জনসংখ্যা বাড়াতে
অমুসলিম দেশসমুহের ব্যাপক পরিকল্পনা
১) ইতালীতে জন্মহার
বাড়াতে অভিনব ব্যবস্থা:
ইতালীর আসিসি
শহরের কিছু হোটেল দম্পতিদের জন্য বিনামূল্যে ছুটি কাটানোর ব্যবস্থা করছে। তবে শর্ত
একটাই- ঐ হোটেলগুলোতে থাকার সময় তাদের গর্ভধারণ করতে হবে। স্থানীয় পর্যটন কাউন্সিলের
উদ্যোগে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দেশটির জন্মহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে যাওয়া
এবং একই সাথে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসাকে চাঙ্গা করার জন্য দম্পতিদের কাছে
২) দক্ষিণ কোরিয়ায়
জন্মহার হার বাড়াতে ব্যাপক পরিকল্পনাঃ
দক্ষিণ কোরিয়ায়
অন্যান্য বছরের তুলনায় আশঙ্কাজনক হারে কমেছে জন্মহার। দেশটির ইতিহাসে ২০১৮ সালে সবচেয়ে
কম জন্মহার রেকর্ড করা হয়েছে।দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান বিভাগের এক জরিপে উঠে এসেছে
এমন তথ্য। জন্মহার বাড়াতে দেশটির সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিলেও তার কোন ইতিবাচক
প্রভাব পড়েনি।
৩ ) সার্বিয়া
জনসংখ্যা বাড়াতে ভালোবাসার ভোজঃ
সার্বিয়ায় মানুষের
অভাবে দেশটির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হতে বসেছে। তারা চাইছে জনসংখ্যা বাড়ুক। জনসংখ্যা
বাড়াতে দেশটির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত জাগোদিনা শহরের মেয়র দ্রাগান মার্কোভিক গত বৃহস্পতিবার
এক অভিনব উদ্যোগ নেন। আয়োজন করেন ভালোবাসার ভোজের।
৪ ) তাইওয়ানে
জন্মহার বাড়ানোর চেষ্টাঃ
তাইওয়ান সরকার
দেশে জন্মহার বাড়ানোর চেষ্টা করছে।জন্মহার একেবারে কমে যাওয়ায় আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের
মধ্যে দেশটিতে জনশক্তি ও মেধাসম্পদের ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে
দেশটিতে উৎপাদন খাত হুমকির মুখে পড়তে পারে।
৫) জাপানে জন্মহার
বাড়াতে সরকারি ঘটকালিঃ
জাপানে কয়েক
বছর ধরেই জন্মহার নিম্ন। দেশটির সরকার বিষয়টি নিয়ে তাই চিন্তায় পড়েছে। জন্মহার
বাড়াতে এবার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই ঘটকালির ব্যবস্থার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার
কর্তৃপক্ষ স্প্রিড ডেটিং (পরিচিত-অপরিচিত অনেক ব্যক্তির একত্রে মিলিত হওয়া) অথবা বিভিন্ন
ধরনের ঘটকালির উদ্যোগ নিলে সরকার তাদের সহয়তা করবে। দেশে শিশুর সংখ্যা বাড়াতে এমন
খসড়া করা হয়েছে।
৬) স্পেনে প্রতি
সন্তান জন্মদানে ২৫০০ ইউরো দেয়া হয়ঃ
পশ্চিম ইউরোপীয়
দেশ স্পেনে জন্মহার একেবারেই কম। এজন্য দম্পতিদের সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে
প্রতিটি নতুন শিশুর জন্য আড়াই হাজার ইউরো দেয়া হয়।
৭ ) শিশুর ১ম
১৮ মাসের খরচ দিবে রাশিয়াঃ
২০১৭ নভেম্বরে
