পবিত্র কুরবানী
ঈদের আগে হিন্দু ও নাস্তিকরা অপপ্রচার করে থাকে গরুর গোশত শরীরের জন্য নাকি ক্ষতিকর!
নাউযুবিল্লাহ। নাস্তিকের দল সারাবছর ধরে গরুর গোশত আরামসে ভক্ষণ করে কিন্তু ঠিক কুরবানির
সময়ে এসে বিরুদ্ধাচরণ করে থাকে। মহান আল্লাহ পাক তিনি যা হালাল করেছেন তার মধ্যে কোনো
ক্ষতির বিষয় থাকা কিছুতেই সম্ভব নয়। তাছাড়া মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গরুর গোশত খেয়েছেন অর্থাৎ গরুর গোশত খাওয়া সুন্নত ।
গরুর গোশতের
উপকারীতা নিন্মরুপ-
১. প্রোটিনের
উৎস:
গরুর গোশত থেকে
যে প্রোটিন পাওয়া যায় তাতে পেশি গঠনের সব এমাইনো এসিড আছে। সুগঠিত গোশতপেশি শরীরে বিভিন্ন
এনজাইম ও হরমোন উৎপাদিত হয়। গরুর গোশত স্পার্মের (শুক্রাণুর) পরিমাণ ও গুন বৃদ্ধি করে
বন্ধ্যাত্বতা দূর করে।শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ধরনের এমাইনো এসিড রয়েছে গরুর গোশতে
।
২. আয়রনের উৎস:
গরুর গোশতে প্রচুর
পরিমাণে আয়রণ আছে। সপ্তাহে দুইবার গরুর গোশত খেলে রক্তের মাধ্যমে পুরো শরীরে অক্সিজেন
সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় আয়রনের চাহিদা পূরণ হয় এবং এনেমিয়া প্রতিরোধ করে।
৩. জিঙ্কের উপস্থিতি:
গরুর গোশত দেহের
জিঙ্কের অভাব পূরণ করে। জিঙ্ক মানুষের পেশিকে সবল করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে
সহায়তা করে।
৪. ভিটামিন বি:
গরুর গোশত বিভিন্ন
রকম ভিটামিন-বি-এর একটি অন্যতম উৎস। সুস্থ শরীরের জন্য প্রাকৃতিক উৎসের ভিটামিন-বি
গ্রহণ করা জরুরী। গরুর গোশতে আছে ভিটামিন-বি-১২, যা নার্ভ সচল রাখে ও ভিটামিন-বি-৬, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
এছাড়াও গরুর গোশতে নিয়াসিন আছে যা হজমে সহায়তা করে এবং রিবোফ্লাবিন যা চোখ ও ত্বক ভালো
রাখে।
৫. প্রচুর পরিমাণ
সেলেনিয়ামও পাওয়া যায়ঃ
সেলেনিয়ামে অন্তর্ভুক্ত
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন রয়েছে, যা মানবদেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞানীরা এ সেলেনিয়ামে অন্তর্ভুক্ত প্রোটিনকে সেলোপ্রোটিন বলে। সেলেনিয়ামে ভিটামিন
‘ই’, ভিটামিন ‘সি’, গ্লুটাথায়োনিন এবং ভিটামিন
বি-৩ রয়েছে। এ ছাড়া সেলেনিয়ামে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতিকর
প্রভাব থেকে শরীরকে রক্ষা করে ও অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী ক্যান্সার, হৃদরোগ প্রভৃতির ঝুঁকি কমায়। সেলেনিয়াম শুক্রাণু তৈরিতে এবং
