পহেলা বৈশাখ ও ইতিহাস:
ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা
হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করতো। ----- খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের
লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করে। সে মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার
আনার আদেশ দেয়। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ
ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবী হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন সনের নিয়ম বিনির্মাণ
করে। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে নতুন সন গণনা শুরু হয়। তবে এই
গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর- ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে
এই সনের নাম ছিল ফসলী সন,
পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)
...
আকবরের শাসনামলে আকবর প্রাথমিক অবস্থায় একজন ধর্মপ্রাণ
মুসলিম ছিলো, কিন্তু কালক্রমে হারেমের অভ্যন্তরের রাজপুত এবং হিন্দু রানীদের প্ররোচনা এবং তৎকালীন
হিন্দুদের আবেদনে ও সে এক বিকল্প সন খুঁজছিল। হিন্দুদের অভিযোগ ছিল, যেহেতু হিজরী
সন অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হচ্ছে, সেহেতু তাদের পূজা অর্চনায় সমস্যা
হচ্ছে। আনন্দনাথ রায়ও ঠিক এমনটাই বলেছিল-
‘আকবর বাদশাহর রাজত্বকালে হিন্দু সম্প্রদায় বাদশাহের কাছে জ্ঞাপন করে, আমাদের ধর্মকর্ম
সম্পর্কীয় অনুষ্ঠানে হিজরী সন ব্যবহার করতে ইচ্ছা করি না। আপনি আমাদের জন্য পৃথক সন
নির্দিষ্ট করে দিন। আকবর হিন্দু প্রজার মনোরঞ্জনার্থে হিজরী সন থেকে দশ-এগার বছর কমিয়ে
এলাহী সন নামে একটি সনের প্রচলন করে। যা আমাদের বঙ্গদেশের সন বলে চলে আসছে।’ (সূত্র:
বারভূঁইয়া, লিখক- আনন্দরায়)
সুতরাং এখানে বোঝা যাচ্ছে হিন্দুদের পূজা এবং আকবরের
আর্থিক উপকার তথা ব্যবসায়িক চিন্তা ভাবনার জন্যই এই নতুন সনের উৎপত্তি , যার পর পাঁচশ
বছরও অতিবাহিত হয় নাই। সুতরাং এটা কিভাবে বাঙালির হাজার বছরের প্রাণের উৎসব হয়?
.........................................................
বাংলাদেশের সূচনা:
বাংলাদেশে প্রথম পহেলা বৈশাখ পালিত হয় ‘ছায়ানটের’
মাধ্যমে ১৯৬৪ সনে খুবই সল্প পরিসরে, যার মূলে ছিল কিছু রবীন্দ্রপ্রেমী
কুখ্যাত নাস্তিক। ওয়াহিদুল হক, সানজীদা হোসেন, শামসুন্নাহার রহমান, সুফিয়া কামাল
অন্যতম। (সূত্র- মুনতাসীর মামুন, ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী, ২য় খ-)
...
উল্লেখ্য, সুফিয়া কামাল হলো রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম
বিরোধী রিটের ১৫ জনের মাঝে অন্যতম একজন, তারা আজীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে
ব্যবসা করেছে, কিন্তু ১৯৭১ সালে তার ধানমন্ডির বাসভবনে সে নিরাপদেই ছিলো, যা সে তার
একাত্তরের ডাইরী নামক গ্রন্থে স্বীকার করেছে।
আরেক জন হলো ওয়াহিদুল হক, যার মৃত্যুর
পর লাশের পাশে অভিনেতা খালেদ খানের স্ত্রী এবং তারই ভাতিজি মিতা হকের নেতৃত্বে রবীন্দ্রসঙ্গীত
গাওয়া হয়! সুতরাং বুঝতেই পারছেন- কারা এই উৎসবের প্রবক্তা! এ প্রসঙ্গে সাহিত্যিক আহমক
রফিকের একটি উক্তি দ্রষ্টব্য।
“বাঙালির শ্রেষ্ঠ সেক্যুলার জাতীয় উৎসব বাংলা নববর্ষ” (সূত্র- যঃঃঢ়://রং.মফ/৭০ঙজষৎ)
.........................................................
