস সেটি মুসলমানদের কাছে স্বভাবতই গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু সেটিকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য পরিকল্পিতভাবে
সুগারকোট লাগানো হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে এই বলে যে- (শরাব ও পতিতালয়ের পয়সায় লালিত-পালিত) ‘রবীন্দ্র ছিলো অসাম্প্রদায়িক।’ বলা হচ্ছে-
সে উভয় বাংলার কবি, সে বিশ্বকবি ইত্যাদি বহুকিছু।
প্রশ্ন হলো- শরাব ও পতিতালয়ের পয়সায়
লালিত-পালিত যবন মেচ্ছ রবীন্দ্র যে জন্মভূমির স্বপ্ন দেখতো বা
কথা বলতো- সেটি কি হিন্দু-মুসলমান উভয়ের?
যে চেতনা ও যে ধর্মবিশ্বাসের কথা বলতো- সেটিও কি
উভয়ের?
শরাব ও পতিতালয়ের
পয়সায় লালিত-পালিত অস্পৃশ্য রবীন্দ্র তার ‘জন্মভূমি’ প্রবন্ধে যে
জন্মভূমির কথা আলোচনা করেছে, সেখানে আছে মায়ের পূজা, মায়ের প্রতিষ্ঠা, আছে অধিষ্ঠাত্রী দেবী ও ভারতীয় বীণাধ্বনি। সে যে মনে-প্রাণে মূর্তিপূজারী হিন্দু
ছিলো তার পরিচয় রেখেছে তার ‘পূজারিনী’ কবিতায়। সেখানে লিখেছে,“বেদব্রাহ্মণ-রাজা ছাড়া আর কিছু
কিছু নাই ভবে
পূজা করিবার।”
তার ‘বৌ ঠাকুরানীর হাট’ উপন্যাসে সে প্রতাব চরিত্রের
মুখ দিয়ে মুসলমানদেরকে ‘মেøচ্ছ’ আখ্যা দিয়ে তাদেরকে দূর
করে আর্য ধর্মকে রাহুর গ্রাস থেকে মুক্ত করার সংকল্প করে। ‘গোরা’ উপন্যাসে গোরার
মুখ দিয়ে ইসলামবিরোধী জঘন্য উক্তি করিয়েছে। ‘সমস্যাপূরণ’ গল্পে অছিমদ্দিনকে
হিন্দু জমিদারের জারজ সন্তান বানিয়েছে।
রবীন্দ্র-মানস বা রবীন্দ্র-চেতনা কতটুকু মুসলিমবিদ্বেষী ছিলো সে রবীন্দ্র-চেতনার
পরিচয় তুলে ধরেছে আবুল মনসুর আহমদ। সে লিখেছে, “হাজার বছর মুসলমানরা হিন্দুর সাথে একদেশে
একত্রে বাস করিয়াছে। হিন্দুদের রাজা হিসেবেও, প্রজা হিসেবেও। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই হিন্দু-মুসলমানে সামাজিক ঐক্য
হয় নাই। হয় নাই এই জন্য যে, হিন্দুরা চাহিত ‘আর্য-অনার্য, শক,
হুন’ যেভাবে ‘মহাভারতের সাগর তীরে’ লীন হইয়াছিল মুসলমানেরাও
তেমনি হিন্দু সমাজে লীন হইয়া যাউক। তাদের শুধু ‘ভারতীয় মুসলমান’ থাকিলে চলিবে
না, ‘হিন্দু-মুসলমান’ হইতে হইবে। এটা শুধু কংগ্রেসী বা হিন্দু সভার জনতার
মত ছিল না, শরাব ও পতিতালয়ের পয়সায় লালিত-পালিত যবন মেচ্ছ রবীন্দ্রের
মত ছিল। (সূত্র:
আবুল মনসুর আহমদ, আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর,
পৃষ্ঠা ১৫৮-১৫৯।
রবীন্দ্রনাথ
ছিল ব্রাহ্ম সমাজভুক্ত। রামমোহন এই সমাজের প্রতিষ্ঠাতা। ব্রাহ্মরা যে বিশুদ্ধ হিন্দু, সে বিষয়ে ব্রাহ্ম নেতা
শিবনাথ শাস্ত্রী তার “মিশন অব দি ব্রাহ্ম সমাজ” গ্রন্থে পরিস্কার
ভাবে উল্লেখ করেছে। ব্রাহ্ম সমাজভুক্ত
