হালদা নদী দূষণের কারণে এশিয়ান পেপার মিলের উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।এন.সি- ২১৪

হালদা নদী দূষণের কারণে এশিয়ান পেপার মিলের উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
Related image
সম্প্রতি খবর এসেছে, হালদা নদী দূষণের কারণে এশিয়ান পেপার মিলের উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
মিলটির বর্জ্য্ শোধণে ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) ছিলো, তবে তার ব্যবহার ত্রুটির কারণে তার ডিসচার্জ করা তরল থেকে দূষণের আশঙ্কা করা হয়।
সম্প্রতি চামড়া শিল্প নিয়ে যে হৈচৈ তার পেছনেও রয়েছে কিন্তু এই ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট)।
২ বছর আগে ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট)’র অজুহাতে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলোকে সাভারে নিয়ে আসা হয়,
যদিও সরকার নিজেই এখনও সাভারে ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) প্রস্তুত করতে পারেনি।
এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়-
এই ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট)’ অজুহাতে কিন্তু ধিরে ধিরে আমাদের দেশের কলকারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
এর কারণও আছে- ইহুদীবাদীদের তৈরী করা ২০৩০ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মাস্টারপ্ল্যান এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা)’র এর অন্যতম শর্ত হলো বাংলাদেশে সমস্ত কলকারখানায় ২০৩০ সালের মধ্যে ‘ইটিপি’ স্থাপন করতে হবে।
কিন্তু কথা হলো এই ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) সিস্টেমটা অত্যাধিক ব্যয়বহুল একটি সিস্টেম।
এটা শুধু তৈরী করাই ব্যয়বহুল নয়, বরং এটা তৈরীর পর পরিচালনা করা জটিল ও বিদ্যুৎ খরচের দিক থেকে অত্যধিক ব্যয়বহুল।
উল্লেখ্য-
একটি সাধারণ মানের ইটিপি স্থাপনে প্রাথমিক ব্যয় হয় ৪০-৮০ লাখ টাকা।
একটি অত্যাধুনিক বায়োলজিক্যাল ইটিপি স্থাপনে ব্যয় হয় ২-৩ কোটি টাকারও বেশি।
এছাড়া ইটিপি স্থাপনে যেসব ইকুইপমেন্ট প্রয়োজন তার সবই আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে।
এই বিপুল টাকা ব্যয় করে ইটিপি স্থাপন করতে চান না অনেক কারখানা মালিক।
আবার স্থাপন করলেও বিদ্যুৎ ব্যয়ের কথা বলে সেগুলো রান করতে চান না।
এখানে আরো লক্ষ্যনীয়,
একজন উদ্যোক্তা যখন কোন ইনভেস্ট করেন, তখন তিনি লাভের জন্যই করেন।
কিন্তু তার লাভ-লস কতটুকু হলো সেটা বিবেচনা করে যখন তাকে পরিবেশের কথা বলে বিরাট খরচ হাতে ধরিয়ে দেয়া হলো- তখন সে যদি দেখে লাভের থেকে লস বেশি, তবে কিন্তু নিজেকে গুটিয়ে নেবে, ব্যবসা বন্ধ করে দিবে অথবা কারচুপি করার চেষ্টা করবে।
কথা হলো, সরকার যেহেতু ইহুদীবাদীদের মাস্টারপ্ল্যান এসডিজিতে সই করেছে,
তাই ২০৩০ সালের আগের সকল কলকারখানাকে ইটিপির জন্য ধরা হবে।
কিন্তু সকল সকল কলকারখানা ইটিপি খরচ বহন করতে পারবে কি না, সেটাই হলো কথা।
যেমন- ইটিপির কথা বলে যে হাজারিবাগ থেকে যখন ট্যানারিগুলো সাভারে ট্র্যান্সফার করা হলো,
তখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ট্যানারিগুলো কিন্তু হারিয়ে গেলো।
অর্থাৎ ইটিপি’র সিস্টেমটাই এমন, যেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তরা হারিয়ে যাবে,
বড়গুলো হয়ত টিকে থাকবে, কিন্তু খুড়িয়ে খুড়িয়ে।
আরো লক্ষ্যনীয় বিষয়, সরকার যে বিভিন্ন কোম্পানিগুলোকে ইটিপি চাপিয়ে দিচ্ছে,
সেই সরকার কি নিজে ইটিপি চালু করতে পেরেছে ?
২০১৭ সালে হাজারিবাগ থেকে ট্যানারিগুলোকে সাভারে আনা হয়েছে
আড়াই বছর হয়ে গেলো এখনও সরকার নিজেই সাভারে ইটিপি চালু করতে পারেনি,
ট্যানারি বর্জ্যগুলো ফেলা হচ্ছে ধলেশ্বরীর উন্মুক্ত স্থানে।
এছাড়া সরকারীভাবে যে সুয়ারেজ লাইনের পানি ফেলানো হয়,
সেখানে সরকারইভাবে কতটুকু ইটিপি চালু করতে সক্ষম হয়েছে ?
তারমানে দাড়াচ্ছে,
সরকার নিজে যেখানে ইটিপি চালু করতে পারছে না,
সেখানে সরকার কোন যুক্তিতে সকল কলকারখানার উপর ইটিপি সিস্টেম চাপিয়ে দিচ্ছে ?
