আদিবাসীদের অধিকারের উপর জাতিসঙ্ঘের ঘোষণাপত্র : ধারা ৩ পার্বত্য চট্রগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার ধারা
চাকমা-মারমারা নিজেদের উপজাতি হিসেবেই প্রকাশ করতো। ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের সময়ও সন্তু লারমা নিজেকে উপজাতি পরিচয়েই পরিচিত করিয়েছিলেন। চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় বাংলাদেশে আদিবাসী বিষয়ক প্রচারণার বেসিক পার্সন। জনসংহতি সমিতি ও সন্ত্রাসী সংগঠন শান্তি বাহিনীর নেতা সন্তু লারমাও শুরুতে আদিবাসী দাবির পক্ষে ছিলেন না। দেবাশীষ রায়ের দাবি বলে তিনি এর সাথে একমত ছিলেন না। কিন্তু পরবর্তীকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিদেশী রাষ্ট্র ও দাতা সংস্থার সমর্থন এবং আর্থিক প্রলোভনে তিনি এই দাবিতে শরিক হন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি।
বিশ্ব আদিবাসী দিবসকে সামনে রেখে আবার নতুন করে বিতর্কটি জমে উঠেছে। বাংলাদেশে আদিবাসী কারা- এই বিতর্কটি খুব বেশী হলে এক দশকের। বিষয়টি নতুন হলেও তা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সচেতন মহলকে বেশ আন্দোলিত করেছে। জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যে এ বিতর্কের সমাধান অবিশ্যম্ভাবী।
২০১৪ সালের ৭ আগস্ট জারী করা সরকারি এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী বর্তমানে দেশে আদিবাসীদের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও বিভিন্ন সময় বিশেষ করে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে ‘আদিবাসী’ শব্দটি বারবার ব্যবহার হয়ে থাকে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে উল্লেখ করে তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, “আগামী ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, আলোচনা ও টকশোতে ‘আদিবাসী’ শব্দটির ব্যবহার পরিহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে এবং সকল আলোচনা ও টকশোতে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে 'আদিবাসী' শব্দটির ব্যবহার পরিহারের জন্য পূর্বেই সচেতন থাকতে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।”
কিন্তু বেশিরভাগ গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম ব্যক্তিগণকে আগের মতই দেদারছে 'আদিবাসী' শব্দ ব্যবহার করতে দেখা যায়। বিশেষ করে যে সরকার এই পরিপত্র জারি করে সেই সরকারেরই অনেক মন্ত্রী, এমপিসহ ঊর্ধ্বতন পদাধিকারিকগণ এই পরিপত্র অবজ্ঞা করে আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে উপজাতি সম্প্রদায়গুলোকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতিদানের জন্য জোরালো দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে তারা সরকারি পরিপত্রের তীব্র সমালোচনা করতেও দ্বিধাবোধ করেননি।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের অর্থপুষ্ট ও মদদপুষ্ট বিতর্কিত সিএইচটি কমিশন উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে চালিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে বহু বছর জুড়ে। সাম্প্রতিক কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনায় এই কমিশনের প্রত্যক্ষ্য ভূমিকা লক্ষ্য করা গিয়েছে। শান্তিবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিতেই মূলত সিএইচটি কমিশন কাজ করে গেছে। শান্তিচুক্তি হবার পর, হঠাত বেকার হয়ে পড়ে এই কমিশন। অনেকেই বলে থাকেন ফান্ডিং-এর অভাবই ছিল এর মূল কারণ। এরপর শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না – এই মর্মে আবার গঠিত হয় এই কমিশন। এবার সুলতানা কামাল, ইফতিখারুজ্জামান, জাফর ইকবাল, কামাল হোসেন সহ অনেক বাংলাদেশী এই কমিশনে অন্তর্ভুক্ত হন। এর প্রধান হিসেবে অবশ্য একজন বৃটিশ সংসদ সদস্য দায়িত্ব লাভ করেন, তিনি খৃষ্টান পাদ্রি লর্ড এরিক অ্যামভুরি। এটা খুব সাধারণ কথা এই কমিশন যতটা না বাংলাদেশ বা উপজাতিদের স্বার্থ দেখবে তার চাইতে বেশী দেখবে আমেরিকার স্বার্থ। এবং সেটাই তারা করে যাচ্ছে সফলভাবে। ইতিমধ্যে তারা উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে প্রচার করার যাবতীয় পন্থা ব্যবহার করেছে। এই বিষয়ে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রাখছে ডেইলী স্টার, প্রথম আলো গং। যেখানে এই কমিশনের কাজ হচ্ছে মানবাধিকার রক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি মৌলিক বিষয় নিয়ে কাজ করা সেখানে তারা কিভাবে পাহাড়ী বাঙ্গালীদের অধিকার হরণ করা যায়, সেই চেষ্টায় লিপ্ত। বাঙ্গালী উচ্ছেদ ও বাঙ্গালীদের সুযোগ সুবিধা বন্ধ করার জন্য সুপারিশ করে তারা রিপোর্ট দিচ্ছে।
তারা হঠাৎ উপজাতিদের আদিবাসী বানাতে চাচ্ছে কারণ বাংলাদেশ সরকার যদি কোনভাবে উপজাতিদের আদিবাসী স্বীকৃতি দেয় তাহলে জাতিসংঘের মাধ্যমে তাদের স্বায়ত্বশাসনের নাম করে খুব সহজেই স্বাধীন করে দিতে পারবে। যে ধারার ওপর নির্ভর করে জাতিসংঘ ও আমেরিকা 'আদিবাসী' পরিচিতি আদায়ের জোর চেষ্টা করছে। সেটি নিন্মরুপ-
আদিবাসীদের অধিকারের উপর জাতিসঙ্ঘের ঘোষণাপত্র : ধারা ৩
"United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples:
Article 3 -- Right to Self-determination
Article 3 -- Right to Self-determination Indigenous peoples have the right of self determination. By virtue of that right they freely determine their political status and freely pursue their economic, social and cultural development."
ধারা ৩ -- আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার
আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আছে। এই অধিকারের বলে তারা স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে (অর্থাৎ তারা কি কোন দেশের মধ্যে থাকবে, না সেই দেশ থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন দেশ গঠন করবে -- সেটা তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে, যেমন জুমিয়ারা কি বাংলাদেশের মধ্যে থাকবে, না বাংলাদেশ থেকে আলাদা হয়ে পার্বত্য এলাকাকে নিয়ে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড গঠন করবে তা জুমিয়াদের রাজনৈতিক ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে) এবং স্বাধীনভাবে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন অনুসরণ করবে।
এই ধারার আলোকেই বিনা রক্তপাতে পশ্চিমা দেশগুলো ও জাতীসংঘের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সম্প্রতি সময়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে পূর্বতীমুর। যা অখন্ড ইন্দোনেশিয়ার অঞ্চল ছিলো। 'আদিবাসী' শব্দ চর্চার বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের অজ্ঞতাকে পুঁজি করেই এক শ্রেনীর মানুষ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের দক্ষিণ এশীয় এজেন্ট হিসেবে এদেশে সক্রিয় বলে ব্যাপক সন্দেহের আর কোন অবকাশ নাই।