রাজা নারায়ণ বসু “হিন্দুদের শ্রেষ্ঠত্ব” বিষয়ে বক্তৃতায়
তত্কালীন খৃস্টান মিশনারীদেরকে তাক লগিয়ে দিয়েছিল। তাছাড়া রবীন্দ্র যে হিন্দু ছিল সে কথা
তার নিজের লেখা থেকেই স্পষ্ট প্রমাণিত হয়।
রবীন্দ্র ভক্তরা
একটা কথা বারবার বলে, রবীন্দ্র হিন্দুদেরও কঠোর সমালোচনা করেছে, সুতরাং সে মুসলমানদের কিছু সমালোচনা করে থাকলেও তা ধর্তব্য নয়।
এর উত্তরে বলা
যায় যে, সে ছিলে সংস্কারবাদী
হিন্দু। বিশেষ করে ব্রাহ্মরা হিন্দুদের
জাতিভেদ প্রথা ও পৌত্তলিকতাকে ঘৃণার চোখে দেখত। তাই সে এগুলোর সমালোচনাও করেছে কঠোরভাবে। একজন হিন্দু যদি তার জাতিকে বিশ্বের দরবারে
প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে আপন দোষাবলীর সমালোচনা করে, তাহলে তাকে কি অহিন্দু
বলব? তাহলে তো ইশ্বরচন্দ্রও অহিন্দু বলতে হবে। কারণ মুর্তিপুজা ত্যাগ না করেও সে হিন্দুদের
সংষ্কারবাদী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল।
বস্তুত রবীন্দ্র
হিন্দুদের সমালোচনা করেছে সংস্কারবাদী মন নিয়ে। আর সময় ও সুযোগ মত মুসলমানদের শুধু সমালোচনাই
করেনি সে ব্যঙ্গ করেছে, ঘৃণা করেছে। মুসলিম জাতিকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে ইসলাম উনার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন
করেছে।
সাম্প্রদায়িক
রবীন্দ্রনাথ বঙ্কিমের মত উগ্র ও স্থুল আক্রমণ বেশি করেনি। বঙ্কিম মুসলমানদের প্রতি পাইকারি বিষোদগার
করে হিন্দুদের কাছে থেকে ঋষি উপাধি লাভ করেছিল। আর রবীন্দ্র মুখোশ পরে মসলমানদের বিরোধীতা
করার পরেও মুসলমানদের কাছ থেকেও সম্মান কুড়িয়ে নিতে চেয়েছিলে।
প্রকৃতপক্ষে
রবীন্দ্র ছিল গোঁড়া হিন্দু। হিন্দুর আদর্শকে
ভারতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করাই ছিল তার আজীবনের সাধনা।
শান্তি নিকেতনে
প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠার পূর্বে রবীন্দ্র তার চিন্তাধারা সম্পর্কে আচার্য জগদীশ এর কাছে
লিখিত এক পত্রে জানিয়েছিল। সেই পত্রে সে
লিখেছিল, “শান্তি নিকেতনে আমি একটি বিদ্যালয় খুলিবার
জন্য বিশেষ চেষ্টা করিতেছি। সেখানে ঠিক প্রাচীনকালের
গুরুগৃহ বাসের মত সমস্ত নিয়ম। ধনী-দরিদ্র সকলকেই কঠিন ব্রহ্মচুর্যে
দীক্ষিত হইতে হইবে। ছেলেবেলা হইতে
ব্রাহ্মচর্য না শিখিলে আমরা প্রকৃত হিন্দু হইতে পারিব না। (চিঠিপত্র, রবীন্দ্রনাথ
৩৫-৩৬ পৃষ্ঠা)
সুতরাং দেখা
যাচ্ছে যে, রবীন্দ্র হিন্দুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্যে এবং হিন্দুকে বিশ্বের দরবারে আদর্শ
জাতি হিসেবে দেখানোর দেখানোর উদ্দেশ্যেই আজীবন কাজ করে গেছে। শান্তি নিকেতনের বার্ষিক উত্সবগুলোতে সে
