স্বাধীনতার পর থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার অপতৎপরতা থেমে নেই। পৃথক রাষ্ট্র গঠনের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদি গোষ্ঠী। কিন্তু শান্তিচুক্তি হওয়ার পর নতুন কৌশলে ‘আদিবাসী’ নামক অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক স্বীকৃতি আদায়ের মাধ্যমে এ তৎপরতা জোরদার করছে তারা। আর এই অপতত্পরতার অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত বিশেষ ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছে, যা আসলে বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে জানা গেছে, এই ওয়ার্কশপটি ভারতে করার চেষ্টা হলেও তা ভেস্তে যায়। শেষ পর্যন্ত নেপালে বাংলাদেশবিরোধী এই ওয়ার্কশপটি হবে। পার্বত্য অঞ্চলের স্বাধীনতাবিরোধীদের একটি অংশ নেপালের কাঠমান্ডুতে ২৭-২৮ মার্চ দুই দিনব্যাপী এই ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছে।
ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য অঞ্চলের একটি পরিবারের কর্মকাণ্ড ছিল সন্দেহাতীতভাবে স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রবিরোধী। তত্কালীন ওই পরিবারের একজন আত্মস্বীকৃত রাজাকার ছিল। যার পুত্র বর্তমান ওই এলাকার কর্ণধার। এই রাজাকারপুত্র প্রতিনিয়ত তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অদ্যবধি শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে তার কোনরূপ সহযোগিতামূলক মনোভাব ও ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়নি; বরং সে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ব্যাহত করতেই সর্বদা তত্পর রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই ওই ব্যক্তি এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তার এ ধরনের আচরণের মূখ্য উদ্দেশ্য হলো চাকমা জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় তার প্রভাব ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা ও অভিযোগকে পুঁজি করে সে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে বিষয়গুলোকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকার ও নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ নানা প্রচারের চেষ্টা চালিয়ে থাকে।
জানা গেছে, এরই অংশ হিসেবে তার পরিকল্পনায় সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিলাইছড়িতে তুচ্ছ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে দুইজন মারমা মেয়েকে ধর্ষণ ও চাকমা রাণীর উপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ভিত্তিহীন প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
পার্বত্য অঞ্চলের ওই ব্যক্তি ও তার স্ত্রী উক্ত দুটি ঘটনাকে পুঁজি করে নিরাপত্তা বাহিনী ও বাংলাদেশ সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এই ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছে। ওয়ার্কশপে তারা আদিবাসী ইস্যু ও মানবাধিকার নিয়ে কর্মরত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানান।
তাদের মধ্যে অন্যতম হল মাইকেল ভ্যান ওয়াট, লোরা জি এলিক্স, টম এসকিল্ডসেন, ইডা নিকোসাইলেন ও লোলা জেমি। উক্ত ওয়ার্কশপে আমন্ত্রিত বাংলাদেশি কথিত বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের কিছু সদস্য রয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার সংগঠন ও এনজিওকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এ সকল সংগঠন সব সময় এদেশের সরকারবিরোধী প্রতারণায় জড়িত এবং তুচ্ছ ঘটনাকে বিশাল আকারে বহিঃবিশ্বে প্রকাশ করে আসছে। এর বিনিময়ে তারা মোটা অঙ্কের টাকা অনুদান পেয়ে থাকে। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে এ তথ্যও বেরিয়ে এসেছে।
উক্ত রাজাকারপুত্র কর্তৃক পরিচালিত একটি ফাউন্ডেশন কর্তৃক বিমান ও হোটেল ভাড়া, যাতায়াত ব্যবস্থাসহ এই ওয়ার্কশপের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা হচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২০ জন এই ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করবে বলে আয়োজক কর্তৃক জানা যায়। ওয়ার্কশপে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনার পর দ্রুত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে গৃহীত পদক্ষেপ ও ভবিষ্যত স্ট্র্যাটিজি নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হবে।
যদিও উল্লিখিত ওয়ার্কশপে পার্বত্য চট্টগ্রামে শন্তিচুক্তি বাস্তবায়নে আলোচনা করা হবে বলে প্রচার করা হয়। কার্যতঃ উক্ত আলোচনা শান্তিচুক্তি বিরোধী বলেই প্রতীয়মান হয়। গোয়েন্দা সংস্থা এ ধরনের তথ্য পেয়েছেন।
রাজাকারপুত্র ও তার স্ত্রীর এ ধরনের কার্যক্রম পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা রাঙ্গামাটি জেলায় অস্থিতিশীলতা করবে বলে প্রতীয়মান হয়। তাদের উভয়ের এ ধরনের সন্দেহমূলক কার্যক্রম সুশীল সমাজে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ও সংশয়ের সৃষ্টি করেছে।
অতি সম্প্রতি দুই জন উপজাতি মহিলাকে পাহাড়ী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক অপহরণের ঘটনায় তাদের নীরবতা এবং কোন ধরনের কার্যক্রমে অংশ না করাই এই সংশয়কে আরো জোরালো করে তুলেছে। আসলে তাদের মূল এজেন্ডা প্রশ্নবিদ্ধ।
জানা গেছে, সাধারণত বাংলাদেশের কোন সংগঠন কর্তৃক এ ধরনের সেমিনারের আয়োজন করলে দূতাবাসকে জানানো হয়। কিন্তু ২৭-২৮ মার্চের সেমিনার সম্পর্কে দূতাবাসকে কিছু জানানো হয়নি।
https://goo.gl/HmtCcz