অনেকে লিখছে- “কোরবানীর চামড়া মাটির নিচে পুতে ফেলুন”। আমার মনে হয়- এটা ভুল সিদ্ধান্ত। এন.সি-২৩০

অনেকে লিখছে- “কোরবানীর চামড়া মাটির নিচে পুতে ফেলুন”।
আমার মনে হয়- এটা ভুল সিদ্ধান্ত।
Image result for বিমান
অনেকে লিখছে- “কোরবানীর চামড়া মাটির নিচে পুতে ফেলুন”।
আমার মনে হয়- এটা ভুল সিদ্ধান্ত।
আমার জানা মতে ইসলাম ধর্ম মতে কোরবানীর চামড়া খাওয়া নিষিদ্ধ নয়,
অনেক এলাকা, বিশেষ করে আফ্রিকা, মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়াতে মুসলমানরা পশুর চামড়া খায়।
মুসলমানদের জন্য ‘হালাল-হারাম’ বলে একটা বিষয় আছে,
আমার অনেক মুসলমান বন্ধুর সাথে আলাপ করে জেনেছি, তাদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর মধ্যে কোরবানীর পশুর ৮টি জিনিসকে নিষিদ্ধ (হারাম) বলা হয়েছে, সেই তালিকায় কিন্তু চামড়া নেই।
আসলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে চামড়া খাওয়ার কালচার গড়ে উঠেনি বলেই, এদেশে ট্যানারি শিল্প এত দ্রুত বেড়ে উঠেছে। অপরদিকে অন্য মুসলমান দেশগুলো চামড়া খেয়ে ফেলায় বিধায়, তাদের দেশের ট্যানারি শিল্প অত বেশি প্রসার লাভ করেনি। তবে হা তারাও চামড়ার ট্যানারি নিয়ে কিছু কাজ করে, কিন্তু সেটা অন্য কোন উপায়ে মৃত পশুর চামড়া, ধর্মীয় উপায়ে জবাই করার পশুর চামড়া নয়।
চামড়া খায় কিভাবে ?
হ্যা চামড়া খাওয়া যায়। উচ্চতাপমাত্রা বা গরম পানিতে চামড়া ডুবিয়ে দিলে পশমগুলো উঠে আসে, তখন পুরো চামড়াটা পাওয়া যায়। আমার কিছু বিদেশী মুসলিম বন্ধুর কাছে বিষয়টি জিজ্ঞেস করেছিলাম স্বাদ কেমন। তাদের বক্তব্য- একেক স্থানের চামড়ার একের রকম স্বাদ। আফ্রিকার অনেক রাষ্ট্রে গরুর চামড়া দিয়ে অনেক স্পেশাল আইটেম রান্না করা হয়, সেগুলো দেশ বিদেশে প্রসিদ্ধ। বাংলাদেশেও অনেক এলাকায় গরুর মাথার চামড়ার খাওয়ার প্রচলন আছে, যা নেহারীর পায়ার রবারের মত অংশের সাথে তুলনা করা যায়।
চামড়ায় কি থাকে ?
আসলে আমরা চামড়া বলতে বুঝি শুধু উপরের পশমী অংশ। কিন্তু চামড়া মূল অংশটা কিন্তু থাকে ভেতরের অংশে, যেটাকে বলা হয় কোলাজেন। গরুর চামড়ায় কোলেজেনের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে, তাই গরুর চামড়া বেশি উপদেয়। তাই উপরের পশমী অংশটা (বা চাইলে শক্ত অংশটাও) যদি ফেলে দেয়া যায়, তবে ভেতরে কোলাজেন নামক প্রোটিন পাওয়া সম্ভব, যা মাংশের মতই খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাদ্য।
চামড়া খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে কি লাভ হবে ?