যে সব ভাষণ দিয়েছিল তার প্রায় সবগুলোতে হিন্দুর আদর্শ পরিস্কারভাবে ফুটে উঠেছে।
এতো গেলো রবীন্দ্রনাথের
চিন্তাধারা ও আদর্শের কথা। এখন মুসলমানদের
সম্পর্কে তার কী মনোভাব ছিল তারই কিঞ্চিৎ আলোচনা করা যাক। কিঞ্চিৎ এ কারণে যে, বিশাল রবীন্দ্র সাহিত্যের
প্রায সর্বত্রই মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে আছে। সবগুলো উদ্ধৃত করতে গেলে এক বিরাট বই হয়ে
যাবে। তাই নমুনা হিসেবে এখানে কিছু উদ্ধৃতি দেবার
প্রয়াস চালানো হয়েছে মাত্র।
রবীন্দ্র তার
“হিন্দু-মুসলমান” প্রবন্ধে লিখেছে,
“পৃথিবীতে দু’টি ধর্মসম্প্রদায় আছে, অন্য সকল ধর্মমতের সঙ্গে
যাদের বিরুদ্ধতা অত্যুগ্র, সে হচ্ছে খৃস্টান আর মুসলমান ধর্ম। তারা নিজের ধর্মকে পালন করে সন্তুষ্ট নয়, অন্য ধর্মকে সংহার করতে
উদ্যত। এ জন্য তাদের ধর্ম গ্রহণ করা
ছাড়া তাদের সঙ্গে মেলবার কোন উপায় নেই।” (রবীন্দ্র
রচনাবলী, ২৪ খন্ড, পৃ- ৩৭৫)
কিন্তু রবীন্দ্রনাথ
এ প্রবন্ধেই আর একটু এগিয়ে গিয়ে অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে খৃস্টানদের প্রশংসা করে তাকে
অত্যুগ্রতার সীমানা থেকে বাদ দিয়েছ। বলেছে, “ খৃস্টান ধর্মাবলম্বীদের সম্বন্ধে একটি সুবিধার
কথা এই যে, তারা আধুনিক যুগের বাহন, তাদের
মন মধ্যযুগের গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ নয়।”
সে তার “সমস্যা” নামক প্রবন্ধে লিখেছে, “ধর্ম গন্ডির বহির্বর্তী পরকে সে (মুসলমান) তীব্রভাবেই পর বলে জানে। কিন্তু সেই পরকে, সেই কাফেরকে বরাবরকার মতো ঘরে টেনে এনে আটক করতে পারলেই সে খুশি।” (ঐ, পৃ- ৩৫৪)
এই প্রবন্ধেরই
অন্য জায়গায় হিন্দুদের একতার অভাব লক্ষ্য করে সে দুঃখ করে বলেছ, “ কোন বিশেষ প্রয়োজন না থাকলেও হিন্দু নিজেকে মারে,
আর প্রয়োজন থাকলেও হিন্দু অন্যকে মারতে পারে না। আর মুসলমান কোন বিশেষ প্রয়োজন না ঘটলেও
নিজেকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করে, আর প্রয়োজন ঘটলে অন্যকে বেদম মার দিতে পারে। (ঐ, পৃ- ৩৩৫)
সকলেই জানেন
কলকাতায় মুসলমানরা বরাবরই হিন্দুদের হাতে বেদম মার খেয়েছে। কিন্তু রবীন্দ্র হিন্দু মুসলমান দাঙ্গার
কথা উল্লেখ করতে গিয়ে লিখেছে, “শুধু জামালপুরের মতো মফস্বলে নয়, একেবারে কলিকাতার বড়ো
বাজারে হিন্দুদের প্রতি মুসলমানদের উপদ্রব প্রচন্ড হইয়াছিল।” (ঐ, ২৭৪)
কিন্তু হিন্দুদের
হাতে মুসলমানরা মার খেয়েছে বলে রবীন্দ্র তার রচনার কোথাও উল্লেখ করেছেন বলে কোন গবেষকের
কিছু জানা নেই।
মুসলমান বিচারকদের
উপাধি ছিল কাজী। আর কাজীদের ন্যায়বিচারের কথা
বিশ্বের সর্বত্র প্রবাদ বাক্যের মত ছড়িয়ে আছে। অথচ এই কাজীদের সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ কী
