পাহাড়ে ধর্ম প্রচারের নামে চলছে অস্ত্রের ব্যবসা

Related imageপাহাড়ে ধর্ম প্রচারের নামে চলছে অস্ত্রের ব্যবসা


আঞ্চলিক রাজনীতির এবং ধর্মের প্রচারের নামে অস্ত্র পাচার ও মজুদের নিরাপদ ট্রানজিট হয়ে উঠেছে গভীর অরন্য ও লেক নির্ভর পার্বত্য চট্টগ্রাম। পাশ্ববর্তী দুইটি দেশের সীমান্ত এলাকারগুলোর সাথে অভিন্ন সংস্কৃতি ও প্রায় একই ধরনের স্বজাতীয় জাতিগোষ্ঠির বসবাসের কারনে সৃষ্ট আন্তঃগোত্রিয় সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের এক দশমাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা তাদের নিরাপদ আবাসস্থল বানিয়ে ফেলেছে।

একদিকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা অপরদিকে মায়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অন্যতম প্রধান সহযোগি হয়ে কাজ করছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তথাকথিত অধিকার আদায়ের নামে গঠিত সশস্ত্র আঞ্চলিক সংগঠনগুলো। মূলত পাশ্ববর্তী দুইটি দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে তাদেরই মাধ্যমে নিজেদের অস্ত্রের ভান্ডার শক্তিশালী করছে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র আঞ্চলিক দলগুলো।


অত্রাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে গহীন অরন্যে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কি ধরনের বিচরন রয়েছে। এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও তাদের নেতাদের ছত্রছায়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘাটি গেড়ে বসে পাশ্ববর্তী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিরাপদেই চালিয়ে গেছে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম।

আর গুরু দক্ষিনা হিসেবে পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের এসব বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দিচ্ছে অঢেল টাকা আর ভারী ভারী আগ্নেয়াস্ত্র। অতি সম্প্রতি রাঙামাটির রাজস্থলী থেকে আটককৃত আরাকান নেতা রেনিন সু ও তার সুরৌম্য প্রাসাদ সেটাই প্রমান করছে। এখানে এসে মাত্র কটি বছরের মধ্যেই একটি স্থানীয় মেয়েকে বিয়ে করে সেকিনা অত্র উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার গৌরবও অর্জন করেছে।

আর রেনিন সো’র মতো এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী নেতাদের দেশে বসবাস করার মতো লাইসেন্স (নাগরিক সনদ ও জন্ম সনদ) প্রদান করছে খোদ আমাদের জনপ্রতিনিধিরা। তাদেরই প্রদত্ত সনদ ও সুপারিশে এসব ভীন দেশীয় সন্ত্রাসী কমান্ডাররা বাংলাদেশ হয়ে চলে যাচ্ছে বর্হিবিশ্বে। সেখানে গিয়ে তারা যোগ দিচ্ছে আর্ন্তজাতিক অপরাধ সিন্ডিকেটের সাথে। আর এসব অপরাধী সিন্ডিকেটদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম কে নিরাপদ রুট হিসেবে অত্রাঞ্চল দিয়ে নিয়ে আসছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ ভারী ভারী অস্ত্র-সস্ত্র।


পার্বত্য চট্টগ্রামের দূর্গমতার সুযোগ নিয়ে এখানকারই কিছু স্বার্থানেষী উপজাতীয় মহলের কারনে এখানে প্রবেশ করছে কোটি কোটি টাকার মারণাস্ত্র। এসব মারণাস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বত্র। এখানকার আঞ্চলিক দল গুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এসব অস্ত্রের কারনেই এখানে অপহরণ-চাঁদাবাজি-ভাতৃঘাতি সংঘাত থেকে শুরু করে এহেন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করেনা। অস্ত্রের ঝনঝনানিতে পাহাড়ের মানুষের পাশাপাশি এখন নাভিশ্বাস উঠেছে খোদ সরকারের ভেতরেই।

সংশ্লিষ্ট্য একটি সূত্র জানিয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ম প্রচারণার আড়ালে চলছে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা। আর এর নেপথ্যে রয়েছে ভারতীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। দুর্গম পাহাড়ি এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে অস্ত্র ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের স্থানীয় এজেন্টরা। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে।

বাংলাদেশ-ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন দুর্গম এলাকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছ থেকে সংগ্রহ করে এসব অস্ত্র বাংলাদেশের বিভিন্ন পাহাড়ি ও দেশীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করা হয়।
এর নেপথ্যে পালিয়ান নামে এক ভারতীয় অস্ত্র ব্যবসায়ির জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। বাহিনী সূত্র জানায়, পালিয়ান ভারতের মিজোরাম এলাকায় থাকে। সে অস্ত্র ব্যবসার জন্য বেছে নিয়েছে মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও ভারত- এই তিন রাষ্ট্রের সীমান্তের সংযোগস্থলটিকে। গহীন জঙ্গল থাকায় ওই এলাকায় কোনো দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষেই কোনো ধরনের অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।

সূত্রটি আরো জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারণার আড়ালে অস্ত্র ব্যবসা চলে আসছে। অস্ত্রগুলো মূলত পার্বত্য তিন জেলার বিভিন্ন বিবদমান গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করা হয়। অস্ত্র ব্যবসায়ীরা তাদের কাজে বিভিন্ন উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর সদস্য ছাড়াও কিছু কিছু বাঙালিকে বেছে নেয়। তবে বাঙালিরা সাধারণত ধর্ম প্রচারের কাজ করে না। ভাষাগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে ধর্ম প্রচার করে উপজাতীয়রা। আর এসব ধর্ম প্রচারের অন্তরালে চালিয়ে যায় অস্ত্র ব্যবসা।

ত্রিদেশীয় সীমান্তপথ দিয়ে আসা অস্ত্র দেশের ভেতরে ছড়িয়ে দেয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তারা পাহাড়ি। তারা মূলত অস্ত্র কেনাবেচা করে।