হঠাৎ দেখলাম জাতীয় সংগীত নিয়ে বেশ তর্ক হচ্ছে। এন.সি- ২৪১

হঠাৎ দেখলাম জাতীয় সংগীত নিয়ে বেশ তর্ক হচ্ছে।
Image result for জাহাজ
হঠাৎ দেখলাম জাতীয় সংগীত নিয়ে বেশ তর্ক হচ্ছে। এগুলো নিয়ে লেখালেখি অনেক আগেই শেষ করেছি। তারপরও নতুনদের উদ্দেশ্য করে এ লেখাটা লিখলাম-
আমি কেন বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় সংগীত পরিবর্তন চাই
১) বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় সংগীত ভারতীয় জাতীয় কবির লেখা। বাংলাদেশে কি জাতীয় কবি নেই? বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাংলাদেশের জাতীয় কবির লেখা হওয়া উচিত।
২) পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা সব সময় একটা কথা বলে, “দাও দুই বাংলা এক করে দাও”। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের বিশ্বাস অবশ্যই কখন না কখনও আবার ভারতের (হিন্দুত্ববাদদের) ছায়াতলে দুই বাংলা এক হবে। এই বিশ্বাসটা ততদিন আমাদের বিশ্বাসের মধ্যে থাকবে যতদিন রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ থাকবে। কারণ এই গানের মূল থিউরী হলো- “দাও দুই বাংলা এক করে দাও”।
৩) রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি মোট ২৫ লাইনের। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে প্রথম ১০ লাইন। তারমানে বাকি ১৫ লাইনের মধ্যে এমন কোন ঝামেলা আছে, যার কারণে তা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এর ঝামেলাগুলো হলো-
--ক) “তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে”
মন্তব্য: হিন্দু ধর্মে সন্ধাকালে ঘরে দীপ জ্বালানো ধর্মীয় পূজার অংশ।
--খ) “ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে”
মন্তব্য: হিন্দু ও মুসলিম ধর্মের বিশ্বাসে একটা পার্থক্য আছে। হিন্দু ধর্মে তারা স্বদেশকে দেবী দূর্গা, কালী বা অন্নপূর্ণা হিসেবে কল্পনা করে। রবীন্দ্রনাথ তার “আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে” হতে কবিতায় বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। অপরদিকে মুসলমানরা মাতৃভূমি বলতে মায়ের ভূমি বোঝায়, কোন ব্যক্তি বা দেবতা হিসেব কল্পনা করে না। অর্থাৎ স্বদেশ নিয়ে হিন্দু ও মুসলিম বিশ্বাস এক নয়। সেই হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই রবীন্দ্রনাথ মায়ের চরনে মাথা পেতে দেয়ার কথা লিখেছে, যা মুসলিম ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে যায় না।
--গ) “ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে”
মন্তব্য: এটাও হিন্দুদের ধর্মীয় পূজার অংশ। অর্থাৎ দেবীর পায়ের নিচে সম্পদ ভোগে দেয়া হয়, এখানে সেটাই বলা আছে।
--ঘ) “ মা, তোর ভূষণ ব'লে গলার ফাঁসি”
মন্তব্য: দূর্গা বা কালীর গলায় বিভিন্ন ‘মালা’ দেয়া হয়, এগুলো ‘ভূষণ’ বলে। হিন্দুত্ববাদীরা এই ভূষণ বা মালাকে গলার ফাঁসি দেয়ার জন্য ব্যবহার করে পূণ্য পেতে চায়।
৪) একটা দেশের জাতীয় সংগীতের সাথে ঐ জাতির চেতনা নির্ভর করে। বাংলাদেশীরা এমন এক জাতি, যারা কখন বহিঃশত্রুকে মেনে নেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বিতাড়িত করেছে। তাই তাদের জাতীয় সংগীত সেই চেতনার বহিঃপ্রকাশে হওয়া দরকার ছিলো। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত এমন একটা গান নির্ধারণ করা হয়েছে, যাকে “ঘুম পাড়ানির মাসি পিসির গান” বললে ভুল হবে না। এই গান শুনলে চেতনা জাগ্রহ হওয়া তো দূরের কথা, উল্টা সবাই ঘুমিয়ে যাবে। আমেরিকা জাতীয় সংগীত শুনেন, সেখানে আছে যুদ্ধের ডাক, শুনলেই গা গরম হয়ে যাবে। ফ্রান্সের জাতীয় সংগীত শুনেন, সেখানে শত্রুর মাথা কেটে নেয়ার আহবান আছে। অথচ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত শুনলে ঘুম আসে, তাই এ গান দিয়ে আমাদের মূল জাতীয় চেতনা জাগ্রত হওয়া দূরের কথা, ঘুমিয়ে যাবে।
৫) ভারতের জাতীয় সংগীতও রবীন্দ্রনাথের লেখা। সম্প্রতি ভারতের কথা উঠেছে- “রবীন্দ্রনাথ ছিলো ব্রিটিশ দালাল। ভারতের জন্য লেখা জাতীয় সংগীতে ব্রিটিশ প্রভুত্ব ষ্পষ্ট করে ফুটে উঠেছে। তাই ভারতীয়দের মধ্যে অনেকে বলেছে-একটা বহিঃশত্রুর দালালের লেখা জাতীয় সংগীত কিভাবে ভারতের জাতীয় সংগীত হতে পারে?” তাই অনেক ভারতী তাদের জাতীয় সংগীতের পরিবর্তন চায়। লিঙ্কের ভিডিওতে দেখুন- ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি সদস্যরা রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সংগীত শুনে সংসদ ভবন থেকে ওয়াক আউট করছে। (https://youtu.be/XPLMvzcrZ-g)
ভারতে যদি রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের ডাক আসতে পারে, তবে বাংলাদেশে উঠলে সমস্যা কোথায় ?
