সম্প্রতি আওয়ামীলীগের একটি অংশ থেকে গোপালগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তের ডাক উঠেছে।
এটা খুবই যৌক্তিক একটি দাবী।
কেন এই দাবীটি যৌক্তিক তার স্বপক্ষে ২০১৫ সালে আমি একটা লেখা লিখছিলাম।
লেখাটা কপি করে দিলাম, আশা করি যেখানে আপনারা গোপালগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের যৌক্তিকতা খুজে পাবেন।
এটা খুবই যৌক্তিক একটি দাবী।
কেন এই দাবীটি যৌক্তিক তার স্বপক্ষে ২০১৫ সালে আমি একটা লেখা লিখছিলাম।
লেখাটা কপি করে দিলাম, আশা করি যেখানে আপনারা গোপালগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের যৌক্তিকতা খুজে পাবেন।
------
বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষের শত্রুর নামে ‘গোপালগঞ্জ’ এর নামকরণ, এটা কি করে সম্ভব?
বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষের শত্রুর নামে ‘গোপালগঞ্জ’ এর নামকরণ, এটা কি করে সম্ভব?
আমি আগে-ভাগেই বলে রাখি, আমি কিন্তু আগা-গোড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবপন্থী। কোথাও তাকে অবমাননা বা হেয় করলে আমি তার তীব্র প্রতিবাদ করি। আমার অবজেকশন হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক ভিটা ‘গোপালগঞ্জ’র নামকরণ নিয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৪ বছর হয়ে গেলো , এমনকি খোদ বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্ষমতায় থাকার পরও গোপালগঞ্জের নাম পরিবর্তন হলো না, এটা কি করে সম্ভব ??
একটু ব্যাখ্যা করে বলি, বুঝতে সহজ হবে।
গোপালগঞ্জ জেলার নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে ড. তপন বাগচী সম্পাদিত ‘আনন্দনাথ রায়ের ফরিদপুরের ইতিহাস’ গ্রন্থের ২৯৯ পৃষ্ঠায় স্পষ্ট করে বলা আছে, গোপালগঞ্জ এর নামকরণ করেছিলো রাণী রাসমনি নামক এক মহিলা জমিদার। ঐ জমিদারের নাতি নবগোপালের নাম অনুসারেই গোপালগঞ্জের নামকরণ করা হয় (‘আনন্দনাথ রায়ের ফরিদপুরের ইতিহাস’ বইটির ২৯৯ পৃষ্ঠার স্ক্যান কপি দেখতে পাবেন http://goo.gl/aFEsVn লিঙ্কে)।
আবার, বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে ঐ ‘রাণী রাসমনী’ নামক মহিলা জমিদার সম্পর্কে লিখেছেন, ঐ মহিলা ছিলো শেখ (বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষ) পরিবারের ঘোর শত্রু, যে ইংরেজদের সহাযোগীতায় শেখ পরিবারের সম্পত্তি দখল করতে চক্রান্ত করেছিলো। ঐ রাসমনী নামক মহিলার চক্রান্ত ও মামলা সামাল দিতে অর্থ-সম্পদ হারিয়ে সর্বস্বান্ত হতে হয়েছিলো শেখ পরিবারকে (এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর লিখিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পড়তে পারেন, বইটির ৫ম পৃষ্ঠায় এ সম্পর্কে বলা আছে। পৃষ্ঠাটির স্ক্যান কপি http://goo.gl/lN1JPm লিঙ্কে দেখতে পাবেন)।
উপরের ইতিহাস দ্বারা এটা স্পষ্ট, বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষদের ঘোর শত্রু রাসমনী ‘গোপালগঞ্জ’ জেলার নামকরণ করেছিলো তার নাতির নামে।
এখানে আমি মাঝখান দিয়ে আরেকটা ইতিহাস বলে রাখি, বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষরা ছিলেন শেখ বা শায়খ। এ উপাধিপ্রাপ্তরা আরব থেকে এ অঞ্চলে ধর্মপ্রচার করতে এসেছিলেন। যার কারণে এ অঞ্চলের শাসকরা ঐ ধর্মপ্রচারকদের ধর্মপ্রচারের সুবিধার্থে প্রচুর খাস/লাখেরাজ সম্পত্তি উপহার করেছিলেন। কিন্তু ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করে এবং জমিদার (বেশিরভাগ হিন্দু) নিয়োগ করে। এ জমিদাররা ঐ সকল ধর্মপ্রচারকদেরে থেকে লাখেরাজ/খাস জমিগুলো ছিনিয়ে নেয়। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়লে বোঝা যায়, তার পূর্বপুরুষরা প্রচুর খাস জমির মালিক ছিলেন (যেহেতু বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষরা ধর্মপ্রচারক ছিলেন), এবং ঐ খাস জমির লোভেই জমিদার রাসমনীর সাথে বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষদের দ্বন্দ্ব হয়। (বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষ শেখ আওয়াল এ অঞ্চলে ধর্মপ্রচার করতে এসেছিলেন। পরম্পরাটা এরকম: শেখ আউয়াল (ধর্ম প্রচারক)----শেখ জহির উদ্দিন-----শেখ তেকড়ি----শেখ ইমাম উদ্দীন-----শেখ জাহের------শেখ কাসেম আলী----শেখ হামিদ----শেখ লূৎফুর রহমান---শেখ মুজিবুর রহমান। তথ্যসূত্র: বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ : শিকদার আব্দুল বাসার ।)
আমি ব্যক্তিগতভাবে ইতিহাসকে খুব ভয় পাই, ইতিহাস খুব কঠিন জিনিস। আজ থেকে ১০০ বছর পর হয়ত কোন ইতিহাসবিদ বই লিখে ফেলবে,
-বঙ্গবন্ধুর থেকে ব্রিটিশ নিয়োগকৃত জমিদার রাসমনীর গুরুত্ব বেশি, কেননা তার নাতির নাম অনুসারে বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমির নামকরণ করা হয়।
-কিংবা, ‘বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী’ নন, যদি তিনি হতেনই তবে তার জন্মভূমির নাম তার শত্রুর নাম অনুসারে হতে পারতো না, অন্তত তার কন্যা ক্ষমতায় এসে সেটা পরিবর্তন করে দিতেন।
-কিংবা জেলে রাণী রাসমনি’র পারিবারিক স্ট্যাটাস শেখ পরিবারের থেকে বেশি ছিলো, নয়ত `শেখগঞ্জ' বা ‘শেখনগর’ বাদ দিয়ে তার জন্মভূমির নাম কিভাবে গোপালগঞ্জ হলো ??
-বঙ্গবন্ধুর থেকে ব্রিটিশ নিয়োগকৃত জমিদার রাসমনীর গুরুত্ব বেশি, কেননা তার নাতির নাম অনুসারে বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমির নামকরণ করা হয়।
-কিংবা, ‘বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী’ নন, যদি তিনি হতেনই তবে তার জন্মভূমির নাম তার শত্রুর নাম অনুসারে হতে পারতো না, অন্তত তার কন্যা ক্ষমতায় এসে সেটা পরিবর্তন করে দিতেন।
-কিংবা জেলে রাণী রাসমনি’র পারিবারিক স্ট্যাটাস শেখ পরিবারের থেকে বেশি ছিলো, নয়ত `শেখগঞ্জ' বা ‘শেখনগর’ বাদ দিয়ে তার জন্মভূমির নাম কিভাবে গোপালগঞ্জ হলো ??
কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন: “ঔপনিবেশিকতার প্রতীক ব্রিটিশদের লাল দালানগুলো রক্ষার কোন দরকার নেই স্বাধীন বাংলাদেশে” (২৯শে ডিসেম্বর ২০১৪, দৈনিক ইত্তেফাক)। আমি মনে করি, ব্রিটিশ দালাল রাসমনীর দেওয়া ‘গোপালগঞ্জ’ নামটারও দরকার নেই। মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলাকে যেমন ‘মুজিবনগর’ নগর করা হয়েছে, ঠিক তেমনি গোপালগঞ্জকেও ‘শেখগঞ্জ' বা ‘শেখনগর’’ করা হোক।
বি: দ্র: আমি গোপালগঞ্জের নাম পরিবর্তন করে মুজিবগঞ্জ নয় বরং শেখগঞ্জ বা ‘শেখনগর’ করার বেশি পক্ষপাতি। কারণ ইতিমধ্যে মুজিবনগর বলে একটা এলাকা বাংলাদেশে আছে। তাছাড়া বর্তমান গোপালগঞ্জ এলাকটা শুধু বঙ্গবন্ধুর সাথে জড়িত নয়, বরং বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষের সাথে জড়িত। তাই সবার নামের শুরুর অংশ ‘শেখ”-কেই এলাকার নামকরণের অংশ করে ‘শেখগঞ্জ’ বা ‘শেখনগর’ করার পক্ষে মত প্রকাশ করছি। উল্লেখ্য একটি মহল বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষ নিয়ে মাঝে মাঝে অপপ্রচার করে। গোপালগঞ্জ নাম পরিবর্তন করে ‘শেখগঞ্জ’ বা ‘শেখনগর’ করলে বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষ উচ্চবংশ ‘শেখ’ বা ‘শায়খ’ থেকে আগত সেটাও প্রমাণ হবে।