ভারতের এস জয়শঙ্কর ঠিক কি কারণে বাংলাদেশে এসেছিলো, সেটা বোঝার চেষ্টা করেছি।
ঠিক কারণে সে ঢাকায় আসলো তা স্পষ্ট না, তবে কয়েকটি কারণ আমার কাছে মেজর মনে হয়েছে। সে কারণগুলো লিখলাম-
ঠিক কারণে সে ঢাকায় আসলো তা স্পষ্ট না, তবে কয়েকটি কারণ আমার কাছে মেজর মনে হয়েছে। সে কারণগুলো লিখলাম-
১) চীন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে প্রচুর ইনভেস্ট করছে। ভারত বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না। সেও চাইছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতে চীনের প্রতিযোগী হতে। বিশেষ করে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোতে ভারত ঢুকতে চায়। এ কারণে জয়শংঙ্কর শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে।
২) আগামী অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে নয়াদিল্লীতে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের সম্মেলন আছে। সেখানে শেখ হাসিনা যাবে। সেই সম্মোলনের ফাঁকে শেখ হাসিনা-মোদির মধ্যে বৈঠকও হবে। সেই বৈঠকের অফিসিয়াল দাওয়াত এবং মোদির পক্ষ থেকে বিশেষ কোন বার্তা সম্বলিত চিঠিও শেখ হাসিনাকে দেয় জয়শঙ্কর।
৩) ভারতের ভাঙ্গাচুরা থার্ডক্লাস দেয়া অস্ত্র বাকিতে নিতে একটা চূক্তি হয়েছিলো গত বছর। কিন্তু চূক্তি হলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখনও অস্ত্রগুলো নেয়নি। এ অবস্থায় অস্ত্রগুলো নিতে তাগিদ দেয় জয়শঙ্কর।
৪) ‘কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরণী বিষয়’- এটা নিয়ে র্যাবের বক্তব্য থাকলেও, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের কোন অফিসিয়াল বিবৃতি ছিলো না। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে দেখাতে ভারতের সেটা দরকার। আজকে সকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের সেই অফিসিয়াল বিবৃতি নিয়ে জয়শঙ্কর বাসায় ফেরত যায়।
৫) শুধু পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর নয়, মোদি আছে ভূটান সফরে। আমার কাছে মনে হয়েছে এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব হ্রাসের জন্য আমেরিকার নেয়া পিভট ট্যু এশিয়াকে সফল করতে ভারতের নেয়া ‘এক্ট ইস্ট’ পলিসি বাস্তবায়নে খুব তোরজোড় চলছে। এক্ষেত্রে ভারতকে তার ‘কানেকটিভিটি’ বাড়াতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তো অনেক পরের বিষয়, খোদ ভারতই তার অনেক রাজ্যে যোগাযোগ এখনও ঠিক মত গড়তে পারেনি। আর ব্যবসা বাণিজ্যের কথা আসলে প্রথমে আসবে স্বল্প খরচের নৌ-যাতায়াতের কথা। কিন্তু ভারতের অনেকগুলো রাজ্য ‘ল্যান্ডলক’ (ভারতের প্রায় এক তৃতীয়াংশের বেশি) এবং সেগুলোতে নৌপথে পৌছানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর এবং নৌপথগুলো ব্যবহার করে ভারত তার অনেক এলাকায় খুব সহজে পৌছাতে পারবে, যার অন্য কোন উভায়ে সম্ভব না। সোজা হিসেবে- চীন-আমেরিকা যুদ্ধে ভারতকে অবশ্যই আমেরিকা আঞ্চলিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে, কিন্তু এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ভারতকে সুযোগ করে দিতে হবে, নয়ত আমেরিকা-চীন যুদ্ধ জমবেই না। আমার কাছে মনে হয়েছে, সেই ‘এক্ট ইস্ট পলিসি’র কাজ এগিয়ে নিতেই জয়শঙ্করের এবারের ৩ দিনের সফরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো।