২০০৮ সালে বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রেডকাউ, ডানো, নিডো, এ্যানলিন ও ডিপ্লোমা গুড়া দুধ পরীক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ কি সমস্যায় পড়েছিলো ?
২০০৮ সালে বিশ্বজুড়ে ‘দুধ’ নিয়ে এক ভয়াবহ সংবাদ শোনা যায়। দুধের মধ্যে নাকি বিষাক্ত মেলামাইন মেশানো হয়। মেলামাইন এক ধরনের নাইট্রোজেন যৌগ, ভেজাল দুধে এটা মেশালে দুধ পরীক্ষার সময় তা প্রোটিন সমৃদ্ধ বলে যানান দেয়। অধিক লাভের আশায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এই অপকর্ম করে বসে। এতে চীনে কিছুদিনের মধ্যে প্রায় ৬৩ হাজার শিশু দুধে মেলামাইনে আক্রান্ত হয়ে কিডনী জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়, অনেকে মারা যায়।
২০০৮ সালে বাংলাদেশে তখন বিতর্কিত সেনা শাসন নির্ভর তত্ত্বাবাধয়ক সরকারের শেষ পর্যায়। বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া বিদেশী গুড়া দুধগুলোতে মেলামাইন আছে না নাই, তা পরীক্ষায় জোরালো দাবী উঠে। এক পর্যায়ে সরকার ৮টি বিদেশী কোম্পানির গুড়া দুধ (ডানো ফুলক্রীম, নিডো ফর্টিফায়েড, রেডকাউ, ডিপ্লোমা, এনলিন, এবং চীনের ৩টি কোম্পানি য়াশলী-১ , ইয়াশলী-২ এবং সুইট বেবী) পরীক্ষা করতে সাইন্সল্যাব, বিএসটিআই, আনবিক শক্তি কমিশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে পাঠায়। এই পরীক্ষায় ঢাকার রসায়ন বিভাগের টেস্টে বিদেশী গুড়া দুধগুলোর মধ্যে অতি উচ্চমাত্রায় মেলামাইন পাওয়া যায়। বিশেষ করে রেড কাউয়ে সহনীয় মাত্রা (0.1mg/kg) এর ২৩০০ গুন, ডিপ্লোমায় ৩০০০ গুন, ডানোতে ৪০০ গুন, নিডোতে ৪৫০০ গুন পর্যন্ত পাওয়া যায়। আনবিক শক্তি কমিশনের পরীক্ষায় রসায়ন বিভাগের পরীক্ষার তুলনায় তুলনামূলক কম হলেও মেলাইমানের দূষণের অস্তিত্ব মিলে। যার পরিমাণ যথাক্রমে নিডোতে ১৭০০ গুন, ডিপ্লোমায় ২৮৭০ গুন এবং ডানোতে ৭৪০ গুন সহনীয় মাত্রার বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু সাইন্সল্যাব ও বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় তা নির্ণন করা যায় নাই।
সে সময় রসায়ন বিভাগের অনেকেই দাবী করেন, তাদের মেলাইন পরীক্ষার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ছিলো যা অন্য ল্যাবরেটরিগুলোতে ছিলো না।
বিশেষ করে রসায়ন বিভাগে জাপানি সরকারের সহযোগিতায় প্রাপ্ত High Performance Liquid Chromatography(HPLC) এবং Atomic Absorption Spectroscopy(AAS) এবং Sweden Upsala University -র সহযোগিতায় প্রাপ্ত Gas Chromatography Mass Spectroscopy (GCMS) (যা ঐ সময় Compound Detection Related সর্বাধুনিক প্রযুক্তি) নামের কোটি টাকার প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কোন Element কে খুব সহজেই disintegrate করা যায়।
বিশেষ করে রসায়ন বিভাগে জাপানি সরকারের সহযোগিতায় প্রাপ্ত High Performance Liquid Chromatography(HPLC) এবং Atomic Absorption Spectroscopy(AAS) এবং Sweden Upsala University -র সহযোগিতায় প্রাপ্ত Gas Chromatography Mass Spectroscopy (GCMS) (যা ঐ সময় Compound Detection Related সর্বাধুনিক প্রযুক্তি) নামের কোটি টাকার প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কোন Element কে খুব সহজেই disintegrate করা যায়।
কিন্তু এই পরীক্ষার পরই ঢাবির রাসায়ন বিভাগের উপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ আসতে থাকে। সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের খাদ্য ও স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এএমএম শওকত আলী রসায়ন বিভাগের পরীক্ষা অস্বীকার করে করে বলেন, “ঢাবির রসায়ন বিভাগের পরীক্ষাগার অনুমোদিত নয়, তাই গুড়া দুধের মেলামাইন পাওয়ার তথ্য গ্রহণযোগ্য নয়।”
উপদেষ্টার বক্তব্যের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুধে মেলামাইন পরীক্ষা কমিটির গবেষক ড. নিলুফার নাহার বলেন- “সরকার যে অনুমোদনের কথা বলছে, বিএসটিআই ছাড়া সে রকম কোন অনুমোদিত ল্যাবরেটরি নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরকার অনুমোদিত একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু আমাদের গবেষণার ফলাফলের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। আর আমাদের ল্যাবরেটরি যদি অনুমোদিত নাই হয়, তবে আমাদের কাছে পরীক্ষার জন্য সেম্পল পাঠানো হলো কেন?”
সরকার দেশীয় পরীক্ষা অস্বীকার করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ফাও) মাধ্যম হয়ে জার্মানির হামবুর্গের ইয়রোফিন্স জিএমবিএইচ পরীক্ষাগারে ৮টি দুধের সেম্পল পরীক্ষার জন্য পাঠায়। তারা দাবী করে, চীনা ৩টি কোম্পানির দুধে ক্ষতিকর মাত্রায় মেলামাইন আছে, কিন্তু অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আর ডেনমার্কের ৫টি গুড়া দুধের মধ্যে কোন সমস্যা নেই।
তাদের রিপোর্ট অনুসারে সরকার ও হাইকোর্ট চীনা ৩টি কোম্পানি নিষিদ্ধ করে, কিন্তু ডানো, রেডকাউ, নিডো, ডিপ্লোমা এবং এনলিন গুড়া দুধের খাওয়াতে কোন সমস্যা নেই বলে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা দেয়।
এক্ষেত্রে ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কোম্পানিগুলোর পক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও)কে নিকৃষ্ট দালালি করতে দেখা যায়। আর এভাবে করেই আন্তর্জাতিক বিশেষ শক্তিবলে বেচে যায় রেডকাউ, ডানো, নিডো, এ্যানলিন ও ডিপ্লোমা গুড়া দুধ। এরপর থেকে বিদেশী গুড়া দুধের শুদ্ধতা যাচাই নিয়ে কোন সরকারকে আর শক্ত অবস্থানে যেতে দেখা যায় নাই।
ছবি: ২০০৮ সালে দেশের বিভিন্ন ল্যাবে ৮টি বিদেশী গুড়া দুধে মেলামাইন পরীক্ষার রিপোর্ট।