পান্তা ইলিশের সূচনা:
এ প্রসঙ্গে সরাসরি সাংবাদিক সাইফুল্লাহ মাহমুদ
দুলালের লিখাটাই কপি করছি;। সে লিখেছে- “১৯৮৩ সাল। চৈত্রের শেষ। চারিদিকে বৈশাখের
আয়োজন চলছে। আমরা আড্ডা দিতে পান্তা-ইলিশের কথা তুলি। বোরহান ভাই রমনা বটমূলে পান্তা-ইলিশ
চালুর প্রস্তাব দিলেন,
আমি সমর্থন দিলাম। ফারুক মাহমুদ পুরো আয়োজনের ব্যবস্থা করলেন।
সম্ভবত ৫ টাকা করে চাঁদা ধরলেন। বাজার করা আর রান্না-বান্নার দায়িত্ব দিলেন বিপ্লব
পত্রিকার পিয়নকে। রাতে ভাত রেঁধে পান্তা তৈরি করে, কাঁচামরিচ-শুকনো মরিচ, পেঁয়াজ, ইলিশ ভাজা
নিয়ে পর দিন ‘এসো হে বৈশাখে’র আগেই ভোরে আমরা হাজির হলাম বটমূলের রমনা রেস্টুরেন্টের
সামনে। মুহূর্তের মধ্যে শেষ হলো পান্তা-ইলিশ। এভাবে যাত্রা শুরু হলো পান্তা ইলিশের।
অপরদিকে (সম্ভবতঃ একই বছর বা পরের বছর) শহিদুল
হক খানও এই প্রক্রিয়ার সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়। সে দাবি করেছে, ‘নিজ হাতে
পান্তার পোস্টার লিখেছে,
তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ ভাত রেঁধেছে, ইলিশ মাছ
ভেজেছে, কাঁচামরিচ পেঁয়াজ কেটেছে, মাটির সানকি সংগ্রহ করেছে।’ (আমাদের সময়: ৯ অক্টোবর ২০০৯ ঈসায়ী)। এবং তারা এ নিয়ে বিটিভি’তে সাক্ষাৎকারও দিয়েছে!
তবে রমনা বটমূলের পান্তা-ইলিশের উদ্যোক্তার কৃতিত্ব এককভাবে কেউ নয়। কম্যুনিস্ট সিকদার
আমিনুল হক, সহকারী সম্পাদক ফারুক মাহমুদ, দেশের সাহিত্য সম্পাদক হেলাল হাফিজ, সাংবাদিক
মাহবুব হাসান, শহিদুল হক খান,
মুন্সী আবদুল মান্নান, রোজি ফেরদৌস প্রমুখ যাদের নাম উল্লেখ
করলাম, তারা সকলেই নানাভাবে কমবেশি যুক্ত ছিলো।” (সূত্র- যঃঃঢ়://ধৎঃং.নফহবংি২৪.পড়স/?ঢ়=৩৫৯৭)
সুতরাং এই পান্তা ইলিশ ও যে মাত্র ৩৩ বছর আগের
কাহিনী তাও প্রমাল হোলো,
এর পিছনের পুরোটাই ছিল ব্যবসায়িক চিন্তা-ভাবনা তথা র-এর প্রেসক্রিপশনে
পরিচালিত দীর্ঘমেয়াদি চক্রান্ত!
.........................................................
পহেলা বৈশাখের মূলত কি:
আসুন দেখি এই দিনে কি কি পূজা বা উৎসব পালিত হয়?
