প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরকালের মুক্তিতে নফল নামাজের প্রতি বিশেষ তাগিদ প্রদান করেছেন।
পরকালে কঠিন বিপদের সময় এ নফল নামাজই মানুষের চূড়ান্ত ফয়সালায় কাজে আসবে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাআলা বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম তার ফরজ নামাজের হিসাব নিবেন।
যদি ফরজ নামাজ পরিপূর্ণ ও ঠিক থাকে তাহলে সে সফলকাম হবে এবং মুক্তি পাবে। আর যদি ফরজ নামাজে কোনো ঘাটতি দেখা যায়, তখন ফেরেশতাদের বলা হবে, দেখো তো আমার বান্দার কোনো নফল নামাজ আছে কিনা?
তার যদি নফল নামাজ থেকে থাকে তাহলে তা দিয়ে আমার বান্দার ফরজের এ ঘাটতি পূরণ করো। অতঃপর অন্যান্য ‘আমলগুলোও (রোজা ও জাকাত) এভাবে গ্রহণ করা হবে। (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)
উল্লেখিত হাদিস থেকে বুঝায় যায় যে, নফল ইবাদত নামাজ, রোজা, দান-অনুদান; যা-ই হোক না কেন? পরকালের চূড়ান্ত মুক্তিতে এ নফল ইবাদতের বিকল্প নেই।
কারণ, নফল নামাজ যদি ফরজের ঘাটতি পুরনে সহায়ক হয়; তবে নফল রোজা ফরজ রোজার ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্তি লাভে সহায়ক হবে।
আবার যাদের ওপর জাকাত আদায় করা ফরজ; তাদের জন্য আল্লাহর রাহে দান-অনুদান অনেক উপকারে আসবে। জাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে যদি কোনো ভুল হয়ে যায়; তবে আল্লাহ তাআলা বান্দার দান-অনুদানের কারণে তাঁকে জাকাতের মতো ফরজ ইবাদতের ভুলত্রুটি থেকে রক্ষা করতে পারেন।
পরিশেষে...
আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত ফরজ ইবাদতসমূহ পালনের পাশাপাশি নফল ইবাদতসমূহের প্রতি মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। আর তা যদি হয় পবিত্র মাস রমজানে। তাহলে তো কথাই নেই। কারণ আল্লাহ তাআলা রমজানের প্রতিটি ইবাদতের মর্যাদা, গুরুত্ব ও ফজিলত বৃদ্ধি করেছেন।
হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী ফরজ ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি যদি কেউ নফল ইবাদত-বন্দেগি করে; তবে ফরজ ইবাদতের ঘাটতি এ নফল ইবাদত-বন্দেগি দ্বারাই পূরণ করা হবে।
ফরজ নামাজের সিজদা আদায়ের পর নফল নামাজের সিজদার মাধ্যমে আল্লাহর নেকট্য অর্জন সহজ হয়।
হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলীর (বন্ধুর) সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করি। বান্দা আমার নৈকট্য অর্জনের জন্য ফরজ আদায়ের চাইতে প্রিয় কোনো কাজ করেনি।
আর আমার বান্দা আমার নৈকট্য লাভে নফল আদায় করে থাকে। এক পর্যায়ে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি। আর আমি যখন তাকে ভালোবাসি তখন আমি তার চোখ, কান, হাত ও পা হয়ে যাই; যা দ্বারা সে দেখে শোনে, ধরে ও চলে।
যদি সে আমার কাছে চায়, তাহলে আমি তাকে দিয়ে দেই। যদি আমার আশ্রয় কামনা করে, তাহলে আমি আশ্রয় দান করি।’ (বুখারি)
হাদিসে বান্দার চোখ, কান, হাত ও পা’কে আল্লাহর চোখ, কান, হাত ও পায়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। কারণ, যেহেতু বান্দার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো থেকে সব কাজ-কর্ম আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি মোতাবেক প্রকাশ পায় সেহেতু হাদিসে এ কথা বলা হয়েছে যে, আমিই যেন তার চোখ, কান, হাত ও পা হয়ে যাই।
কেননা ওই ব্যক্তি যখন আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির বিপরীতে চোখ দ্বারা অন্য কিছু দেখে না; কান দ্বারা কোনো কথা শুনে না; তার বিধানে খেলাফ হাত ও পা চালায় না বরং যা কিছু করে তা শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করে।
এ অবস্থায় বান্দাকে আল্লাহ তাআলা ভালোবেসে ফেলেন। আর যাকে ভালোবেসে ফেলেন; ওই ব্যক্তি যদি আল্লাহর কাছে কোনো কিছুর আবদার করেন, আল্লাহ তাআলা তাঁকে চাহিদা মোতাবেক জিনিস না দিয়ে ফিরিয়ে দিতে পারেন না।
এ হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, যদি কোনো বান্দা ফরজ আদায়ের পর ইখলাসের সঙ্গে নফল ইবাদত-বন্দেগি করে তবে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন ওই বান্দার জন্য সহজ হয়ে যায়।