আসলে আমাদের দেশে এতদিন কোরবানীর চামড়া মসজিদ মাদ্রাসায় দান হিসেবে ব্যবহৃত হতো । কিন্তু গত বেশ কিছু বছর যাবত চামড়ার দাম কমে যাওয়ায়, মসজিদ মাদ্রাসায় সেই টাকা আসছে না। এবং কবে নাগাদ চামড়ার দাম বাড়বে তাও বলা যাচ্ছে না। ট্যানারির মালিকদেরও একটা ধারণা তৈরী হইছে, “যদি আমরা চামড়া না নেই, তবে চামড়া পচে যাবে, চামড়া দেয়ার কোন উপায় থাকবে না। তাই যত কম দামই দেই না কেন, চামড়া আমাদের কাছে আসবেই, না দিয়ে যাবে কোথায় ?” তাই ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে দিচ্ছে। এতে তারাও যে খুব একটা লাভবান হতে পারছে তা নয়, বরং এই দাম কমার সুযোগ নিচ্ছে পাশ্ববর্তী ভারতীয় চামড়ার ব্যবসায়ীরা। তারা এই কম দামের সুযোগে প্রুচুর পরিমাণে চামড়া কিনে ভারতে পাচার করে দিচ্ছে। এই অবস্থায় জনগণ যদি চামড়া খাওয়া শুরু করে দেয়, তবে চামড়ার মালিকরা অন্তত এটা ভাবতে পারবে না যে চামড়ার যেই দাম দিবো, পাবালিক সেই দামেই বিক্রি করবে।
এখানে বোঝার বিষয় হলো- বাংলাদেশের চামড়া গুলোর ওজন প্রায় ২০ কেজি থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত হয়। চামড়া খাওয়ার কালচার শুরু হলে ধনীরা হয়ত এগুলো খাবে না, কারণ সেখানে প্রসেসিং এর বিষয় থাকে। কিন্তু নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্তরা (যারা হাত পেতে মাংশ চাইতে পারে না) মাংশের বিকল্প হিসেবে চামড়া খেতে পারে। যদি চামড়ার প্রতি কেজি ১০০ টাকা করে হয়, তবে প্রতি চামড়ার দাম ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দাড়াবে।
লক্ষনীয়, ইসলাম ধর্মের নিয়ম হচ্ছে- কোরবানীর পশুর সবকিছু কোরবানীকারী ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু যদি অংশ বিক্রি করে, তবে বিক্রির টাকা ব্যবহার করতে পারবে না, সেটা ‘গরীবের হক্ব’ হবে।
আমার বলার উদ্দেশ্য, যদি কোরবানী গরুর চামড়া খাওয়ার কালচার শুরু হয়, তবে নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের মধ্যে (যারা হাত পেতে মাংশ চাইতে পারে না) গরুর চামড়া খাওয়ার কালচার শুরু হলে তারা টাকা দিয়ে চামড়া কেনা শুরু করবে, তখন প্রতি চামড়ার মূল্য দাড়াবে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা। তখন সেই টাকা কিন্তু ধনীরা ব্যবহার করতে পারবে না, এতিম বা গরীবকেই দিতে হবে। ফলে এখন যেমন চামড়া প্রতি ট্যানারি মালিকরা ২-৩শ’ টাকা ধরিয়ে দিচ্ছে, সেই কাজটা আর করবে পারবে না, তাদেরকে চামড়া খাওয়াওয়ালাদের সাথে প্রতিযোগীতা করেই চামড়া কিনতে হবে। আর এতে চামড়া নিয়ে যে অপচয়টা হচ্ছে সেটাও হবে না, পাশাপাশি এত বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করবে।
ট্যানারি শিল্পের পাশাপাশি জিলেটিন শিল্প:
ট্যানারি শিল্পের পাশাপাশি আমাদের জিলেটিন শিল্প গড়ে তোলা দরকার। কারণ বাংলাদেশের ঔষধসহ অনেক খাদ্যে জিলেটিনের ব্যবহার আছে। উল্লেখ্য চামড়ার ভেতরের অংশে কোলাজেন নামক উপদান থাকে, সেই কোলাজেন থেকে জিলেটিন তৈরী হয়। পাকিস্তান কিন্তু চামড়ার ট্যানারির থেকে জিলেটিন তৈরীতে বেশি মনোযোগী। বিশ্বব্যাপী হালাল পশু থেকে আগত জিলেটিনের চাহিদাও অনেক। যেহেতু ইউরোপ থেকে আগত জিলেটিনের বড় অংশ হলো শুকর থেকে আগত, আবার চীন বা এসমস্ত রাষ্ট্রে গরুর জিলেটিন থাকলেও সেগুলো ইসলাম ধর্মীয় মতে জবাই করা হয় না। তাই মুসলমানরা হালাল পশু থেকে জিলেটিন উৎপাদন করতে পারে। বাংলাদেশে যেহেতু কোরবানীর সময় প্রচুর পরিমাণে হালাল উপায়ে জবাই করা পশুর চামড়া পাওয়া যায়, সেহেতু সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে জিলেটিন পাওয়া সম্ভব, যা দেশ বিদেশে মুসলিমদের মধ্যে প্রচুর চাহিদা আছে। বাংলাদেশে যদি জিলেটিনের কারখানা তৈরী করা যায়, তবে তখন চামড়া বিক্রির জন্য শুধু ট্যানারির উপর নির্ভর করতে হয় না, জিলেটিন কারাখানাগুলোও চামড়া নিয়ে যাবে। এতে চামড়ার দাম আরো বৃদ্ধি পাবে।
এখন চামড়ার কোলাজেনের কি হচ্ছে ?
