কোরবানী ও পূজা : দুই ক্ষেত্রে সমান নয় কেন ? এন.সি-২২১

কোরবানী ও পূজা : দুই ক্ষেত্রে সমান নয় কেন ?

কোরবানী ও পূজা : দুই ক্ষেত্রে সমান নয় কেন ?
(১) কোরবানী আসলে কিছু লোক বলে কোরবানী করার মাধ্যমে নাকি ভায়োলেন্স ছড়ায়। উন্মুক্ত স্থানে একটি পশু জবাইয়ের দৃশ্য মানুষকে ভায়োলেন্স শিক্ষা দেয়।
লক্ষ করুণ- কিছুদিন পর দূর্গা পূজার সময় ঐ লোকটি কি বলে। কারণ পূজার মূল থিম হচ্ছে ভিনদেশী দূর্গা আদিবাসী সাওতাল রাজাকে হত্যা করছে। যার মূর্তি সবত্র বিদ্যমান। ১০ হাতে দশ অস্ত্র নিয়ে এক পা সাওতাল রাজার বুকের উপর দিয়ে রেখেছে, আর সাওতাল রাজা চিৎকার করছে। সেই আদিবাসী হত্যারত দূর্গার পায়ের নিয়ে সবাই পূজা করছে। আমার কথা হলো, যে লোকটা পশুর কোরবানীর দৃশ্য ভালোয়েন্স হিসেবে চিহ্নিত করছে, সেই লোকটা কি দূর্গা পূজার সময় মানুষ হত্যার মূর্তিকে ভায়োলেন্স হিসেবে চিহ্নিত করছে না ?
Related image(২) অনেকে বলে কোরবানী আসলে পরিবেশ দূষণ হয়। গরুর অতিরিক্ত বর্জ্য্ নাকি পরিবেশ দূষণ করে।
আমার কথা হলো- কয়েকদিন পর যখন দূর্গা পূজা আসছে, সেখানে বাংলাদেশে প্রায় ৩০ হাজার মণ্ডপে প্রায় ৫ থেকে ১০ লক্ষ মূর্তি হবে, যেগুলোকে পূজা শেষে পানিতে চুবানো হবে। সেই সব মূর্তির মধ্যে কেমিকেল রংসহ অনেক ক্ষতিকর বস্তু আছে, যা নদী ও পুকুরের পানিকে মারাত্মক দূষণ করে।
কথা হলো- যে লোকগুলো আজকে কোরবানীর পশুর কারণে পরিবেশ দূষণ হয় বলে চিৎকার চেচামেচি করছে, কয়েকদিন পর তারা কি নদী দূষণের কথা বলে নদী-পুকুরের মূর্তি বিসর্জনের বিরোধীতা করে কি না ? উল্লেখ্য- খোদ ভারতে নদী দূষণের কথা চিন্তা করে অনেক স্থানে নদীতে মূর্তি বিসর্জন করা নিষিদ্ধ। মিডলইস্ট সহ অনেক দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নদীতে নয় বাথরুমে বালতির মধ্যে ছোট মূর্তি বানিয়ে বিসর্জন দেয়।
(৩) অনেকে বলে কোরবানী না করে টাকাটা দান করে দেন।
অথচ কোরবানীর মাধ্যমে কোন অর্থের অপচয় হয় না। যে গরু কেনা হয় সেই গরু বিক্রি করে খামারী/কৃষকের সারা বছর আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে। অপরদিকে গরুর মাংশ খেয়ে মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ হয়। গরুর বাদবাকি সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ব্যবহার হয়। এখানে অপচয়ের কোন স্থান নেই।
অপরদিকে প্রতি বছর পূজার সময় লক্ষ লক্ষ মূর্তি বানানো হয়। এমনও মূর্তি আছে যেগুলো ৩-৪ তলা সমান উচু। এ মূর্তিগুলোর গায়ে শাড়ি গয়না পড়ানো, বাতি দিয়ে সাজানো হয়। অথচ এগুলোর কোন লাস্ট আউটপুট নেই। মানে শাড়ি গয়নাসহ পুরো মূর্তিটাকে পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়, যা সম্পূর্ণ অপচয়। যে লোকগুলো বলে- কোরবানী না করে টাকাটা দান করে দেন, লক্ষ্য রাখবেন- পূজার সময় তারা বলে কি না- মূর্তি না বানিয়ে টাকাটা গরীরবদের দান করে দেন।
(৪) কোরবানীকে নির্ধারিত স্পটে করতে বলেছে উত্তরের মেয়র আতিকুল। নয়ত পরের বার আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে সে। এ বছর- কোরবানীর গরু বাড়ির বাইরে বেধে রাখার কারণে মেয়র আতিকুল একজনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা পর্যন্ত করেছে।