অভিমত পোষণ করত দেখুন, “এক সময়ে সরাসরি কাজীর বিচার প্রচলিত ছিল। ব্যক্তিগত আন্দাজের উপর, পক্ষপাতের উপর যে বিচার
প্রণালীর ভিত্তি ছিল তাকে আমরা অশ্রদ্ধা করতে শিখেছি।” (ঐ,
পৃ- ৪৬৩)
পক্ষান্তরে এই
প্রবন্ধেই সে ইংরেজদের বিচারের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছে, “কোন অপরাধীকে দন্ড দেবার পূর্বে আইনে বাঁধা
অত্যন্ত সতর্ক বিচারের প্রণালী আছে। এই সভ্যনীতি
আমরা পেয়েছি ইংরেজদের কাছ থেকে।”
বঙ্কিমচন্দ্র
যে কয়টি বই লিখে মুসলমানদের ঘৃণার পাত্র হয়েছিলে, তার মধ্যে “রাজসিংহ” অন্যতম। মোগল বাদশাহের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ও শ্রদ্ধার
যোগ্য সম্রাট আওরঙ্গজেবের কন্যা পূতঃচরিত্রা জেবুন্নেসাকে বারবণিতা প্রমাণ করার উদ্দেশ্যেই
এই বইটি লেখা হয়েছিল। অথচ রবীন্দ্র এই বইটিকে বঙ্কিমচন্দ্রের
সার্থক রচনা বলে শতমুখে প্রশংসা করেছে।
এই বইয়ের জেবুন্নেসা
সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছে, “ জেবুন্নেসার সহিত ইতিহাসের
যোগ আছে বটে, কিন্তু সে যোগ গৌণভাবে। সে যোগটুকু না থাকিলে এ গ্রন্থের মধ্যে
তাহার কোন অধিকারই থাকিত না। যোগ আছে কিন্তু
ইতিহাস তাহাকে গ্রাস করিয়া আপনার অংশীভূত করিয়া লয় নাই। সে আপনার জীবন কাহিনী লইয়া স্বতন্ত্রভাবে
দীপ্যমান হইয়া উঠিয়াছে।” (রবীন্দ্রনাথ সংকলন,
পৃ- ১৩১)
রবীন্দ্র এ গ্রন্থটিকে
জাতীয় ও মানব ইতিহাসের অপূর্ব সমন্বয় বলে উল্লেখ করেছে। লিখেছে, “সে (বঙ্কিমচন্দ্র)
এই বৃহৎ জাতীয় ইতিহাসের ও তীব্র মানব ইতিহাসের পরস্পর এর মধ্যে ভাবের
যোগ রাখিয়াছে।”
অন্য জায়গায়
লিখেছে, “বিলাসিনী জেবুন্নেসা মনে করিয়াছিল, সম্রাট দুহিতার পক্ষে
প্রেমের আবশ্যক নাই, সুখই একমাত্র শরণ্য।”
রবীন্দ্রনাথ
প্রত্যক্ষ রাজনীতিক ছিল না। হিন্দু রাজনীতিকদের
মত হামেশা ইতর ভাষায় মুসলমানদেরকে গালাগালি করার প্রয়োজন হয়তো তার হয়নি। তার ধারণায়, বর্ণ হিন্দুদের তীব্র
জাতিভেদের ফলে নিম্ন শ্রেণীর হিন্দুরাই একমাত্র ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তাই হিন্দু জাতির এই ভাঙ্গনকে সে তীব্রভাবে
আক্রমণ করেছে এবং এ ব্যাপারে বর্ণ হিন্দুদের সাবধান হতে বলেছে।
রবীন্দ্রনাথের
দৃষ্টিতে মুসলমানরা হচ্ছে মধ্যযুগের একটি বর্বর অসভ্য জাতি। সে বাহুবলে রাজ্য জয় করেছে সত্য, কিন্তু কোন সভ্যতা দিয়ে
যেতে পারেনি। তার “কালান্তর” নামক প্রবন্ধে লিখেছে,
“সে মুসলমানও প্রাচ্য, সেও আধুনিক নয়। সেও আপন অতীত শতাব্দীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাহুবলে সে রাজ্য সংগঠন করেছে, কিন্তু তার চিত্তে সৃষ্টি
