সিপাহী বিদ্রোহ উত্তর ইংরেজ বাহিনী যখন দিল্লিতে নির্বিচারে মানুষ খুন করছিল, মুসলমান তখন খেলায় মত্ত ছিল

সিপাহী বিদ্রোহ উত্তর ইংরেজ বাহিনী যখন দিল্লিতে নির্বিচারে মানুষ খুন করছিল, মুসলমান তখন খেলায় মত্ত ছিল

জনগণের মধ্যে 'আমাকে জানানো হয়নি' বা 'রাজনীতি বুঝিনা' বা 'আই হেইট পলিটিকস' বলা লোকেরা বিপদে পরে সবচেয়ে বেশি। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের প্রতিক্রিয়ায় সংঘটিত দিল্লি জেনোসাইডে এটাই ঘটেছিল।

দিল্লিতে যখন ব্রিটিশ সৈন্যরা কামানের গোলা নিক্ষেপ করছিল দিল্লির অধিবাসীরা মশকরা করে মজা লুটতেছিল। তাঁরা মনে করেছে এটা এক ধরনের আতশবাজি। সূফী ও উর্দু কবি খাজা হাসান নিজামি তাঁর Delhi Ki Jan Kuni (The Agony of Delhi) বইয়ে লিখেন (১);

''The residents of Delhi have always been known at times of joy and in times of hardship never to lose their sense of joy and leisure. When the British started shelling Delhi, the residents instead of feeling terrified or afraid looked at the spectacle as a show of fireworks. When the firing started they would climb on their roofs to see the shells coming they would then shout and point them out to each other and then wait to see where the shells were falling.'' (P:27)


তাঁদের মজা এতেই সীমাবদ্ধ ছিলনা। যখন দিল্লিতে নির্বিচারে মানুষদের মারা হচ্ছিল তখনো তাঁদের কোন হুঁশ ছিলনা। প্রভাবশালী ও অভিজাত লোকদের গ্রেফতার করা হচ্ছিল, গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছিল। অথচ ফাঁসিতে ঝুলানোর আগের দিন রাতেও তারা দাবা ও অন্যান্য খেলায় ব্যস্ত ছিল। খাজা হাসান নিজামি লিখেন;

''The feeling of fun and leisure amongst the residents of Delhi was not limited to this spectacle, even after the capture of Delhi when people were being killed and murdered everywhere; the residents of Delhi were not cowered. Famous nobles from Delhi were captured, were tried and condemned to death but the night before they were to be hanged, they would pass their time playing chess, and other games such as Kunjafa, and Chaucer''. (P:28)

মুসলিমদেরকে দুনির্দিষ্টভাবে টার্গেট করে মেরে ফেলা হচ্ছিল। তাঁদেরকে ফাঁসিতে ঝুলানোর দৃশ্যটা ছিল মর্মান্তিক। তাঁদেরকে লাইন ধরে দাঁড় করানো হত। এক গ্রুপের সামনে অন্য গ্রুপকে মারা হত এবং এই দৃশ্য দেখতে বাধ্য করত। হাত বেঁধে কামানের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হত ভিক্টিমদের। এবং যখন কামান দাগানো হত সেই মানুষের শরীরটা উড়ে গিয়ে পরত শহরের বাহিরে। আর এই দৃশ্য দেখে মজা নিতে আসত সাধারণ ব্রিটিশরা,এসব দেখে তাঁরা আনন্দ পেত। খাজা হাসান নিজামি লিখেন;


''Opposite the Chandni Chowk Police Station there used to be a pond, this has now gone. On three sides of it the British had erected gallows for hanging people. At the time of the hangings, the arrangements were quite dreadful. The people who were to be hanged were made to stand in a line. Half of them were hanged and the other half were made to watch the fate that awaited them. Civilised nations do not act in this manner and consider this type of behaviour obnoxious.

The victims would be taken out of the Fort in a cart with their hands tied behind their backs. The British spectators would come around the Police Station to view the hanging. When the hanging took place the spectators would laugh with joy, and the body of the victim was thrown on the cart head down for burial outside the city'' (P:34)

মা-বোন ও নারীদের অবস্থা ছিল সবচেয়ে করুণ। তাঁদের অনেকেই এমন ছিলেন যে ঘরের বাহিরে যায়নি, পর্দার মধ্যে ছিল। ঘরে ঘরে যখন ব্রিটিশ সৈন্যরা যেতে লাগল তাঁরা ধর্ষণ থেকে বাঁচতে, সম্মান, ইজ্জত বাঁচাতে পানির কুপগুলোতে লাফিয়ে পরতে লাগল। মরতে মরতে পুরো কূপগুলো এতটাই ভরে গিয়েছিল যে শেষের দিকে যারা লাফিয়ে পরত, পরত অন্য দেহের ওপর। মানব শীরের লাশে কূপ ভর্তি হয়ে গভীরতা কমে আসায় শেষের দিকে আত্মহত্যা করতে যাওয়া কেউ কেউ মরতনা। পরে তাদের অনেককেই আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

