ঈশ্বর গুপ্ত মুসলিমবিদ্বেষিতা

Image result for ঈশ্বর গুপ্তঈশ্বর গুপ্ত মুসলিমবিদ্বেষিতা
আমরা জানি ঈশ্বর গুপ্ত যুগ সন্ধিক্ষণের কবি। অর্থাৎ প্রাচীন ও আধুনিক কাব্য প্রতিভা ঈশ্বর গুপ্তকে আশ্রয় করেছে। তার জন্ম ১৮১২ খ্রীস্টাব্দে। ১৫ বছর বয়সে বিয়ে করে তবে পতড়বী দুর্গামণি দেবীর সঙ্গে সে আজীবন সংসার করেনি। আশুতোষ দেবের ভাষায় “ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত কোন সাধারণ কবি ছিল না, বরং অসাধারণই ছিল। কারণ সে যুগের অত্যন্ত সীমিত সংখ্যক পত্রপত্রিকার বাজারে সে বিখ্যাত পত্রিকা সংবাদ প্রভাকরের সম্পাদনা করত। এছাড়াও ‘সংবাদ রতড়বাবলী’, ‘পাষণ্ড পীড়ন’ প্রভৃতি তার সম্পাদিত সাময়িক পত্রিকা ছিল। বোধেন্দু বিকাশ প্রভৃতি প্রবন্ধও তার দ্বারা রচিত হয়। সবচেয়ে মনে রাখার মতো উল্লেখযোগ্য কথা হলো, স্বাধীনতা আন্দোলনের যে প্রতিষ্ঠাতা বলে কথিত সেই বঙ্কিমচন্দ্রের এই ছিল গুরু (নতুন বাঙ্গালা অভিধানের চরিতাবলী অধ্যায়, পৃষ্ঠা ১১১৫, আশুতোষ দেব সংকলিত)।

􀁑 “সে-ই হচ্ছেন আধুনিক কালের ‘কবিগোষ্ঠীর প্রথম প্রবর্তক’। রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়, দ্বারকানাথ অধিকারী, দীনবন্ধু মিত্র ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার প্রধান চার শিষ্য’। (সুকুমার সেন, বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস, ২য় খণ্ড)। এহন মহান গুরু ঈশ্বরচন্দ্রের কাব্য প্রতিভার নমুনা পেশ করা হলো :

১. একেবারে মারা যায় যত চাঁপদেড়ে (দাড়িওয়ালা)

হাঁসফাঁস করে যত প্যাঁজ (পিঁয়াজ) খোর নেড়ে।।

বিশেষত: পাকা দাড়ি পেট মোটা ভূড়ে।

রোদ্র গিয়া পেটে ঢোকে নেড়া মাথা ফূড়ে।।

কাজি কোল্লা মিয়া মোল্লা দাঁড়িপাল্লা ধরি

কাছাখোল্লা তোবাতাল্লা বলে আল্লা মরি।

বি:দ্র: ইংরেজদের সাথে যুদ্ধরত মুসলমানদের মৃত্যুতে খুশী হয়ে সে উক্ত কবিতা রচনা করেছে।

২. ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ বা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় লিখল :

চিরকাল হয় যেন ব্রিটিশের জয়।

ব্রিটিশের রাজলক্ষ্মী স্থির যেন রয়।।

ভারতের প্রিয় পুত্র হিন্দু সমুদয়।

মুক্তমুখে বল সবে ব্রিটিশের জয়।।

(দিল্লীর যুদ্ধ : গ্রন্থাবলী, পৃ. ১৯১)

৩. মুসলমানদের হাতে ব্রিটিশের পরাজয়ে লিখল :

“দুর্জয় যবন নষ্ট, করিলেক মানভ্রষ্ট

সব গেল বৃটিশের ফেম

শুকাইল রাঙ্গা মুখ ইংরাজের এত দুখ,

ফাটে বুক হায় হায় হায়।।”

৪. দিল্লীর সম্রাট বাহাদুর শাহ যখন বেগমসহ গ্রেফতার হল এবং তাঁর সন্তানদের কাটা মাথা তাঁকে উপহার দেওয়া হলো তখন ঈশ্বর গুপ্ত লিখলে :

“বাদশা-বেগম দোঁহে ভোগে কারাগার।।

অকারণে য়াদোষে করে অত্যাচার।

মরিল দু’জন তাঁর প্রাণের কুমার।।

একেবারে ঝাড়ে বংশে হল ছারখার।”

৫. ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশে এবং রাণী ভিক্টোরিয়ার প্রতি ভক্তিতে লিখল:

ক. “জয় হোক বৃটিশের, ব্রিটিশের জয়।

রাজ অনুগত যারা, তাদের কি ভয়।”

খ. এই ভারত কিসে রক্ষা হবে

ভেব না মা সে ভাবনা।

সেই তাঁতীয়া তোপীর মাথা কেটে

আমরা ধরে দেব ‘নানা’।”

(দিল্লীর যুদ্ধ গ্রন্থাবলী, পৃষ্ঠা ৩২০, ১৩৬)



[“প্রিয় পাঠক, এই হলো বাঙালী বাবু সমাজের গুরুস্থানীয় চিন্তাবিদ কবির চিন্তা ও কবিত্বের নমুনা। তারই যোগ্য শাগরেদ ঋষি বঙ্কিম।”]