পুরুষ ও নারীর বন্ধ্যত্ব দূর করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া এইডস প্রতিরোধে এবং নিরাময়ে
সেলেনিয়ামের ভূমিকা অপরিসীম।ইহা থাইরয়েড হরমোনের স্বাভাবিক উৎপাদন বজায় রাখে।
৬. গরুর গোশতে আছে Conjugated Linoleic Acid (CLA)। এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে গবেষনায় প্রমাণিত হয়েছে।
৭. গরুর গোশতে
Creatine থাকে যা মস্তিষ্ক ও পেশীতে শক্তি সংরক্ষন
করে।
৮. কিছু polyunsaturated acids বিশেষ করে eicosapentaenoic acid (EPA), docosahexaenoic acid (DHA) পাওয়া যায় শুধুমাত্র প্রাণীজ
উৎস হতেই, যা Anti-atherogenic,
anti-thrombotic and anti-inflammatory হিসেবে কাজ করে
৯. ফসফরাস :
যা মজবুত হাড় ও দাঁতের জন্য জরুরি।
১০. বর্ধনশীল
বাচ্চাদের জন্য গরুর গোশতে উপকারীতাঃ
বর্ধনশীল বাচ্চা
বা টিনএজার দের সমর্থ ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে গরুর গোশতের তুলনা নেই। শুধু শারীরিক
বর্ধন নয়, বুদ্ধি-বৃত্তিক গঠন এবং রক্ত বর্ধনেও এটি
ভূমিকা রাখে।
১১. টরিনঃ ইহা
এন্টিওক্সিড্যান্ট এমাইনো এসিড। ইহা হার্ট ও গোশত পেশীর কার্য্যক্রমে দরকারি।
১২. কারনোসাইনঃ
গরুর গোশতে এই উপাদান যা অবসাদ দূর করে এবং এক্সারসাইজের সময় শরীরের গতি বাড়ায়।
গরুর গোশত খাওয়া
নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারনার সংশোধন
১. গরুর গোশত
মানেই অত্যধিক ক্যালরি নয়ঃ
আপনি যদি ৩ আউন্স
বা ৮৫ গ্রাম চর্বি ছাড়া গরুর গোশত খান তাহলে এটা থেকে আপনার দৈনিক ক্যালরির চাহিদার
মাত্র ১০% ক্যালরি আসবে। ( ৩ আউন্স গোশতে আছে ২০০ ক্যালরি এবং দৈনিক ক্যালরি চাহিদা
২০০০ ক্যালরি )
২. গরুর গোশতে
কোলেস্টেরল এর মাত্রাঃ
৩ আউন্স ( ৮৫
গ্রাম ) গোশতে কোলেস্টেরল এর মাত্রা ৪৭ মিগ্রা থেকে ৫৩ মিগ্রা। একজন সুস্থ্য মানুষের
কোলেস্টেরল এর দৈনিক নিরাপদ মাত্রা হলো ৩০০ মিগ্রা এবং হার্টের রোগীর জন্য ২০০ মিগ্রা।
সুতরাং ৩ আউন্স ( ৮৫ গ্রাম ) গরুর গোশত কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিরাপদ সীমার অনেক নীচে।
তুলনাটা আরেকটু ভালো করে বুঝাতে বলি, একটি ডিমের কুসুমে আছে ২১২
মিগ্রা কোলেস্টেরল। সুতরাং সব দোষ গরুর গোশত একার না।
৩.গরুর গোশত
ও হার্ট ডিজিজঃ এই বিষয়টি এখনো নির্দিষ্ট হয়নি যে আসলেই গরুর গোশত কি হার্ট ডিজিজ করে
না কি করেনা।
৩. গরুর গোশতে
আছে পুষ্টিঃ
৩ আউন্স ( ৮৫
