‘মগের মুলুক’ বাংলাদেশে একটি সুপরিচিত বাগধারা। বাংলা একাডেমি এর অর্থ লিখেছে—১. ব্রহ্মদেশ বা আরাকান রাজ্য। ২. অরাজক রাষ্ট্র, যে রাজ্যে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত নয়, যেখানে যথেচ্ছাচার হয়। বার্মিজরা ঐতিহাসিকভাবেই বর্বর, নিষ্ঠুর। মানুষের গলায় দড়ি বাঁধা, হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া রাখাইনদের পুরনো অভ্যাস। ‘ইস্ট ইন্ডিয়া ক্রোনিকলস’-এর বর্ণনায় জানা যায়, ১৭১৮ সালে বার্মার রাখাইন রাজা দক্ষিণবঙ্গ তছনছ করে অন্তত এক হাজার ৮০০ জন সাধারণ অধিবাসীকে ধরে নিয়ে যান। বন্দিদের রাজার সামনে হাজির করা হলে রাখাইন রাজা সেখান থেকে বেছে বেছে এক দলকে তাঁর নিজের দাস বানান, আর অবশিষ্টদের গলায় দড়ি বেঁধে ক্রীতদাস হিসেবে বাজারে বিক্রি করে দেন। মগের মুলুক বলতে জোর যার মুলুক তার। এ বাগধারা মিয়ানমারের মগদের বর্বরতা ও দস্যুপনা থেকেই এসেছে।
সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমাংশে তখনকার বাংলা বা বঙ্গদেশ খুব সমৃদ্ধ ছিল। ওই সময় দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ‘মগ’ জাতির দস্যুরা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে খুব লুটপাট ও ডাকাতি করত। বর্তমানে যারা রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর আক্রমণ করছে, তাদের বলা হচ্ছে রাখাইন উপজাতি। এ রাখাইন উপজাতির আগের নাম মগ। সেই মগরাই ৪০০ বছর আগেও অত্যাচার ও লুটপাট চালাত। তখনকার আমলের মোগল সাম্রাজ্যের রাজধানী দিল্লি থেকে নিযুক্ত, তৎকালীন বাংলা-প্রদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থানকারী শাসনকর্তা বা সুবেদার, পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে পালিয়ে গিয়েছিলেন। মগরা যা ইচ্ছা তাই করেছিল। অর্থাৎ তখন সরকার ছিল না, মোগলদের পরিবর্তে দেশের মালিক হয়ে গিয়েছিল মগ দস্যুরা। মুলুক শব্দটির অর্থ দেশ বা এলাকা ইত্যাদি। পর্তুগিজ নৌ-দস্যুদের সঙ্গে যখন আরাকানি বৌদ্ধরা হাত মিলিয়ে বাংলার উপকূলীয় এলাকায় সম্ভ্রমহরণ-লুণ্ঠন-হত্যার মতো জঘন্য কর্মে লিপ্ত হয় তখন থেকেই ‘মগ’ ও ‘মগের মুলুক’ জাতি ও দেশবাচক শব্দ দুটি অরাজকতার নামান্তররূপে ব্যবহৃত হতে থাকে। (তথ্যসূত্র : বঙ্গে মগ-ফিরিঙ্গি ও বর্গির অত্যাচার, মুহম্মদ আবদুল জলিল, বাংলা একাডেমি, পৃষ্ঠা ২৫)