পার্বত্য চট্টগ্রামে মুখের কথায় জমির মালিক বনে যাচ্ছে উপজাতিরা। আর তাদের মালিকানার স্বীকৃতি দিচ্ছে সেখানকার কার্বারী ও হেডম্যানরা। এদিকে সরকারি বরাদ্দ পেয়েও জমি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে বাঙালীরা। নতুন করে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন করে সেখানকার আঞ্চলিক প্রথা ও পদ্ধতি অনুযায়ী জমির বিরোধ নিষ্পত্তি করার বিধান করা হয়েছে। এতে গোটা পার্বত্য এলাকা থেকে বাঙালীদের উচ্ছেদ করার একটি প্রক্রিয়া তৈরি হয়েছে বলে আশংকা করছেন বাঙালী নেতারা। তারা এ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে। উভয় পক্ষকে সন্তুষ্ট না রেখে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে গেলে পাহাড়ে যে কোন সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটার আশংকা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি পার্বত্যাঞ্চল ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা যায়, পাবর্ত্য চট্টগ্রামের ভূমির সি.এস সার্ভে করা হয়নি। ওই এলাকার পুরো জমির মালিকানাই সরকারের। ১৮শ শতাব্দিতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতারিত হয়ে পাবর্ত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় নেয় উপজাতিরা। পরবর্তীতে তৎকালীন বৃটিশ সরকার তাদেরকে সেখানে পুনর্বাসন করেন। মুখের কথার মাধ্যমে বিভিন্ন জমি উপজাতিদের বসবাস ও চাষাবাদ করার জন্য দেয়া হয়েছিল। আর তাদের এসব জমির মালিকানার পক্ষে প্রমাণপত্রও দিচ্ছে সেখানকার কার্বারী ও হেডম্যানরা। অপরদিকে সরকার কর্তৃক বরাদ্দ দেয়া বাঙালীদের জমি থেকে তাদের উচ্ছেদ করে দিয়েছে উপজাতি সন্ত্রাসীরা। তারা কোন কোন এলাকার বাঙালীদের বসত বাড়ি এবং জমিও দখল করে নিয়েছে। পরবর্তীতে একটি খাস জায়গায় গুচ্ছগ্রামে তাদের বসবাসের সুযোগ দিয়েছে সরকার। তাদের চাষাবাদের জমি বেদখল হওয়ায় তারা সরকারের রেশনের উপর জীবন চালাচ্ছে। এমন কী তাদের কোন কোন পরিবার গরু-ছাগলের সাথে এক ঘরে বসবাস করছে।
সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমার বেশকিছু দাবি-দাওয়া মেনে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন-২০০১ এর সংশোধনী-২০১৬ পাশ করেছে সরকার, যেখানে আবশ্যকীয়ভাবে বাঙালির কোন প্রতিনিধি রাখা হয়নি। অন্যদিকে ক্ষমতা কমানো হয়েছে কমিশনের চেয়ারম্যানের। এছাড়া আইনে আগেকার প্রচলিত আইন ও রীতির সঙ্গে ‘পদ্ধতি’ জুড়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী ভূমির বিরোধ নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে।
সংশোধনীটি পাস হওয়ার পর থেকেই ভূমি হারানোর আশঙ্কা করছেন পাহাড়ে বসবাসরত ৫১ ভাগ বাঙালি জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই, বিশেষত পুনর্বাসিত বাঙালিরা। তাদের মতো গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধা জহুরুলও ভূমি হারানোর আশঙ্কা করছেন। অন্যদিকে, গুরুত্বপূর্ণ এ কমিশনে বাঙালির কোন প্রতিনিধি না থাকাকে চরম বৈষম্য হিসেবেও দেখছেন অনেকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সংশোধীত আইনে ‘পদ্ধতি’ জুড়ে দেয়ায় পুনর্বাসিত বাঙালিরা সরকার দেয়া জমি ফেরত পাবেন না। কেননা ওই পদ্ধতি অনুযায়ী এসব জমি বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এমনকি সরকারের অনেক স্থাপনা রয়েছে যা ওই পদ্ধতি অনুযায়ী অধিগ্রহণ করা হয়নি। ফলে তাও হুমকির মুখে পড়বে।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা এ আইনে জটিলতা ও ধোঁয়াশা থাকার কথা স্বীকার করলেও একেবারে উচ্ছেদের আশঙ্কাকে নাকচ করে দিয়েছেন। বলছেন, জমির কাগজ না থাকার কারণে কেউ ভূমি কমিশনে জমি হারালেও তাকে সরকারি খাস জমিতে পাহাড়েই পুনর্বাসন করা হবে। পাহাড় ছেড়ে যেতে হবে না।