গ্রাম ) গরুর গোশত থেকে যেই পরিমাণ জিংক আসে সেই পরিমাণ জিংক পেতে আপনাকে খেতে হবে
৩ আউন্স ওজনের ১১ টুকরো টুনা মাছ, এই পরিমাণ আয়রনের জন্য খেতে
হবে ৩ আউন্স ( ৮৫ গ্রাম ) ওজনের ৭ টুকরা মুরগীর বুকের গোশত, এই পরিমাণ আয়রনের জন্য খেতে হবে ৩ কাপ স্পিনাচ, এই পরিমাণ রিবোফ্লেভিন এর জন্য খেতে হবে ৩ আউন্স ( ৮৫ গ্রাম
) ওজনের আড়াই টুকরা মুরগীর বুকের গোশত এবং এই পরিমাণ থায়ামিন এর জন্য খেতে হবে ৩
আউন্স ( ৮৫ গ্রাম ) ওজনের ২ টুকরা মুরগীর বুকের গোশতে।
শুধু তাই নয়
হিন্দু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও গরুর গোশতের উপকারীতা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হচ্ছে। সেন্টার
ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজির প্রতিষ্ঠাতা কর্মকর্তা বিজ্ঞানী প্রবীণ পিএম
ভার্গব। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এই খবর দিয়েছে। এ ডাক্তার রাষ্ট্রপতি প্রণব
মুখার্জিকে ৬ নভেম্বর যে চিঠি দিয়েছে, তাতে সে উল্লেখ করেছে গরুর
গোশত প্রসঙ্গ। চলমান সংহিতায় একথা উল্লেখ করে বলেছে, 'গ্যাস সমস্যা, অনিয়মিত জ্বর, শুকনো কাশি, ক্লান্তি, কঠোর পরিশ্রমের জন্য অত্যধিক খিদের থেকে শরীরে যাদের ডিসঅর্ডার
দেখা দেয়, যারা এই কারণে অত্যধিক রোগা হয়ে যান, তাদের জন্য গরুর গোশত অত্যন্ত উপকারী ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
যেকোণ খাদ্য
ই অতিরিক্ত ভক্ষণ করা ক্ষতির কারন। তার মানে এই নয় যে ঐ খাদ্য বাদ দিতে হবে।তাহলে যারা
গরুর গোশতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা কিসের ভিত্তিতে চালাচ্ছে ? তারা কি গরুর গোশতের এসকল উপকারীতা অস্বীকার করতে পারবে ?
বাংলাদেশের উন্নয়নকে
বাধাগ্রস্ত করতেই পবিত্র কুরবানীর বিরুদ্ধে ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকদের অপপ্রচার।
মহান আল্লাহ
পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের এক মহান মাধ্যম কুরবানী। কুরবানীদাতারা এতে কোনো দুনিয়াবী
লাভ-লোকসানের হিসাব করেন না। কিন্তু কুরবানীর আধ্যাত্মিক গুরুত্বের পাশাপাশি এর অর্থনৈতিক
গুরুত্ব কিছুতেই কম নয়। ‘কুরবানী তো শুধু লোকসান; তাই কুরবনী না করে সে-ই টাকায় কত-শত উন্নয়নমূলক কাজ করা যেত’- এমন কুধারণা অর্থনীতিতে কুরবানীর
প্রভাব ও অবদান সম্পর্কে অজ্ঞতারই ফল। কুরবানীর মাধ্যমে ধনীদের হাজার হাজার কোটি টাকা
গরিবের হাতে চলে যাওয়া কি অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়?
