ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে ১৮৫৫ সালে ৩০ জুন ঘটেছিল সাঁওতাল বিদ্রোহ। এতে অংশ নেয় প্রায় ৫০ হাজার সাঁওতাল। এই সাঁওতালরা যে কেবল হিন্দু সুদখোর মহাজনদেরই খুন করেছিল, তা নয়। খুন করেছিল বহু বাংলাভাষী নিরপরাধ হিন্দুকে। করেছিল তাদের বাড়িঘর লুট। বিদ্রোহ থামানোর জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসনকে জারি করতে হয়েছিল সামরিক আইন। সৈন্যবাহিনীর গুলিতে মারা গিয়েছিল প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল। সেটা অনেক দিন আগের কথা।
তখন সবে পাকিস্তান হয়েছে। কমিউনিস্ট নেত্রী ইলা মিত্রের নির্দেশে সাঁওতালরা করে নাচোল থানা অধিকার। তাদের লক্ষ্য ছিল এই অঞ্চলে একটা মুক্ত রাজ্য স্থাপন। সাঁওতালরা নাচোল থানা দখল করতে গিয়ে থানার দারোগা ও তিনজন কনস্টেবলকে মেরে ফেলে। এটা ঘটেছিল ১৯৫০ সালের ৫ জানুয়ারি। ঘটনাটিকে কোনোভাবেই একটা নিরীহ অভ্যুত্থান হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। ভারতের বিহারে ছোটনাগপুর ও সাঁওতাল পরগনায় সাঁওতালরা ১৯৬৭ সালে শিলিগুড়ির নকশালবাড়ির আন্দোলনের অনুকরণে ঘটায় অভ্যুত্থান। যেটা দমন করতে ভারতীয় সাধারণ পুলিশ এবং বিশেষ মিলিশিয়াকে চালাতে হয় গুলি। সাঁওতাল, পুলিশ ও মিলিশিয়া মিলে এ সময় মারা যায় প্রায় ছয় হাজার ব্যক্তি। এর মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যায় না সাঁওতালদের নিরীহ সরল চরিত্রকে।
২০০০ সালের ১৫ নভেম্বর বিহার থেকে ছোটনাগপুর, সাঁওতাল পরগনা ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলকে পৃথক করে গঠন করা হয়েছে নতুন প্রদেশ ঝাড়খণ্ড। ভারতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সাঁওতাল বাস করে বর্তমান ঝাড়খণ্ড প্রদেশে। ঝড়খণ্ড প্রদেশে সরকারি ভাষা করা হয়েছে দেবনাগরী অক্ষরে লেখা বিশুদ্ধ হিন্দিকে। ঝারখণ্ডে সাঁওতাল, মুন্ডা, হো প্রভৃতি উপজাতি এখন হিন্দির মাধ্যমেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রহণ করতে চাচ্ছে বিদ্যা। বাংলাদেশে ঝাড়খণ্ডের তুলনায় সাঁওতালদের সংখ্যা নগণ্য।