জন্মহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরণের সংস্কার প্রকল্প চালু করে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির
পুতিন।নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর মধ্যে প্রচারপত্র বিলি করা হয় যেখানে অন্যতম প্রধান
প্রস্তাব ছিল সেসব পরিবারের সদ্য জন্ম হওয়া শিশুর প্রথম ১৮ মাসের ভরণপোষণ খরচ রাষ্ট্র
বহন করবে।
৮ ) জন্মহার
বাড়াতে বিপুল বিনিয়োগ জার্মানীরঃ
জার্মান চ্যান্সেলর
অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেলের সরকার শিশু পরিচর্যা খাতে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে। এরপরও
দেশটির জন্মহার এভাবে কমে যাচ্ছে।
৯) ইউরোপে জনসংখ্যা
বাড়াতে শিক্ষা সিলেবাসে গর্ভধারন অধ্যায় অন্তর্ভুক্তঃ
ইউরোপজুড়ে যৌনশিক্ষা
এখন নতুন একটি অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে খুব সন্তর্পনেই। আর তা হলো- যৌন সম্পর্ক আর গর্ভধারণকে
ইতিবাচকভাবে দেখানো। আরো খোলাসা করে বললে, গর্ভধারণকে উৎসাহিত করাই এখন
পশ্চিমের যৌন শিক্ষার একটি প্রধান লক্ষ্য।
১০ ) বিনামূল্যে
জমি বিতরণ করছে কানাডা সরকারঃ
জনসংখ্যা বাড়ানোর
জন্য দেশটিতে নেয়া হয়েছে অভিনব কৌশল। শহরের জনসংখ্যা বাড়াতে বিনামূল্যে বাস্তুজমি দিচ্ছে
কানাডা!
১১) জনসংখ্যা বাড়াতে সিঙ্গাপুরে মন্ত্রণালয়ঃ
সিঙ্গাপুরের
তরুণ তরুণীরা বিয়ে করতে, সন্তান নিতে অপারগ৷ ফলে বেশ
চিন্তিত সরকার৷ সমস্যার সমাধানে মন্ত্রণালয় খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে
১২) ডেনমার্কে জনসংখ্যা বাড়াতে সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণাঃ
ডেনমার্ক জনসংখ্যা
বৃদ্ধির হার বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বাড়ানোর জন্য সম্পর্ক
করার জন্য সরকারিভাবেই নাগরিকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
১৩. ফিনল্যান্ডে
জনসংখ্যা বাড়াতে বেবি বোনাসঃ
ফিনল্যান্ডের
ছোট শহরগুলোতে জনসংখ্যা কমে যাওয়া ঠেকাতে আর্থিক বোনাসসহ নানা ধরনের সুবিধা দিচ্ছে।
নতুন বাসিন্দাদের মাত্র এক ইউরোর বিনিময়ে প্লট পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো শহরে
নতুন বাবা-মাকে নগদ অর্থও দেয়া হচ্ছে।
১৪) জনগনকে খরগোশের
মতো সন্তান জন্মদানের আহবান পোল্যান্ড সরকারেরঃ
পোল্যান্ডের
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেদেশের নাগরিকদেরকে খরগোশের মতো বহুগুনে সন্তান জন্মদানের আহবান
জানিয়েছে। ইউরোপের যে দেশগুলোতে জন্মহার সবচেয়ে কম সে দেশগুলোর একটি পোল্যান্ড।
১৫ ) আমেরিকায়
জন্মহার কমায় উদ্বেগঃ
আমেরিকায় জন্মহার
ক্রমশ কমছে। তবে ২০১৭ সালে এই জন্মহার রেকর্ড পরিমাণ কমেছে।
কম জন্মহার ও
অর্থনৈতিক উদ্বেগ
সন্তান জন্মদানের
সঙ্গে অর্থনীতিও জড়িত ওতপ্রোতভাবে। ২০০৮ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোয় জন্ম
