আজকে চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় অনেকে কান্নাকাটি করতেছেন, আমি তাদেরকে দুইটা প্রশ্ন করতে চাই- এন.সি-২২৪

আজকে চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় 
অনেকে কান্নাকাটি করতেছেন,
আমি তাদেরকে দুইটা প্রশ্ন করতে চাই-
Related image
আজকে চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় অনেকে কান্নাকাটি করতেছেন,
আমি তাদেরকে দুইটা প্রশ্ন করতে চাই-
১) ২০১১ সালে যখন পরিবেশ দূষণ ও ভারি ধাতু ছড়াচ্ছে, এই অজুহাতে মার্কিনব্লক মেইনটেইন করা আইনজীবি মোনজিল মোরশেদ হাইাকোর্টে রিট করলো- ট্যানারিগুলো হাজারিবাগ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য, তখন কি তার বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করেছিলেন ?
নাকি উল্টো ঐ সময় বলেছিলেন-
“খুব ভালো হবে ট্যানারিগুলো সরে গেলে, পরিবেশ ভালো হবে। আমরা ভালো থাকবো।”
২) ২০১৭ সালে যখন আরেক মার্কিনপন্থী চীফ জাস্টিস ইসকন সদস্য এসকে সিনহা সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ থেকে চূড়ান্ত রায় দিলো হাজারিবাগের ট্যানারিগুলো দ্রুত সরিয়ে দেয়ার জন্য, তার আদেশের পর হাজারিবাগের গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলো, তখন কি আপনি প্রতিবাদ করেছিলেন ? নাকি উল্টো বলেছিলেন- “দূর শালা, এইসব ট্যানারির মালিকের গুষ্টি কিলাই। তোদের কারণে পরিবেশে শেষ হচ্ছে। তোরা মর।”
অথচ এই ঘটনাগুলো যখন তখন কিন্তু আমি প্রতিবাদ করেছিলাম
কারণ আমি জানি, ব্যবসায়ীরা তখন যে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে, সেটার প্রভাব জনগণের উপর পড়তে ২-৩ বছর লাগবে। ঐ সময় ট্যানারি মালিকরা কান্নাকাটি করেছিলো, আর আপনি হেসেছিলেন। আজকে আপনি কানতেছেন, আশা করি সেটা দেখে ট্যানারি মালিকরা হাসবে।
সত্যি বলতে- মিডিয়াগুলোও চূড়ান্ত মাত্রার কালপ্রিট। এই ট্যানারিগুলো সরাতে তাদের ভূমিকা ৯৫%, তাদের উদ্দেশ্যমূলক রিপোর্টের কারণে ট্যানারিগুলো সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু আজকে মিডিয়াগুলো এমন ভাব নিচ্ছে, যেন চামড়ার দাম পরে যাওয়ার সম্পর্কে তারা কিছু জানেই না।
আপনারা মনে করে দেখুন, কিছুদিন আগে পুরান ঢাকার আগুনকে অজুহাত করে সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরাতে চেয়েছে, তখন মিডিয়াগুলো অপপ্রচারমূলক রিপোর্ট করে। দুধে এন্টিবায়োটিক আছে, এটা নিয়ে একটি মহল ষড়যন্ত্র করে, মিডিয়া সেখানে ঘি ঢালে। নির্ধারিত স্পটে গরু কুরবানী করতে হবে, এটা নিয়ে মোনজিল মোরশেদের রিট, সরকার ও মিডিয়ার অতি উৎসাহি কার্যক্রম দেখেও অনেকেই এগুলোকে সাপোর্ট করেন। কিন্তু এগুলো যদি জারি হয়, তখন দেশের কি হবে, এটা কি কেউ ভেবে দেখেছেন ? এগুলো কি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত, না ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত?
আপনি যদি একটা ২০ তলা বাড়ি ডিনামাইট দিয়ে ভেঙ্গে ফেলতে চান, তবে ১ সেকেন্ড সময়ই যথেষ্ট। কিন্তু ঐ বাড়িটি যখন আপনি তৈরী করবেন, তখন সেটা ১টা ইটের সাথে ১টা ইট জোড়া দিয়েই করতে হবে। তাই ট্যানারি শিল্প বলেন, পুরান ঢাকার শিল্প-বানিজ্য বলেন, ডেইরী শিল্প বলেন, কিংবা কুরবানীর ঐতিহ্য বলেন, কোনটাই এক দিনেই গড়ে উঠেনি, এগুলো যুগের পর যুগ কোটি কোটি মানুষের প্রচেষ্টার ফসল। এগুলোর উপর নির্ভর করতেছে কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা। লক্ষ কোটি টাকার অর্থনীতি এসব শিল্পের সাথে জড়িত। অথচ মিডিয়ার মাধ্যমে গুজব রটিয়ে এসব শিল্প এক নিমিষে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হয় আর আপনারা জনগণ সেটার পক্ষে কাজ করেন।
সত্যিই বলতে- প্রতিটি প্রাণী দূষণকারী। আপনি নিজেও দূষণকারী। আপনি প্রতিদিন যে টয়লেট করেন, সেটা দিয়ে অবশ্যই পরিবেশ দূষণ হয়। তাহলে দূষণকারী হিসেবে আপনাকে মেরে ফেলি ? কি বলেন ?