বৈচিত্র ছিল না।” (রবীন্দ্র রচনাবলী,
২৪ খন্ড, পৃ-২৪৩)
অথচ ফারসী সাহিত্যে
পারদর্শী ব্যক্তিরা জানেন যে, নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত গীতাঞ্জলির অধিকাংশ কবিতাই কবি হাফিজ শিরাজীর
কবিতার ভাবানুবাদ মাত্র। হিন্দুদের কাছে
মুসলমানরা যে এক বিরাট সমস্যা, সে সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছে, “ আজ মুসলমানকে আমরা দেখি
সংখ্যারূপে, তারা সম্প্রতি আমাদের রাষ্ট্রিক ব্যাপারে ঘটিয়েছে
যোগবিয়োগ সমস্যা। অর্থাৎ এ সংখ্যা আমাদের পক্ষে
গুণের অঙ্ক ফল না কষে ভাগেরই অঙ্ক ফল কষছে। দেশে এরা আছে, অথচ রাষ্ট্র জাতিগত ঐক্যের হিসাবে এরা না থাকার চেয়ে দারুণতর। (ঐ, পৃ- ২৪৪)
রবীন্দ্র এ রচনা
লিখেছে ১৩৪০ বঙ্গাব্দে। এর বহু পরে ১৯৪০ সালে সর্বপ্রথম
মুসলমানরা দেশ বিভাগের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। যারা বলে যে, রবীন্দ্র প্রথম বয়সে কিছু
কিছু সাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রকাশ (ব্যক্ত) করেছিল, শেষ বয়সে করেনি, তাদের
জ্ঞাতার্থেই এখানে রচনাকালও উল্লেখ করা হল।
রবীন্দ্র উদ্দেশ্য
প্রণোদিত হয়ে মুসলিম বিদ্বেষ হয়ে অনেক গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস,
কবিতা রচনা করেছে। রবীন্দ্রনাথ তার ‘রীতিমত নভেল’ নামক ছোট গল্পে
মুসলিম চরিত্র হরণ করেছে ॥ রবীন্দ্রনাথ
তার ‘সমস্যা’ ‘পুরান’, ‘দুরাশা’ ও ‘কাবুলীওয়ালা’ গল্পে মুসলমানদের
জারজ, চোর, খুনি হিসেবে উপস্থাপন করেছে। 'ইংরেজ ও ভারতবাসী'
‘সুবিচারের অধিকার’, নামক প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ
তার মুসলিম বিরোধী অবস্থা আরো স্পষ্ট করে।
বিশেষ করে ‘দুরাশা’ গল্পের কাহিনীটি আরো স্পর্শকাতর। এখানে দেখানো হয়েছে, একজন মুসলিম নারীর হিন্দু
ধর্ম তথা ব্রাহ্মণদের প্রতি কি দুর্নিবার আকর্ষণ এবং এই মুসলিম নারীর ব্রাহ্মণ হবার
প্রাণান্তকর চিত্র।
রবীন্দ্র তার
‘কণ্ঠরোধ’ (ভারতী, বৈশাখ-১৩০৫) নামক প্রবন্ধে বলে,
"কিছুদিন হইল একদল ইতর শ্রেণীর অবিবেচক মুসলমান কলিকাতার রাজপথে
লোষ্ট্রন্ড হস্তে উপদ্রবের চেষ্টা করিয়াছিল। তাহার মধ্যে বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে- উপদ্রবের লক্ষ্যটা বিশেষ
রূপে ইংরেজদেরই প্রতি। তাহাদের শাস্তিও
যথেষ্ট হইয়াছিল। প্রবাদ আছে- ইটটি মারিলেই পাটকেলটি
খাইতে হয়; কিন্তু মূঢ়গণ (মুসলমান)
ইটটি মারিয়া পাটকেলের অপেক্ষা অনেক শক্ত শক্ত জিনিস খাইয়াছিল।"
বঙ্কিমের মুসলিম
বিদ্বেষপূর্ণ সাহিত্যের পক্ষে রবীন্দ্র লিখেছে, "মুসলমান বিদ্বেষ বলিয়া আমরা আমাদের জাতীয়
সাহিত্য বিসর্জন দিতে পারি না। মুসলমানদের উচিত
