জিন্নাহ যদি রোহিঙ্গা মুসলমানদের কথা শুনত, তাহলে আজ তা বাংলাদেশের থাকত।

Image result for জিন্নাহজিন্নাহ যদি রোহিঙ্গা মুসলমানদের কথা শুনত, তাহলে আজ তা বাংলাদেশের থাকত।
উপমহাদেশের সবচেয়ে ঘটনাবহুল সময় ছিল ১৯৪৬-৪৭। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষের নেতাদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নেওয়ার ঘোষণা দেয়। উপমহাদেশের বহু জাতির মধ্যে স্বশাসনের আকাঙ্ক্ষা জাগে। বহু শতাব্দীজুড়ে আরাকান স্বাধীন সার্বভৌম রাজ্য ছিল। তার শাসক ছিলেন মুসলমান সুলতান। ১৮৮৬-তে আরাকানসহ সমগ্র বার্মা, তখন বলা হতো ব্রহ্মদেশ, বর্তমান মিয়ানমার ব্রিটিশদের অধীনে চলে যায়। তখন থেকে ১৯৩৭ পর্যন্ত আমাদের মতোই আরাকান ও বার্মার সব মানুষই ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশের প্রজা।
এই উপমহাদেশের ইতিহাসের বহু বৃত্তান্ত ইতিহাস বইয়ের পাতায় এখনো লিপিবদ্ধ হয়নি। ১৯৪৬ সালের শেষের দিকে আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানের একটি প্রতিনিধিদল করাচি গিয়ে মুসলিম লীগ নেতাদের সঙ্গে দেখা করে আরাকানকে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে রাখার দাবি জানায়। লীগ নেতারা তখন বেজায় ব্যস্ত। তাঁরা আরাকানের মুসলমান নেতাদের বলেন, আমরা নতুন ঝামেলার মধ্যে যেতে পারব না, ব্রিটিশ সরকারের নেতাদের গিয়ে বলুন। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা রাখাইন মুসলমান নেতাদের দাবিকে গুরুত্ব দেননি।

এর মধ্যে আরাকানকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির আন্দোলন দৃষ্টিগ্রাহ্য রূপ নেয়। বার্মার জাতীয়তাবাদী নেতা বর্তমান সময়ের অত্যন্ত শান্তিবাদী নেত্রী অং সান সু চির বাবা অং সান চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং আরাকান প্রশ্নে তাঁর মতামত প্রার্থনা করেন। ১৯৪৭-এর প্রথম দিকে জিন্নাহ অং সানকে আশ্বস্ত করেন আরাকানকে পাকিস্তানে নেওয়ার কোনো আগ্রহ তাঁর নেই। পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের এক বছরের মধ্যেই অং সানের নেতৃত্বে বার্মাও স্বাধীন হয়। এবং মাস দুই পরেই আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন।



সু চির পিতৃদেব মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে অঙ্গীকার করেন বার্মায় তিনি ‘ট্রু ডেমোক্রেসি’ বা সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন। তাঁর অঙ্গীকার বাস্তবায়নের সুযোগ তিনি পাননি। তাঁর বিখ্যাত ভাষণে অং সান বলেছিলেন: ‘একমাত্র সত্যিকারের গণতন্ত্রই জনগণের প্রকৃত মঙ্গল করতে পারে, যা শ্রেণি, গোত্র অথবা ধর্ম কিংবা লিঙ্গনির্বিশেষে সবাইকে সমান মর্যাদা ও সমান সুযোগ দেয়। জনগণই প্রকৃত সার্বভৌম। যদি জনগণের স্বার্থকেই প্রাথমিক বিবেচনায় নিয়ে আমাদের শাসনতন্ত্র রচনা করতে পারি তাহলেই সত্যিকারের গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপিত হবে।’ [‘দ্য পলিটিক্যাল লিগাসি অব অং সান’]