১. পুণ্যাহ:
পুণ্যাহ মূলত সংস্কৃত শব্দ। অর্থ- ভালো কাজের সুফল
পাবার দিন। কথিত জমিদার প্রথার সময় বছরের সূচনার দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখে অনুষ্ঠান করা
হতো। আসলে পুণ্যাহ ছিল কথিত জমিদারদের দিক থেকে আর্থিক স্বার্থ উদ্ধারের কৌশল। (যঃঃঢ়://রং.মফ/ল৮ড৪মধ)
২. হিন্দুদের ঘটপূজা:
হিন্দুরা পহেলা বৈশাখের দিনে একটি মাটির ঘড়া বা
ঘটের উপর ছবি, স্বস্তিকাচিহ্ন ইত্যাদি এঁকে তার পূজা করে থাকে।
৩. গণেশ পূজা:
হিন্দুদের নিয়ম হচ্ছে, যেকোনো কাজ
শুরু করার সময়ে গণেশপূজা করে শুরু করা। পহেলা বৈশাখ যেহেতু বছরের প্রথম দিন, সেহেতু হিন্দু
ব্যবসায়ীরা এই দিনে নতুন বছরের ব্যবসা শুরু করার জন্য গণেশপূজা করে। তারপর হালখাতা
(নতুন খাতা) খুলে থাকে। (যঃঃঢ়://রং.মফ/ুড়ফজ৪ী)
৪. সিদ্ধেশ্বরী পূজা/বউমেলা:
সোনারগাঁওয়ে ব্যতিক্রমী এক মেলা বসে, যার নাম বউমেলা।
এটি স্থানীয়ভাবে ‘বটতলার মেলা"’ নামেও পরিচিত। জয়রামপুর গ্রামের মানুষের ধারণা, প্রায় ১০০
বছর ধরে পহেলা বৈশাখে শুরু হওয়া এই মেলা পাঁচ দিনব্যাপী চলে। প্রাচীন একটি বটবৃক্ষের
নিচে এই মেলা বসে,
যদিও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর পুজোর জন্য এখানে
সমবেত হয়।
বিশেষ করে কুমারী ও নববধূরা, এমনকি জননীরা
পর্যন্ত তাদের মনস্কামনা পূরণের আশায় এই মেলায় এসে পূজা-অর্চনা করে। সন্দেশ-মিষ্টি-ধান
দুর্বার সঙ্গে মৌসুমী ফলমুল নিবেদন করে ভক্তরা। পাঁঠাবলির রেওয়াজও পুরনো। বদলে যাচ্ছে
পুরনো অর্চনার পালা। এখন কপোত-কপোতি উড়িয়ে শান্তির বার্তা পেতে চায় ভক্তরা দেবীর কাছ
থেকে। (যঃঃঢ়://রং.মফ/ষঊযঁখঁ)
৫. ঘোড়ামেলা:
সোনারগাঁ থানার পেরাব গ্রামের পাশে আরেকটি মেলার
আয়োজন করা হয়। এটির নাম ঘোড়ামেলা। লোকমুখে প্রচলিত যামিনী সাধক নামের এক ব্যক্তি ঘোড়ায়
করে এসে নববর্ষের এই দিনে সবাইকে প্রসাদ দিতো এবং সে মারা যাওয়ার পর ওই স্থানেই তার
স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হয়। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে স্মৃতিস্তম্ভে মালউনরা একটি করে মাটির
ঘোড়া রাখে এবং এখানে মেলার আয়োজন করা হয়। এ কারণে লোকমুখে প্রচলিত মেলাটির নাম ঘোড়ামেলা।
