স্বাধীনতা পরবর্তি ভারত বিদ্বেষীতার কারন

Image result for ভারত বিদ্বেষীতারস্বাধীনতা পরবর্তি ভারত বিদ্বেষীতার কারন
১. ‘আমি ফিরে না এলে তোমরা সিকিম হইয়া যাইতা।‘ -শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৩ সালে সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ও গিয়াস কামাল চৌধুরীকে ৩২ নম্বর রোডে এক ব্যক্তিগত আলাপচারিতায়। (রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন,অনন্যা, ২০০০, ঢাকা, পৃঃ২৮)
২. “১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে আমি পাঁচ বার ঢাকা শহরে ঢুকেছি। মাঝখানে প্রতিটি এলাকায় একই কথা শুনেছি। সকলেরই এক প্রশ্ন, ‘ভারতীয় বাহিনী কবে আসবে? ইন্দিরা গান্ধী কবে সৈন্য পাঠাবে? ইন্দিরা গান্ধী সৈন্য পাঠাচ্ছে না কেন? সে কি আমাদের মেরে ফেলতে চায়?…অন্যদিকে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকায় যে কথাগুলো প্ৰথম শুনলাম তার মর্মার্থ হচ্ছে চরম ভারত বিরোধিতা। কোন কৃতজ্ঞতা নয়, কোন মুক্তিযুদ্ধের গল্প নয়। সর্বত্র শুধু লুটপাটের কাহিনী।”(নির্মল সেন, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক নির্মল সেন, আমার জবানবন্দী, তরফদার প্রকাশনী, ২০০৬, ঢাকা, পৃ. ৩৮১ )
৩. ‘৭১ সালে অনুকূল আবহাওয়ার ফলে মুক্তিযুদ্ধ চলা সত্ত্বেও দেশে প্রচুর ধান হয়েছিল। তখন দেশে চালের দাম ছিল ৩৫-৪০ টাকা মন। উন্মুক্ত সীমান্ত বাণিজ্যের ফলে লাখ লাখ মন ধান ভারতে চলে যাওয়ায় স্বাধীনতার ছয় মাসের মধ্যে চালের মন এক শত টাকায় উঠে। ফলে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্ৰতিক্রিয়া দেখা দেয়।‘( মো. আবদুল মোহাইমেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ, প্রকাশক: লেখক নিজে, ঢাকা, ১৯৮৭, পৃ.২৩)
৪. স্বাধীনতার আগে ভারতের মুদ্রার সাথে পাকিস্তানের মুদ্রার বিনিময় মূল্য প্রায় সমান থাকলেও ১৬ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশের মুদ্রার মান কমতে থাকে। মাস ছয় পরে এটা ভারতীয় মুদ্রার তুলনায় প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। যুদ্ধের পর এটা কেন কম হবে তার কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয় নি। দেশের বাজারে ভারতীয় পণ্য কিনতে গেলে অন্তত ৩০-৪০ শতাংশ বেশি বাংলাদেশী মুদ্রা দিতে হচ্ছিলো তখন। অনেক ক্ষেত্রে বাস্তব বিনিময় হার ভারতীয়দের পক্ষে আরও বেশি অনুকুল ছিল। ফলে কিছুদিন আগেও যারা পাঞ্জাবী বিদ্বেষে ভুগতেন তারা এবার ভারত বিদ্বেষে ভুগতে শুরু করেন।


৫. বিষয়টি আরও গভীরতা পায় বাংলাদেশের প্রথম কিস্তির ৩৫০ কোটি টাকার কারেন্সি নোট মুদ্রণের দায়িত্ব ভারতকে প্রদানের মধ্য দিয়ে। পত্রিকায় এসময় একই নম্বরের একাধিক নোটের ছবি প্ৰকাশিত হয়। গুজব ছড়িয়ে পড়ে ভারত অধিক নোট ছাপিয়ে বাজারে ছেড়েছে। ফলে টাকার দাম আরও পড়ে যায় এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে।( মো. আবদুল মোহাইমেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ, প্রকাশক: লেখক নিজে, ঢাকা, ১৯৮৭, পৃ. ২০)