প্রতি বছরের
মতো ১৪৩৭ হিজরী,২০১৬ ঈসায়ী কুরবানীতে ঈদ অর্থনীতির একটি
হিসাব কষেছে ‘দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ
চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ (এফবিসিসিআই)। সংগঠনটির হিসাব
মতে, বাংলাদেশে বার্ষিক অর্থনীতির আকার প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ কোটি টাকার।
আর সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর ঈদঅর্থনীতির আকার শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
এফবিসিসিআই লেনদেনের
১০টি খাত থেকে কুরবানীর ঈদ অর্থনীতির হিসাব করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কুরবানীর পশু ও চামড়া
কেনাবেচা, মসলা, পশু জবাই, উপকরণ, রেমিট্যান্স, পরিবহন, ভ্রমণ-পর্যটন, সরকারি-বেসরকারি চাকরি এবং পোশাক খাত ও দোকান কর্মচারীদের বোনাস
এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নোট।
আগে যেখানে একটি
পশু ৫ থেকে ৭ ভাগে কুরবানী দেয়া হতো, এখন তা একজনেই কুরবানী দিচ্ছেন।
এর অর্থ আগের চেয়ে মানুষের আয় ও ক্রয় সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নিম্নোক্ত তথ্যের মাধ্যমে
সহজেই বুঝতে পারা যাবে কুরবানীতে দেশের অর্থনীতি কতটা সমৃদ্ধশালী হয়-
(১). শুধু কুরবানীর পশু কেনাবেচায় লেনদেন হয় প্রায় ৮০ হাজার কোটি
টাকা। এই হাজার হাজার কোটি টাকা যাচ্ছে কোথায়? যাচ্ছে গরিবদের ঘরে। প্রায়
৯৯ শতাংশ পশুই কেনা হয় গরিবের কাছ থেকে। গরিব মানুষ সারা বছর গরু লালন-পালন করে কুরবানীর
হাটে নিয়ে আসে। হাটে গরু বিক্রি করে ধনীদের হাতে তুলে দেয়। আর তারা ঘরে নিয়ে যায় মোটা
অঙ্কের টাকা। পবিত্র কুরবানীর পুরো টাকাটাই তাদের ঘরে যায়। একসঙ্গে এতগুলো টাকা পেয়ে
তারা তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণ করে। গরিবের অর্থনৈতিক চাকা সচল হয়। তাদের ক্রয় ক্ষমতা
বৃদ্ধি পায়। গ্রামগঞ্জের বাজারগুলো সচল হয়ে উঠে। এ টাকাই তারা পবিত্র কুরবানী উপলক্ষে
নানা প্রয়োজনে খরচ করে।
প্রাণিসম্পদ
অধিদপ্তরের ডেপুটি পরিচালক (প্রসাশন) আইনুল হক জানান, পবিত্র কুরবানীর ঈদে আর্থিক লেনদেন বেড়ে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে
বেশি লেনদেন হয় গবাদিপশু কেনাবেচায়। যেসব টাকার বড় অংশই যাচ্ছে গবাদিপশু লালন-পালন
করে যারা, তাদের কাছে অর্থাৎ গ্রামের গরিব মানুষদের কাছে।
(২)পবিত্র কুরবানীর পর প্রায় ২ কোটি পশুর চামড়া আসার কথা। প্রতি
পিস চামড়ার দাম গড়ে এক হাজার টাকা ধরা হলে চামড়া বাবদ লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকার। পবিত্র
কুরবানীর চামড়ার মূল্য গরিব ও ইয়াতীমদের অধিকার। গরু এবং ছাগলের চামড়া মিলিয়ে এই ২
হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে সরাসরি গরিব-ইয়াতীমদের হাতে।
(৩) কুরবানীর গোশতের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ চলে যায় গরিবের ঘরে।
সারা বছর যেসব গরিব পরিবার গোশত খেতে পারে না, তারাও কুরবানীর দিনে তৃপ্তিভরে
গোশত খাওয়ার সুযোগ পায়।
