বুড়িগঙ্গার তীরে বিশ্বব্যাংকের পর্যটন এবং আমাদের শিল্প বাণিজ্য ধ্বংসের রূপরেখা
কর্পোরেটোক্রেসি নিয়ে আমি অনেক আলোচনা করেছি এক সময় । বলেছিলাম- কর্পোরেটোক্রেসি আসলে- ঐ দেশের নিজস্ব কোন শিল্প-বাণিজ্য টিকে ধাকবে না, তারা আমদানি নির্ভর হবে। তবে শুধু একটা শিল্প রমরমা থাকবে, সেটা হলো পর্যটন শিল্প। আর শিল্প-ব্যবসা না থাকায় পুরুষরা বেকার থাকবে, তবে নারীদের জন্য ভালো সুযোগ থাকবে পর্যটন শিল্পে। বিদেশী পর্যটকদের মনোরঞ্জন করে সংসার চালাবে নারীরা।
সম্প্রতি চামড়া শিল্পে বেহাল অবস্থা আমরা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি, কিভাবে একটি দেশীয় শিল্প সম্পূর্ণ রূপে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে। চামড়া শিল্প বলতে যদি আমরা শুধু আড়ৎদার, ট্যানারি মালিক ও চামড়া শ্রমিক বুঝি, তবে ভুল করবো। বরং এর সাথে জড়িত আরো কোটি লোকের রুটি রুজি।
যেমন-
ট্যানারির সাথে জড়িত কেমিক্যাল ব্যবসা। চামড়া প্রসেসিং বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে গেলে কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা পথে বসে যাবে।
আড়ৎ এর সাথে জড়িত লবন ব্যবসা। লবন ব্যবসায়ীরা আগের মত সেই ব্যবসায় ইনকাম করতে পারবে না।
চামড়াকে কেন্দ্র করে আরো হাজার ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্র গড়ে উঠেছে যার কোন সুনির্দ্দিষ্ট হিসেব নেই। কিন্তু চামড়া শিল্প ধ্বংস করে প্রায় কোটি লোককে বেকার করে দেয়া হচ্ছে।
যেমন-
ট্যানারির সাথে জড়িত কেমিক্যাল ব্যবসা। চামড়া প্রসেসিং বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে গেলে কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা পথে বসে যাবে।
আড়ৎ এর সাথে জড়িত লবন ব্যবসা। লবন ব্যবসায়ীরা আগের মত সেই ব্যবসায় ইনকাম করতে পারবে না।
চামড়াকে কেন্দ্র করে আরো হাজার ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্র গড়ে উঠেছে যার কোন সুনির্দ্দিষ্ট হিসেব নেই। কিন্তু চামড়া শিল্প ধ্বংস করে প্রায় কোটি লোককে বেকার করে দেয়া হচ্ছে।
চামড়ার দামে ধস নামার পর সরকার কাচা চামড়া রফতানির ঘোষণা দিয়েছে। সত্যিই বলতে চামড়া যতটুকু সংরক্ষণের দরকার সেটা হয়ে গেছে, বাকিটা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তাই নতুন করে কাচা চামড়া রফতানি করার দরকার ছিলো না। কিন্তু কাচা চামড়া রফতানির ঘোষণা দিয়ে সরকার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে, আসলে সরকার চাচ্ছে না- বাংলাদেশে ট্যানারি শিল্প থাকুক। বরং বাংলাদেশে কোরবানীর সময় যে চামড়াগুলো আসছে তা ভারতে চলে যাক, তারা সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করুক। কারণ ট্যানারি শিল্পের মূল কাচামাল কাচা চামড়া, বাংলাদেশের কোরবানী উপলক্ষে যেটা পর্যাপ্ত ছিলো, এখন সরকার সেই কাচামাল বিদেশে রফতানির ঘোষণা দিয়ে দেশী ট্যানারি শিল্পের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিলো। উল্লেখ্য এর আগে পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে সরকার ট্যানারি শিল্পে ১২টা বাজিয়ে দিয়েছে। যেমন-
১) চামড়া শিল্প গার্মেন্টস শিল্পের পর একটি বৃহৎ শিল্প। অথচ সরকার এই শিল্পের দায়িত্ব দিয়েছে ‘ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)’কে। কথা হলো বিসিকের মত প্রতিষ্ঠানটি চামড়া শিল্পের মত বড় একটি শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কি ?