আসলে যে দূষণকারী তাকে মারতে হয় না,
যে সিস্টেমের কারণে দূষণ হচ্ছে সেটা বন্ধ করতে হবে, পরিবর্তন করতে হবে।
যেমন ধরুন- ট্যানারি’র দূষণ। সে সিস্টেমের কারণে দূষণ হচ্ছে, সেটা পরিবর্তন করেন।
তা না করে সেগুলো জোর করে তুলে দিয়ে তাদের এতদিন ধরে গড়ে তোলা শিল্পকে ডিস্ট্র্যাব করলেন, এখন চামড়ার দাম তো কমবেই। আপনি একটা মানুষকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে বাড়িছাড়া করেছেন। এখন নতুন বাড়িতে উঠে, হাত-পা চিকিৎসা করে, আগের মত বাড়িঘর সাজাতে তো ৪-৫ বছর সময় লাগবে, একদিনে তো আগের অবস্থা হবে না। তাই চামড়া নিয়ে আপনাকেও ৪-৫ বছর কষ্ট করতে হবে। এটাই বাস্তব, এবং বাস্তবতাই আপনাকে মেনে নিতে হবে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি সময় দেশি ব্যবসা ও শিল্পের পক্ষে।
মিডিয়া যত অপপ্রচার করুন, আমি সব সময় বলি-
সমস্যা হলে সমাধান করুন, মাথ্যা ব্যাথা হলো ঔষধ খান,
কিন্তু মাথা কেটে ফেইলেন না।
দেশী শিল্পে কোন সমস্যা হইলে, সমস্যাটা ঠিক কোন যায়গায় সেটা চিহ্নিত করে সমাধান করুন।
কিন্তু দেশী শিল্প ধ্বংস করা যাবে না।
একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন, আন্তর্জাতিক সম্রাজ্যবাদীরা সব সময় চায়-
কোন রাষ্ট্রে যেন নিজস্ব দেশীয় শিল্প গড়ে না উঠে, কারণ দেশী শিল্প মানে নিজের পায়ে দাড়ানো।
আর নিজের পায়ে দাড়ালে কেউ অপরকে পাত্তা দেয় না।
তেমনি কোন রাষ্ট্র যদি অর্থনৈতিকভাবে নিজের পায়ে দাড়ায় তবে তা কখন সম্রাজ্যবাদীদের অনুগত থাকবে না, তাদের কথা শুনবে না। উল্টো তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করবে।
আর এ কারণেই সম্রাজ্যবাদীরা সব সময় চায়- আমাদের দেশীয় শিল্প যেন ধ্বংস হয়ে যায়।
আরেকটা কথা-
সাধারণ মানুষ মিডিয়া দ্বারা খুব প্রভাবিত। অনেকে মিডিয়ার অন্ধ ভাক্ত, মিডিয়া যা বলে, তাই চোখ মুখ বুজে তাই বিশ্বাস করে।
অথচ একটা জিনিস বুঝতে চান না- প্রত্যেক মিডিয়া (টিভি/পত্রিকা) চালাতে যে পরিমাণ খরচ লাগে, বিজ্ঞাপন থেকে যে পরিমাণ টাকা আসে তা দিয়ে মোটেও চালানো সম্ভব না। তাহলে নিশ্চয়ই এমন কোন যায়গা থেকে অতিরিক্ত ফান্ড আসে, যা দিয়ে ঐ মিডিয়া তার খরচ চালায়।
আমি দেখেছি, অনেকে বিটিভি নিয়ে ঠাট্টা মষ্করা করেন। বলেন- বিটিভি সরকারের পক্ষে অন্ধ দালালি করে। আরে ভাই, যে বেতন দেয়, তার কথাই তো ঐ মিডিয়া বলবে।
তাহলে এখানে কথা উঠে, বিটিভি যদি সরকারের টাকা খেয়ে সরকারের পক্ষে কথা বলে,
তবে অন্য মিডিয়াগুলো কার কার টাকা খেয়ে
কার পক্ষে কথা বলে, কার স্বার্থের দিকে জনগণকে ধাবিত করে ?
বিটিভি যেমন জনগণকে সরকারের পক্ষের দিকে ধাবিত করতে চায়,
ঠিক তেমনি অন্য মিডিয়াগুলো বিদেশী টাকা খেয়ে
বিদেশী স্বার্থ উদ্ধার করতে- দেশীয় শিল্প ধ্বংস করতে অপ্রচার চালায়।
এই জিনিসটা জনগণ যতদিন না বুঝতে, যতদিন তারা মিডিয়া দ্বারা প্রভাবিত হবে
ততদিন তারা ‘বিদেশীদের বিনা পয়সার দালাল’, এটা মনে রাখবেন।