এখন যেটা হচ্ছে, চামড়াগুলো ট্যানারিতে যাচ্ছে, সেই চামড়া প্রসেসিং করার সময় চামড়া থেকে ঝরে পড়া কোলাজেনসহ প্রোটিন অংশটুকু বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়া হচ্ছে। আর চামড়া ধোয়ার সময় ট্যানারিগুলো এমন রং ব্যবহার করছে, যেখানে ভারি ধাতু আছে। সেই ভারি ধাতু মিশ্রিত পানি আর চামড়া থেকে ঝড়ে পরা কোলাজেন ও প্রোটিন মিশ্রিত হয়ে ট্যানারি বর্জ্য্ তৈরী করছে। দেখা যাচ্ছে, সেই বর্জ্যের প্রোটিন অংশটা নিয়ে মাছ ও মুরগীর ফিড কোম্পানিগুলো খাদ্য তৈরী করছে। কিন্তু সেখানে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় কিছু ভারি ধাতু মিশ্রিত থাকছে। এটা নিয়ে বিদেশী সমর্থিক পরিবেশবাদী গ্রুপগুলোর চিল্লাচিল্লিতে সেই সব ফিড নিষিদ্ধ করছে সরকার। অথচ চামড়া ধোয়ার সময় যদি ভারি ধাতুর রং এর পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব রং এর ব্যবহার করা হয়, তবে কিন্তু সেই ট্যানারির বর্জ্য্গুলো আর বিষাক্ত হয় না। এখন দেখা যাচ্ছে, দেশের ট্যানারির বর্জ্য থেকে প্রোটিন নিতে না পারায় মাছ ও মুরগীর ফিড কোম্পানিগুলো থাইল্যান্ড বা তারপাশের দেশ থেকে শুকরের মাংশ, চর্বি, হাড় এমনকি কিছু কিছু সময় বিষ্ঠা পর্যন্ত আমদানি করতেছে। অপরদিকে ট্যানারির বর্জ্যগুলো রিসাইক্লিং না হওয়ায় সেগুলো পরিবেশের মধ্যে থেকে তা পরিবেশকে আরো দূষিত করে তুলছে। ফলে ট্যানারিগুলো সব সময় জনগণের চোখে খারাপই থেকে যাচ্ছে। এতদিন হাজারীবাগ দূষিত হয়েছে বলে সরকার জোর করে ট্যানারিগুলো সাভার সরিয়ে দিলো। এতে পথে বসে গেলো ট্যানারিগুলো। এখন সাভারে গেছে, ইতিমধ্যে অনেকে বলছে সাভারের পরিবেশও নাকি ট্যানারি দূষিত করা শুরু করেছে। ৫-১০ বছর পর যখন যখন ট্যানারিগুলো কিছুটা হলেও দাড়াতে পারবে, তখন দেখা যাবে পরিবেশ দূষণের কথা বলে সাভার থেকেও সেগুলো বিতাড়ন করা হয়েছে।
আমি দেখেছি, এখন যারা নিজেদের বুদ্ধিজীবি দাবী করে, মিডিয়াতে কাজ করে বা সরকার প্রশাসনে আছে, তারা কেউ কোন কিছুর সমাধান চায় না্। শুধু মার মার কাট কাট অবস্থা। তাদের কথা মত না চললেই শেষ করে দাও, মাথা ব্যাথ্যা হয়েছে তো মাথা কেটে ফেলো। অথচ সমস্যাটা সামান্য একটু যায়গায়ই থাকে, সেটুকু অংশ সমাধান করলেই কিন্তু পুরো জিনিসটা নষ্ট করতে হয় না।