৬) রবীন্দ্রনাথ ছিলো ফ্রি মেসনের সদস্য। এই লিঙ্কে ফ্রি মেসন সদস্যদের লিস্টে গেলে T অক্ষরে গেলে ৩ নম্বরে রবীন্দ্রনাথের নাম পাবেন (https://bit.ly/31eFijN)।
কথা হলো- একজন ফ্রি মেসন সদস্যের লেখা জাতীয় সংগীত কিভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হতে পারে?
৭) রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক ব্যবসা ছিলো পতিতালয়ের ব্যবসা। রবীন্দ্রনাথ পরিবারের পতিতালয়ের ঠিকানা ২৩৫-২৩৬ বউবাজার স্ট্রিট, কলকাতা। সেখানে ছিলো ৪৩টি ঘর, যার ভাড়া ১৪০ রুপি।
এছাড়া কলকাতার সোনাগাছি পতিতাপল্লীতে তাদের দুইটি ঘর ছিলো বলে ইতিহাসে উল্লেখ পাওয়া যায় ।
(Calcutta: Myths and History, S N Mukherjee, page-101; Under the Raj: Prostitution in Colonial Bengal, Sumanta Banerjee Page 72)
এখন হয়ত জোরজবরদস্তি করে রবীন্দ্রনাথের গান জাতীয় সংগীত হিসেবে চালিয়ে দিলেন। কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্ম কিন্তু এটা নিয়ে হাসবে। বলবে একটা পতিতা ব্যবসায়ীর লেখা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত করা হয়েছে। হিঃ হিঃ।
৮) বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ যেহেতু মুসলমান, তাই জাতীয় সংগীত কে লিখেছে তা একটা বড় ফ্যাক্টর। রবীন্দ্রনাথ অনেক সাহিত্য লিখেছে, সেটা ঠিক, কিন্তু সেগুলোর অনেকগুলোর মধ্যে মুসলমানদের উদ্দেশ্যে করে যাচ্ছেতাই বলে গালাগালি করেছে। যবন, জারজ, চোর, খুনি ও অবৈধ প্রণয় আকাঙ্খিণী এমন কোন গালি নেই, যা রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের উদ্দেশ্যে করে সাহিত্য রচনার নাম করে দেয়নি। আবার মুসলমানের শেষ নবী সম্পর্কেও রবীন্দ্রনাথের উক্তি ভালো নয়। যেমন- মোতাহের হোসেন চৌধুরী শান্তি নিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করেছিল “আপনার লেখায় ইসলাম ও বিশ্বনবী সম্পর্কে কোন লেখা নেই কেন? উত্তরে কবি বলেছিল, “কুরআন পড়তে শুরু করেছিলুম, কিন্তু বেশিদূর এগুতে পারিনি, আর তোমাদের রসুলের জীবন চরিতও ভাল লাগেনি”। (দ্র: বিতণ্ডা : সৈয়দ মুজিব উল্লাহ, পৃ. ২২৯)।
৯) বাংলাদেশের ভাষা যেহেতু ‘বাংলা’, তাই বাংলাকে ভালোবাসেন, এমন কবির জাতীয় সংগীত নির্বাচন করা উচিত। ইতিহাস বলছে- রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষাকে নয়, হিন্দি ভাষাকে বেশি ভালোবাসতো। ১৯১৮ সালে বিশ্বভারতী’তে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে “ভারতের জাতীয় ভাষা কি হবে” এই বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় হিন্দি ভাষার পক্ষে ওকালতি করে রবীন্দ্রনাথ। তখন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন, ‘ভাষাতাত্ত্বিক দিক থেকে বাংলা ভাষা হিন্দি অপেক্ষা উন্নততর এবং বাংলাকেই ভারতের সাধারণ ভাষায় পরিণত করা উচিত।
