চাকমারা ১৯৪৭ সালে ভারতের পতাকা উড়িয়েছিল
বাংলাদেশে সাঁওতালদের পরে সবচেয়ে বড় উপজাতি হিসেবে ধরা হয় চাকমাদের। চাকমারা সবাই মঙ্গোলীয় মানবধারার মানুষ। তাদের দেখে এ দেশের বৃহত্তর জনসমষ্টি থেকে সহজেই পৃথক করে চিনতে পারা যায়। এ দেশে মঙ্গোলীয় মানবধারার মানুষের মধ্যে দু’টি উপধারা লক্ষ করা যায়। একটির মাথার আকৃতি হলো মাঝারি। আর অন্যটির মাথার আকৃতি গোল। মাঝারিদের বিশেষ দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা চলে গারো এবং খাসিয়াদের কথা। অন্য দিকে, গোল মাথার মঙ্গোলীয়দের বিশেষ দৃষ্টান্ত হলো চাকমা ও মারমারা। মঙ্গোলীয় মানবধারার গণ্ডের হাড় হয় উঁচু। এ জন্য তাদের মুখমণ্ডল দেখে মনে হয় সমতল। এ ছাড়া তাদের চোখের ওপরের পাতায় থাকে বিশেষ ধরনের ভাঁজ।
যে কারণে তাদের চোখ দেখে মনে হয় ছোট এবং বাঁকা। মঙ্গোলীয় মানবধারার মানুষের পুরুষের মুখে গোঁফ-দাড়ি হয় না বললেই চলে। যদিও মারমা ও চাকমাদের চেহারার মধ্যে যথেষ্ট সৌসাদৃশ্য আছে এবং যদিও তারা উভয়ই অতীতে এসেছে আরাকান থেকে। তবু তাদের মধ্যে সদ্ভাব নেই। মারমাদের একটি নিজস্ব ভাষা আছে। যা তারা লিখে বর্মি অক্ষরে। কিন্তু চাকমাদের এখন আর কোনো নিজস্ব ভাষা নেই। বাংলাই হয়ে উঠেছে তাদের মাতৃভাষা। চাকমারা হয়ে উঠেছে শতকরা ষাট ভাগ শিক্ষিত। তাদের আর বলা চলে না একটা উপজাতি। মনোভাবের দিক থেকে তারা হয়ে উঠেছে হিন্দুভাবাপন্ন। যদিও তারা নিজেদের দাবি করে বৌদ্ধ। কিন্তু তারা একই সাথে আবার লক্ষ্মীপূজাও করে। তাদের তুলনায় মারমারা অনেক খাঁটি বৌদ্ধ। পার্বত্য চট্টগ্রাম একসময় ছিল একটি জনবিরল অঞ্চল। ১৯৪৭ সালে যখন পার্বত্য চট্টগ্রামকে র্যাডক্লিফ প্রদান করেন তদানীন্তন পাকিস্তানকে, তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল শতকরা ২ ভাগের কাছাকাছি।
চাকমা নেতা স্নেহ কুমার ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট রাঙ্গামাটিতে উত্তোলন করে ভারতের অশোকচক্র সংবলিত ত্রিরংরঞ্জিত পতাকা। যেটাকে একুশে আগস্ট অস্ত্র হাতে বালুচ রেজিমেন্টের লোকদের গিয়ে টেনে নামাতে হয়েছিল। চাকমারা ভারতের পতাকা নামাতে চেয়েছিল না। মার্কিন ক্যাথলিক খ্রিষ্টান মিশনারি রিচার্ড টিম কারিতাসের দ্বিমাসিক মুখপত্র বিনিময়-এর ১৩ বর্ষ: ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩ সংখ্যায় লিখেছেন, র্যাডক্লিফ জিন্নাহ সাহেবকে সন্তুষ্ট করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামকে দিয়ে দেয় সাবেক পাকিস্তানকে। যেটা ছিল একটা চরম অবিচার। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম এমনিতেই আসেনি সাবেক পাকিস্তানে। জিন্নাহ এর জন্য ছেড়ে দিয়েছিল মুসলিম অধ্যুষিত পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলাকে।সে এটা করেছিল তদানীন্তন পূর্ববাংলার একমাত্র সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের কথা বিশেষভাবে বিবেচনা করে। এখন গুরুদাসপুরের মধ্যে যে ভারত অনেক সহজে কাশ্মিরে সৈন্য পাঠাতে পারছে। গুরুদাসপুর পেয়ে ভারত হয়েছে যথেষ্ট লাভবান। ফাদার টিম চেয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে পৃথক হয়ে যাক। কেননা, পার্বত্য চট্টগ্রামের লুসাই ও বম উপজাতি ইতোমধ্যেই খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছে। আরো অনেক উপজাতি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামের লাগোয়া মিজরাম রাজ্যে মিজুরা সবাই গ্রহণ করেছে খ্রিষ্টধর্ম। উপজাতি নিয়ে রাজনীতি করতে দেখা যাচ্ছে বামপন্থীদের। আর দেখা যাচ্ছে বিদেশী খ্রিষ্টান মিশনারিদের।