২০১৫ সালের কথা, রবীন্দ্র সংগীত গায়িকা রেজওয়ানা বন্যা গিয়েছিলো লন্ডনে। সেখানে গিয়ে ঐ মহিলা লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশীদের আহবান করে, তারা যেন মাদ্রাসায় ফান্ডিং না করে বরং কথিত মুক্তবুদ্ধি চর্চায় ফান্ডিং করে। (https://bit.ly/2GSuT5N)
তারও আগের ঘটনা হিন্দু খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা শিতাংশু গুহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বলে- “কন্ডিশন পুট করো, মানি ক্যান নট বি স্পেন্ড ইন মাদ্রাসা”। (https://youtu.be/lVXg9ZXJ2-M)
এখান একটি বিষয় স্পষ্ট-
ইসলামবিদ্বেষী মহল সব সময় বলে আসছে- মাদ্রাসার ফান্ডিং যেন বন্ধ করে দেয়া হয়।
ইসলামবিদ্বেষী মহল সব সময় বলে আসছে- মাদ্রাসার ফান্ডিং যেন বন্ধ করে দেয়া হয়।
আপনারা সবাই জানেন, বাংলাদেশের কোরবানী ঈদে প্রাপ্ত পশুর চামড়া হচ্ছে মাদ্রাসার ফান্ডের একটি বড় অংশ। তাই এই কোরবানীর পশুর চামড়ায় যদি ডিস্ট্রার্ব করা যায়- তবে মাদ্রাসার ফান্ডিং এর একটি বড় অংশ বন্ধ করে দেয়া সম্ভব। তাদের ধারণা- তখনই বন্ধ হয়ে যাবে দেশের অনেক মাদ্রাসা।
সেই টার্গেট নিয়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের পর সবচেয়ে বড় শিল্প ট্যানারি শিল্পের পেছনে লাগে ইসলামবিদ্বেষী মহল। ২০১১ সালে মার্কিনপন্থী আইনজীবি মোনজিল মোর্শেদ পরিবেশ দূষণের অজুহাতে ট্যানারি শিল্প হাজারিবাগ থেকে সরিয়ে সাভারে নিয়ে যেতে রিট করে। সেই রিট ধরে সরকার সাভারের হেমায়েতপুরে একটা যায়গা করে দেয়, কিন্তু সেখানে কোন সুবিধাই নেই একটা ফাকা এলাকা। সেই রিটের আবেদনও ট্যানারি মালিকরা আপিল বিভাগে আটকে রাখে, কিন্তু ২০১৭ সালে এসে ইসকন সদস্য প্রধান বিচারক এসকে সিনহা চূড়ান্ত রায় দেয় সমস্ত ট্যানারি সরে যাওয়ার জন্য।
আপনাদের মনে থাকার কথা, কিছুদিন আগে যখন ঢাকার চকবাজারে আগুন ধরলো, তখন একটি মহল হুট হাট প্রচার শুরু করলো পুরান ঢাকার সমস্ত ব্যবসা সরিয়ে নেয়ার জন্য। তখন কিন্তু আমি আমার পেইজ থেকে প্রতিবাদ করেছিলাম, বলেছি- পুরান ঢাকার সমস্ত ব্যবসা করে যাবে, সমস্যা নেই। কিন্তু যে স্থানে সরে যাবে সে স্থান কি প্রস্তুত আছে ? আগে স্থান প্রস্তুত করে দাও, তারপর সমস্ত ব্যবসায়ীরা সরে যাবে সমস্যা নাই। কিন্তু যায়গা প্রস্তুত না করে যদি জোরজবরদস্তিমূলকভাবে সরিয়ে দেয়া হয়, তবে তা নিজ হাতে দেশীয় বাণিজ্য ধ্বংসের নামান্তর হবে। যাই হোক, সে সময় জনগণের প্রতিবাদের কারণে তাড়াহুড়া থেকে সরে আসে সরকার।
কিন্তু ট্যানারির সময় সে রকম কোন প্রতিবাদ হয়নি। যার কারণে হাজারিবাগের বিদ্যুৎ গ্যাস বিচ্ছিন্ন করে এক হিসেবে গলা ধাক্কা দিয়ে ২০১৭ সালে ট্যানারিগুলো বের করে দেয়া হয় (https://bit.ly/2YwY6y4)।
কথা হলো, ট্যানারিগুলো সাভারে চলে যাক সমস্যা নাই । কিন্তু সেই সাভারের এলাকাটা আগে প্রস্তুত করে নেন। ছবিতে দেখুন, সরকার বলছে- ২০২০ সালের জুনে শেষ হবে চামড়া শিল্পনগরীর কাজ (https://bit.ly/2GTKvWD)।
তারমানে এখনও শেষ হয়নি?
আর যদি শেষ না হয়, তবে ২০১৭ সালে কেন ট্যানারিগুলো সরিয়ে দিলেন কেন ?
কেন একটা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি শিল্প ধ্বংস করে দিলেন ?
কেন ৫০ লক্ষ লোকের জীবিকা হুমকির মুখে ফেললেন ?
কেন মাদ্রাসার ফান্ডিং এর একটা বড় সোর্স বন্ধ করে দিলেন ?
যদি নতুন ট্যানারি এলাকা প্রস্তুত না করে গলা ধাক্কা দিয়ে কোন শিল্প বের করেন, তবে বুঝতে হবে আপনাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়, আপনাদের মূল উদ্দেশ্য দেশীয় শিল্প ধ্বংস করা। কারণ একটা ফাকা যায়গায় ট্যানারি মালিকরা গিয়ে কিছুই করতে পারবে না, মোটামুটি তাদের ব্যবসা যদি ৩-৪ বছর আটকে রাখা যায়, তবে বহু ট্যানারি মালিক ব্যবসা ছেড়ে দিবে।
আর যদি শেষ না হয়, তবে ২০১৭ সালে কেন ট্যানারিগুলো সরিয়ে দিলেন কেন ?
কেন একটা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি শিল্প ধ্বংস করে দিলেন ?
কেন ৫০ লক্ষ লোকের জীবিকা হুমকির মুখে ফেললেন ?
কেন মাদ্রাসার ফান্ডিং এর একটা বড় সোর্স বন্ধ করে দিলেন ?
যদি নতুন ট্যানারি এলাকা প্রস্তুত না করে গলা ধাক্কা দিয়ে কোন শিল্প বের করেন, তবে বুঝতে হবে আপনাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়, আপনাদের মূল উদ্দেশ্য দেশীয় শিল্প ধ্বংস করা। কারণ একটা ফাকা যায়গায় ট্যানারি মালিকরা গিয়ে কিছুই করতে পারবে না, মোটামুটি তাদের ব্যবসা যদি ৩-৪ বছর আটকে রাখা যায়, তবে বহু ট্যানারি মালিক ব্যবসা ছেড়ে দিবে।
ট্যানারি শিল্পের এ ধরনের অস্থিরতার কারণে চামড়ার দাম অস্বাভাবিক নেমে যায়। ২০১৫-১৬ সালেও যেখানে একটা কাচা চামড়া বিক্রি হয়েছে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায়। সেখানে চামড়া নগরী ধ্বংস করে ফেলায় এবার চামড়ার রেট হতে পারে ২০০-৩০০ টাকা। গত বছরই দেখা গেছে অনেকে চামড়া নদী ফেলে দিয়েছে, কেউ মাটিতে পুতে ফেলেছে। কারণ একটা চামড়া পরিবহনে যে খরচ তা ট্যানারি পর্যন্ত নিয়ে বিক্রি করে সে পরিমাণ দাম উঠছে না।
এখানে লক্ষণীয়- প্রতি চামড়া থেকে যদি কমকরে ১ হাজার টাকাও মাদ্রাসায় যায়, তবে ১ কোটি চামড়া থেকে ১ হাজার কোটি টাকা মাদ্রাসাগুলো পেতো। ফলে এই টাকাটা মাদ্রাসা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হতো, কিন্তু সেখানেই আটকে দেয়া হয়েছে।
পরিবেশ দূষণের সমাধান কি ট্যানারি শিল্প ধ্বংস করে দেয়া ?
সত্যি বলতে বাংলাদেশে ট্যানারি শিল্প যতটুকু উঠেছে, পুরোটা ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায়। তাদের যদি আরো হেভি প্রসেসিং মেশিং থাকতো, তবে আরো বেশি দামে উন্নত প্রসেসিং এর চামড়া রপ্তানি করতে পারতো। কিন্তু সরকার সেখানে সহযোগীতা তো দূরের কথা, উল্টো পরিবেশ দূষণের অজুহাত দিয়ে ট্যানারিগুলো সরিয়ে দেয়ার নামে ধ্বংস করে দিলো। এখানে একটি কথা সব সময় মনে রাখবেন- মাথা ব্যাথ্যার সমাধান কিন্তু মাথা কেটে ফেলা নয়। কিন্তু সরকার বার বার সেটাই করে। ট্যানারি বর্জ্য্ নিয়ে যদি সরকার আলাদা প্রসেসিং এর ব্যবস্থা করে দিতো, তবে সেখান থেকে কোলাজেন, অতঃপর সেখান থেকে মূল্যবান জিলেটিন সংগ্রহ করা যেতো। যেটা রফতানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন সম্ভব ছিলো। কিন্তু কিছুই হলো না।
বাংলাদেশে চামড়া শিল্প নগরী বন্ধ হলে কে লাভবান হবে ?