নেয় ৫৪ লাখ ৬৯ হাজার শিশু। কিন্তু ২০১৩ সালে তা নেমে আসে ৫০ লাখ ৭৫ হাজারে। সক্রিয়
অর্থনীতির জন্য এ প্রবণতা উদ্বেগজনক।
পোপ ফ্রান্সিস
আরও সন্তান চায়। গত বছর বলেছিল, ইউরোপের জন্য ‘মা ইউরোপ’ হয়ে ওঠা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণদের সন্তান গ্রহণে উৎসাহী করতেই তার এই বক্তব্য।
ইউরোপে, বিশেষ করে ইতালি, স্পেনের মতো ক্যাথলিক দেশগুলোয়
এখন তরুণের বড় অভাব। শুধু এসব দেশ নয়, তরুণের সংখ্যা ইউরোপের গণ্ডি
ছাড়িয়ে কমছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ায়ও। তাই পোপের
তরুণ সমাজের প্রতি এই আকুতি।
১৯৯৯ থেকে ২০০৮
এই এক দশকে ধনী দেশগুলোয় সন্তান ধারণক্ষমতার হার বেড়েছিল উল্লেখযোগ্য হারে। ব্রিটেনে
এ হার ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ১ দশমিক ৯১, অস্ট্রেলিয়ায় ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ
থেকে বেড়ে ২ দশমিক ০২ ও সুইডেনে দেড় শতাংশ থেকে বেড়ে পৌঁছে ১ দশমিক ৯১ শতাংশে। যুক্তরাষ্ট্রও
এ সময় পিছিয়ে ছিল না। এ দেশে সন্তান ধারণক্ষমতার হার পৌঁছেছিল ২ দশমিক ১ শতাংশে, যা অভিবাসন জনগোষ্ঠী ছাড়াই জনসংখ্যায় ভারসাম্য বাড়ার ইঙ্গিত।
কিন্তু বর্তমান দশকে সে অনুপাতে বাড়ছে না।
ভিয়েনা ইনস্টিটিউট
অব ডেমোগ্রাফির বিশ্লেষক টমাস সোবোটকা এর দুটো কারণ নির্ণয় করেছে। প্রথমটি হচ্ছে, নারী সমাজ পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার গড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায়
মাতৃত্বকে দূরেই রাখে তার। এখন বেশির ভাগ নারী মা হওয়ার চেষ্টা করে ৩০-এ অথবা এর পরে।
নিজের ক্যারিয়ারের দিকটিকে গুরুত্ব দিয়েই সন্তান নিয়ে মাথা ঘামায় না তারা।
দ্বিতীয় কারণ, ২০ বছর অতিক্রম করে গেলে বেশির ভাগ নারীর সন্তান ধারণক্ষমতা
কমতে থাকে। তাই যখন মা হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তখন আর পরিকল্পনামতো হয়ে ওঠে না তা।
সন্তান জন্মদানের
সঙ্গে অর্থনীতিও জড়িত ওতপ্রোতভাবে। যেমন ২০০৮ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোয়
জন্ম নেয় ৫৪ লাখ ৬৯ হাজার শিশু। কিন্তু ২০১৩ সালে তা নেমে আসে ৫০ লাখ ৭৫ হাজারে। অর্থাৎ
শিশু জন্মের হার কমেছে ৭ শতাংশেরও বেশি।
এ হার হাগিজ
ন্যাপি প্রস্তুতকারক কিমবার্লে-ক্লার্কের জন্য বিশাল। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা
দিয়েছিল ইউরোপ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার। যুক্তরাষ্ট্রেও অবস্থা এখন ভালো নয়। ২০০৭
সালে এ অঞ্চলে সন্তান ধারণক্ষমতার হার ২ দশমিক ১২ শতাংশ থাকলেও ২০১৪ নাগাদ তা নেমে
যায় ১ দশমিক ৮৬ শতাংশে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ২৩ লাখ শিশু হারিয়েছে বলে জানাল
ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পস্ফিয়ারের জনতত্ত্ববিদ কেন জনসন।
গ্রিস ও ইতালির