(৪) প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, দেশে গবাদিপশু পালন বৃদ্ধি পেয়েছে। কুরবানীর পশুর ক্রমবর্ধমান
চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর গরু পালনের পরিমাণও বাড়ছে। এবার শুধু কুষ্টিয়া জেলায় ৮২ হাজার
গরু পালন করা হয়েছে। খামারিরা প্রায় ৪০০ কোটি টাকার মতো আয় করেছে গরু পালনের মাধ্যমে।
(প্রথম আলো: ২৩-০৮-২০১৬)। এভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায়
গড়ে উঠা খামারগুলোতে কর্মসংস্থান হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষের। তাছাড়াও কুরবানীর পশু পরিবহন, টোল, বাঁশ-খুঁটির ব্যবসা, ও পশুর খাবারে লেনদেন হয় কোটি কোটি টাকার।
(৫)চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে
১ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা জড়িত। লবণ হলো চামড়া সংরক্ষণের অন্যতম উপাদান। কুরবানী উপলক্ষে
লবণের ব্যবসাও চাঙ্গা হয়। চামড়া সংরক্ষণে প্রয়োজন হয় বিপুল জনবলের। তখন শ্রমিকরা পায়
তাদের শ্রমের চড়ামূল্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে লাখ
লাখ লোকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়।
(৬)দেশে প্রতিবছর শুধু কুরবানীর ঈদেই প্রায় ৫০ লাখের অধিক ছাগলের
চাহিদা রয়েছে। এত সংখ্যক ছাগল লালন-পালন করতে গিয়ে সারাদেশে প্রায় ৪০ লক্ষ গ্রামীণ
জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
(৭) কুরবানীর মাধ্যমে উপকৃত জনগোষ্ঠী প্রায় ৭ থেকে ৮কোটির কাছাকাছি।
ফলে কুরবানীকে কেন্দ্র করে শহরের বাজারগুলোয় যেমন প্রণোদনা, লেনদেন শুরু হয়, গ্রামেও তেমনটি হয়। সবচেয়ে
বড় কথা, যারা গরু লালন-পালন করে, তারা অনেক অর্থ পায়।
(৮). কুরবানী ঈদকে কেন্দ্র করে কসাই অর্থাৎ যারা গোশত কাটাকাটি
করে, তাদের হাতেও অর্থের সমাগম ঘটে। হুযূর, ইমাম, মুয়াজ্জিনরাও কিছু হাদিয়া-তোহফা
অর্থ পেয়ে থাকেন। ঈদের দিনে একেক কসাই আয় করে প্রায় ২-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
কুরবানীর পশু
লালন-পালন থেকে শুরু করে কুরবানীর চামড়া বিক্রি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে রয়েছে গরিবদের
হক্ব। কারণ পশু পালন করে টাকা আয়ে করে গরিবরা, কুরবানীর গোশতের ভাগ পায় গরিবরা, চামড়ার টাকা পুরোটাই পায় গরিব, মিসকিন, ইয়াতীম ও অনাথরা।
শত শত উদাহরণ
দেয়া যাবে যাতে টাকা খরচ না করে তা গরিবদেরকে দান করা যেতে পারে। তারা এসবের ব্যাপারে
কখনোই বলে না। কুরবানী এলেই এসব ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকদের কলিজা পুড়ে যায়। তারা কুরবানীর
টাকা গরিবদেরকে দান করার কথা বলে। কিন্তু কুরবানী উপলক্ষে যে, দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী হয় এবং গরিব, অসহায়, দুঃস্থ, ইয়াতীমরা এককালীন টাকা পায় ও গোশত পেয়ে থাকে, সে কথা তারা তুলে ধরে না। এই ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকরা কি পারবে
লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা দেশের অর্থনীতিতে যোগ করতে? তারা কি পারবে দেশের প্রতিটি গরিব-ইয়াতীম, দুঃস্থদের নিকট গোশত আর টাকা
