সরকারের কথিত ‘জঙ্গী বিরোধী’ পলিসিতে পরিবর্তন আনা উচিত। এন.সি-৩০২

সরকারের কথিত ‘জঙ্গী বিরোধী’ 
পলিসিতে পরিবর্তন আনা উচিত

Image result for স্প্রিং
সরকারের কথিত ‘জঙ্গী বিরোধী’ পলিসিতে পরিবর্তন আনা উচিত
সরকার বর্তমানে কথিত জঙ্গীবাদ বিরোধীতে বেশ সক্রিয় অবস্থানে আছে বলে দাবী করেছে। আবার মাঝে মাঝে এমনও বক্তব্য দিচ্ছে, “মাদ্রাসায় পড়লে জঙ্গী হয় না, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়লে জঙ্গী হয়”। আমার মনে হয়েছে, সরকার নিজেই সন্দিহান আসলে কথিত জঙ্গীবিরোধীতায় তার অবস্থানটা কোথায় ? ইতিমধ্যে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সরকার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, অমুক অমুক লক্ষণ হলে সে জঙ্গী হতে পারে। যে দেশের শতকরা ৯৫% মুসলমান, সে দেশের টাখনুর উপর কাপড় পড়লো আর দাড়ি রাখা যদি জঙ্গীর লক্ষণ হয়, তবে সরকারের জঙ্গী ধরার কার্যক্রম হবে অনেকটা খড়ের গাদায় সুই খোঁজার মত।
আমার কাছে মনে হয়, জঙ্গী শব্দটার একটা ধর্মীয়করণ করা হয়েছে, এটা ভুল।
বর্তমানে সরকার যাদের জঙ্গী বুঝাতে চাইছে, তাদের উদ্দেশ্য হিসেব করে বিষয়টিকে ধর্মীয়করণ না করে রাজনৈতিককরণ করা ছিলো বুদ্ধিমানের কাজ এবং সেটাতে সরকারের বরং সুবিধা হতো এবং কাজ সহজ হতো।
বিষয়টি একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির দিক বিবেচনা করলে, চীন বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়াতে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে। আর আমেরিকা-ভারত সেটাতে বাধা দিচ্ছে। বর্তমানে পাকিস্তানের চীনা প্রজেক্টগুলোতে কথিত জঙ্গী হামলা হচ্ছে, শ্রীলংকায় চীনের প্রভাব বাড়তে থাকায় সেখানে কথিত জঙ্গী হামলা হলো, আবার মায়ানমারে কথিত জঙ্গীর প্রভাব দমনের অজুহাতে রোহিঙ্গাদের দমন করা হলো। তারমানে প্রত্যেক ক্ষেত্রে জঙ্গীপনা বৃদ্ধির সাথে চীনের প্রজেক্ট বৃদ্ধির একটা ব্যাস্তানুপাতিক সম্পর্ক পাওয়া যাচ্ছে। তারমানে যে গোষ্ঠীটি চাইছে চীনা প্রজেক্ট বৃদ্ধি না হোক, তারা কথিত জঙ্গীপনা তৈরী করছে।
এবার আসুন কথিত ‘জঙ্গীপনা’র ধর্মীয় সংজ্ঞা এড়িয়ে একটি রাজনৈতিক সংজ্ঞা দেই।
তাহলে নতুন সংজ্ঞা হবে- যারা বাংলাদেশের চীনা প্রজেক্টের বিরাধীতা করবে অথবা এমন কাজ করবে যাতে চীনা প্রজেক্ট বাধাগ্রস্ত হয়।
সরকার ও তার গোয়েন্দা সংস্থাদের উদ্দেশ্যে বলবো-
আপনারা যখন জঙ্গীর ধর্মীয় সংজ্ঞা বাদ দিয়ে রাজনৈতিক সংজ্ঞার দিকে যাবেন, তখন-
১) আপনাদের শত্রুর অনেক কাছাকাছি পৌছাতে পারবেন।
২) খড়ের গাদায় সুই খুজতে হবে না।
৩) যারা কথিত জঙ্গীপনা তৈরী করে, তারা যে জঙ্গী দিয়ে সব সময় কাজ করবে তা নয়। যেমন কিছুদিন আগে পায়রাতে বাঙালী শ্রমিক –চীনা শ্রমিক দ্বন্দ্ব করে এক চীনাকে হত্যা করলো। যারা এ কাজটি করেছে, তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু এক, আউটলুক ভিন্ন। সরকার কিন্তু জঙ্গীপনার পেছনে ঘুড়তে ঘুড়তে কাহিল, কিন্তু সরকারকে জঙ্গীপনার খরের গাদায় ঠেলে দিয়ে তারা যদি অন্যভাবে কাজ করে তবে বসে, তখন সরকারের বসে বসে আঙ্গুল চোষা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