কথা হলো- দূর্গা পূজার সময় মন্দির থাকতে মন্ডপ কেন ? মন্দিরেই তো পূজা হতে পারে, তাহলে মন্দির রেখে বাইরে এসে কেন প্যান্ডেল বানিয়ে মণ্ডপ বানানো হয়, কেন রাস্তা বন্ধ করে যানজট বাধানো হয়। একটি দুটি নয়, সারা দেশে ৩০ হাজার মণ্ডপ বানানো হয়, তখন তো কেউ বলে না- নির্ধারিত স্থানে (মন্দিরে) পূজা করতে হবে, নির্ধারিত স্থানের বাইরে মণ্ডপে নয়। নির্ধারিত স্থানের বাইরে মণ্ডপ করলে জরিমানা করা হবে।
(৫) কোরবানীর হাটের কারণে যানজট হয়, এই অজুহাতে হাটগুলোকে শহর থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। হাটের সংখ্যাও হ্রাস করা করা হয়েছে।
অথচ- প্রতি বছর মণ্ডপের সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকা শহরে ৩৬০টি এবং সারা দেশের ৩০ হাজারের বেশি মণ্ডপ করা হয়। মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে হাটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা দরকার, কিন্তু সেটা হ্রাস করা হচ্ছে, আর হিন্দুদের মন্দিরের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। পুরো বিষয়টি উল্টা।
(৬) কোরবানীর পশু ক্রয়ের সময় প্রতি পশু বাবাদ ৫-৬% হাসিল দিতে হয়। এটা সরকারী ট্যাক্সের অংশ। কথা হলো মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কারণে যদি ট্যাক্স দিতে হয়, তবে হিন্দুদের অনুষ্ঠানের সময় কি ট্যাক্স দিতে হয় ? কখনই না। বরং হিন্দুরা দূর্গা পূজার সময় যে ৩০ হাজার মণ্ডপ করে, তার প্রতিটিতে ৫০০ কেজি চাল সরকারীভাবে অনুদান দেয়া হয়। এমনকি কোন মণ্ডপে যদি বিদ্যুৎ চলে যায়, তখন জেনারেটরের তেল খরচ পর্যন্ত সরকারী ভাবে অনুদান দেয়া হয়। সরকার যদি ৩০ হাজার মণ্ডপে ভতুর্কি দিতে পারে, তবে ঢাকা শহরের ২৫টা হাটে কেন ভর্তুকি দিতে পারবে না ? কেন ট্যাক্স নিতে হবে ?
(৭) অনেকেই কোরবানী আসলে বলে গরুর মাংশ খেলে স্বাস্থ্য সমস্যা হয়। অথচ ঐ লোকটাই পূজার প্রসাদ খেতে উৎসাহিত করে। কথা হলো- কোরবানীর পশুর মাংশের মধ্যে স্বাস্থ্যবিরোধী কিছু নেই (যে কোন খাবার মাত্রাতিরিক্ত খাওয়াই স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ হতে পারে), তবে পূজার প্রসাদের মধ্যে পঞ্চ্যগব্য মিশ্রণ একটি অতি জরুরী বিষয়। পঞ্চ্যগব্য বানাতে গরুর গোবর ও মূত্র অবশ্য দরকারী। তাই সেই পঞ্চ্যগব্য মিশ্রিত প্রসাদে অবশ্যই ক্ষতিকারক মলের ব্যাকটেরিয়া থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু পূজার প্রসাদ খেলে স্বাস্থ্য ঝুকি তৈরী হতে পারে এমন কোন বক্তব্য আমি তাদের দিতে দেখি নাই।
সত্যিই বলতে, এ পোস্টটাকে অনেকে সাম্প্রদায়িক পোস্ট ভাবতে পারেন।
কিন্তু এটা সাম্প্রদায়িক পোস্ট নয়। এটা সমানাধিকারের পোস্ট।
এদেশ হিন্দু মুসলিম সবার। হিন্দু যদি অধিকার পায়, তবে মুসলমানদের অধিকার দিতে সমস্যা কোথায় ?
কেন মুসলিম জনগোষ্ঠীর অধিকার হরন করা হচ্ছে, কেন তাদের সব দিক থেকে চেপে ধরা হচ্ছে,
আমার সেটাই প্রশ্ন।