ভূমি বেদখল হওয়ায় চরম দুর্দাশায় গুচ্ছগ্রামবাসী : চেংড়াছড়ি গুচ্ছগ্রামটিতে মুক্তিযোদ্ধা জহুরুলের মতো আরও ৪০০ পরিবার ঠাসাঠাসি করে মানবেতর জীবন-যাপন করেন। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তার স্বার্থে যেসকল বাঙালি পরিবারকে পাহাড়ে পুনর্বাসন করেছে, তার মধ্যে ১৯৮১ সালে ৫৬টি পরিবারকে ওই এলাকার বিভিন্ন স্থানে বসবাসের জন্য খাস জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু শান্তিবাহিনী তাদের পাহাড় থেকে উচ্ছেদ করতে শুরু করে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ। সন্ত্রাসীদের এ নৃশংসতা থেকে রক্ষা করতে ওইসব এলাকা থেকে ১৯৮৮ সালের দিকে তাদের এই গুচ্ছগ্রামটিতে একত্রিত করা হয়।
সে সময় ৫৬টি পরিবারকে ২৫ শতাংশ বসতি জমি এবং পৌনে চার একর চাষযোগ্য জমি দিয়ে পুনর্বাসিত করা হয়। ৩০ বছর পর সেই ৫৬ পরিবার এখন ৪০০ পরিবারে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ২৫ শতাংশ জমির মধ্যে এক শতাংশও বাড়েনি। অন্যদিকে চাষযোগ্য যে পৌনে চার একর জমি তাদের দেয়া হয়েছিল, তা পাহাড়ে হওয়ার কারণে উপজাতিদের বাধা ও অপহরণের ভয়ে সেগুলোতে চাষ তো দূরের কথা পা পর্যন্ত ফেলতে পারেনা বাঙালিরা। এদিকে থাকার জায়গার অভাবে গরু, ছাগল এবং মানুষ বসবাস করছে একই ঘরে। সরকারের দেয়া এসকল খাস জমির মালিকানাও দাবি করছে উপজাতীয়রা।
পাহাড়ে এ ধরনের মোট গুচ্ছগ্রাম রয়েছে ৮৬টি। যেখানে ২৬ হাজার পরিবারকে সরকারের দেয়া বসতভিটা থেকে এনে পুনর্বাসন করা হয়। সরকার প্রতি মাসে যে সীমিত পরিমাণ রেশন দিয়ে থাকে, কেবল তা দিয়েই সংসার চালাতে হয় তাদের। জমিজায়গা বেদখল হওয়ায় অনেকে উপজাতীয়দের জমিতে দিনমজুর খেটে সামান্য কিছু আয় করেন।
বর্তমানে পরিবারের সংখ্যা ৫ গুণ বাড়লেও রেশন কার্ড বাড়েনি ১ টিও। এসব গ্রামে বছরের পর বছর মানবেতর জীবন যাপন করছেন কয়েক লাখ মানুষ। সম্প্রতি তাদের চরম দুর্দাশার সঙ্গে যোগ হয়েছে ফেলে আসা বসতভিটা হারানোর আশঙ্কা।
মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল বলেন, ‘সমতলে সরকারের সফলতায় আমি অনেক খুশি ও গর্বিত। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। কিন্তু সমতল ও পাহাড়ে আকাশ-পাতাল ব্যবধান রয়েছে। সরকার পাহাড়ে নতজানু অবস্থান নিয়েছে। রাজাকারের জাত চাকমাদের হাতে আমাদের উচ্ছেদের ক্ষমতা দিয়েছে। এখানে দেশ স্বাধীন বলে মনে হয় না।’
তিনি বলেন, এখানে বাঙালিরা ভয়াবহ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। গণতন্ত্র নাই, পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। নিকৃষ্ট, খুনী, রাজাকারের জাতি স্বৈরতন্ত্রের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আমাদের নিজেদের দেশে আমরা নাগরিক না, নতুন করে নাগরিক হতে হচ্ছে।
কমবেশি শান্তিবাহিনীর ভয়াবহ নৃশংসতার শিকার হয়েছেন এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা। স্বজন হারিয়েছেন অনেকে। এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালিদের পাহাড় থেকে উচ্ছেদ করা।
বাসিন্দারা জানান, আগেকার ভিটামাটিতে যেন না যায় সেজন্য প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা ওসব জায়গায় ভারী অত্যাধুনিক বিদেশি অস্ত্রসশস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়ায়।
মো. লুৎফর রহমান (৬০) বলেন, ১৯৮৭ সালে তার ছেলে, ভাইসহ চারজনকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে শান্তিবাহিনী। নিরাপত্তার জন্য তাকে মুবাছড়ি গ্রাম থেকে এখানে নিয়ে আসা হয়। আসার পরপরই ভিটামাটি দখল করে উপজাতীয়রা। ওই জমিতে আর ঢুকতে দেয়া হয়নি তাকে।
শান্তিবাহিনীর নৃশংসতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন একই গ্রামের বাসিন্দা সিদ্দিক আলী (৯০)। তার ২৫ বছর বয়সী মেয়ে মঞ্জুরা খাতুন কচু শাক তুলতে গিয়ে নিখোঁজ হন। পরে একদিন পর তার লাশ পাওয়া যায়। নিহত নারীর লজ্জাস্থানেও কাটার দাগ ছিল বলে জানান।
কী আছে সংশোধিত ভূমি নিষ্পত্তি কমিশন আইনে :
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন-২০০১ (সংশোধনী) ২০১৬ অনুসারে ইতোমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কমিশনের পাঁচ সদস্যের মধ্যে আবশ্যিকভাবে উপজাতীয় তিনজন। তারা হলেন, আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান বা তার প্রতিনিধি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, প্রতিনিধি ও সার্কেল চিফ বা তার প্রতিনিধি।
অন্যদিকে, বাকি দুই জন হচ্ছেন কমিশনের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসারপ্রাপ্ত বিচারপতি (১) ও সদস্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বা একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, (১) যারা বাঙালি বা উপজাতি দুই হতে পারেন। ফলে কমিশনে আবশ্যিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ৫১ ভাগ বাঙালি জনগোষ্ঠীর কোন প্রতিনিধি রাখা হয়নি।
এছাড়া ভূমি কমিশন আইনের ধারা ৭(৫) সংশোধন করে ‘চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই কমিশনের সিদ্ধান্ত বলিয়া গণ্য হইবে’ এর স্থলে ‘চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের গৃহীত সিদ্ধান্ত কমিশনের সিদ্ধান্ত বলিয়া গণ্য হইবে’ বলে উল্লেখ করা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাঙালিদের প্রতিনিধি না থাকার ফলে সংশোধনী আইনে উপজাতি নেতাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। যে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বাঙালি স্বার্থ তথা জাতীয় স্বার্থ বিঘিœত হলেও তার প্রতিকারের ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
এ আইনে পুনর্বাসিত শরণার্থীদের ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। প্রচলিত আইন রীতি ও পদ্ধতি বলতে মূলত হেডম্যান, কারবারী ও সার্কেল চিফদের ব্যক্তি মতামত ও সিদ্ধান্তকে বোঝায়। যা একটি সাম্প্রদায়িক ব্যবস্থা।
তারা বলছেন, এই পদ্ধতি থেকে নিরপেক্ষ মতামত প্রত্যাশা অসম্ভব। এই পদ্ধতি অনুযায়ী প্রশাসনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি রিজার্ভ ফরেস্টসহ সরকারি বিভিন্ন স্থাপনার জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। ফলে সংশোধিত আইনের এ ধারাটি অপব্যবহার করে উপজাতিরা বাঙালিদের নিজেদের বসতভিটা ও জায়গা জমি হতে বঞ্চিত ও উচ্ছেদের পাশাপাশি ওইসব সরকারি স্থাপনাও উচ্ছেদ করতে পারবে। ফলে অখ-তা হারানোর হুমকির মুখে পড়বে বাংলাদেশ।
এদিকে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সংশোধনী আইন বাতিলের তিন পার্বত্য জেলায় বাঙালিদের ডাকে পরপর ৩ দিন হরতাল পালিত হয়েছে। প্রায়ই এ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন করছেন তারা।