বাংলাদেশে চামড়া শিল্প নগরী বন্ধ হলে সবচেয়ে লাভবান হবে ভারত। চামড়া বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে- বাংলাদেশের গরুর চামড়া অন্যান্য দেশ, এমনকি পার্শ্ববর্তী ভারতীয় গরুর চামড়া থেকে অনেক মোটা, পুরু ও উন্নতমানের। এ কারণে বাংলাদেশী গরুর চামড়া বিশ্বজুড়ে অনেক চাহিদা। একটা গরুর চামড়া ট্যানারি মালিকরা যে দামে কিনে সেটা প্রসেসিং এর পর কয়েকগুন বেশি দামে বিক্রি করতো ইউরোপে । কিন্তু চামড়া শিল্প ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এখন ট্যানারি মালিকরা আর চামড়া কিনতে পারছে না, ফলে চামড়ার দাম অনেক পড়ে গেছে। সেই সুযোগ খুব কমমূল্যে চামড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় দালালরা এবং লবন দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় জমা করে রাখছে। পরবতীতে সময় সুযোগ মত সীমানা পাড়ি দিয়ে চামড়া পৌছে যাচ্ছে ভারতে ”( https://bit.ly/2yKgbtg)। ফলে বাংলাদেশী চামড়া নিয়ে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করছে ভারতীয় ট্যানারি ব্যবসায়ীরা, অথচ বাংলাদেশের ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এখন ঋাণের দায়ে ভিক্ষার থালা নিয়ে মাঠে নামার অবস্থা।
এই জন্য আমি সব সময় ‘গুজব’ নিয়ে কথা বলি। আপনারা যদি গুজব বলতে, ৫-১০জনকে পিটিয়ে মেরে ফেলার উপকরণ বুঝেন, তবে ভুল করবেন। তার থেকে বড় গুজব হলো- বিভিন্ন পরিবেশ বান্ধব, স্বাস্থ্য বান্ধব, নিরাপত্তা বান্ধব কথা বলে বাংলাদেশের বড় বড় শিল্পগুলোকে শেষ করে দেয়া। যেমন- আগুনের কথা বলে পুরান ঢাকার ব্যবসা বাণিজ্য ধ্বংষের ষড়যন্ত্র, সীসা-এন্টিবায়োটিকের কথা বলে দুগ্ধ শিল্প ধ্বংসের ষড়যন্ত্র কিংবা পরিবেশের কথা বলে ট্যানারি শিল্প ধ্বংস করে দেয়া।
তাই বলছি, যদিও-
মিডিয়া দেশী শিল্পের বিপক্ষে,
বিচারবিভাগ দেশী শিল্পের বিপক্ষে,
সরকার দেশী শিল্পের বিপক্ষে।
কিন্তু তারপরও যদি জনগণ তাদের বানিয়ে দেয়া গুজবে কান না দিয়ে অন্তত দেশী শিল্পের পক্ষে কথা বলে, তবে কিছুটা হলেও ষড়যন্ত্রে বাধা পড়বে। আর সেই বাধাটা হয়ত বাচিয়ে দিতে পারে বড় বড় দেশী শিল্পকে, যার উপর নির্ভর করছে কোটি মানুষের রুটি-রুজি এবং ধর্মীয় কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা।
মিডিয়া দেশী শিল্পের বিপক্ষে,
বিচারবিভাগ দেশী শিল্পের বিপক্ষে,
সরকার দেশী শিল্পের বিপক্ষে।
কিন্তু তারপরও যদি জনগণ তাদের বানিয়ে দেয়া গুজবে কান না দিয়ে অন্তত দেশী শিল্পের পক্ষে কথা বলে, তবে কিছুটা হলেও ষড়যন্ত্রে বাধা পড়বে। আর সেই বাধাটা হয়ত বাচিয়ে দিতে পারে বড় বড় দেশী শিল্পকে, যার উপর নির্ভর করছে কোটি মানুষের রুটি-রুজি এবং ধর্মীয় কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা।