আমি কিছুদিন আগে বলেছি, দেশে অর্থনৈতিকভাবে একটা চরম খারাপ অবস্থা আসতেছে,
এই খারাপ অবস্থা আসার একটা বড় কারণ হলো দেশের উৎপাদনশীল খাতগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
দেশের উৎপাদন খাতের ৯৯% হলো আবার বেসরকারি খাতে।
এই খারাপ অবস্থা আসার একটা বড় কারণ হলো দেশের উৎপাদনশীল খাতগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
দেশের উৎপাদন খাতের ৯৯% হলো আবার বেসরকারি খাতে।
আপনারা অনেকেই আমার সাথে একমত হবেন, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলতেছে। একটা বড় অংশ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায়। অনেকগুলো ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু প্রকাশ করতেছে না। যে কয়টা বেঁচে আছে, তারা লাভ কি জিনিস ভুলে গেছে, কোন মতে খেয়ে পড়ে বেচে থাকা এখন তাদের লক্ষ্য।
বাংলাদেশে ব্যবসায়ীক অবস্থা কতটা খারাপ সেটা বোঝার জন্য আন্তর্জাতিক ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্সে বাংলাদেশের র্যাংকিং দেখলে বোঝা যায়। যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৫টা দেশের মধ্যে ১৭৬ তম। যে উগান্ডাকে নিয়ে আমরা ফেসবুকে হরহামেশা ব্যঙ্গ করি তার অবস্থানও বাংলাদেশ থেকে অনেক উপরে ১২৭ তম, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানও আমাদের উপরে ১৬৭ তম, ইরাক ১৭১ তম, ক্রিকেট যাকে আমরা করুণার পাত্র হিসেবে দেখি সেই জিম্বাবুয়ে ১৫৫তম, যার বিরুদ্ধে আমাদের চেতনা জাগ্রত হয় সেই পাকিস্তান ১৩৬ তম, যে দল ক্রিকেটে হারলে বাংলাদেশে ঈদের আনন্দ লাগে সেই ভারত ৭৭ তম। বাংলাদেশের সাথে নিচের সারিতে আছে, যুদ্ধ চলমান কঙ্গো, সিরিয়া, চাদ, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, দক্ষিণ সুদান, লিবিয়া, ইয়েমেন। তারমানে কোন দেশে যুদ্ধ চলমান হলে ব্যবসায়ীক পরিস্থিতি যেমন হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে তেমন ব্যবসায়ীক পরিস্থিতি বিরাজ করতেছে। (https://www.doingbusiness.org/en/rankings)
কেউ যদি বলে, একটি দেশ উন্নত এটা কিভাবে নির্ণয় করা যায়, তবে বলবো, সেই দেশটির উৎপাদন খাত ও বেসরকারি খাতগুলো যদি শক্তিশালী হয়, সেটাই উন্নতির প্রমাণ। যেমন বর্তমানে শক্তিশালী অবস্থায় আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নিঃসন্দেহে দেশটিতে প্রাইভেট সেক্টর মারাত্মক শাক্তিশালী, ব্যবসায় ইনডেক্স ৮ম। যে যাই বলুক, বিশ্বের বড় বড় সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেটরা মার্কিন নাগরিক এবং সেই ব্যবসার জোরে তারা বিশ্বে কর্তৃত্ব করতেছে। আমি এ কথাগুলো ফেসবুকে বলতেছি, কারণ আমাদের যে তরুণ প্রজন্ম ফেসবুক চালায় এদের দিয়ে আমরা পরিবর্তনের আশা খুজে পাই। কিন্তু এ প্রজন্মটা জানেই না, একটা দেশ কিভাবে উন্নতি হয়। এর পেছনে অবশ্য দায়ী আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের শিখিয়েছে কিভাবে চাকুরী করতে হয়। কিন্তু ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হতে শিখায়নি। যদিও চাকুরী করতে হচ্ছে কোন ব্যবসায়ীর আন্ডারে, কিন্তু চাকুরীর মানসিকতা না থাকায় উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীদের প্রতি আমাদের ভালোবাসাও জন্ম নেয় না। অধিকাংশ তরুণ প্রজন্ম ব্যবসায়ী বিদ্বেষী, ব্যবসায়ীদের খারাপ, অসৎ হিসেবে চিনে। তাই ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়লে তাদের গায়ে লাগে না, বরং খুশি হয়। কিন্তু তারা এটা জানেইনা, বাংলাদেশের উৎপাদন খাতের ৯৯% প্রাইভেট সেক্টরে, সেখানেই হয়ত অধিকাংশের চাকুরী নিতে হবে। সেই সেক্টরে সমস্যা হলে সবারই সমস্যা। এর পেছনেও কারণ আছে, তরুণ শিক্ষিত প্রজন্মের মাথায় ঢুকায় দেয়া হইছে বিসিএস। লক্ষ লক্ষ তরুণ প্রজন্ম ভাবতেছে সবাই বিসিএস চান্স পেয়ে সরকারি চাকুরীজীবী হবে, তাই বেসরকারী সেক্টর গোল্লায় যাক, তাতে কার কি ? কিন্তু তারা ভুলে যায় প্রতি বছর মাত্র ২ হাজার ছেলে বিসিএস এ চান্স পাবে, বাকিদের নির্ভর করতে হবে বেসরকারী খাতের উপরেই। তাই বেসরকারী সেক্টর খারাপ মানে তাদের চাকুরীর সেক্টর খারাপ।
বিষয়টি আমি আলোচনা করতেছি, কারণ অনেকে জিজ্ঞেস করছে, “ভাই আপনি বলতেছেন দেশে সমস্যা আসতেছে, কিন্তু সমাধান তো বললেন না। ” তাদের জন্যই আমি এ পোস্ট তৈরী করেছি।
এই যে দেশ একটা কঠিন অবস্থার সম্মুখিন হয়েছে, এর পেছনে অনেককে আমরা দোষারোপ করতে পারি, কিন্তু এর পেছনে আমাদের নিজেদের ভুল ও মানসিকতাকে আমরা কখন দোষ দেই না। আমরা সবাই ব্যক্তি স্বার্থ বুঝি, ব্যক্তি স্বার্থ উপকৃত হলেই আমরা শান্তিতে থাকি, যাক না আমার পাশের ভাইটি মরে, তাতে আমার কি? আমি তো লাভবান হয়েছি, এ ধরনের স্বার্থপর মানসিকতা আমাদের শেষ হয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
মূলত: বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টরে এই যে বিপর্যয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এর পেছনে মূল কারণ হলো সুদ। ‘সুদ’ কে তুলনা করা যায় একটা এটম বোমের সাথে। এটম বোম যেমন বিষ্ফোরিত হলে সবকিছু ধ্বংস করে দেয়, ঠিক তেমন সুদ কোন এলাকায় ঢুকলে এক সময় তা ফুলে ফেপে উঠতে উঠতে বিষ্ফোরিত হবেই, সেটা আজ অথবা কাল। আর বিষ্ফোরিত হলে সবাইকে নিয়েই শেষ ।
এই যে দেশ একটা কঠিন অবস্থার সম্মুখিন হয়েছে, এর পেছনে অনেককে আমরা দোষারোপ করতে পারি, কিন্তু এর পেছনে আমাদের নিজেদের ভুল ও মানসিকতাকে আমরা কখন দোষ দেই না। আমরা সবাই ব্যক্তি স্বার্থ বুঝি, ব্যক্তি স্বার্থ উপকৃত হলেই আমরা শান্তিতে থাকি, যাক না আমার পাশের ভাইটি মরে, তাতে আমার কি? আমি তো লাভবান হয়েছি, এ ধরনের স্বার্থপর মানসিকতা আমাদের শেষ হয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