(যঃঃঢ়://রং.মফ/ষঊযঁখঁ)
৬. চৈত্রসংক্রান্তি পূজা-অর্চনা বা নীলপূজা বা
চড়কপূজা বা গম্ভীরাপূজা বা কুমিরের পূজা বা অগ্নিনৃত্য:
চড়কপূজা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব। চৈত্রের শেষ দিনে তথা চৈত্রসংক্রান্তিতে এ পূজা অনুষ্ঠিত
হয় এবং বৈশাখের প্রথম দু-তিন দিনব্যাপী চড়কপূজার উৎসব চলে। এ পূজার অপর নাম নীলপূজা।
গম্ভীরাপূজা বা শিবের গাজন এই চড়কপূজারই রকমফের। চড়কপূজা চৈত্রসংক্রান্তিতে অর্থাৎ
চৈত্র মাসের শেষ দিবসে পালিত হয়। আগের দিন চড়ক গাছটিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়।
এতে পানিভর্তি একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ রাখা হয়, যা পূজারীদের
কাছে ‘বুড়োশিব’ নামে পরিচিত। পতিত ব্রাহ্মণ এ পূজার পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করে। পূজার
বিশেষ বিশেষ অঙ্গ হলো কুমিরের পূজা, জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর হাঁটা, কাঁটা আর
ছুঁড়ির উপর লাফানো,
বাণফোঁড়া, শিবের বিয়ে, অগ্নিনৃত্য, চড়কগাছে দোলা
এবং দানো-বারানো বা হাজারা পূজা করা।
(যঃঃঢ়://রং.মফ/ুধ৪১য়৭;
যঃঃঢ়://রং.মফ/ঔএ১ইঢ়;ি যঃঃঢ়://রং.মফ/১ৎছড়চঠ; যঃঃঢ়://রং.মফ/জরঝয়বঢ়)
৭. বৈসাবী:
ত্রিপুরাদের বৈশুখ, মারমাদের
সাংগ্রাই ও পানি উৎসব বা চাকমাদের বিজু উৎসব- সম্মিলিত উৎসবের নাম বৈসাবী। (সূত্র-
যঃঃঢ়://রং.মফ/ওবগঐকপ)
৮. মঙ্গল শোভাযাত্রা:
মঙ্গল শোভাযাত্রা মানে হলো মঙ্গল কামনা করে অশুভ
বিতাড়নের জন্য যে যাত্রা। এই শোভাযাত্রায় সবসময় বিভিন্ন দেবদেবীর বাহন থাকে, যা একজন মুসলিম
কখনোই মেনে নিবে না। যেমন: লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা, সরস্বতীর বাহন রাজহাঁস, গণেশের বাহন
ইঁদুর, দুর্গার বাহন সিংহ,
মনসার বাহন সাপ, কার্ত্তিকের বাহন ময়ূর, মহাদেবের
বাহন ষাঁড়, যমরাজের বাহন কুকুর,
ইন্দ্রের বাহন হাতি, ব্রহ্মার বাহন পাতিহাঁস, বিশ্বকর্মার
বাহন ঢেঁকি, শীতলার বাহন গাধা ইত্যাদি।
দেখা যাচ্ছে, পহেলা বৈশাখে হিন্দুদের বিভিন্ন পূজা
ও উপলক্ষ বিদ্যমান,
কিন্তু মুসলমানদের কোনো অনুষ্ঠান এই দিনে নেই।
...................................................