সংশোধিত ভূমি কমিশন প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসারপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহীম বীরপ্রতীক বলেন, সরকার ইতোপূর্বে যাদের রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বন্দোবস্ত দিয়েছে, সংশোধনী আইনে সেসব বন্দোবস্তকে অবৈধ বলে স্বীকার করে নিয়েছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রতিনিধি এবং তাদের শুভাকাক্সিক্ষরা বলতে চেষ্টা করেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল প্রকার ভূমির একচ্ছত্র মালিক হচ্ছে পাহাড়ি জনগণ। অপরপক্ষে বাংলাদেশ সরকার এবং সচেতন বাংলাদেশীরা মনে করেন যে, ভূমির মালিক পাহাড়ি জনগণ, বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের আইন মাতাবেক মালিকানাপ্রাপ্ত অন্য সব নাগরিক।
পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন সামরিক দায়িত্বের অভিজ্ঞতালব্ধ সাবেক এ সামরিক কর্মকর্তা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব বা বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য সরকারি ব্যবস্থা কাম্য। কিন্তু দুঃখজনক ও আতঙ্কজনক বিষয় হলো যে, সরকার ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করার নিমিত্তে যেই আইন করেছে, সেই আইনের অনেকগুলো বিধান এবং সেই বিধানের বাস্তবায়নকে আমি বাংলাদেশের জন্য হুমকিস্বরূপ মনে করি। ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়, বাংলাদেশের আগামীদিনের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব তথা ভৌগলিক অখ-তা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রাঙামাটি জেলা ইউনিটের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মোঃ মনিরুজ্জামান মনির ভূমি সমস্যা নিরসনে অবিলম্বে পাহাড়ে ভূমি জরিপ করার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি বাঙালিদের নামে কেনা ও সরকার প্রদত্ত খাসজমি থেকে উচ্ছেদ বন্ধ এবং গুচ্ছগ্রামের বাঙালিদেরকে স্ব-স্ব ভিটায় ঘরবাড়ি করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, ভূমি কমিশনে উপজাতীয়দের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বাঙালির বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা নাকচ করে দিয়েছেন সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দীপংকর তালুকদার। তিনি বলেন, এ আইন নিয়ে বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে। আইনে বলা আছে, কমিশনের পাঁচ জনের চারজন হলেই কোরাম পূর্ণ হবে। তাও আবার চেয়ারম্যান সহ সংখ্যাগরিষ্ঠদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। সেখানে চেয়ারম্যান (যিনি একজন সাবেক বিচারপতি) কি পক্ষপাতিত্ব করতে পারেন? বাঙালির জমি পাহাড়ি, পাহাড়ির জমি বাঙালি, হিন্দুর জমি মুসলিম, মুসলিমের জমি হিন্দু বেদখল করলে তা কি ফিরিয়ে দেয়া অন্যায়?
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ এমপি ফিরোজ বেগম চিনু বলেন, কোন জমির মালিক হিসেবে দুজন কাগজপত্র দেখালে যার কাগজ আসল তাকেই বন্দোবস্ত দেয়া হবে। আর যে জমি হারাবে তাকে পাহাড় থেকে চলে যেতে হবে না। তাকে পাহাড়েই পুনর্বাসন করা হবে। তবে উচ্ছেদের স্বীকার হলে কেউ ঘরে বসে থাকবে না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কাউকে উচ্ছেদ করবে না। প্রয়োজনে জমি দেবেন। কেউ বিজিবি বা সেনা ব্রিগেড অফিসের জায়গাকে প্রথা অনুযায়ী নিজেদের দাবি করলেই হবে না।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের উপজাতি জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ছিলো। সাওতাল এবং গারোরা সরাসরি পাকিস্তানের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও চাকমারা নেয় পক্ষে। বর্তমান চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়ের (ভূমি কমিশনের সদস্য) বাবা তৎকালীন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের নেতৃত্বে চাকমারা রাঙামাটিতে গণহত্যা চালায়।