মতো দেশগুলোয় সন্তান ধারণক্ষমতার হার কমার মূল কারণ অস্থিতিশীল অর্থনীতি। অর্থনৈতিক
মন্দাকবলিত এসব দেশে উপযুক্ত কর্র্মসংস্থানের অভাবে অনেক দম্পতিই বিরত রয়েছে সন্তান
গ্রহণ থেকে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে শিশু জন্মানোর হার আশানুরূপ বাড়বে, সেটা প্রত্যাশিত ছিল। এর সুরাহা হয়নি বলে বিষয়টি কেমন যেন গোলমেলে
হয়ে দাঁড়িয়েছে বলল জনসন।
নরওয়েতে শিশুর
সংখ্যা কমছে ছয় বছর ধরে, বলে দেশটির জনতত্ত্ববিদ ট্রুড
ল্যাপ্পেগার্ড। সে এর কারণ হিসেবে নারীর ক্যারিয়ারিস্ট হওয়াকেই দায়ী করে। এখন সব বয়সী
নারী একটি বিশেষ পর্যায়ে না পৌঁছে সন্তান ধারণের কথা ভাবে না। আর শিক্ষিত নারী সমাজ
দু-একটি সন্তানেই সন্তুষ্ট।
শিশু জন্মহার
কমার আরেকটি ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে। সেটি হচ্ছে, অভিবাসীদের মধ্যে জন্মের হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়ছে না। সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের
জনতত্ত্ববিদ অ্যান বেরিংটন উল্লেখ করল আবাসনের বিষয়টি। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের তরুণ বা
অল্প বয়সী জুটিদের এখন সম্পত্তি কিনছে খুবই কম।
দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ সালে এখানকার ৪৬ শতাংশ ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী জুটিরা বাস
করত ভাড়া করা বাড়িতে। এ হার এক দশক আগের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। আবার ১০ জন ২৪ বছর বয়সীদের
মধ্যে চারজনই বাস করে বাবা-মায়ের সঙ্গে।
যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ায়ও বাড়ির মালিকের সংখ্যা কমেছে। তবে ফ্রান্সের অবস্থা
২০১৪-১৫ সাালে ছিল তুলনামূলক ভালো। এর জন্য জোরালো জন্মসংক্রান্ত নীতিমালাই প্রভাব
ফেলেছে বলে মনে করে বিশ্লেষকেরা।
ভাড়া বাড়ির বাসিন্দা
হয়ে সন্তান গ্রহণ করাই যায়। কিন্তু ব্রিটেনের মতো দেশগুলোয় এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়
মনমানসিকতা। আগে নতুন প্রজন্মের জন্য বাড়ি কেনা অনেক সহজ ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্টেছে
নিয়মকানুন। জীবনযাত্রাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে আমেরিকান অর্থনীতিবিদ রিচার্ড ইস্টারলিনের
বক্তব্য ঠিক খেটে যায়। ১৯৬০ সালে বলেছিল, কোনো জুটির পৃথিবীতে নতুন
কোনো শিশু আনার সময় নিজের শৈশবের কথা মনে করা উচিত। সে কেমন পরিবেশে বড় হয়েছে। যদি
সেই পরিবেশ না দেওয়া যায়, তাহলে সন্তান পৃথিবীতে আনার
পরিকল্পনা বাদ দেওয়া উচিত। হয়তো ইস্টারলিনের এ ধারণা থেকেই ভাড়া বাড়িতে সন্তান জন্ম
দিতে চায় না ব্রিটেনের জুটিরা।
আবার অনেকে সন্তান
গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন লালন-পালন করতে পারবে না বলে। কারণ আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে
জীবনযাপন ক্রমে জটিল হয়ে উঠছে। সন্তানকে ভালো পরিবেশে বড় করে তোলাটা এখন প্রকৃতই বড়
চ্যালেঞ্জ। এসব ঝামেলায় জড়াতে চায় না অনেকেই।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে
জন্মহার বৃদ্ধি এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি সংস্থা ২০৫০
সালে মার্কিন জনসংখ্যার পূর্বাভাস কমিয়েই চলেছে। ২০৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যা
প্রথম দিকে ৪৩ কোটি ৯০ হাজার ধরা হলেও এখন তা কমিয়ে ৩৯ কোটি ৮০ লাখ নির্ধারণ করেছে
সংস্থাটি।
ইউরোপে জন্মহার
কমছে, বাড়ছে প্রবীণদের সংখ্যা
চলতি ঋণ সংকট
সামলে উঠতে পারলেও, জনচক্ষুর আড়ালে ইউরোপের একটির
পর একটি দেশে যে জনসংখ্যাগত বিপর্যয় ঘটে চলেছে, তা আগামী কয়েক দশকের মধ্যে
একটি অনেক বড় মাপের অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে৷
ব্যাপারটা আসলে
খুব সহজ৷ ইউরোপের একাধিক দেশে – যাদের মধ্যে জার্মানিও পড়ে – জনসংখ্যা হয় বাড়ছে না, কিংবা কমে যাচ্ছে৷ এর অর্থ, গড়ে শ্রমিকদের বয়স বাড়ছে, যার অর্থ, তাদের উৎপাদনশীলতা কমছে৷ অর্থনৈতিক বিচারে, এর ফলে সঞ্চয় কমবে, সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি কমবে৷
থাকছে পেনশনভোগীদের
সংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা৷ ধরতে গেলে, জার্মানির একজন সাধারণ কর্মী
তাঁর সমগ্র কর্মজীবনে পেনশন ফান্ডে যে পরিমাণ অনুদান দিয়ে থাকে – এবং সেই সঙ্গে নিয়োগকারী সংস্থা
কি প্রতিষ্ঠানের অনুদান – এই দু'টো যোগ করলেও পেনশন ফান্ডে একজন কর্মীর
মোটামুটি এক বছরের মোট আয় জমা পড়ে৷ সে অর্থে অবশ্যই একজন অবসরপ্রাপ্তের সারা জীবনের
পেনশন দেওয়া সম্ভব নয়৷ কাজেই পেনশন ফান্ডের ভালোমন্দ নির্ভর করে শ্রমবাজারে আরো কত
নতুন কর্মী এলো এবং তাদের অনুদান দিতে শুরু করল, তার উপর৷
ভাগ্যবানের বোঝা...
মুশকিল হয়, যখন পেনশনভোগীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে, কিন্তু সেই পরিমাণে নতুন শ্রমিকদের সংখ্যা বাড়ে না৷ ইউরোপীয়
ইউনিয়নের ২৭টি দেশে আজ গড়ে চারজন নতুন শ্রমিক একজন পেনশনভোগীর বোঝা বহন করে৷ ২০৫০
সালে কিন্তু দু'জন করে শ্রমিককে একজন পেনশনভোগীর পেনশনের
বোঝা বহন করতে হবে – যা এক কথায় অসম্ভব৷ অসম্ভব এ কারণেও বটে যে, জনসংখ্যার তরুণ বা কর্মক্ষম বা কর্মরত অংশ অবশ্যই এই অসম – এবং এক হিসাবে অন্যায় চাপ
মেনে নেবে না৷ যার ফলে রাজনৈতিক গোলযোগ সৃষ্টি হওয়াও আশ্চর্য নয়৷
বলাই বাহুল্য, পেনশনের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য, স্বাস্থ্য বীমার ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য৷ অর্থাৎ পেনশনভোগীদের