পহেলা বৈশাখ হলো একান্তই হিন্দুদের নিজস্ব দিবস, নিজস্ব উৎসব।
উপরের যেসব উৎসবের বর্ণনা দেয়া হয়েছে পহেলা বৈশাখের, তা মূলত হিন্দুদের উৎসব। ঘটা করে প্রথম
বাংলা নববর্ষ পালন করা হয় ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময়। ব্রিটিশরাজের বিজয় কামনা করে ১৯১৭ সালে
পহেলা বৈশাখে হোমকীর্ত্তন ও পূজার ব্যবস্থা করে কলকাতার হিন্দু মহল। আবার যখন দ্বিতীয়
বিশ্ব যুদ্ধের দামামা বাজলো, তখন হিন্দু সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ১৯৩৮ সালে উৎসব করে পহেলা বৈশাখ
পালন করলো। পূজায় পূজায় ইংরেজদের জন্য বিজয় কামনা করলো। (সূত্র- প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে
বাংলা বর্ষবরণ: মুহম্মদ লুৎফুল হক, দৈনিক প্রথম আলো- ১৪ এপ্রিল ২০০৮ ঈসায়ী)
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয়
যে এই পহেলা বৈশাখ যে যে উৎসব পালন করা হয়, তা কখনোই বাংলাদেশীদের কোনো উৎসব ছিল
না, এটা হলো- হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসবের একটি দিন। কতিপয় নাস্তিকরা এই জিনিসটি বাংলাদেশে
শুরু করে দিয়ে যায়।
এই উৎসব যেহেতু একান্ত হিন্দুদের, সেহেতু এই
উৎসব প্রকৃত মুসলিমরা অবশ্য অবশ্যই যাবেন না এবং অন্য মুসলিমদেরকে যেতে উৎসাহিত করবেন
না।
কারণ ‘র’-এর চক্রান্তে এই উৎসব এখন বাংলাদেশের
অন্যতম মগজ ধোলাই উৎসব হয়ে গিয়েছে। যার প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন এই দিন উপলক্ষে এবারই
প্রথম সরকার ২০ ভাগ বোনাসের ব্যবস্থা করেছে, সরকারি চাকরীজীবীদের জন্য। অথচ হযরত
ইমাম হাফস কবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন যে, ‘নববর্ষ উপলক্ষে একটা ডিমও যদি দেয়া
হয়, তবে সারা জীবনের আমল বরবাদ হয়ে যাবে।’
দেরাদুনে ‘র’-এর ট্রেনিং পাওয়া ইনু তো ফতওয়াই দিয়েছে-
‘এই দিনে গেলে মুসলমানিত্ব নষ্ট হবে না।’ নাউযুবিল্লাহ!!!
এই একটি দিনকে ঘিরে অনেক চক্রান্ত চলবে, যা এই কয়দিন
সবকিছু প্রকাশ করার আশা রাখি, যার প্রমাণও পেয়েছে ১৪২২ সনে লিটন নন্দীর হিরো হবার প্রহসনের
মাধ্যমে। এবার নারীবাদীরা তো আরো ব্যাপক পরিসরে অর্ধনগ্ন হয়ে ‘বখাটে ছেলের ভিড়ে ললনাদের
রেহাই নাই’ হতে যাবে।
...
আরেকটি কথা, ১৪২২-এর মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমেই
কিন্তু বাংলাদেশের একমাত্র সমকামী সংগঠন ‘রুপবান’ এবং একমাত্র গে সংগঠন ইঙই (বয়েজ অব
বাংলাদেশ) সর্বপ্রথম তাদের রঙধনু প্যারেড করে। ও হ্যাঁ, এর নেপথ্যে
কিন্তু ব্যারিস্টার সারার ব্লাস্ট তথা ডেভিড বার্গম্যান তথা মোসাদ! অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ
হলো ‘র’ ও মোসাদ-এর মুসলমানবিরোধী চক্রান্তের জয়েন্ট প্রজেক্ট।
ইতিহাসের ধুম্রজালে যুগে যুগে শাসকদের হিন্দু
প্রীতি এবং এর পরিণতি!