পাঠাতে? কিন্তু পবিত্র কুরবানী তা পারছে। তাহলে তারা কিসের ভিত্তিতে
পবিত্র কুরবানীর বিরুদ্ধে বলছে? যারা পবিত্র কুরবানীর বিরুদ্ধে
বলছে তারা ইসলামবিদ্বেষী, দেশদ্রোহী ও মুনাফিক। তারা
জাতির শত্রু, দেশের শত্রু, সমাজের শত্রু, গরিবের শত্রু।
কাজেই মুসলিমপ্রধান
এদেশে কুরবানীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার মেনে নেয়া যায় না। সরকারের কাছে আহ্বান- এসব দেশদ্রোহীদের
বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন।
কুরবানী না করে
প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত বা দুঃস্থদেরকে কুরবানীর অর্থ দিলে কুরবানী তো হবেই না
বরং ওয়াজিব তরকের গুনাহ হবে।
মহান আল্লাহ
পাক তিনি ইরশাদ করেন, “যমীনে পানিতে ফিতনা-ফাসাদ, আযাব-গযব, বিপদাপদ এসে থাকে মানুষের (বদ) আমলের কারণে।
যেন তারা তাদের (বদ) আমলের স্বাদ গ্রহণ করে। আশা করা যায় তারা ফিরে আসবে।” (পবিত্র সূরা রূম শরীফ)
কিছু ধর্মব্যবসায়ী
ও তাদের দ্বারা বিভ্রান্ত শাসক এবং সাধারণ মানুষ আর ইহুদী পোষ্য কিছু সাংবাদিক ও তথাকথিত
বুদ্ধিজীবী অর্থনীতিবিদ গযব থেকে পানাহ চাওয়ার পরিবর্তে উল্টো ‘ইসলামকে’ নিয়ে খেলায় মেতে উঠেছে। তারা আজ কুরবানীর বিরুদ্ধে বলছে। কুরবানীর বিপরীতে মনগড়া
পরামর্শ দিচ্ছে।
যাকাত এবং কুরবানী
আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশ। এ নির্দেশ
পরিবর্তনের ক্ষমতা কোনো জ্বিন-ইনসানের নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “তবে কি তোমরা ইসলাম ব্যতীত
অন্য কোনো নিয়মনীতি তালাশ কর। যে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো নিয়মনীতি তালাশ করে তার থেকে
কখনই তা গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”
যে কুরবানী করবে
ইসলামের প্রতি অটল বিশ্বাসের কারণে সে আরো বেশি মুসলিম দরদী হবে তথা দুর্গতদের আরো
বেশি সাহায্য করবে। আর যে কুরবানী না করে সে অর্থ দুর্গতদের দিবে তা হবে লোক দেখানো
ও নাম ফুটানো। কাজেই যারা কুরবানীর অর্থ দুর্গতদের দিতে চায় তারা প্রকৃতপক্ষে লোক দেখানো
আমলকারী বা রিয়াকার। তাদের কাজ আল্লাহ পাক উনার সাথে শিরক করার মতো। তাদের কাজ নেকীর
ছূরতে ইবলিসের ধোঁকা।
মূলকথা হলো-
সামর্থ্যবান প্রত্যেকের পক্ষ থেকেই কুরবানী করতে হবে এটা শরীয়তের নির্দেশ। কুরবানী
না করে ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত বা দুঃস্থদেরকে কুরবানীর অর্থ দিলে কুরবানী তো হবেই না বরং
ওয়াজিব তরকের গুনাহ হবে। পাশাপাশি শরীয়তের বিধান পরিবর্তন করার কারণে কাট্টা কুফরী
হবে। কাজেই এরূপ কুফরী বক্তব্য ও আমল থেকে বিরত থাকা সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিব।
ইসলামিক পশু
জবাই পদ্ধতিটি হচ্ছে বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি
আপনার কি মনে
হয় ইসলামিক পশু জবাই পদ্ধতিটি খুব নিষ্ঠুর? আসুন দেখা যাক, বিজ্ঞান কি বলে -
গবেষণা: জার্মানির
Hanover University এর প্রফেসর Wilhelm Schulze এবং তার সহযোগী Dr.