এর ওপর ছিল গণলুটপাট। পাঞ্জাবী শিখ, মুসলিম ও বেলুচিস্তান থেকে আগত সৈন্যদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল। খাজা হাসান নিজামি'র বইয়ে একটা অংশ আছে যার শিরোনাম 'How did the Hindus in Delhi become rich'। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে একটা সম্ভ্রান্ত জনগোষ্ঠী রাতারাতি ফকির, ভিক্ষুতে পরিনত হয়েছে। সিপাহী বিদ্রোহের পর দিল্লি'র মুসলিমেরা এমন একটি উদাহরণ। অথচ ৯০% এর বেশি জনগন এই বিদ্রোহের সাথেও ছিলনা, পাছেও ছিলনা।

৬ মাস পর স্যার লরেন্স যখন দিল্লির দায়িত্ব নিয়ে আসে সে মুসলিমদের দিল্লিতে ফিরতে অনুমতি দেয়। হাসান নিজামীর বর্ণনায় জানা যায় মাত্র কয়েক মাসে দিল্লির মুসলিম জনগোষ্ঠীর মাত্র ২৫% তাদের আবাসে ফিরে আসতে পেরেছিল। In short, the Mutiny which came as an angel of destruction for the Muslims became a Goddess of Wealth for its Hindu residents. (P:40)

দিল্লীতে মুসলিম শাসনকালে যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, বিদ্রোহের ফলে তা একেবারে মুছে গেল। ১৮৫৮ সালের ক্যালকাটা রিভিউ পত্রিকার জানুয়ারী-জুন সংখ্যায় জনৈক প্রবন্ধ লেখক লিখেছেনঃ

''পাঁচ বছর আগে আমি দিল্লীতে গিয়েছিলাম, সেখানে মুসলিম পত্রিকার সংখ্যাধিক্য দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম। বিদ্রোহের পরে ব্রিটিশ যখন দিল্লী বিধস্ত করল, তখন আর তার কিছুই অবশিষ্ট রইল না। সংস্কৃতির কুসম শুকিয়ে ধুলায় ঝরে পড়ল। ‘জাকাউল্ল্যা অব দিল্লী’ গ্রন্থে সি. এফ, এডজে লিখেছে, “বিদ্রোহের এক বছর পর পর্যন্ত দিল্লীর উপর দিয়ে যে মরণ-ঝঞ্জার তাণ্ডব গিয়েছে তাতে সংস্কৃতির আর লেশমাত্র অবশিষ্ট রইল না। সে আঘাতের জের মুসলিম শিক্ষা আজও কাটিয়ে উঠতে পারে নি। অন্যদিকে হিন্দু সংস্কৃতির পুনরুত্থানের পীঠ ছিল কলকাতায়। সেখানে বিদ্রোহের ঝড় বয়নি, তার রধিরাক্ত বন্যার প্লাবন থেকে সে রক্ষা পেয়েছে, তার ধন-সম্পত্তি জনপ্রাণী রয়েছে অক্ষত, তার সংস্কৃতি রয়েছে অনাহত। এর ফলেই হিন্দু ও মুসলমান এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা ব্যবধান গড়ে উঠেছে ধীরে ধীরে। ব্যবধান অপ্রীতির সন্দেহের এবং তিক্ততার। আজ ভারতবর্ষের জাতীয় জীবন যে সাম্প্রদায়িক কলহের দ্বারা কণ্টকিত তা সিপাহী বিদ্রোহের অব্যবহিত পরবর্তী কালের উত্তরাধিকার।'' (২)

নোটঃ
(১) Syed Khwaja Hasan Nizami, Delhi Ki Jan Kuni, Published by Ibn Arbi, 1922, Translated by A Sattar Kapadia as 'The Agony of Delhi' 2003,https://www.scribd.com/…/44684266/Agony-of-Delhi-Khwaja-Has…


(২) উদৃত, হায়দার আলী চৌধুরী, পলাশী যুদ্ধোত্তর আযাদী সংগ্রামের পাদপীঠ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা, ১৯৮৭ পৃঃ ৩০৫-৩০৬