৪) শুধু শ্রমিক নয়, উগ্র হিন্দু, উপজাতি, এনজিও, বুদ্ধিজীবি, নারীবাদি, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা, মিডিয়াসহ বিভিন্ন আউ্টলুকে ঐ বিশেষ গোষ্ঠীটি চীনা প্রজেক্ট বাধাগ্রস্ত করতে পারে। সরকার যদি জঙ্গীপনার নাম দিয়ে খরের গাদায় সুই খোজায় ব্যস্ত থাকে, তবে অন্য অস্ত্রগুলো ব্যবহার করা তাদের জণ্য সোজা হবে।
৫) “বাংলাদেশে জঙ্গীদের খুজতে হবে এবং ধরতে হবে”- এই প্রজেক্ট কিন্তু আমেরিকানদের শিখিয়ে দেয়া প্রজেক্ট। “বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ ছেয়ে যাচ্ছে, সরকার যেন তাদের দমন করে” আমেরিকানদের তৈরী করা দালাল মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদরা কিন্তু প্রতিনিয়ত এইসব খবর প্রচার করে যাচ্ছে। পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে কাউন্টার রেটোরিজম ট্রেনিং এর নাম দিয়ে ওদের দেশে নিয়ে ওদের মতবাদ মাথায় ঢুকাচ্ছে, আর সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের মাঝে জঙ্গী খোঁজার নাম দিয়ে জনগন আর সরকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়িয়ে চলছে।
কথা হলো, বাংলাদেশের জঙ্গীবাদের উত্থান যদি ঘটবে, কেন ঘটবে?
আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষণ করলে, চীনা প্রজেক্ট দমনে আমেরিকান কৌশল ছাড়া এখানে অন্য কোন কারণ থাকতে পারে না।
তাহলে আমি কথিত জঙ্গী দমন না করে, যারা চীনা প্রজেক্ট দমন করতে চায়, তাদের দমন করি, অথবা তাদেরকে নজরদারির মধ্যে রাখি, তাহলে তো বিষয়টি সহজ হয়ে যায়।
আফগান-রাশিয়া যুদ্ধ, ইরাক-আফগানিস্তানে হামলা, অনেক সময় গড়িয়েছে, অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে,
মার্কিন কৌশল এখন সারা বিশ্বে উন্মুক্ত। এক পচা শামুকে বার বার পা কাটা কোন সমাধান হতে পারে না।
মার্কিনপন্থীরা চাইবে সরকার তাদের নির্দেশিত পথে হাটুক, যেন আর্টিফিসিয়াল ফেসের দিকে বেশি মনোযোগী হয়ে কাহিল হয়ে পড়ে। কে দাড়ি রাখলো, কে টাখনুর উপর কাপড় পড়লো, কে নিয়মিত নামাজ পড়লো, কোন মহিলা বোরকা পড়লো, এগুলো দিকে চোখ দিয়ে সরকারকে বিশাল মাঠে নামিয়ে জনগণ-সরকার দ্বন্দ্বের দিকে ঠেলে দিলো, আর অন্য দিক দিয়ে কার্য সিদ্ধি করা।
কিন্তু তখন সরকার অধিক স্ম্যার্ট হবে, যদি আমেরিকানদের দেখিয়ে দেয়া পথে না হেটে বা
কথিত জঙ্গী না খুজে, চীনা প্রজেক্ট বন্ধ করতে অরাজকতা তৈরীকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় উন্মুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বিশ্ব এখন অনেক এগিয়ে গেছে, অনেক দেশই আমেরিকানদের জঙ্গী জঙ্গী নাট্যকলার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট কথা বলছে, এক গর্তে বার বার পরা কখন বুদ্ধিমানে কাজ হতে পারে না।
আমি আবার বলছি, কথিত জঙ্গী দমনের নামে সরকারের উচিত মুসলমানদের বিরুদ্ধে না লেগে,
যারা চীনা প্রজেক্টের বিরোধীতা করছে, তাদের বিরোধীতা করা, তাদের চোখে চোখে রাখা।
তাহলে কাজটা যায়গামত ও সহজ হবে।
কারণ দ্বন্দ্বটা চীন আর আমেরিকার মধ্যে। তাহলে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া তাদের ও তাদের সমর্থকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। সেই প্রভাব আমাদের সাধারণ জনগণের মধ্যে নিয়ে আসা কখন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
ছবি: বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করা সরকারের কথিত জঙ্গী লক্ষণ, যা খড়ের গাদায় সুই খোজার সামিল।