Hazim এর নেতৃত্বে
একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষনার বিষয়বস্তু ছিল :
১. Western World এ প্রচলিত নিয়মে (CPB
Method) এবং
২.ইসলামিক নিয়মে
পশু জবাইয়ে পশুর যন্ত্রণা এবং চেতনাকে চিহ্নিত করা।
Experimental Setup:
Brain এর surface কে touch করে পশুর মাথার খুলির বিভিন্ন জায়গায় surgically কিছু electrode ঢুকিয়ে দেয়া হয়। পশুকে
এরপর সুস্থ হওয়ার জন্য কিছু সময় দেয়া হয়। তারপর পশুগুলোকে জবাই করা হয়। কিছু পশুকে
ইসলামিক নিয়মে আর কিছু পশুকে western world এর নিয়মে। জবাই করার সময়
Electro Encephalo Graph (EEG) এবং Electro Cardiogram (ECG) করে পশুগুলোর brain এবং heart এর condition দেখা হয়।
Result:
ইসলামিক পদ্ধতিতে
জবাইয়ের ফলাফলঃ
১. জবাইয়ের
প্রথম ৩ সেকেন্ড EEG graph এ কোন change দেখা যায় না। তারমানে পশু কোন উল্লেখযোগ্য ব্যথা অনুভব করে
না।
২. পরের ৩ সেকেন্ডের
EEG record এ দেখা যায় , পশু গভীর ঘুম এ নিমগ্ন থাকার মত অচেতন অবস্থায় থাকে। হঠাৎ প্রচুর
পরিমানে রক্ত শরীর থেকে বের হয়ে যাবার কারনে brain
এর vital center গুলোতে রক্ত সরবরাহ হয়না। ফলে এই অচেতন অবস্থার সৃষ্টি হয়।
৩. উপরিউল্লিখিত
৬ সেকেন্ড এর পর EEG graph এ zero level দেখায়। তারমানে পশু কোন ব্যথাই অনুভব করেনা ।
৪. যদিও brain থেকে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না , তবুও heart স্পন্দিত হচ্ছিল এবং তীব্র
খিঁচুনি হচ্ছিল (spinal cord এর একটা reflex action) । এভাবে শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে রক্ত বের হয়ে যাচ্ছিল এবং এর
ফলে ভোক্তার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত গোশত নিশ্চিত হচ্ছিল ।
Western World এ প্রচলিত পদ্ধতিতে(CPB Method) জবাইয়ের ফলাফলঃ
১. মাথায় প্রচন্ড
আঘাত করার পরের মুহূর্তে পশুটিকে দৃশ্যত অচেতন মনে হচ্ছিল
২. কিন্তু EEG এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছিল পশুটি খুব কষ্ট পাচ্ছে ।
৩. ইসলামিক পদ্ধতিতে
জবাই করা পশুর তুলনায় CBP দিয়ে আঘাত করা পশুটির heart স্পন্দন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । যার ফলে পশুটির শরীর থেকে সব রক্ত বের
হতে পারে নি এবং ফলশ্রুতিতে, পশুটির গোশত ভোক্তার জন্য অস্বাস্থ্যকর হয়ে যাচ্ছিল ।
এছাড়া ইসলামে
spinal cord না কেটে শ্বাসনালী এবং jugular
vein দুটো কাটার ব্যাপারে
জোর দেয়া হয়েছে । এর ফলে রক্ত দ্রুত শরীর থেকে
বের হয়ে যেতে পারে । Spinal cord কাটলে cardiac arrest এর সম্ভাবনা থাকে যার ফলে
রক্ত শরীরে আটকে যাবে যা রোগজীবানু এর উৎস ।
এখানে রাসুলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি হাদীস মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করছিঃ
“আল্লাহ সবাইকে দয়া করার হুকুম দেন । তাই যখন জবাই কর তখন দয়া কর । জবাই করার পূর্বে ছুরিতে ধার দিয়ে নাও
যাতে পশুর কষ্ট কম হয়” । তিনি পশুর সামনে ছুরিতে শান
দিতে বা এক পশুর সামনে আরেক পশুকে জবাই করতেও নিষেধ করেছেন । এই জিনিস্টা কুরবানীর সময় আমারা ভুলে
যাই ।
সবশেষে , নাস্তিকদের যুক্তি পশুকে কষ্ট দেয়া হয় এটার জবাবে আমরা অবশ্যই
বলতে পারি যে, পশু জবাই করার ইসলামিক পদ্ধতিটিই সবচেয়ে
বিজ্ঞানসম্মত এবং পশু এবং পশুর মালিক উভয়ের জন্যই উপকারী।