সময়কাল-মুঘল আমল।
রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধে চক্রান্তের
দোসর মালউন এবং মুরতাদদের পূর্বসূরিদের অপকর্ম প্রসঙ্গে
বাংলাদেশ বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী
হিন্দুরা প্রায় সময় প্রোপাগান্ডা করে থাকে
যে মুসলমানরা এই উপমহাদেশ দখল করেছে, অনেক মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ করেছে।
আর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও নাকি তাদের সৃষ্টি।
কিন্তু ইতিহাসের ধুম্রজালে হারিয়ে গিয়েছে অনেক
সত্য, কজন জানে প্রকৃত ঘটনাগুলো। এই উপমহাদেশে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরী করেন
প্রথমে মুসলমান উনারাই,
কিন্তু তৎকালীন বিশ্বাসঘাতক হিন্দু দের চক্রান্তে এই উপমহাদেশে জম্ম নেয়
ইংরেজদের মুসলিম বিরোধী কর্মতৎপরতা এবং সেই ফলশ্রুতিতে ইংরেজরা হিন্দুদের বিশ্বাসঘাতকতা কে
পুঁজি করে “ডিভাইড এন্ড রুল” এই কূটনীতির ভিত্তিতে মুসলমানদের হাত থেকে কেড়ে নেয়
ভারতবর্ষ।
সেই ইতিহাসের ধুম্রজাল থেকে পাঠকদের বের করে
আনার জন্যইএই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
লিখার শুরুতে আসুন দেখি কলকাতার নীরদ সি
চৌধুরীর একটা কথা,
“বাঙালি (হিন্দু) পুরুষ ইংরেজ রাজত্বের আগে একমাত্র মুসলমান নবাবের কর্মচারী
হইলে মুসলমানী পোষাক পরিত,
উহা অন্দরে লইয়া যাওয়া হইত না। বাহিরে বৈঠকখানার পাশে একটা
ঘর থাকিত, সেখানে চোগা-চাপকান-ইজার ছাড়িয়া পুরুষেরা ধুতি পরিয়া ভিতরের বাড়িতে প্রবেশ
করিত। তাহার প্রবেশদ্বারে গঙ্গাজল ও তুলসীপাতা থাকিত, মেøচ্ছ পোষাক পরিবার অশুচিতা হইতে শুদ্ধ হইবার জন্য পুরুষরা গায়ে গঙ্গাজল ছিটাইয়া
মাথায় একটা দুইটা তুলসীপাতা দিত।” নাউযুবিল্লাহ!!!
(তথ্যসূত্র: আত্মঘাতী বাঙালী- নীরদ সি চৌধুরী, পৃষ্ঠা ৫০)
অর্থাৎ মুসলিম রাজাদের বা মোঘলদের অনেক
কর্মাচারীই ছিল হিন্দু। তারা রাজদরবারে গেলে মুসলমান পোশাক পড়ত, কিন্তু
বাসায় আসার পর তারা দরজার বাহিরেই সেই পোশাক ছেড়ে গঙ্গা জল ছিটিয়ে নিজেদের তথাকথিত
শুদ্ধ করে নিত। দীর্ঘদিন ধরে পাশাপাশি থাকার পরও মুসলিমদের প্রতি তাদের বিদ্বেষ
ছিল স্বভাবজাত।
মুসলিম শাসকদের মাঝে সবচেয়ে বেশী হিন্দুপ্রীতি
ছিল মুঘল সম্রাট আকবরের । ভারতবর্ষে হিন্দুদের ক্ষমতায়ন ও ভারতের পরাধীনতার পেছনে
সবচেয়ে বড় কারণ ছিল সম্রাট আকবরের মাত্রাতিরিক্ত দাদাতোষণ। তার উত্তরপুরুষ বাদশাহ
শাহজাহানের পুত্র দারাও ছিল তার অনুসারী। ইতিহাস বলছে, এই
হিন্দুতোষক মুঘলদ্বয় শেষপর্যন্ত কিন্তু হিন্দুদের হাতেই লাঞ্ছনা, অপমান ও
বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছিল।
আজকে যারা মালউনদের অপতৎপরতায় মালউনদের ক্রীড়নক হয়ে
রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম সংবিধান হতে বিমোচনের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা
গ্রহন করবে কি?