স্বাধীনতা পেলে ভারতবর্ষের জাতীয় ভাষা বা রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণ সম্পর্কে জানতে চেয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে একটা পত্র লিখেছিলো গান্ধী।
তখন গান্ধীর পত্রের জবাবে হিন্দির পক্ষে অভিমত দিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন:
The only possible national language for inter-provincial intercourse is Hindi in India. অর্থাৎ, আন্তঃ প্রাদেশিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভারতের একমাত্র সম্ভাব্য জাতীয় ভাষা হতে পারে হিন্দি। (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্র বর্ষপঞ্জী, কলকাতা, ১৯৬৮, পৃষ্ঠা-৭৮)।
১০) গত কয়েকদিন ধরে দেখতেছি- বাংলাদেশী একটা ছেলে কলকাতায় গিয়ে জাতীয় সংগীতের বিরোধীতা করায় কেউ কেউ ছেলেটার বিরুদ্ধে বলছে। তাদের অধিকাংশের অভিযোগ হলো – ছেলেটা নাকি নকলবাজ।
অথচ ঐ গ্রুপটি ভুলেই যায়, যে রবীন্দ্রনাথের পক্ষ তারা নিচ্ছে, সেই রবীন্দ্রনাথ ছিলো সবচেয়ে বড় নকলবাজ। তার অনেক সাহিত্য আরবি, ফারসী ও ইংরেজী সাহিত্য থেকে চুরি করা। রবীন্দ্রনাথ যে কবিতার জন্য নোবেল পায়, সেই গীতাঞ্জলি নিয়ে আছে অনেক নকলবাজির অভিযোগ আছে। তাঁর "দ্য সং অফারিংস" (গীতাঞ্জলী) এর ২৬ নং কবিতা ও ইংরেজী বাইবেলের "সং অফ সলোমন" এর ৫:২৬ নং শ্লোক এবং গীতাঞ্জলীর ৮৬ নং কবিতা ও খ্রীষ্টিও গান "Canticle" এর হুবহু মিল দেখা যায়।
রবীন্দ্রনাথের প্রমাণিত একটি নকল কবিতা হলো "ভারত তীর্থ"। যা ফারসী কবি "জালালুদ্দিন রুমি"র একটি কবিতার হুবহু নকল।
জালালুদ্দিন রুমি’র লেখা কবিতা-
বায্ আঁ,বায্ আঁ
হর আচে হাস্তী বায্ আঁ।
গর কাফির হর গবরওয়া
বোত পরস্তি বায্ আঁ।
ই দরগাহ মা দরগাহে
ন-উম্মিদ নীস্ত
শতবার গর তাওবাহ শিকস্তী বায্ আঁ
-জালালুদ্দিন রুমি
যার অর্থ-
“ফিরে আসো। ফিরে আসো।
তুমি ‘কাফির’ হও কিংবা অগ্নিউপাসক হও,
কিংবা মূর্তিপূজারীও যদি হও, তুমি আল্লাহ’র দরবারে ফিরে এসো।
এই দরবার আশার দরবার, এখানে কেউ আশ্রয়হীন নয়।
যদি শতবার গুনাহ কর তারপরও তওবা করে ফিরে এসো।”
এই কবিতার (ভাব) নকল করে রবীন্দ্রনাথের কবিতাটি হলো-
এসো হে আর্য,এসো হে অনার্য-
হিন্দু মুসলমান,
এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ
এসো এসো খ্রীষ্টান।
মা'র অভিষেকে এসো এসো ত্বরা
মঙ্গলঘট হয়নি যে ভরা-
সবার পরশে পবিত্র করা তীর্থ নীরে
এই ভারতের সাগরতীরে।
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন- “ইতিহাস কখন লুকিয়ে রাখা যায় না”
এক দিন না একদিন সত্য প্রকাশিত হবেই।
আজকে রবীন্দ্রনাথকে ভালো সাজিয়ে হয়ত রবীন্দ্রনাথের গান বাংলাদেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দিলেন।
কিন্তু সত্য ইতিহাসটা একদিন না একদিন প্রকাশ হবেই। তখন আপনাদের সবাই ছিঃ ছি বলে ধিক্কার দিবে।
তখন ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবেন না।