নিজেদের জাতীয় সাহিত্য নিজেরাই সৃষ্টি করা। (তথ্যসূত্র: ভারতী পত্রিকা, একশ বছরের রাজনীতি, লেখক,আবুল আসাদ
)"
তার মুসলিম বিদ্বেষের
আরো একটি নমুনা হলো- " মরহুম মোতাহার হোসেন চৌধুরী শান্তি নিকেতনে কবি রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনার লেখায় ইসলাম ও বিশ্বনবী সম্পর্কে
কোনো কথা লেখা নেই কেন? উত্তরে সে বলেছিল, ‘কোরআন পড়তে শুরু করেছিলুম কিন্তু বেশিদূর
এগুতে পারিনি আর তোমাদের রসুলের জীবন চরিতও ভালো লাগেনি। নাউযবিল্লাহ [ তথ্যসূত্র: বিতণ্ডা,লেখক সৈয়দ মুজিবুল্লা, পৃ -২২৯ ]"
এভাবে দেখা যায়, গোটা রবীন্দ্র সাহিত্যই
মুসলিম বিদ্বেষে ভরপুর। সোজা কথা, রবীন্দ্র সাহিত্য বলতে
আমরা হিন্দু সাহিত্যই বুঝি। কিছু নষ্ট রবিন্দ্র
দালালের প্ররোচনায় একজন কট্টর সাম্প্রদায়িক হিন্দুকে মুসলিম দেশে কিছুতেই গ্রহন করা
যায়না।
মুসলিমবিদ্বেষ
ওদের জাতিগত। এ অভ্যাস ওদের বহু পুরান।
এ অভ্যাস ওদের
দীর্ঘদিনের
এ অভ্যাস ওদের
মজ্জাগত ও সহজাত।
মুসলমানদেরকে
অশ্লীল অশ্রাব্য ভাষায় গালি প্রদান এবং মুসলমানদের প্রতি মিথ্যা কালীমা লেপনের নিকৃষ্ট
নজির স্থাপন করেছে- বঙ্কিম, ঈশ্বরচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, রঙ্গলাল, হেমচন্দ্র,
দীনবন্ধু মিত্র, দামোদর মুখোপাধ্যায়, থেকে খোদ রবীন্দ্র ঠগসহ সব হিন্দু লেখকই।
বাংলা সাহিত্যে
এসব হিন্দু কবি-সাহিত্যিকদের ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতা ও চরম বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন মুসলমানরা। বঙ্কিম তার শেখা প্রায় সবকটি গালি ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে মুসলমানদের উদ্দেশ্যে
প্রয়োগ করেছে। ‘মেøচ্ছ’ হতে শুরু করে ‘যবন’ পর্যন্ত। এমনকি প্রাচীনকালে
বৌদ্ধদেরকে দেয়া ‘নেড়ে’ গালিটাকেও সে উহ্য রাখেনি।
শুধু তাই নয়; তারা ম্লেচ্ছ,
যবন, নেড়ে বলা ছাড়াও মুসলমানদেরকে পাষ-,
পাপিষ্ঠ, পাপাত্মা, দুরাত্মা,
দূরাশয়, নরাধম, নরপিশাচ,
পাতকী, বানর, এঁড়ে,
দেড়ে, ধেড়ে, অজ্ঞান,
অকৃতজ্ঞ, ইতর- এ জাতীয় কোনো
গালিই দিতে বাদ দেয়নি।
তন্মধ্যে যবন, ম্লেচ্ছ, ইসলামবিদ্বেষী এবং শরাব ও পতিতালয়ের পয়সায় পালিত রবীন্দ্র ঠগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত
হয়ে মুসলিমবিদ্বেষ ও হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তিকে চাঙ্গা করার জন্য অনেক গল্প,
প্রবন্ধ, উপন্যাস, কবিতা
রচনা করেছে। যবন, মেøচ্ছ, ইসলামবিদ্বেষী এবং শরাব ও পতিতালয়ের পয়সায় পালিত
রবীন্দ্র ঠগের লেখা তার সমকালীন হিন্দুদেরকে চরম মুসলিমবিদ্বেষী হতে উৎসাহিত করেছিল।