আর বেসরকারীভাবে সেটা কতটুকু রাখা কতটুকু ‘আর্থিক সক্ষমতা রাখে’ কিংবা সেই সিস্টেম চালানোর জন্য দেশে প্রশিক্ষিত লোক আছে কি না, সেটা যাচাই করার দরকার।
ইহুদীবাদীরা সরকারকে একটা সিস্টেম শিখিয়ে দিয়েছে,
ব্যস, সেই সিস্টেম দেখিয়ে সরকার একের পর কলকারখানা বন্ধ করে যাচ্ছে,
এটা তো ঠিক না।
আরেকটি কথা-
ইহুদীবাদীরা কিন্তু সারা বিশ্ব চালানোর জন্য অনেক পলিসি ব্যবহার করে।
এই পলিসিগুলো ব্যবহার করে তারা প্রতিপক্ষকে দমিয়ে রাখে, এবং নিজেরা উপরে উঠে।
যেমন ধরুন- জঙ্গীবাদ।
গত ৮ মাসে আমেরিকায় ২৬০টা ম্যাস গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, নিহত হয়েছে সহস্রাধিক লোক।
কিন্তু এটা নিয়ে কিন্তু আমিরকাকে কেউ জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র বলছে না।
অথচ আমাদের দেশের জঙ্গী আছে, অমুক আছে তমুক আছে বলে সারাদিন আমাদের দেশকে চাপানো হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে আসলে তাদের কৌশলগত সিস্টেম।
একইভাবে একই ‘পরিবেশ রক্ষা’ও বুলি চপকানোও ইহুদীবাদীদের একটা বড় কৌশল।
এই পরিবেশের উছিলা দিয়ে তারা থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রিগুলোতে ইন্ডাস্ট্রি বাড়াতে দেয় না, নিয়ন্ত্রণ করে।
ফলে তারা নিজের পায়ে দাড়াতে পারে না, ইহুদীবাদীদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে।
বলাবাহুল্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের হিসেব মতেই বিশ্বের মোট দূষণের ৩০% করে চীন, ১৫% করে আমেরিকা, ভারত করে ৭%, রাশিয়া করে ৫%, জাপান করে ৪%। তারা নিজেরাই যদি দূষণের ব্যাপারে এত কিছু সবক দেয়, তবে তারা নিজেদের দেশের দূষণ কেন হ্রাস করে না ?
আর পৃথিবীর সবেচেয়ে দূষণযোগ্য বস্তু হলো পরমাণু তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহার।
তারা কেন এগুলো চর্চা বন্ধ করে বিশ্বকে হুমকির মুখ থেকে রক্ষা করে না।
তাছাড়া আমেরিকা বিশ্বকে কন্ট্রোল করে তেল আর ডলারের মধ্যে ব্যালেন্স করে।
তেল ভিন্ন অন্য এনার্জির গবেষনা তারাই বিভিন্ন সেক্টরে আটকে রেখেছে বিভিন্ন সময়,
যেন সবাই বিকল্প এনার্জির দিকে ঝুকতে না পারে।
অথচ তেল পোড়ানো বন্ধ কলে বিশ্বের সিংহভাগ দূষণ হ্রাস পেতো।
আরো উল্লেখ্য, যারা পরিবেশের কথা বলে, তারাই কিন্তু একটা সময় বাংলাদেশের ব্যঙ আর কেচো মেরে কীটনাশক এনেছে। তারাই ইউক্যালিপটাস আর আকাশমনি গাছ লাগিয়ে পরিবেশ দূষণ করেছে।
কিন্তু সেগুলোর কথা তারা বলে না।
তাদের চোখ হলো পরিবেশের কথা কপচে বাংলাদেশের সকল কলকারখানা বন্ধ করে দেয়া।
শেষ কথা- ইহুদীবাদীরা কোন পলিসি শিখিয়ে দিলেই সেটা আমাদের দেশে অ্যাপ্লাই করা যাবে না।
সেটা নিয়ে আমাদের আলাদা গবেষণা দরকার। আর বাংলাদেশের তাদের দালাল মিডিয়াগুলো যেগুলো বলছে, সেগুলোর ইমপ্যাক্ট কতটুকু সত্য, সেটাও আরো গবেষণা ও যাচাই করার দরকার আছে।
তারা ইটিপি নামক যে সিস্টেম করতে বলছে সেটার কোন বিকল্প ও সহজলভ্য ও কম খরচের কোন সিস্টেম আছে কি না, সেটা আমাদের নিজেদের বের করতে হবে।
কারণ আমাদের দেশের উদ্যোক্তারা ব্যক্তি পর্যায়ে খুব কম পূজি নিয়ে ব্যবসা করতে নামে।
তাদের আপনি কোটি কোটি টাকার হিসেবে ধরিয়ে দিলে তারা ব্যবসাই ছেড়ে দিবে।
এক্ষেত্রে সরকার যদি পরিবেশের কথা চিন্তা করে, তবে তাকে সহযোগীর ভূমিকায় আসতে হবে,
পুলিশের ভূমিকায় নয়। ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে জোর বন্ধ করে দেয়া কোন সমাধান নয়, এতে দেশের ক্ষতি, দশের ক্ষতি।