আমি রাজনৈতিক কোন বিশ্লেষণ দেশী রাজনীতি দিয়ে করি না,। এন.সি-২০৪

আমি রাজনৈতিক কোন বিশ্লেষণ দেশী রাজনীতি দিয়ে করি না,
Image result for সাগরআমি রাজনৈতিক কোন বিশ্লেষণ দেশী রাজনীতি দিয়ে করি না,
আমি বিশ্বাস করি, দেশী রাজনীতি হচ্ছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটা ক্ষুদ্র অংশ।
তাই যে আন্তর্জাতিক রাজনীতি যে যত বেশি বুঝতে পারবে,
দেশী রাজনীতি, অতীত-ভবিষ্যত তার জন্য বোঝা তত সহজ হয়ে যাবে।
এজন্য প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের মধ্যে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বোঝা অ্যানালিস্ট থাকা খুব জরুরী।
যার যত বেশি এ ধরনের যত বুঝদার লোক থাকবে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সে তত বেশি দূরদর্শী ও স্বাবলম্বী হবে।
আওয়ামীলীগের রাজনীতি নিয়ে আমার খুব বেশি গবেষণা নাই।
তবে আমি অতীত-বর্তমান জোড়া লাগিয়ে একটা গ্রাফ তৈরী করতে পারি।
আমার দৃষ্টিতে আওয়ামীলীগ যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন দুটি শ্রেণীর অস্তিত্ব দেখা যায়।
একদল হলো – আওয়ামীলীগের মূল প্যানেল।
আরেকদল হলো- আওয়ামীলীগের মূল প্যানেলে নয়, কিন্তু আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে, আওয়ামীলীগের থেকে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হওয়া একটা গ্রুপ। এবং আওয়ামীলীগের মূল কেন্দ্র থেকে তাদের বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে পুরষ্কৃত করা হয় (অথবা চুপ করানো হয়)।
এবার আসি আন্তর্জাতিক আলোচনায়।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মার্কিন সম্রাজ্যবাদ থেকে ছড়িয়ে পড়া দুইটা ব্লক দেখা যায়।
১) ডেমোক্র্যাট ব্লক, ২) রিপাবলিকান ব্লক।
প্রায় সকল দেশেই এদের সদস্যরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রবেশ করানো থাকে।
ডেমোক্র্যাট ব্লক সদস্যরা মূলত মিডিয়া, শুশীল, পরিবেশবাদী, বিচারবিভাগ, গণতন্ত্রপন্থী, সেক্যুলার, নাস্তিক, মডারেট মুসলিম, সংস্কৃতিবাদী, গবেষক, নারীবাদী, এনজিও কর্মী, যুদ্ধবিরোধী, সংখ্যালঘুদরদী, সাহিত্যিক, সেলিব্রেটি বেশ ধরে থাকে।
অপরদিকে রিপাবলিকান ব্লক সদস্যরা-ব্যবসায়ী, আর্মি পারসন, পাকিস্তানবিরোধী, জঙ্গীবিরোধী, নাস্তিক নয় কিন্তু মুসলিমবিরোধী, কট্টরপন্থী, উগ্রহিন্দুত্ববাদী, উগ্রজাতীয়তাবাদী, সংখ্যালঘু হিসেবে নয় তবে হিন্দুদের আলাদা জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, ৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করা, ১/১১ এর সূচনাকারীর মত লক্ষণগুলো তাদের মধ্যে দেখা যায়। সব লক্ষণ যে সবার মধ্যে দেখা যাবে বিষয়টি এমন নয়, কোন কোন লক্ষণ কখন কখন এদের সাথে মিলে যায়।
আমার কাছে মনে হয়,
দ্বিতীয় গ্রুপটা, মানে রিপাবলিকান ব্লক সদস্যরা আওয়ামীলীগের মূল প্যানেল নয়, কিন্তু আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত হয়েছিলো এবং এখনও সুবিধা প্রাপ্ত হচ্ছে।
এবং হয়ত তাদের আন্তর্জাতিক কানেকশন থাকার কারণে আওয়ামীলীগ তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়। বিএনপির সাথেও এদের বিশেষ ঘনিষ্টতা আছে।
তবে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে, এরা আওয়ামীলীগের দ্বারা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত হলেও দিন শেষে আওয়ামীলীগকে ছোবল মারতে তারা ভুল করে না।
এরকম কয়েকজনকে আমার মনে হয়-
১) সাবেক মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার
২) মেয়র সাঈদ খোকন
৩) এসকে সিনহা
৪) রানা দাস গুপ্ত
৫) প্রিয়া সাহার স্বামী মলয় সাহা
৬) শাহরিয়ার কবির
৭) মেজর জেনারেল (অবঃ) আব্দুর রশীদ
এরকম আরো বহু সদস্য আওয়ামীলীগের নামে-বেনামে ভেতরে প্রবেশ করা থাকতে পারে, কিন্তু তাদের সম্পর্কে হয়ত আমার ধারণা নাই বা আমি জানি না। এরা ক্ষণিক আওয়ামী পলিসির সাথে যুক্ত হওয়ার ভান দেখিয়ে সুবিধা নিতে পারে, নিজের অবস্থা দৃঢ় করতে পারে।
আমার কাছে মনে হয় ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিলো ঐ বিশেষ গ্রুপের সদস্যরাই। অর্থাৎ আর্মির মধ্যে ঢুকে থাকা রিপাবলিকান ব্লকের সদস্যরাই। অনেক ঐতিহাসিক ডকুমেন্টে বলে ঐ হত্যাকাণ্ডের সাথে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ জড়িত এবং ঐ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টও ছিলো রিপাবলিকান জেরাল্ড ফোর্ড।
আমার মনে হয়, মানুষের কাছে আওয়ামীলীগের যত বদমান শুনতে হয়, তার ৮০% হচ্ছে রিপাবলিকান ব্লকের সাথে লিয়াজো রাখার কারণে তাদের আচরণগুলো আওয়ামী সরকারের উপর ছাপ পড়ে বিধায়। আওয়ামীলীগ যদি এই ব্লকের সদস্য ও তাদের পলিসিগুলো বাদ দিতে পারতো, তবে আওয়ামীলীগের রাজনীতির ধরনই পাল্টে যেতো এবং ব্যাপক জনপ্রিয় একটা দলে পরিণত হতো আওয়ামীলীগ। আমি বলবো, এখানে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক সামর্থের অভাব এবং স্বাবলম্বী না হওয়াই বড় কারণ হিসেবে আমার কাছে ধরা দেয়। তবে তরুণ আওয়ামী সদস্যদের মধ্য থেকে এই ক্ষতিকর আগাছাগুলো (তাদের পলিসিগুলোসহ) ঝেড়ে ফেলার একটা ডাক আসলে মন্দ হয় না।