বিখ্যাত ঐতিহাসিক উপন্যাসিক গোলাম আহমদ
মোর্তজা রচিত ‘বাজেয়াপ্ত ইতিহাস’ বইখানি পড়লেই আকবরের সম্পর্কে অনেক বিশয়ই জানতে
পারবেন। যেমন সে একটা বিয়ে চালু করেছিল যাকে আধুনিক ভাষায় বলা হয়ে থাকে কন্ট্রাক্ট
মেরেজ অর্থাৎ চুক্তিভিত্তিক বিয়ে। নির্দিষ্ট মেয়াদের পর সেই বিয়ে আর বহাল থাকত না।
যা দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরুপেই হারাম। আরও অনেক হিন্দুয়ানী রীতি চালু
করেছিল সে তার রাজপুত,
মারাঠা স্ত্রীদের প্রভাবে। যেমন ফরজ গোসল না করা যা অপবিত্র
হিন্দুদের রীতি ছিল। পাঠকবৃন্দ!! আপনারা আল বিরুনীর “ভারততত্ত্ব” বইটি পড়লে জানতে
পারবেন এই ধরনের অনেক কুসংস্কারের কথা।
আকবরের সবচেয়ে জঘন্য ঘৃণ্য অপতৎপরতা ছিল
হিন্দুদের প্রতি খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে (মুলতঃ এটি ছিল একটি ডাইভারশন, মুসলিম
দের তাদের ধর্মীয় ক্যালেন্ডার হিজরী সন থেকে বের করে আনার জন্য) একটি পঞ্জিকা তৈরী
করে।
সেই অনুযায়ী তৎকালীন হিন্দু ব্রাহ্মণরা অনেক মনগড়া
পুজার জন্ম দেয় যা আজও পালিত হয়ে আসছে। সবচেয়ে আফসুসের বিষয় হোলও এই সনকে কেন্দ্র
ওয়াহিদুল হক নামে এক মুরতাদ (খালেদ খানের স্ত্রী, রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী মিতা হকের
চাচা) ১৯৬৭ সালে চালু করে “পহেলা বৈশাখ” নামে এক অনুষ্ঠান এবং রমনার বটমূলে শুরু
করে অশথ পুজা যা লম্পট নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষীদের কদর্য কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ
করণের অস্ত্রে পরিণত হয়েছে।
আরেকটা ঘটনা না বললেই নয়।
এসপিওনাজ যুগে যুগে ছিল, আছে এবং থাকবে।
রাজপুত, মারাঠা রাজারা সিস্টেমে আকবরের হারেমে ঢুকিয়ে দেয় নিজেদের কন্যাদের। (ঠিক
যেমনটা আজ সরকারী চাকুরীতে গণহারে মালউন ঢুকানো হচ্ছে।) বিয়ের নামে এরা আকবরের
রাজপ্রাসাদের শোভা বর্ধিত করে। এরপর শুরু হয় টিপিক্যালি চক্রান্ত। আকবরকে ইসলাম
বিমুখী করতে করতে এক পর্যায়ে তারা একটি “টেস্ট কেস” হিসেবে কিছু মসজিদ ভেঙ্গে
মন্দির তৈরী করে প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। নাউযুবিল্লাহ!!!
তৎকালীন মুসলিম সম্প্রদায় এর বিরুদ্ধে
ফুঁসে উঠলে আকবরের নিকট প্রতিবাদ করা হলে সে পাল্টা যুক্তি দেখাল, ‘মুসলমানদের
নিশ্চয়ই এই মসজিদসমূহ প্রয়োজন ছিলনা, থাকলে নিশ্চয়ই হিন্দুরা তা ভাঙতে
পারতো না।’ মন্দিরের প্রয়োজন ছিল তাই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!!!
আকবরের মতে, মসজিদও ধর্মস্থান আর মন্দিরও ধর্মস্থান। এক ধর্মস্থান ভেঙে আরেকটি নির্মাণ করা
দোষের কিছু নয়। নাউযুবিল্লাহ!!! তারপরই মসজিদ সংক্রান্ত আইন করে নতুন মসজিদ
নির্মাণ বন্ধ করে দেয়া হয়। নাউযুবিল্লাহ!!!
(তথ্যসূত্র: গোলাম আহমদ মোর্তজা রচিত ‘ইতিহাসের ইতিহাস’, পৃষ্ঠা
১০২-১০৭)
এর ধারাবাহিকতা আপনারা বাবরী মসজিদের ক্ষেত্রে
দেখেছেন।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো আকবর নিজেকে
হিন্দুদের জন্য বিলিয়ে দিলেও হিন্দুরা কিন্তু তার মৃত্যুর পর তার মৃতদেহের সামান্য
মর্যাদাও দিতে চায়নি,
বরং করেছিল চরম অবমাননা।
বাদশাহ আলমগীর শাসনামলে জাঠ হিন্দুরা তাদের
নেতা রামের নেতৃত্বে দিল্লী আক্রমণ করেছিল তৎকালীন সুবাদার শায়েস্তা খাঁর
অনুপস্থিতির সুযোগে। তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল খোদ হিন্দুতোষক আকবরের
সমাধি! তারা আকবরের কবর খুঁড়ে তার অস্থিগুলো তুলে যতদূর সম্ভব অপবিত্র করে আগুনে
ছুঁড়ে ফেলেছিল। জাঠ হিন্দুরা সমাধিতে লুটপাট চালিয়ে সেখানকার অন্যান্য কবরগুলোও
ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল। (মালউনদের ক্রীড়নকরা নছিহত হাছিল করবে কি?)
(তথ্যসূত্র : চেপে রাখা ইতিহাস- গোলাম আহমদ মোর্তজা, পৃষ্ঠা
১৭৫)
ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশী হিন্দুতোষক রাজা
আকবরের এহেন যদি পরিনতি হয় তাহলে বলার অপেক্ষা রাখে না যুগে যুগে এরই ধারাবাহিকতায়
কি হয়েছিল।
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা এরই
ধারাবাহিকতায় রাজবল্লভ,
উমিচাঁদ, জগৎশেঠ দের ষড়যন্ত্রে হারায় তার সাম্রাজ্য। বাংলায় শুরু হয় ইংরেজ
শাসন অথচ এরা উপরে উপরে ছিল সিরাজউদ্দৌলার তোষামোদকারী ।ি
প্রকৃত অর্থে গয়েশ্বর মার্কা উগ্র মৌলবাদী
হিন্দুদের একটা কথাই বলব মুসলিমরা যদি আসলেই অত্যাচারী হতো তাহলে মুঘল আমলেই
বাংলার বুক থেকে হিন্দুদের নাম-নিশানা তারা মুছে দিত।
যুগে যুগে এই চক্রান্ত্রের ধারাবাহিকতায় রানা
বাঁশযুক্তের মত সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী পান্ডারা এখন নিজ মাতৃভুমি বাংলাদেশের
বিপক্ষে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আবহমান ধরে প্রচলিত বাংলার ঐতিহ্য রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম
উনার বিরুদ্ধে আজকে তারা চক্রান্ত করছে। নাউযুবিল্লাহ!!! রাষ্ট্রদ্বীন এর বিরুদ্ধে
তারা সরাসরি রীট এর শুনানী করছে! নাউযুবিল্লাহ!
আপনারা স্বাক্ষী থাকুন ইতিহাস একদিন কথা বলবে।
যারা আজকে রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম উনার পক্ষে আইনী লড়াই করবে তারাই প্রকৃত মুসলমান
হিসেবে গৃহিত হবে।,
হারাম খেলাধূলা নিয়ে মেতে থাক বোবা শয়তানেরা গো আযম এবং জগৎশেঠদের উত্তরসূরী হিসেবে ইতিহাসের আস্তাকূঁড়ে
নিক্ষিপ্ত হবে।