মূলত: বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টরে এই যে বিপর্যয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এর পেছনে মূল কারণ হলো সুদ। ‘সুদ’ কে তুলনা করা যায় একটা এটম বোমের সাথে। এটম বোম যেমন বিষ্ফোরিত হলে সবকিছু ধ্বংস করে দেয়, ঠিক তেমন সুদ কোন এলাকায় ঢুকলে এক সময় তা ফুলে ফেপে উঠতে উঠতে বিষ্ফোরিত হবেই, সেটা আজ অথবা কাল। আর বিষ্ফোরিত হলে সবাইকে নিয়েই শেষ ।
বাংলাদেশ একটা মুসলিম প্রধান দেশ হলেও এখানে সুদের পরিমাণ এতটা উচ্চ, যা কোন অমুসলিম দেশেও সাধারণত দেখা যায় না। বাংলাদেশের কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোতে সুদের হার ১৬ পর্যন্ত হয়। সেখানে আমেরিকাতে (কমার্শিয়াল) সুদের হার ৪% এর মত। এর পেছনে ব্যাংকগুলোর দাবী, তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে উচ্চহারে সুদ দিয়ে আমানত গ্রহণ করে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক প্রকাশ্য প্র্যাকটিসিং মুসলমানের সাথে কথা বলে দেখছি, সে অনেক ধর্ম-কর্ম করে, কিন্তু সুদ খাওয়ার ব্যাপারে সে ছাড় দিতে রাজি নয়। সুদ সে খাবেই। এমনকি সে যে সুদ খাচ্ছে, তার স্বপক্ষেও সে কোরআন-হাদীসের দলিল রেডি রাখে অলটাইম।
আমরা মুখে বলতেছি কর্পোরেটোক্রেসি আসতেছে, কেন আসতেছে ? আমাদের দেশী কর্পোরেটরা যায়গা খালি করে দিতেছে বলেই বিদেশী কর্পোরেটরা আসতেছে। ওদের দেশের কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা সীমানা ক্রস করে হাজার মাইল দুরে এসে আমাদের দেশে ঢুকে মারামারি করতেছে, আর আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সারাদিন নিজ দেশের ব্যাংকের সাথে কিস্তি নিয়ে মারামারিতে ব্যস্ত, তারা ব্যবসা বাড়াবে কখন ?
নির্বাচনের আগ মূহুর্তে ইশতেহার : ‘জেগে ওঠো বাংলাদেশ ২০১৮’- শিরোনামে আমি একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেছিলাম (https://bit.ly/2G0B47h),
সেখানে অর্থনীতি অংশে ৪.১ ধারায় আমি বলেছিলাম, “সুদের গ্রাস থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে, সুদবিহীন অর্থনীতির প্রণয়ন করতে হবে। ব্যাংকগুলো থেকে বৈধ ব্যবসায় ঋণের বদলে বিনিয়োগ করতে হবে।”
অর্থাৎ ব্যাংকগুলো সুদে ঋণ দেয়ার বদলে বিনিয়োগ করবে, লাভ লসের অংশীদার হবে। লোন দেয়ার আগে যাচাই করে দেখবে, সত্যিই এ ব্যবসায় লাভবান হওয়ার সম্ভবনা আছে কি না, যদি দেখে সম্ভবনা আছে, তবে বিনিয়োগ করবে। পরবর্তীতে তাকে লাভ-লসের অংশিদার হতে হবে। আমানতদারকেও সে পলিসি মেনে নিতে হবে। এ ধরনের বিনিয়োগের ফলে যেসব সেক্টর আসলেই লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে, সেখানে বিনিয়োগ বাড়তে থাকবে, অন্যায্য যায়গায় বিনিয়োগ যাবে না। ফলে দেশের অর্থনীতি আগতে থাকবে। আবার যেখানে কম বিনিয়োগ হবে, সেখানে একটা গ্যাপ তৈরী হবে, ফলে তার চাহিদা বাড়তে থাকবে। এই চাহিদা বৃদ্ধি-হ্রাসের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ হবে, ফলে অটোমেটিক ব্যালেন্স হবে। কিন্তু এখন ব্যাংকগুলোর প্রধান লক্ষ্য থাকে লোন দিয়ে সুদ-কিস্তি আদায় করা, লোন নেয়া প্রতিষ্ঠানটি আদৌ লাভ করতে পারবে কি না, এর প্রতি ব্যাংকগুলোর কোন লক্ষ্য থাকে না। এতে ভুল যায়গায় বিনিয়োগ হয়, দুর্নীতি বাড়ে। এভাবে দেশটা ক্ষণে ক্ষণে শেষ হয়ে যায়।
সেখানে অর্থনীতি অংশে ৪.১ ধারায় আমি বলেছিলাম, “সুদের গ্রাস থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে, সুদবিহীন অর্থনীতির প্রণয়ন করতে হবে। ব্যাংকগুলো থেকে বৈধ ব্যবসায় ঋণের বদলে বিনিয়োগ করতে হবে।”
অর্থাৎ ব্যাংকগুলো সুদে ঋণ দেয়ার বদলে বিনিয়োগ করবে, লাভ লসের অংশীদার হবে। লোন দেয়ার আগে যাচাই করে দেখবে, সত্যিই এ ব্যবসায় লাভবান হওয়ার সম্ভবনা আছে কি না, যদি দেখে সম্ভবনা আছে, তবে বিনিয়োগ করবে। পরবর্তীতে তাকে লাভ-লসের অংশিদার হতে হবে। আমানতদারকেও সে পলিসি মেনে নিতে হবে। এ ধরনের বিনিয়োগের ফলে যেসব সেক্টর আসলেই লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে, সেখানে বিনিয়োগ বাড়তে থাকবে, অন্যায্য যায়গায় বিনিয়োগ যাবে না। ফলে দেশের অর্থনীতি আগতে থাকবে। আবার যেখানে কম বিনিয়োগ হবে, সেখানে একটা গ্যাপ তৈরী হবে, ফলে তার চাহিদা বাড়তে থাকবে। এই চাহিদা বৃদ্ধি-হ্রাসের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ হবে, ফলে অটোমেটিক ব্যালেন্স হবে। কিন্তু এখন ব্যাংকগুলোর প্রধান লক্ষ্য থাকে লোন দিয়ে সুদ-কিস্তি আদায় করা, লোন নেয়া প্রতিষ্ঠানটি আদৌ লাভ করতে পারবে কি না, এর প্রতি ব্যাংকগুলোর কোন লক্ষ্য থাকে না। এতে ভুল যায়গায় বিনিয়োগ হয়, দুর্নীতি বাড়ে। এভাবে দেশটা ক্ষণে ক্ষণে শেষ হয়ে যায়।
আমি আপনাদের বলেছিলাম, কর্পোরেটোক্রেসি ষড়যন্ত্র রুখতে পৃথক পলিসির প্রয়োজন। এই পৃথক পলিসির মূল হলো সুদবিহীন অর্থনীতি প্রণয়ন করা। বিদেশী কর্পোরেটদের রুখতে প্রয়োজন দেশী কর্পোরেটদের শক্তিশালী করা। আর দেশী কর্পোরেটদের শক্তিশালী করতে সুদবিহীন অর্থনীতির বিকল্প নাই। আমি জানি, অনেকেই বলবে, এটা সম্ভব না। কারণ আমাদের পাঠ্যপুস্তকে যে অর্থনীতি শেখায়, তা পুরোটাই সুদভিত্তিক অর্থনীতি, এদের ডিকশেনারীতে সুদ ছাড়া অর্থনীতির কোন মডেল নাই। তাই তারা সুদ ছাড়া চিন্তাও করতে পারে না, এ কারণে তারা সব সময় বলে, সুদ ছাড়া কখন অর্থনীতি সম্ভব না, এবং কোন মডেল অর্থনীতিও তারা দিতে পারে না। আমার মনে হয়, সচেতন বা বুদ্ধিজীবি মহলকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে, এবং একটি সুদবিহীন অর্থনীতির মডেল বা রূপরেখা তৈরী করতে হবে। পাশাপাশি জনগণকে বোঝাতে হবে, সুদ নিয়ে কখন উপকৃত হওয়া যায় না। টাকায় টাকা কখন উৎপাদন নয় বরং ধোকা, যা মূল্যস্ফীতির জনক। একইসাথে জনগণের মধ্যে সুদবিরোধী এক গণসচেতনতা ও গণআন্দোলন তৈরী করতে হবে। মানুষ যেমন ধর্ষণকে ঘৃণা করছে, ঠিক সেভাবে যেন সুদকে ঘৃণা করে, থুথু দেয়, সুদ গ্রহিতাকে সমাজচ্যূত করে।