উপজাতীয় তরুণীদের পছন্দ বাঙালি যুবকরা , বাধা উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠন
‘ভালোবাসা’ মানে না কোন বাধা, মানে না ধর্ম, বর্ণ বা জাতের ভেদাভেদ। সুযোগ পেলেই বাঙালি ছেলেদের প্রেমে পড়ে যায় পাহাড়ী উপজাতীয় তরুণীরা। অবশেষে ধর্ম পরিবর্তন করে বিয়ে বন্ধনেও আবদ্ধ হয়। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় কথিত আঞ্চলিক সংগঠনগুলো। ভালোবাসায় বিচ্ছেদ ঘটাতে ভিলেনের ভূমিকায় অবর্তীণ হয় এসব সংগঠনের সন্ত্রাসীরা। নিজেদের জাত রক্ষার নামে উভয় পরিবারের উপর নির্যাতন চালায়, কখনো কখনো তরুণীদের অপহরণ করে ধর্ষণ করে। হত্যার হুমকী ধমকী দেয়। এসব বাধা উপেক্ষা করেই পাহাড়ী তরুণীরা বাঙালি ছেলেদের বিয়ে করে চলছে। এ হার দিন দিন বেড়েই চলছে।
আজ থেকে ১২ বছর আগে বাঙালী তরুণ জামাল উদ্দিনের প্রেমে পড়ে মারমা তরুণী মিনিরওজা মারমা। অবশেষে ভালোবেসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয় তারা। সেই সাথে নাম তার নাম পরির্তন করে আয়েশা সিদ্দিকা রাখা হয়। বর্তমানে তাদের দু‘টি সন্তান রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ১২ বছর পরও তাদের এ বিয়ে ও ভালোবাসাকে মেনে নিতে পারেনি কথিত আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসীরা।
গত ৮ নভেম্বর স্থানীয় গিলাছড়ি বাজার থেকে এই নারীকে তুলে নিয়ে যায় উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। তাকে নিয়ে ১দিন, ১ রাত আটকে রেখেছে। তার গলায় শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে। কেন সে মুসলিম হয়েছে? কেন বাঙালিকে বিয়ে করেছে? এসব প্রশ্নে জর্জরিত করেছে তাকে। গলায় ছুরি ধরে তার কাছ থেকে মিথ্যা বিবৃতি রেকর্ড করেছে।
স্বামী-শ্বশুর তাকে নির্যাতন করে একথা বলতে বাধ্য করেছে। আর এসব কথা রেকর্ড করেছে। অবশেষে নিরাপত্তা বাহিনীর চাপে সন্ত্রাসীরা তাকে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু ভয়ে এ বিষয়ে থানায় কোন মামলাও দায়ের করা হয়নি। সন্ত্রাসীরা তাতেও ক্ষান্ত হয়নি, তার শশুরের আনারস বাগানের প্রায় ৮২ হাজার আনারস কেটে নষ্ট করে দিয়েছে। তবু বাঙালি ছেলেদের ভালোবাসে পাহাড়ের উপজাতি নারীরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাহাড়ী নারীরা রাত দিন পরিশ্রম করে সংসারে ঘানি টানে। আর পুরুষরা ঘুরে বেড়ায়, ঘরে বসে হুক্কা টানে। সকল কাজ করে নারীরা। পুরুষরা শুধুই আরাম আয়েশ করে। তারউপর আবার নানা রকম নির্যাতনও সহ্য করতে হয় তাদের। আর বাঙালিদের সংসারে সকল কাজ করে পুরুষরা, নারীরা শুধু সংসার ঘুছানোর সহজ কাজগুলোই করে।
সেইসাথে বাঙালি সংস্কৃতিতে পরিচ্ছন্ন জীবনে উন্নত ভালোবাসা পেয়ে সুখী সংসার করে তারা। এসব খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় পাহাড়ের উপজাতি অধিকাংশ তরুণীরই প্রথম পছন্দ হয়ে উঠে বাঙালি তরুণরা। তাই ভালোবেসে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু পাহাড়ের কথিত আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর ছেলেদেরকে মেয়েরা পছন্দ না করায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। ভালোবাসা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়ে নারীদের ধর্ষণ করার জন্য ভিলেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন তাদেরকে কঠোরভাবে দমন করতেও পারছে না।