২) সরকার ২০১৭ সালে জোর করে হাজারিবাগ থেকে ট্যানারিগুলো সরিয়ে দিলো। কিন্তু ২০১৯ সালে এসে বলতেছে, ২০২০ সাল নাগাদ সাভারের ট্যানারি এলাকা প্রস্তুত হবে। (https://bit.ly/2Twl7LA)
কথা হলো- সরকার কেন নতুন ট্যানারি এলাকা প্রস্তুত না করে ৩ বছর আগে বিদ্যুৎ-পানি বন্ধ করে, দৈনিক জরিমানা ধরে ট্যানারিগুলো উচ্ছেদ করলো। এই ৩ বছরে যে ক্ষতি হয়েছে তা হয়ত বড় ট্যানারিগুলো কষ্ট করে পুষিয়ে নিতে পারবে, কিন্তু মাঝারি ও ছোট ট্যানারিগুলো এই ধাক্কায় চিরতরে হারিয়ে গেছে।
কথা হলো- সরকার কেন নতুন ট্যানারি এলাকা প্রস্তুত না করে ৩ বছর আগে বিদ্যুৎ-পানি বন্ধ করে, দৈনিক জরিমানা ধরে ট্যানারিগুলো উচ্ছেদ করলো। এই ৩ বছরে যে ক্ষতি হয়েছে তা হয়ত বড় ট্যানারিগুলো কষ্ট করে পুষিয়ে নিতে পারবে, কিন্তু মাঝারি ও ছোট ট্যানারিগুলো এই ধাক্কায় চিরতরে হারিয়ে গেছে।
৩) দাবী করা হয়-“ট্যানারির কারণে বুড়িগঙ্গার পানি দূষিত হচ্ছে, তাই ট্যানারিগুলো সরাতে হবে।”
এ জন্য সরকার ইটিপি প্ল্যান্ট (বর্জশোধন ব্যবস্থা) এর কথা বলে ট্যানারিগুলো সাভারে সরালো, কিন্তু এখনও সাভারে ধলেশ্বরীতে ইটিপি প্ল্যান সরকার ঠিক মত দিতে পারেনি। অথচ হাজারীবাগে ট্যানারি রেখে সেখানেও ইটিপি প্ল্যান্ট (বর্জশোধন ব্যবস্থা) দেয়া সম্ভব ছিলো, তাহলে ট্যানারি শিল্পের এমন ১২টা বাজতো না।
এ জন্য সরকার ইটিপি প্ল্যান্ট (বর্জশোধন ব্যবস্থা) এর কথা বলে ট্যানারিগুলো সাভারে সরালো, কিন্তু এখনও সাভারে ধলেশ্বরীতে ইটিপি প্ল্যান সরকার ঠিক মত দিতে পারেনি। অথচ হাজারীবাগে ট্যানারি রেখে সেখানেও ইটিপি প্ল্যান্ট (বর্জশোধন ব্যবস্থা) দেয়া সম্ভব ছিলো, তাহলে ট্যানারি শিল্পের এমন ১২টা বাজতো না।
৪) চামড়া শিল্পের দূরাবস্থার মধ্যে নতুন করে কমপ্লায়েন্সের কথা বলে বিষয়টি আরো জটিল করে তুলছে পশ্চিমাপন্থী একটি মহল। রানা প্লাজার ঘটনার পর কমপ্লায়েন্সের কথা বলে যেভাবে অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো, একই কাজ করা হয়েছে ট্যানারি শিল্পের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কর্পোরেট ষড়যন্ত্রকারীদের হাত স্পষ্ট।
প্রায় অনেকেই বলেছে,
বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশের পাট শিল্প ধ্বংস করা হয়েছে এবং সেই পাট শিল্প চলে গেছে ভারতে। (https://bit.ly/304cLxD)
বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশের পাট শিল্প ধ্বংস করা হয়েছে এবং সেই পাট শিল্প চলে গেছে ভারতে। (https://bit.ly/304cLxD)
