পাশ্চাত্যের বিভিন্ন থিংক ট্যাংক বা গবেষনা প্রতিষ্টান গুলোর ভাষ্যমতে এই শতাব্দীতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্র বিন্দু ইউরোপ-আমেরিকা থেকে স্থানান্তর হয়ে চলে আসছে ও আসবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে চায়না, আসিয়ান ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে (দেখুনঃ Mapping the Global Future, CIA Report, 2020, )।
সম্প্রতি জার্মানীতে প্রকাশিত এক রি্পোর্টে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মদক্ষ জনশক্তি দিন দিন মারাত্নকভাবে হ্রাস পাচ্ছে, যা মুলত অনেকটাই পুরুন করবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পুর্ব থেকে আসা একঝাক মেধাবী তরুণ। জার্মান সমাজবিঙানীরা তাই দক্ষিণ-এশিয়ার নাম দিয়েছে Future Land South Asia (জার্মান ভাষায় বলা হয়, Zukunft Land Sued Asien)। চীন, আসিয়ান অঞ্চল ও দক্ষিণ এশিয়াকে যেখান থেকে নিয়ন্ত্রন করা যায়, এমন একটি বাফার রাষ্ট্র আমেরিকা ও তার সহযোগী ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব সময়েই খুছতেছিল। এ ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রটি খৃষ্টান রাষ্ট্র হলেতো সোনায় সোহাগা। ফিলিপিনস, পুর্ব তিমুর ছাড়া এশিয়ায় আর কোন খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্র নেই। ফিলিপিনসে বহু বছর মার্কিন বাহিনী ঘাটি গেড়ে থাকতে পেরেছিল ও চেয়েছিল তার অন্যতম কারন ছিল দেশটি খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ট। ওদিকে খবরে প্রকাশ, মায়ানমার চীনের সহযোগীতায় পরমানু অস্ত্র নির্মানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। খবরটি সত্য হলে মার্কিনীদের কাছে বাংলাদেশে তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা দরকার, পশ্চিমা শক্তি চীনকে কাউন্টার দেওয়ার জন্য কিছু দিনের জন্য ভারতের সাথে সখ্য গড়েছে, কিন্ত এই সখ্য বেশি দিন স্থায়ী হবে বলে মনে হয় না। এই সখ্য তত দিন পর্যন্ত থাকবে যতদিন পশ্চিমা শক্তি এই অঞ্চলে তাদের নিজ ধর্মের একটি (খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ট) বাফার রাষ্ট্র না পাচ্ছে। ভারতের সেভেন সিসর্টাস এর মনিপুরসহ অনেক রাজ্যই অদুর ভবিষ্যতে খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্র হতে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমা শক্তি এসব রাজ্যের পুর্ব তিমুরের মতো হস্তক্ষেপ করতে চাইলে ভারত সেটা মেনে নেবে না।
রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত বাংলাদেশে পুর্ব তিমুরীয় বা দক্ষিণ সুদান মডেল বাস্তবায়ন যত সহজ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য কোন দেশে তা সম্ভব নয়। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত অবস্থানের (geo-political and geo-strategic location) মত আর দ্বিতীয় কোন লোকেশান এই মুহূর্তে পশ্চিমাদের হাতে নেই। ভারতের সেভেন সিসটার্সের সব রাজ্যই ল্যান্ড লকড (যে সব দেশের মূল ভূ-ভাগের সাথে সরাসরি কোন সমুদ্র সংযোগ থাকে না তাদেরকে ল্যান্ড লকড রাষ্ট্র বলা হয়, যেমন, নেপাল, ভুটান, মঙ্গোলিয়া)। সব মিলিয়ে বলা যায়, আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু এখন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্থানান্তরিত হয়েছে।