জানা যায়, এর আগে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে ভালবেসে এক বাঙালি ছেলেকে বিয়ে করার অপরাধে খাগড়াছড়ির গুইমারার এক মারমা তরুণী ও তার পরিবারকে নির্যাতন ভোগ করাসহ মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হয়। ওই তরুণীকে একটি কক্ষে বেঁধে অমানসিক নির্যাতন করা হয়। অন্য একটি ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের শুরুর দিকে ভালবেসে এক চাকমা মেয়েকে বিয়ে করাই কাল হয় একটি প্রথম শ্রেণীর জাতীয় পত্রিকার স্টাফ আলোকচিত্র সাংবাদিকের, হারাতে হয় চাকরি । অপরদিকে ভালবাসার মানুষকে ভুলে যেতে ওই চাকমা তরুণীর উপর চলে মধ্যযুগীয় র্ববরতা। তোলা হয় নিলামে। যা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে গণমাধ্যমে।
সবচেয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করা ঘটনা ঘটে গত বছরের এপ্রিলে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায়। উপজেলার এক ত্রিপুরা মেয়ে ভালবেসে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার আহমদ কবীরের ছেলে মো. আবদুল হান্নানের (২৪) সাথে। এক সময় প্রেমিক হান্নানের হাত ধরে পালানোর সময় বাস থেকে নামিয়ে ওই ত্রিপুরা মেয়ে ও হান্নানকে অপহরণ করে পিসিপির কর্মীরা।
অপহরণের পর একটি ঝুম ঘরে আটক করে ত্রিপুরা মেয়েটিকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে পিসিপির স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মী। গণধর্ষণের পর গভীর রাত পর্যন্ত মেয়েটিকে নিয়ে উল্লাস করে এসব সন্ত্রাসী। পুরো গণধর্ষণের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করা হয়। এ ঘটনায় আটক ইউপিডিএফ সমর্থিত পিসিপির নেতা সজীব ত্রিপুরা (২২) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানায়।
এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি মুসলিম ছেলেকে ভালবেসে বিয়ে করার কারণে মাটিরাঙা, রাঙামাটির কুতুকছড়ি ও রামগড়ের কয়েকটি ঘটনাসহ এরকম আরও অসংখ্য পাহাড়ি মেয়েকে অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন নারকীয় অভিজ্ঞতার শিকার হতে হয়েছে।
সম্প্রতি পাহাড়ি তরুণীদের নিজ জাতি-গোষ্ঠীর লোকদের হাতে এরূপ নির্বিচারে গণধর্ষণের শিকার হওয়া নিয়ে গবেষণাধর্মী উপন্যাস বের করেন লেখিকা রোকেয়া লিটা। চলতি বছরের শুরুর দিকে ‘ডুমুরের ফুল’ নামে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ বইটি বের করলে ধর্ষণ করে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় লেখিকাকে।
রাঙামাটির বিলাইছড়ির কেরণছড়ি মৌজা কার্বারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অংচাখই কার্বারী জানান, কোনো পাহাড়ি মেয়ে বাঙালি ছেলেকে বিয়ে করলে উপজাতিদের সামাজিক নিয়মে কোনো শাস্তির বিধান নেই। তবে আমরা এ ক্ষেত্রে কার্বারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সাধারণত ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে থাকি। এরপর তাদের একত্রে বসবাসে সমস্যা নেই।
স্থানীয়রা মনে করেন, পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের মেয়েরা পছন্দ করে না, ভালোবাসে না। তাই ভিলেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে মেয়েদের অপহরণে লিপ্ত হয়েছে তারা।