চামড়া শিল্পের ক্ষেত্রেও বিষয়টি হয়েছে একইরকম। অর্থাৎ বিশ্বব্যাংক বুড়িগঙ্গার তীরে পর্যটন কেন্দ্র গড়তে ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর পরই বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে শিল্প-বাণিজ্যগুলো একের পর এক ধ্বংস হতে চলেছে। উল্লেখ্য বিশ্বব্যাংক অনেক আগে থেকেই বলছিলো- তারা বুড়িগঙ্গার তীরে পর্যটন শিল্প তৈরী করবে। তবে ২০১৬ সালে তারা চূড়ান্ত এ প্রকল্পে ১৬০০ কোটি টাকার ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেয় (https://bit.ly/2yZE8N3)। এর পরের বছরই এক হিসেবে জোর করে ট্যানারীগুলোকে জোর করে বুড়িগঙ্গার তীর থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। ঠিক একইভাবে ২০১৯ এর শুরুতে লালবাগে আগুনের স্যাবোটেজ ঘটিয়ে পুরান ঢাকার সমস্ত শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যগুলো সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেয় সরকার। মিডিয়াগুলোও সেখানে ঘি ঢালে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারণে এক পর্যায়ে পিছু হাটে সরকার। পাট শিল্পে সাথে যদি তুলনা করি, তবে বিষয়টি সোজা হিসেব মিলে যায়। মানে প্ল্যান হলো বিশ্বব্যাংকের, আর ব্যবসা চলে যাবে ভারতে। মানে বাংলাদেশের কাচামাল (কাচা চামড়া) থাকবে, কিন্তু ট্যানারিগুলো চলবে ভারতে। ১ হাজার টাকার কাচা চামড়া প্রসেসিং করে তারা ১ লক্ষ টাকার টাকার ফিনিশিং গুড বানাবে। এর সাথে কোটি কোটি ভারতীয় চাকুরী ব্যবসা হবে। অথচ কাচামাল সরবরাহকারী বাংলাদেশের মানুষ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ভারি চামড়া কাধে তুলে কান্নাকাটি করে মরবে।
বিষয়টি তুলনা করা যায় অনেক সিয়েরা লিওন নামক রাষ্ট্রটির সাথে।
সিয়েরা লিওন হলো পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশ
কিন্তু পৃথিবীর অন্যতম হীরা সমৃদ্ধ দেশ হলো সিয়েরা লিওন।
সিয়েরা লিওনে পৃথিবীর বড় বড় হীরা ব্যবসায়ীরা আসে।
সেই ব্যবসায়ীদের অধীনে সিয়েরা লিওনের জনগণ সারাদিন হীরা তুলে দেয়ার চুক্তিতে দুই বেলা খাবার পায়। অথচ সেই হীরা পশ্চিমা দেশগুলোতে গিয়ে পরিশোধন কোটি কোটি ডলারে বিক্রি হয়।
বলাবাহুল্য, সিয়েরা লিওনে নারীদের একটি বড় অংশ পতিতাবৃত্তি করে সংসার চালায়।
সিয়েরা লিওন হলো পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশ
কিন্তু পৃথিবীর অন্যতম হীরা সমৃদ্ধ দেশ হলো সিয়েরা লিওন।
সিয়েরা লিওনে পৃথিবীর বড় বড় হীরা ব্যবসায়ীরা আসে।
সেই ব্যবসায়ীদের অধীনে সিয়েরা লিওনের জনগণ সারাদিন হীরা তুলে দেয়ার চুক্তিতে দুই বেলা খাবার পায়। অথচ সেই হীরা পশ্চিমা দেশগুলোতে গিয়ে পরিশোধন কোটি কোটি ডলারে বিক্রি হয়।
বলাবাহুল্য, সিয়েরা লিওনে নারীদের একটি বড় অংশ পতিতাবৃত্তি করে সংসার চালায়।
আসলে কর্পোরেটোক্রেসি বিষয়টি এমন-
দেশের সম্পদ থাকবে, কিন্তু জনগণ তা ব্যবহার করতে পারবে না।
সম্পদ চলে যাবে আন্তর্জাতিক কর্পোরেটদের হাতে, জনগণ বহু কষ্ট করবে, কিন্তু দিন শেষে দু’মুঠো খাবার জোগার করাই তার জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
দেশের সম্পদ থাকবে, কিন্তু জনগণ তা ব্যবহার করতে পারবে না।
সম্পদ চলে যাবে আন্তর্জাতিক কর্পোরেটদের হাতে, জনগণ বহু কষ্ট করবে, কিন্তু দিন শেষে দু’মুঠো খাবার জোগার করাই তার জন্য কঠিন হয়ে যাবে।