সিপাহী বিদ্রোহের বিরুদ্ধাচারন এবং বৃটিশ গোলামি করেই 'রাজা' উপাধি পায় উপজাতিরা

সিপাহী বিদ্রোহের বিরুদ্ধাচারন এবং বৃটিশ গোলামি করেই 'রাজা' উপাধি পায় উপজাতিরা


চাকমা সম্প্রদায়ের জমিদারদেররায় ‘বাহাদুর’ উপাধি থাকলেও তারা ‘রাজা’ ছিল না।

১৯৩৯ সালের ৮ জুন ইংরেজ সম্রাট ষষ্ঠ জর্জের জন্মদিবস উপলক্ষে সম্রাট জয়ন্তীতে তৎকালীন চাকমা জমিদার নলিনাক্ষ রায়কে ‘রাজা’ উপাধি প্রদান করা হয়। তার পর থেকে নলিনাক্ষ রায় নিজে এবং তার উত্তরাধিকারীগণ তাদের নামের শুরুতে ‘রাজা’ উপাধি ব্যবহার করছে। ইংরেজ শাসনামলে ভারতবর্ষে মুসলমানদের দূরবস্থার সাথে সাথে প্রভাবশালী হিন্দুদের আধিপত্য বৃদ্ধি পায়। চাকমা সম্প্রদায়ের মেয়ে বিচক্ষণ জমিদার কালিন্দি রায়ও এটা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছিল বিধায় সে ইংরেজদের সহায়তায় জমিদারির দখল রাখতে সক্ষম হয়েছিল। বিনিময়ে সে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী স্বাধীনতাকামী দেশপ্রেমিক সিপাহীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে এবং তাদের গ্রেফতার করে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেয়।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ ওয়াজিউল্লাহ তার ‘আমাদের মুক্তি-সংগ্রাম’, ১৯৬৭, পৃ.-১০৩-এ লিখেছেন, ‘কালিন্দির পূর্বে প্রত্যক্ষভাবে চাকমাদের সাথে ব্রিটিশ কোম্পানির তেমন কোন বিশেষ সম্পর্ক ছিল না। বিচক্ষণ কালিন্দি রায় আনুগত্য লাভের আশায় ব্রিটিশ সরকারকে বিশেষভাবে সহযোগিতা প্রদান করে। এমনকি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামে সিপাহী বিদ্রোহকালে বিদ্রোহী সৈনিকরা পার্বত্য অঞ্চলে আত্মগোপন করলে, কালিন্দি রায় তাদেরকে ধৃত করার জন্য ব্রিটিশ সরকারকে সহযোগিতা করেছিল। সিপাহী বিদ্রোহের পলাতক সৈনিকদের বিরুদ্ধে এহেন দায়িত্ব পালনে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হয়ে কালিন্দি রায়কে কর্ণফুলী নদীর বার্ষিক পানিকর (১১৪৩ টাকা) মওকুফ করে দেয়।’ অর্থাৎ কালিন্দি রায়ের হাত ধরে যে চাকমা রাজত্বের ইতিহাস শুরু সেই ইতিহাসে রয়েছে কালিন্দির স্বামী ধরম বক্সের বিতর্কিত পিতৃ পরিচয় এবং পরবর্তীতে নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সিপাহী বিদ্রোহে স্বাধীনতাকামীদের সাথে বেঈমানির ইতিহাস।