ভালো থাকা বা না থাকা যে দু'টি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে, সেই পেনশনের পরিমাণ এবং হেল্থ কেয়ার বা স্বাস্থ্য সেবা, দু'টোই নির্ভর করছে ঐ ‘সামাজিক' কিংবা ‘প্রজন্মগত চুক্তির' উপর৷ যে চুক্তি ভঙ্গ হলে গোটা
প্রণালীটা ভেঙে পড়তে বাধ্য৷
অথচ বিপদ তো
ঠিক তাই৷ তার একটি চরম দৃষ্টান্ত হল লাটভিয়া, যেখানে ২০০০ থেকে ২০১১ সালের
মধ্যে জনসংখ্যা কমেছে ১৪ পার্সেন্ট – হ্যাঁ, ১৪ শতাংশ৷ লাটভিয়া অতি ক্ষুদ্র
দেশ, কাজেই সে দেশের জনসংখ্যা থেকে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ কমে
যাওয়াটা খুব কম কথা নয়৷ ওদিকে পেনশনের ক্ষেত্রে ২০৬০ সালে লাটভিয়ার প্রত্যেক চারজন
শ্রমিকের জন্য থাকবে তিনজন পেনশনভোগী কিংবা ৬৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষ৷
লাটভিয়ার এই
দুর্দশার জন্য শুধু নিম্ন জন্মহারই নয়, অভিবাসনও দায়ী, অর্থাৎ নেতিবাচক অভিবাসন৷ বিগত দশকে লাটভিয়ায় জনসংখ্যা হ্রাসের
দুই-তৃতীয়াংশ ঘটেছে লাটভিয়ানরা দেশ ছাড়ার ফলে৷
ইউরোপের একটির
পর একটি দেশে জন্মহার হ্রাসের পিছনে এত ধরনের আর্থ-সামাজিক কারণ আছে যে, তার তালিকা দেওয়া বৃথা৷ নারীমুক্তি থেকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি – এবং হালে আর্থিক সংকট এবং
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা – সব কিছুকেই তার জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে, রাজনৈতিক মর্জি ও প্রয়োজন
অনুযায়ী৷ কিন্তু বাস্তব সত্য হল, পর্তুগালের মতো একটি দেশে
গত বছর জন্মহার ছিল নারী প্রতি ১ দশমিক ৩২টি সন্তান, যদিও দেশের জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে নারী প্রতি ২ দশমিক একটি সন্তানের জন্ম হওয়া
উচিত ছিল৷
২০১২ সালে গোটা
পর্তুগালে জন্মেছে মাত্র ৯০,০০০ শিশু৷ আর ২০৫০ সালে পর্তুগালের
প্রতি দশজন বাসিন্দার মধ্যে চারজনের বয়স হবে ৬০-এর উপরে৷ অভিবাসন কিংবা দেশত্যাগ? প্রতিবছর এক লাখ থেকে এক লাখ বিশ হাজার পর্তুগিজ দেশ ছাড়ছে
ভাগ্যান্বেষণে৷ যা কিনা দেশের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ!
ইউরোপের সব দেশের
‘পপুলেশন প্রোফাইল' বা জনসংখ্যার কাঠামো যে এরকম
‘অ-টেঁকসই', এমন বলা চলে না৷ যেমন ব্রিটেন
একটি ব্যতিক্রম৷ অন্যদিকে জার্মানি সহ বিভিন্ন দেশে অন্তত অবসরগ্রহণের বয়স বাড়িয়ে
সমস্যাটা কিছুটা বিলম্বিত করার প্রচেষ্টা চলেছে৷ কিন্তু মূল সমস্যাটাকে রাজনীতির নির্ঘণ্টে
না তুলতে পারলে ইউরোপের কালে জাপানের দশা হতে পারে: প্রবীণদের দেশ জাপান, যেখানে প্রবৃদ্ধিও ঘটে শম্বুক গতিতে৷
জন্মহার বাড়াতে
মরিয়া অনেক দেশ
রাশিয়া, চীন, জার্মানি, ব্রিটেন, আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশ
আছে যেখানে জন্মহার খুবই কম। এতই কম যে, দিনে দিনে সেখানে জনসংখ্যা
বৃদ্ধির হার বাড়ার বদলে কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ সেসব দেশে জনসংখ্যা কমছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে
শহর, স্কুল।
অনেক দেশের পরিস্থিতি
এমন যে, অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালনার মতো পর্যাপ্ত লোকবলের জন্য বিদেশের
দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে সেসব দেশকে। বেশ কিছু দেশ এই পরিস্থিতিতে তাদের নাগরিকত্ব
নীতিমালাও পাল্টে ফেলছে।
জনসংখ্যার এই
অবস্থা এশিয়ার তুলনায় পশ্চিমা ঠান্ডা দেশগুলোয় বেশি দেখা যায়। তবে এশিয়াতেও জনসংখ্যার
এই সংকটে ভুগছে জাপান।
ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া কিংবা অ্যামেরিকার অধিকাংশ জায়গায়, সেখানে জনসংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। কোথাও কোথাও প্রবীণরা
সংখ্যায় এতটাই বেশি, যে সুইডেন বা জার্মানির মত
বেশ কিছু দেশে পরিসংখ্যানগত ভাবে জন্মহার পড়তির দিকে। যেখানে যথেষ্ট সংখ্যক শিশুর জন্মাচ্ছে
না। জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিতে দেখা যাচ্ছে অনেক দেশই এখন কেবলমাত্র তার কুফলের প্রভাবেই
ধুঁকছে।
১৯৯২ সাল থেকে
রাশিয়াও জন্মহার কমছে। বাড়ছে মৃত্যুহার। কয়েকটি গবেষণায় ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়ার জনসংখ্যা মাত্র ১৪ কোটি ৩০ লাখ থেকে ২০৫০ সালে কমে গিয়ে
১১ কোটি ১০ লাখ হবে। উচ্চ মৃত্যুহার, নিম্ন জন্মহার ও জীবনযাপনের
নিম্নমানের জন্য জনসংখ্যায় হ্রাস ঘটতে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান
অনুযায়ী, রাশিয়ার জন্মহার হাজারে মাত্র ১৩ জন। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের
অনেক দেশের চেয়ে তা বেশি। তবে ১৯৬০ সালের সাথে তুলনা করলে এই জন্মহার প্রায় অর্ধেক।
অধিকাংশ দেশেই জন্মহার পতনের মাত্রা এত বেশি ছিল না।
এই সমস্যা নিয়ে
ক্রেমলিনও বেশ চিন্তিত। গত বছর নভেম্বরে জন্মহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার
প্রকল্প চালু করেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর মধ্যে প্রচারপত্র
বিলি করা হয়, যেখানে অন্যতম প্রধান প্রস্তাব ছিল- সেসব
পরিবারের সদ্যজাত শিশুর প্রথম ১৮ মাসের ভরণপোষণ রাষ্ট্র বহন করবে।
এই দুনিয়া মানুষ
দিয়ে চলে , রোবট দিয়ে নয়। একটা দেশে যদি কর্মক্ষম
লোক না-ই থাকে তাহলে সে দেশ চলবে কি করে? মানুষকেই কাজ করতে হয়। মানুষকেই
দুনিয়া টিকিয়ে রাখতে হয়। তো সে দুনিয়া টিকিয়ে রাখতে যদি সন্তান জন্মদান না-ই হয়ে থাকে
কিংবা কমানোর কথা বলে তাহলে দুনিয়া টিকবে কি?
চক্রান্তকারীরা
মুসলিম দেশে জনসংখ্যা কমাতে বলে। অথচ এই মুসলিম দেশের জনসংখ্যা ছাড়া তাদের দেশ চলতে
পারেনা।জনসংখ্যা দেশের বোঝা নয় , সম্পদ । যার উত্তম প্রমান এই বাংলাদেশ।
তাই কাফির-মুশরিকদের
কথায় প্ররোচিত না হয়ে অধিক সংখ্যক সন্তান নিন। মুসলমানদেরও ব্যাপক পরিকল্পনা নিতে হবে
মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য।